4324
Published on জানুয়ারি 6, 2021প্রবাসী কর্মীদের যথাযথ মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়সহ অভিবাসন সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন দিবস উপলক্ষে বুধবার গণভবন থেকে এক অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত হয়ে তিনি এ নির্দেশ দেন। খবর ইউএনবির।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'শ্রম অভিবাসনের সঙ্গে যারা জড়িত... রিক্রুটিং এজেন্সি থেকে শুরু করে মন্ত্রণালয় তাদের (শ্রমিকদের) যথাযথ মর্যাদা দিন এবং তাদের যেন কোনো রকম সমস্যা না হয় সেটা নিশ্চিত করুন।'
যারা বিদেশে যেতে ইচ্ছুক তাদের জন্য রিক্রুটিং এজেন্সি এবং মন্ত্রণালয়কে সবকিছু দেখাশোনা করতে হবে- একথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যারা বিদেশে যেতে চান তাদের কর্মসংস্থান ঠিকমতো হচ্ছে কিনা, তাদের নিরাপত্তা ঠিকমতো আছে কিনা, বিশেষ করে আমাদের মেয়েরা যারা যায়, তাদের নিরাপত্তার বিষয়টা সকলকেই লক্ষ্য রাখতে হবে। এক্ষেত্রে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় বা বিদেশে কর্মী প্রেরণে যে সকল এজেন্সি জড়িত তাদেরকে দায়িত্বশীলতার ভূমিকা পালন করতে হবে, কারণ দায়িত্বটা আপনাদের ওপরেই বর্তায়।
কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে চাকরি হারানোদের সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার তাদের দেখাশোনা করছে এবং হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, কর্মসংস্থান ব্যাংক, পল্লী সংস্থান ব্যাংক এবং এসএমই ফাউন্ডেশন ঋণ দেওয়ার জন্য রয়েছে, যাতে তারা তাদের নিজস্ব ব্যবসা শুরু করতে পারে।
'আমরা এতে বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছি, যাতে হতাশ না হয়ে আপনারা নিজ দেশে পুরো শক্তি নিয়ে কাজ শুরু করতে পারেন', বলেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে অনেক মেগা-প্রকল্প চলমান রয়েছে এবং সেখানে অনেক লোক কাজ করছেন। তারা এই প্রকল্পগুলো থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করছে এবং এই অভিজ্ঞতা তাদের জন্য দেশে এবং বিদেশে উপকারী হবে।
বিদেশ যাওয়ার সময় অনেকে দালালদের খপ্পরে পড়ে অন্ধকার পথে পা বাড়ায়- এ কথা উল্লেখ করে তিনি এজন্য সকলকে নিবন্ধন করে এবং যথাযথ ও বৈধ প্রক্রিয়ায় কাঙ্ক্ষিত কাজ পাওয়ার জন্য ধৈর্য ধরে যেতে বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, যদি আপনারা কারো প্ররোচনায় বিদেশে গিয়ে বিপদে পড়েন সেটা নিজেদের জন্য, পরিবারের জন্য খুবই কষ্টকর, খুবই ক্ষতিকর।
এ প্রসঙ্গে তিনি লিবিয়ায় কিছু অভিবাসী শ্রমিকের মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেন এবং আশা প্রকাশ করেন, আগামী দিনে এই ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমাদের দেশে কাজের ও খাদ্যের কোনো ঘাটতি নেই। এখন আর সোনার হরিণের পেছনে কেউ দয়া করে অন্ধের মতো ছুটবেন না। আপনারা নিবন্ধন করে তার মাধ্যমে বিদেশে যান, সেটাই আমরা চাই।'
শেখ হাসিনা চাকরির জন্য বিদেশ যাওয়ার আগে যথাযথ প্রশিক্ষণ নেওয়ার ওপরেও জোর দেন। তিনি বলেন, 'কিছু লোক আছেন যারা সঠিক প্রশিক্ষণ না নিয়েই একটি সনদ নেন এবং তারপরে তারা বিদেশে নানা সমস্যার মুখোমুখি হন। আমি মনে করি যে এটি করা ছাড়া যদি কেউ আন্তরিকতার সাথে প্রশিক্ষণ নেন তবে সেই ব্যক্তি বিদেশে কোনো ধরনের হয়রানির মুখোমুখি হবে না। সকলকে এদিকে নজর দিতে হবে, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এই বিষয়ে আরও নজরদারি করা উচিত।'
সরকার দেশকে অর্থনৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী ও স্বাবলম্বী করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে- এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জনের পথে, আমরা ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ করছি, এখানেও কোনো কাজের অভাব হবে না, আমাদের দক্ষ শ্রমিকেরও দরকার হবে, বিদেশি বিনিয়োগও আসছে।'
এ সময় প্রধানমন্ত্রী প্রবাসী কর্মীদের সামগ্রিক কল্যাণ নিশ্চিতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে 'মুজিব বর্ষের আহ্বান দক্ষ হয়ে বিদেশ যান'। অনুষ্ঠানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং সচিব ড. আহমেদ মুনিরুস সালেহীন বক্তব্য দেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ বৈধ চ্যানেলে সর্বাধিক বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণকারী প্রবাসী বাংলাদেশি এবং বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (সিআইপি) হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন।