কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনে দৃঢ়প্রতীজ্ঞ শেখ হাসিনা

1773

Published on সেপ্টেম্বর 30, 2020
  • Details Image

সরদার মাহামু হাসান রুবেলঃ 

অর্থনৈতিক উন্নয়ন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির কারণে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল; দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সেরা। এডিবি, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশকে উপমহাদেশের উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে দেখছে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে সর্বত্রই ডিজিটালাইজেশন, মানবিকতা, শিল্পায়ন, জীবনমানের উন্নয়ন, কৃষি আধুনিকায়নে সাফল্যের শিখরে উঠেছে দেশ। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রেখে সামাজিক সমৃদ্ধি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে পরিবেশ উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার, বন্ধুত্বপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি সবক্ষেত্রে সাফল্য এসেছে গত কয়েক বছরে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যাদুকরী নেতৃত্ব এবং একের পর এক সাহসী পদক্ষেপ কার্যত দেশকে এই অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে নিয়ে গেছে।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অনেকদিন বাংলাদেশের মানুষ স্বপ্ন দেখা ভুলে গিয়েছিলেন। হত্যাকান্ডের ছয় বছর পর, সেই ভয়াবহ দুঃসময়ে ১৯৮১ সালে ১৭ মে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এলেন। বিদেশের মাটিতে শরণার্থীর মতো ঘুরে ঘুরে একাকী, নিঃসঙ্গ, দুঃখী, অনভিজ্ঞ, কম বয়সী শেখ হাসিনা যখন দেশে ফিরে এসেছিলেন তখন কি কেউ কল্পনা করেছিল, একদিন তিনিও ঠিক তার বাবার মতো দৃঢ়ভাবে দেশের হাল ধরবেন?

একথা সত্য রাজনীতি শেখ হাসিনার জন্য নতুন কিছু নয়, জন্মসূত্রে পাওয়া এক উত্তরাধিকার। শৈশব থেকেই তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক-সংগ্রামী জীবনকে দেখেছেন। নিজে বাবার কাছ থেকে হয়েছেন বঞ্চিত কিন্তু তাঁর দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়েছেন।স্কুল জীবনেই প্রতিবাদী হয়েছেন রাষ্ট্রের জন্য। কলেজেতো নির্বাচিত ভিপিই হয়েছেন। স্বদেশ প্রত্যাবর্তের দিন তিনি কেঁদেছিলেন। সাথে কেঁদেছিল প্রকৃতিও। অনেকের মতো আমিও মনেকরি এটিই ছিল তার দ্বিতীয় জন্মদিন।

এ জাতির সৌভাগ্য, আমরা তার মতো একজন নেতা পেয়েছি। মৃত্যুঝুঁকি নিয়েও তিনি জাতির পিতার স্বপ্ন সোনার বাংলা বাস্তবায়নে দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তিনি মানুষের সাথে মিশতে, আলাপচারিতায় মেতে থাকতে পছন্দ করেন; তিনি যা চিন্তা করেন, যা বিশ্বাস করেন, অকপটে তা বলতে দ্বিধা করেন না।
তাই আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ স্বপ্ন নয় বাস্তব। তিনিও পিতার মতো বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য দৈনিক ১৮ ঘন্টা নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
ব্যক্তিত্বে বহির্মুখিতার প্রভাব প্রগতিশীল, মানবিক, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, বাস্তববাদী ও সুদক্ষ নেতৃত্ব বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে এসেছে অনেকদূর। তার নিষ্ঠা, মনোবল, পরিশ্রমে আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। বিশ্বনেতারা প্রায়ই তাকে জিজ্ঞাসা করেন কোন যাদুবলে তিনি বাংলাদেশকে উন্নয়নের সকল ধারায় এগিয়ে আজ মধ্যম আয়ের উন্নয়নের দেশে পৌছে দিয়েছেন? তার জবাব বঙ্গবন্ধুর মতোই, দেশের মানুষকে ভালবাসি। তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চাই।

ইতিমধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের, ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বিশ্বের তালিকায় তিনি বাংলাদেশকে নিয়ে যাবেন। শুধু তাই নয় করেছেন ১০০ বছরের ডেল্টা প্ল্যান। শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের বিচার, পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি সম্পাদন, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি, খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করণ, সমুদ্র বিজয়, নিজস্ব স্যাটেলাইটের মাধ্যমে মহাকাশ বিজয়, নারীর ক্ষমতায়ন সহ ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের কাণ্ডারিসহ জাতীয় জীবনের বহুক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছেন তিনি।

শুধু জাতীয় ক্ষেত্রে নয় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন। তার দূরদর্শী সাহসী সিদ্ধান্ত ও যোগ্য নেতৃত্বের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার সকলকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তার দৃঢ় সিদ্ধান্ত ও সাহসী পদক্ষেপে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ এখন বাস্তব। মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ অসংখ্য মেগাপ্রকল্পের কাজ চলছে। এই সাফল্যের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা শেখ হাসিনাকে নানাভাবে সম্মানিত করেছে। তিনি জাতিসংঘের ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ পুরস্কার’, ‘প্ল্যানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ পুরস্কার, আবহাওয়া পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন অব দি আর্থ’ এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন ও তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য ‘আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার’ পেয়েছেন। 

এছাড়াও রাজনীতিতে নারী-পুরুষের বৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালনে ‘পান ওম্যান ইন পার্লামেন্ট (ডব্লিউআইপি) গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ড’, নারী ও শিশু শিক্ষা উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য ‘শান্তি বৃক্ষ পদক’, ‘সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড’, জাতিসংঘের ‘মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল অ্যাওয়ার্ড’, ‘ডিপ্লোমা অ্যাওয়ার্ড’, ‘কালচারাল ডাইভারসিটি অ্যাওয়ার্ড’, ‘গ্লোবাল ডাইভারসিটি অ্যাওয়ার্ড’, ‘ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পদক’, ‘ডক্টরস অব হিউম্যান লেটার্স’, ‘মাদার তেরেসা পদক’, ‘নেতাজি মেমোরিয়াল পদকসহ অর্ধশতাধিক পদক পেয়েছেন।

তিনি বিদেশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও ডিগ্রি ও সম্মাননা পেয়েছেন। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি যা পেয়েছেন, বাংলাদেশ তো নয়ই; দক্ষিণ এশিয়ার আর কোনো নেতার পক্ষে অর্জন সম্ভব হয়নি। পুরস্কারের পাশাপাশি তিনি নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্বের কারণে বিভিন্ন স্বীকৃতিও অর্জন করেন। বিশ্বখ্যাত ফোর্বস সাময়িকীর দৃষ্টিতে বিশ্বের ক্ষমতাধর শত নারীর তালিকায় ৩৬তম এবং নিউইয়র্ক টাইমস সাময়িকীর জরিপে ২০১১ সালে বিশ্বের সেরা প্রভাবশালী নারী নেতাদের তালিকায় সপ্তম স্থান দখল করেন। নেতৃত্বের সাফল্যের জন্য তার আরো অনেক অর্জন রয়েছে। এমনকি করোনা মোকাবিলায় শক্তিধর দেশগুলো নাকানিচুবানি খেলেও শক্ত হাতে শেখ হাসিনা অদৃশ্য ভাইরাস সামাল দিচ্ছেন। অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশে এখনো আক্রান্ত ও মৃতের হার কম। করোনায় বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেই রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বের জন্যই করোনাকালে দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৮.২ ধরে সংসদে চলতি অর্থবছরের বাজেট পাস করা হয়েছে। পররাষ্ট্র নীতিতে নিজ দেশের মর্যাদা সমুন্নত রেখে কী প্রতিবেশি, কী ক্ষমতাধর রাষ্ট্র সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব রেখেই বাংলাদেশ উন্নয়নে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। দেশে তো বটেই, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর নেতৃত্বে এখন শেখ হাসিনার অবস্থান সবার শীর্ষে।

দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কল্যাণে যুগান্তকারী অবদান রেখে চলেছেন। ‘রূপকল্প ২০২১’-এর মধ্যম আয়ের বাংলাদেশকে ‘রূপকল্প ২০৪১’-এর বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি উন্নত, আধুনিক, সমৃদ্ধ, অসাপ্রদায়িক কল্যাণকামী রাষ্ট্র গঠনে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দৃঢ়প্রতীজ্ঞ। তিনি সুস্থ্য দীর্ঘজীবন লাভ করুন এবং দেশকে আরো অনেক বছর ধরে নেতৃত্ব দিতে থাকুন, তার শুভ জন্মদিনে এই কামনা করি।

লেখকঃ  আহবায়ক, ঢাকা মহানগর বঙ্গবন্ধু পরিষদ

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত