শেখ হাসিনা: অগ্নিপথের অদম্য অভিযাত্রায় আমাদের সাহসের সঙ্গী

3234

Published on ফেব্রুয়ারি 8, 2021
  • Details Image

ড. আনোয়ার খসরু পারভেজঃ

গত বছরের শুরুতে যখন বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে, তখন বাংলাদেশও আক্রান্ত হয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার বিচক্ষণতার সঙ্গে এই পরস্থিতি মোকাবিলা করেছে, এবং ইতোমধ্যে সফলও হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গি এবং বিচক্ষণ পদক্ষেপের কারণেই অতি ঘন জনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত এবং মৃত্যুর হার কম। এরপরও অনেকের আশঙ্কা ছিল যে, বাংলাদেশ সরকার দেশের সব জনসাধারণের জন্য ভ্যাকসিন আনতে পারবে না। কিন্তু সন্দেহবাদীদের মুখে ছাই দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ভ্যাকসিন কূটনীতির ক্ষেত্রে অসামান্য সাফল্য অর্জন করেছে। অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকার ৩০ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন ক্রয়ের একটি চুক্তি করতে সক্ষম হয় সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে। যার ফলাফল, বাংলাদেশের মানুষ এখন ভ্যাকসিন নিতে শুরু করেছে। জীবনের অনেক ভাঙা পথ অতিক্রম করার অভিজ্ঞতা নিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশের মানুষের উন্নত জীবনের জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।

এই করোনাকালে চলমান বিশ্বজুড়ে আর্থিক মন্দা, মানুষের কর্মহীন হয়ে পড়া, আয় কমে যাওয়া, বুভূক্ষু মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ তা কাটিয়ে উঠে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য-আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশের কাতারে যাওয়ার লক্ষ্যে দুর্বার এগিয়ে চলেছে। আমাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, ভ্যাকসিন কূটনীতি এবং কোভিড-১৯ মহামারির স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় সরকার যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছে।

এক সময়ের কথিত ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ দারিদ্র্য-দুর্ভিক্ষে জর্জরিত বাংলাদেশকে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম করতে হয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২০৪১ সালে উন্নত দেশের তালিকায় নাম লেখাতে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার এই আশার নাম ‘রূপকল্প-২০২১’ এবং উন্নত দেশে পরিণত করার আশার নাম ‘ভিশন-২০৪১’। কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো, সরকারি বেসরকারি প্রশাসন পরিচালনায় সকল ক্ষেত্রেই উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে। শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও কল্যাণমুখী নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বজয়ের নবতর অভিযাত্রায় এগিয়ে চলেছে।

‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ খেতাবপ্রাপ্ত শেখ হাসিনা এবং তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ছাড়া পরিবারের আর কেউই জীবিত নেই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে বাবা-মাসহ সবাই ঘাতকের হাতে প্রাণ হারান। ঘাতকদের হাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশসহ ভারতে আশ্রয় নেন। বিদেশে অবস্থানকালে ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সিনিয়র কয়েকজন নেতার অনুরোধে সভানেত্রী নির্বাচিত হন।

আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ মনে করেছেন, শেখ হাসিনাকে দলের সভানেত্রী পদে অধিষ্ঠিত করা হলে ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও ঐক্যের প্রতীক’ হিসেবে আওয়ামী লীগকে পুনরায় সুসংগঠিত করা যাবে। জনমানুষের আস্থা ফিরে আসবে। দেশে ফিরে শেখ হাসিনা তেত্রিশ বছরেই অভিজ্ঞ রাজনীতিকের মতো বলেন, ‘শোককে শক্তিতে পরিণত করতে হবে’।

পিতৃমাতৃহীন শেখ হাসিনা ছয় বছর পর প্রবাস জীবন থেকে দেশে ফিরে আসেন। ৭৫-এর ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ড থেকে বেঁচে যাওয়া শেখ হাসিনা এবং তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানার প্রবাস জীবনও সহজ ছিল না। ঘাতকের ভয়ে তাঁদের প্রকৃত নাম ও পরিচয় গোপন করে থাকতে হয়েছে। তবে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ে এবং দলের অভ্যন্তরে চেতনা ও মতাদর্শগত পার্থক্য সৃষ্টি হয়। শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই তারা বুঝতে পারে বঙ্গবন্ধুর মতোই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই। এছাড়া আইনের শাসন ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির ভেতর দিয়েই বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করতে হবে, দেশের উন্নয়নের ও জনগণের কল্যাণের রাজনীতি করতে হবে। আমরা মনে করি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকদের নামের আগে যে সামরিক পদবী আছে তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করা হবে। ‘শোককে শক্তিতে পরিণত করতে হবে’ শেখ হাসিনার এই আহবানের মধ্যদিয়েই তাঁরা ভবিষ্যতের রাজনীতির গতিধারা বুঝতে পারেন। শেখ হাসিনা এভাবেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ হাতে নেন এবং রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন আনেন।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রথমবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে ১৯৯৬ সালে। একজন দূরদর্শী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তখন থেকেই বঙ্গবন্ধুর মানবিক ও রাজনৈতিক আদর্শ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অবলম্বন করে দেশের উন্নয়নে ও জনগণের কল্যাণে সকল সরকারি নীতি নির্ধারণ করেন। ২০০৭ সালে নেতৃত্ব থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হলেও তাঁর ব্যক্তিত্ব, নেতৃত্ব, দৃঢ় মনোবল, দেশ ও জনগণের কল্যাণবোধ এবং বিশাল জনসমর্থন থাকার কারণে ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হয়নি।

বাংলাদেশের অস্তিত্ব ও উন্নতি, দেশের প্রতিটি মানুষের ভাগ্য-উন্নয়ন ও জীবনমান পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের অবদান অস্বীকার করা অসম্ভব। যার ফলে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসন নিয়ে জয়ী হয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে। বাংলাদেশের সকল মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের পথ সুপ্রশস্ত হয়। কেননা দেশের উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও আওয়ামী লীগের কোনো বিকল্প নেই।

এ সময় বাংলাদেশের ও বাংলাদেশের সকলস্তরের জনগণের জীবনমানের সার্বিক উন্নয়ন ও কল্যাণে গৃহীত নীতি ও সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের পথ সুগম হয়। দেশ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, কৃষি উৎপাদন, শিল্প-কারখানার উন্নয়ন, বাণিজ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রভৃতি ক্ষেত্রে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যায়। দারিদ্র্যের হার কমে আসে, মাথাপিছু আয় বেড়ে যায়, গড় আয়ু বেড়ে যায়, স্বাস্থ্য সেবা উন্নত হয়, দেশের সকল নাগরিকের শিক্ষা জ্ঞান বুদ্ধি প্রজ্ঞা অনুযায়ী কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হয়। সামাজিক সেবার মান বৃদ্ধি পায় এবং সমাজের প্রতিটি মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত হয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ উন্নয়ন ও কল্যাণমুখী রাজনীতিতে বিশ্বাসী। যে কারণে পুরো বাংলাদেশের অবকাঠামোগত এবং মানুষের মনস্তাত্তিক দৃশ্যপট পাল্টে যায়। দেশের সকলস্তরের মানুষের কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে বিধায় মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়ে যায়, জীবনমান উন্নত হয়।

ডিজিটালাইজেশনের সুবাদে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহারে সরকারি বেসরকারি অফিস আদালতেরও দৃশ্যপট পরিবর্তিত হয়ে যায়। মানুষের স্বপ্ন ও কল্পনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশ এগিয়ে চলেছে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বিশ্বের কাতারে শামিল হতে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে শত বছরের মহাপরিকল্পনা 'ডেল্টা প্ল্যান ২১০০' বাস্ততবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এটি বাস্তবায়িত হলে উপকূলে নতুন ভূমি জাগবে। দেশের আয়তন বাড়বে। আর এর সবই সম্ভব হচ্ছে জননেত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাষ্ট্র পরিচালনায়।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তৃতীয় মেয়াদে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এই মেয়াদকালেও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা উন্নত ডিজিটাল স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে সফল হন। দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য মেগা প্রজেক্টগুলো শুরু করেন। এগুলো চালু হলে নিঃসন্দেহে দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং দেশ ও জনগণের জীবনমান উন্নয়ত হবে।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় নির্বাচনে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই সরকারে ও দলে আমূল পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছেন। সব বাধা পেরিয়ে ‘ভিশন-২০৪১’ বাস্তবায়নে নিরন্তর কাজ করে চলেছেন। জাতীয় জীবনে ঘনিয়ে আসা প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোকেও দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করছেন। ইতিমধ্যে দুর্নীতি বন্ধের অনুশাসন জারী করেছেন। আর এতেও আকাশচুম্বী সফলতা আসবে বলে দেশের প্রতিটি নাগরিক বিশ্বাস করে।

