2757
Published on সেপ্টেম্বর 28, 2020খাজা খায়ের সুজনঃ
‘একজন রাজনীতিবিদ হচ্ছেন তিনি, যিনি পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে ভাবেন, আর যিনি পরবর্তী প্রজন্ম নিয়ে ভাবেন তিনি হচ্ছেন রাষ্ট্রনায়ক।’ কথাটি বারবার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ কথাটি তিনি বলে থাকেন বাংলাদেশের চারবারের প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে সংজ্ঞায়ন করার জন্য। শেখ হাসিনা বর্তমান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী। যিনি একধারে এদেশ এবং আওয়ামী লীগের মতো বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সংগঠনকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন অত্যন্ত সফলতার সাথে। তাঁর এ সফলতার যে কারণগুলোকে মোটাদাগে চিহ্নিত করা যায় সেগুলো হচ্ছে বাংলাদেশের সফলতা ও উন্নয়নের জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করা, সকল বাঁধা বিপত্তিকে এড়িয়ে সেই লক্ষ্যে পোঁছানো। জনগণের প্রতি প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করা এবং এদেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য নিজের জীবনকে বাজি রাখা। তিনি শুধু লক্ষ্য নির্ধারণ করে কাজ শেষ করেন না, উক্ত কাজের সফলতা এবং সফলভাবে সম্পূর্ণ করা পর্যন্ত তিনি সেই কাজের হাল ছাড়েন না। সে পথে যত বাধা-বিপত্তি যাই কিছু আসুক না কেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশ স্বাধীন করেছেন, এ স্বাধীনতার পথ তৈরি করার জন্য তিনি তাঁর জীবনের মহামূল্যবান সময়গুলো কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে কাটিয়েছেন কিন্তু এদেশকে মুক্ত করে গেছেন। শেখ হাসিনা ও তেমনি সারা বিশ্বের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ও এদেশের উন্নয়ন ও মানুষের অধিকার আদায়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের পাঁচ সন্তানের মধ্যে শেখ হাসিনা সবার বড়। তিনি ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালে বঙ্গবন্ধু প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হলে পরিবার নিয়ে পুরান ঢাকার রজনী বোস লেনের ভাড়া বাসায় ওঠেন। বঙ্গবন্ধু যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভার সদস্য হলে সপরিবারে ৩ নং মিন্টো রোডের বাসায় বসবাস শুরু করেন। শেখ হাসিনাকে টিকাটুলির নারী শিক্ষা মন্দিরে ভর্তি করা হয়। তিনি ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৬৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা কলেজ) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন।
ওই বছরই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্সে ভর্তি হন এবং ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজে পড়ার সময় ছাত্র সংসদের সহসভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদস্য এবং রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও তৎকালীন সময়ে পাকিস্তান এবং আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে নিজেকে সরাসরি জড়িত করেন। নিজে যোগ দেন সরাসরি ছাত্র রাজনীতিতে। শেখ মুজিবের মেয়ে নয়, বরং নিজের সাংগঠনিক যোগ্যতা দিয়ে একাধিক পদ পান। রাজনীতি যার ধমনীতে বহমান তাঁকে কে আটকায়। ১৯৬৬ সালে তিনি যখন ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্রী তখন কলেজে থেকে সরাসরি ছয় দফার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। ছাত্রজীবন থেকে তিনি সকল গণআন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে তিনি আইয়ুববিরোধী আন্দোলন ও ছয় দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। বঙ্গবন্ধু আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কারাগারে থাকাকালে ১৯৬৮ সালে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন শেখ হাসিনা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের করাচীতে নিয়ে গিয়ে পুরো পরিবারকে ঢাকায় একটি বাড়িতে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই গৃহবন্দি অবস্থায় তাঁর প্রথম সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্ম হয়। ১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর কন্যা পুতুলের জন্ম হয়।
১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার আগে ছোট বোন শেখ রেহানাসহ শেখ হাসিনা ইউরোপে যান। সেখানে অবস্থানকালে তিনি সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার খবর পান। তাৎক্ষণিকভাবে দেশে ফিরে আসার মতো পরিবেশ না থাকায় তিনি ইউরোপ ছেড়ে স্বামী-সন্তানসহ ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেন। ১৯৮১ সালের ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সম্মেলনে তাঁকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ওই বছরের ১৭ মে প্রবাস জীবনের অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসেন তিনি।
১৯৮১ সাল দেশে ফেরার পর থেকেই শুরু হয় তাঁর সংগ্রামী জীবনের। এ প্রসঙ্গে ‘শেখ হাসিনা একটি রাজনৈতিক আলেখ্য’ গ্রন্থের লেখক আবদুল মতিন তাঁর বক্তব্যের শুরুতে উল্লেখ করেন—‘১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা যখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হন তখন কেউ কেউ ভেবেছিলেন তিনি শুধু অন্তর্বর্তীকালীন সভানেত্রীর ভূমিকা পালন করবেন। তারা ভেবেছিলেন অদূর ভবিষ্যতে, রাজনীতি সম্পর্কে তুলনামূলকভাবে অনভিজ্ঞ শেখ হাসিনা সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে জোরালো নেতৃত্ব দানে অক্ষম বলে প্রমাণিত হওয়ার পর, প্রবীণ কোনো নেতার হাতে দায়িত্ব অর্পণ করে রাজনৈতিক জীবন থেকে অবসর গ্রহণ করবেন।’ এটি ছিল শেখ হাসিনা সম্পর্কে তৎকালীন নেতাদের ভাবনা। কিন্তু তাঁদের সকল সমালোচনা ও ভাবনাকে পেছনে ফেলে তৎকালীন দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগকে এক করে তিনি পোঁছে গেছেন তাঁর অভীষ্ট লক্ষ্যে।
রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব গ্রহণ সম্পর্কে শেখ হাসিনার বক্তব্য ছিল অত্যন্ত সুস্পষ্ট এবং জোরালো। তিনি বলেন, ‘আমি ক্ষমতার জন্য রাজনীতিতে আসিনি। এসেছিলাম একটি হারানো স্বপ্ন উদ্ধার এবং একটি রক্তাক্ত আদর্শের পতাকা আবার তুলে ধরার জন্য। কোনোকিছু পাওয়ার জন্য আমি জেল-জুলুম ও গুলির মুখে বুক পেতে দেইনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের বাংলাদেশ হায়নারা ঘরে তুলতে দেয় নি। সেই বীর শহীদদের স্বপ্ন সফল করা এবং জিয়া-এরশাদ পদ্ধতির স্বৈরশাসনের কবল থেকে বাঙালী জাতির স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রকে উদ্ধার করার লড়াইয়ে আমি নিজেকে উৎসর্গ করেছি।’ [সূত্র: ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতির উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনার ভাষণ]
১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত এক দীর্ঘ স্বৈরাচার-সামরিক-সরকারবিরোধী আন্দোলন করেছেন শেখ হাসিনা। নিজের দলকে সুসংগঠিত করতে হয়েছে। সারাবিশ্বে আজ দেশ ও জনদরদী মানবিক নেতা হিসেবে তিনি আজ প্রতিষ্ঠিত। পিতার মতোই অসীম সাহসী, দৃঢ় মনোবল, দেশপ্রেম ও মানবিকগুনাবলী সম্পন্ন একজন আদর্শবাদী নেতা হিসেবে শেখ হাসিনা মানুষের কাছে আজ সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় নেতা। দেশের যেকোনো সংকটে তাঁর নেতৃত্ব দলমত নির্বিশেষে সকল রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কাছে তিনি একমাত্র গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব। সেখানে দ্বিতীয় কোনো বিকল্প নেই।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশ শাসন করে শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন শাসক হিসেবে তিনি যেমন দেশনন্দিত, তেমনি গণতন্ত্র ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিশ্বনেতার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত। এই সময়ে তিনি নিজেকে এবং বাংলাদেশকে বিশ্বসভায় তুলে ধরেছেন অত্যন্ত উজ্জ্বলভাবে। তিনি এই সময় প্রথমবারের মতো দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেন। দারিদ্র্যের হার হ্রাসকরণ, নারীর ক্ষমতায়ণ, কৃষির ব্যাপক উন্নয়ন, মানুষের আয় ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ এইসব উদ্যোগ ছিলো অনন্য। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রথম সরকার মানুষের প্রতি আস্থা এনে দিয়েছিলো। তাঁর এসব যুগান্তকারী উদ্যোগ সারা বিশ্ব থেকে ব্যাপক স্বীকৃতি এনে দিয়েছিলো। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো— শান্তি এবং গণতন্ত্রের অসাধারণ অবদানের জন্য অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ১৯৯৯ সালের ২০ অক্টোবর সম্মানসূচক ডক্টর অব ল ডিগ্রি প্রদান করেন।
গণতন্ত্র এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এবং মানবাধিকার রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় বিশ্ববিখ্যাত ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অব ব্রাসেলস ২০০০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। রাজনৈতিক সাহস এবং প্রজ্ঞার দ্বারা পার্বত্য চট্টগ্রামে ২৫ বছরের জাতিগত দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে শান্তি বয়ে আনতে অসাধারণ ভূমিকা রাখায় শেখ হাসিনাকে ১৯৯৮ সালে ইউনেস্কোর হোফে-বনি শান্তি পুরষ্কার দেওয়া হয়। ক্ষুধার বিরুদ্ধে সংগ্রামের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘ খাদ্য এবং কৃষি সংস্থা এফএও শেখ হাসিনাকে ১৯৯৯ সালের ২ আগস্ট মর্যাদাপূর্ণ সেরেসা পদক প্রদান করে। সর্ব ভারতীয় শান্তি পরিষদ ১৯৯৮ সালে শেখ হাসিনাকে “মাদার তেরেসা পদক” প্রদান করে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, অহিংস, ধর্মীয় সম্প্রীতি এবং বাংলাদেশর তৃনমূল পর্যায়ে গণতন্ত্রের বিকাশে অবদান রাখায় নরওয়ের অসলোর মহাত্মা এম কে গান্ধী ফাউন্ডেশন শেখ হাসিনাকে এম কে গান্ধী এওয়ার্ড -১৯৯৮ প্রদান করে। দূরদর্শিতা, সাহস এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং মানবিক ক্ষেত্রে অর্জনের স্বীকৃতিস্বরুপ শেখ হাসিনাকে যুক্তরাষ্ট্রের র্যান্ডলফ উইম্যান্স কলেজ শেখ হাসিনা কে ২০০০ সালের ৯ এপ্রিল মর্যাদাপূর্ণ পার্ল এস বাক এওয়ার্ড -১৯৯৯ প্রদান করে। এছাড়াও শেখ হাসিনা আরও অসংখ্য পুরষ্কার এবং ডিগ্রিতে ভূষিত হয়েছেন।
এরপর শেখ হাসিনা সরকারই একমাত্র সরকার যারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। এরপর পাঁচ বছরের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দমন পীড়নের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত গড়ে তোলেন। এরমধ্যে বেশ কয়েকবার তাঁর জীবনের উপর হামলা ও চালানো হয়েছে। ২০০৪ সালের ২১ শে আগস্টের গ্রেনেড হামলা অন্যতম। এই হামলায় আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন এবং ৫শর মতো নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। এ হামলায় দেশরত্ন শেখ হাসিনা নিজেও গুরুতর আহত হয়েছেন। এরপর ২০০৭ সালের সেনাশাসন এবং মিথ্যা মামলায় কারাবরণ করতে হয় শেখ হাসিনাকে। কারাগারে তাঁকে স্লোপয়জনিং এর মাধ্যমে হত্যা করার ষড়যন্ত্র ও করা হয়। নিঃসঙ্গ কারাগারে তাঁর উপর অমানুষিক নির্যাতন ও চালানো হয়। এরপর ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে এদেশের মানুষ তাঁকে দেশ শাসনের ভার তুলে দেয়।
এরপর দ্বিতীয়বার শেখ হাসিনা বর্তমান প্রজন্মকে প্রযুক্তিগত ব্যবহারের দিক থেকে শক্তিশালী করে তোলার জন্য ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কর্মসূচি হাতে নেন। তাঁর হাতের ছোঁয়ায় মাত্র দশ বছরের ব্যবধানে ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ বাস্তব রূপ লাভ করেছে। দেশের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, নারীর ক্ষমতায়ন, কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন, দারিদ্রের হার ব্যাপকভাবে হ্রাসকরণের ফলে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। এক সময়ের কথিত ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ দারিদ্র্য-দুর্ভিক্ষে জর্জরিত যে বাংলাদেশকে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম করতে হয়েছে। শেখ হাসিনার কল্যাণমুখী নেতৃত্বে সেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বজয়ের নবতর অভিযাত্রায় এগিয়ে চলেছে।
এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তৃতীয় মেয়াদে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি । সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় নির্বাচনে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। দায়িত্ব নেওয়ার পর সরকার ও দলে ব্যাপক পরিবর্তন আনেন। তিনি বাংলাদেশকে এক নতুন আশা দেখিয়েছেন। বাংলাদেশকে একটি মধ্য অয়ের দেশে উন্নীত করার এই আশার নাম রূপকল্প-২০২১। যেটি আজ বাস্তব রূপ লাভ করার পথে। স্বাধীনতার চার দশক পরে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন তিনি। এছাড়াও মিয়ানমার সরকারের ভয়াবহ নির্যাতনে আশ্রয়হীন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে তিনি সারা বিশ্বের মনোযোগ কেড়েছেন। মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ সারাবিশ্বে প্রশংসিত হচ্ছে।
সারাদেশের ব্যাপক উন্নয়নের জন্য রাস্তাঘাট নির্মাণ, ফোর লেন সড়ক তৈরি করা, মেট্রোরেল আজ ঢাকার বুকে বাস্তব রূপদানের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণ এসবই আজ বাস্তবের পথে। পদ্মাসেতু নির্মাণ শেখ হাসিনার অসীম সাহস ও দৃঢ়তার প্রতীক হয়ে থাকবে। দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্ব ব্যাংকের পদ্মাসেতু প্রকল্প থেকে সরে যাওয়া এবং এরপর সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ শেখ হাসিনার সাহস, শক্তি, দৃঢ়তা ও মনোবলের প্রতীক হয়ে গেছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে শেখ হাসিনা তাঁর যোগ্যতা, সততা, আত্মত্যাগ, দূরদর্শিতা ও দেশপ্রেমের উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছেন। আমাদের এই বাংলাদেশের সকল গ্লানি দুঃখ কষ্টকে যিনি একাহাতে সামলে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তিনিই হচ্ছেন শেখ হাসিনা। বদলে যাওয়া অগ্রসরমান বাংলাদেশ, যেটি আমাদের কাছে সবচেয়ে গর্বের। বঙ্গবন্ধুর জীবন ও সংগ্রাম তাঁকে উদ্দীপ্ত ও অনুপ্রাণিত করে। তিনি এক অন্তঃপ্রাণ মানবিক মানুষ। যিনি প্রতিনিয়ত মুগ্ধতা ছড়িয়ে চলেছেন। ভোরে নামাজ পড়ে দিন শুরু করেন। তিনি বিশ্বাসী এবং ধর্মপ্রাণ কিন্তু ধর্মান্ধতাকে প্রশ্রয় দেন না। তিনি সকল সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে একটি উদার এবং কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। আজকের দিনেও তিনি সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। এই সংগ্রাম অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক মুক্তির সংগ্রাম। একটি প্রগতিশীল সুখী, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার সংগ্রাম। ষড়যন্ত্রকারী ও সাম্প্রদায়িক শক্তিরাও বসে নেই কিন্তু বারংবারই পরাজিত হবে এই নির্ভীক, অকুতোভয়, সাহসী, দুর্দমনীয় নেত্রীর কাছে। জন্মদিনে সেই নেত্রীকে জানাই শুভেচ্ছা এবং তাঁর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি। জয়তু দেশরত্ন শেখ হাসিনা। বারবার ফিরে আসুক শুভ জন্মদিন।
লেখক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা
সৌজন্যেঃ সারাবাংলাডটনেট