দেশ পরিচালনায়, দেশের ও জাতির কল্যাণে ও উন্নয়নে তাঁর চিন্তা চেতনা স্বপ্ন কল্পনার বাস্তবায়ন, দূরদর্শী নেতৃত্ব ও জনগণের ভাগ্য উন্নয়নের সদিচ্ছার কথা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশ ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ থেকে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। বিশ্বনেতৃত্বে সফল রাষ্ট্র নায়ক শেখ হাসিনার নাম সমস্বরে উচ্চারিত হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাঙালি জাতিকে যে নতুন আশা দেখিয়েছেন, সেদিকেই দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। তিনি বাঙালি জাতিকে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন, যেখানে সর্বাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ জনশক্তি থাকবে। যোগ্য মানবসম্পদ কিংবা দক্ষ তথ্য-প্রযুক্তিবিদ হওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার বিকল্প নেই। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়ে তুলতে শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। বর্তমানে তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিতার পথ অনুসরণ করে শিক্ষাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর দেশে ফিরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে ‘সোনার বাংলা’ হিসেবে গড়ে তুলতে নানামুখী উদ্যোগ নেন। বঙ্গবন্ধু একটা কথা প্রায়শই বলতেন, ‘সোনার বাংলা গড়তে হলে সোনার মানুষ চাই।’ অর্থাৎ মানবিক গুণে গুণান্বিত দক্ষ জনসম্পদ। আর এটি করতে হলে প্রয়োজন সুশিক্ষা। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন উপলক্ষ্যে দেশবাসীর উদ্দেশে দেয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণেও তার শিক্ষা ভাবনা সম্বন্ধে আমরা সম্যক ধারণা পাই। ভাষণে তিনি বলেছিলেন, সুষ্ঠু সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা খাতে পুঁজি বিনিয়োগের চেয়ে উৎকৃষ্ট বিনিয়োগ আর কিছু হতে পারে না। নির¶রতা অবশ্যই দূর করতে হবে। ৫ বছর বয়স্ক শিশুদের বাধ্যতামূলক অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষাদানের জন্য একটা ‘ক্যাশ প্রোগ্রাম’ চালু করতে হবে। মাধ্যমিক শিক্ষার দ্বার সব শ্রেণির জন্য খোলা রাখতে হবে। একই রকম দূরদর্শী ও কল্যাণ চিন্তা প্রসূত বঙ্গবন্ধু কন্যার ডিজিটালাইজেশনের স্বপ্ন বাস্তবায়নের সবচেয়ে বড় সুবিধা জাতি ভোগ করতে পারছে করোনা কালে দেশের শিক্ষা কার্যক্রম, সরকারি বেসরকারি অফিস-আদালত সচল রাখার মধ্য দিয়ে।

করোনাকালীন বাস্তবতায় শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনায় আজকে আমরা যে উদ্যোগ নিয়েছি, এটি সম্ভব হতো না যদি ২০০৮ সালে বর্তমান সরকার আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন না দেখাতো। এই জন্যই যে কোনো দেশের উন্নয়নে ভিশনারি পলিটিক্যাল লিডার গুরুত্বপূর্ণ। একটি রাষ্ট্র ভিশনারি নেতৃত্বগুণেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে স্থির করে। দক্ষ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের সাহায্যেই উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যায়।

বর্তমান বাংলাদেশের সরকারি বেসরকারি প্রায় শতভাগ অফিস আদালতের কাজে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা প্রবর্তনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা জনাব সজীব ওয়াজেদ জয়কে ধন্যবাদ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন দূরদৃষ্টি সম্পন্ন পলিটিক্যাল লিডার। তাঁর দূরদর্শনই বর্তমান বাংলাদেশের শক্তি। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতিকে একটি উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে তাঁর যে শিক্ষা ভাবনা ছিল, সেই শিক্ষা ব্যবস্থাকে শতভাগ তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর করা এখন সময়ের দাবিÑযেমনটা জাতির পিতা স্বপ্ন দেখেছিলেন।

অর্থনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশের সারিতে উন্নীত হয়েছে। এর জন্য এই দেশের নারী সমাজের রয়েছে উদ্যোগী সক্রিয় অংশগ্রহণ। জাতীয় জীবনের সকল পর্যায়ে নারীর ক্ষমতায়নে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বিরল অবদান রেখেছেন। কৃষিপ্রধান অঞ্চলে এই ক্ষেত্রের প্রায় ২২ ধরনের কাজের ১৯ ধরনের কাজ হয় নারীর অংশগ্রহণের মাধ্যমে।

আজকে বাংলাদেশের কৃষির ক্ষেত্রে যে সাফল্য এসেছে, ফসল উৎপাদন, শাক-সবজি, ফলমূল ইত্যাদি উৎপাদনের ক্ষেত্রে যে অর্জন হয়েছে, তাতে নারীর ভূমিকা দৃশ্যমান। মৎস্য চাষ, হাঁস-মুরগির খামারসহ এই কাজগুলোতে নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। অন্যদিকে পোশাক শিল্প বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার এক বিশাল উল্লেখযোগ্য অংশ। যে শিল্পের শতকরা আশি থেকে পঁচাশি ভাগ হচ্ছে নারী শ্রমিক তাদের জীবনে এখনো যথেষ্ট সমস্যা রয়েছে। যদিও এটা সত্য যে, শ্রম বাজারে অংশগ্রহণের ফলে তাদের জীবনে একটি মৌলিক পরিবর্তন এসেছে। আর্থিক উপার্জনের ভেতর দিয়ে তারা ¶মতায়নের পথে অগ্রসর হয়েছে। পরিবারে তার অবস্থান অনেকখানি পরিবর্তিত হয়েছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ করতে পারছে। নারীর উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন ও নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় নেওয়া পদক্ষেপ ও তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে নারী সমাজকে এগিয়ে নেওয়ার স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।

জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসক) মানদণ্ড অনুযায়ী এক্ষেত্রে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হবে কমপক্ষে ১২৩০ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় তার থেকে অনেক বেশি অর্থাৎ ১৬১০ মার্কিন ডলার। মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশ অর্জন করেছে ৭২ দশমিক ৯। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতার সূচক হতে হবে ৩২ ভাগ বা এর কম, যেখানে বাংলাদেশের রয়েছে ২৪ দশমিক ৮ ভাগ। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে আজকের এই উত্তরণের পেছনে রয়েছে এক বন্ধুর পথ পাড়ি দেওয়ার ইতিহাস।

শেখ হাসিনা বিশ্বের সফল রাষ্ট্রনায়ক। জনপ্রিয় একজন রাজনীতিবিদ। আল জাজিরা পেশাদার মিথ্যাচারে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। বেশ কিছু দেশে মিথ্যা সংবাদ প্রচারের জন্য আল-জাজিরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমরা মনে করি বিভ্রান্তির কিছু নেই, শত বিভ্রান্তি ছড়িয়েও পদ্মা সেতুর নির্মাণ ঠেকানো যায়নি, হেফাজতের হাজার হাজার নিহতের মিথ্যাচারের খবর সত্যতা পায়নি। এই উদ্ভট নতুন নাটকের মঞ্চায়নে বার্গম্যানের বার্কিং এর মাত্রাটি কিছু বাড়বে, এর বেশি কিছু না। শেখ হাসিনাকে দেশের মানুষ ভালোবাসে। আমি আমরা সবাই শেখ হাসিনার লোক। সরকারের ‘রূপকল্প ২০২১’ বাস্তবায়ন একটি বড় অর্জন। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে। এখন শেখ হাসিনার সরকার ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, আমরা মনে করি সে লক্ষ্য অধরা নয় বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও ঐক্যের প্রতীক শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগই তা অর্জন করতে পারে।


লেখকঃ অধ্যাপক, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত