4482
Published on সেপ্টেম্বর 24, 2020কেবল ধানকাটা, ত্রাণ বিতরণ নয় রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ মানুষের অনেক বেশি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে করোনা দুর্যোগে। দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লকডাউনের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষগুলো যেন খাবার সংকটে না পড়ে সে জন্য তাদের পাশে দাঁড়াতে দলীয় এমপি-মন্ত্রী ও নেতাকর্মীদের নির্দেশও দিয়েছেন একাধিকবার। করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলা, সংক্রমণরোধ ও করণীয় বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ১ এপ্রিল ৩১টি, ১৬ এপ্রিল ১০টি, ২০ এপ্রিল ১৩টি এবং ২৭ এপ্রিল ১০টি নির্দেশনা দেন। এর ভেতর বেশ কিছু নির্দেশনা ছিল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি।
১৫ এপ্রিল সারাদেশে ‘ত্রাণ কমিটি’ গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। সন্ধ্যায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ধানমন্ডিতে তাঁর রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবস্থানরত নেতাকর্মীদের এ বিষয়ে ৩টি নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রী এসময় গরিব, অসহায়, দুস্থ মানুষদের পাশে বিত্তবানদের দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
সারাদেশে ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে ত্রাণ কমিটি গঠন করে অসহায় মানুষের পাশের দাঁড়িয়েছে নেতাকর্মীরা। এতে করে মানুষের কাছাকাছি এসে, সংকট মোকাবিলায় কাজ করতে গিয়ে অনেক নেতাকর্মী এই মহামারীর শিকার হয়েছেন। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে মারা যাওয়া দলীয় নেতাকর্মীদের তালিকা সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলীয় সভাপতির নির্দেশনায় এ তথ্য সংগ্রহ চলমান রয়েছে। এরই মধ্যে ৫৮টি সাংগঠনিক জেলায় সংগৃহীত তথ্যে দল, সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনের মোট ৫২২ জন নেতাকর্মীর মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যেও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশ ছিল, দেশ ও মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। তিনি নিজেই কোভিড-১৯ মোকাবিলায় অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা ছিল ধানমিন্ডতে তার রাজনৈতিক কার্যালয়। সেখান থেকেই তার নির্দেশনা সারাদেশে পৌঁছাতে কাজ করে গেছেন নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও দলীয় ও সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচিতে করোনাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের পাশে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দাঁড়ানোর জন্য দলের নেতাকর্মীদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। একইসঙ্গে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে কারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, সে বিষয়েও তথ্য সংগ্রহের নির্দেশ দেন তিনি।
আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, আমরা করোনার রিপোর্ট আনছি। সংগৃহীত তথ্যে দেখা গেছে, এখন পর্যন্ত ৫৮টি জেলায় ৫২২ জন মারা গেছেন। আমাদের নেত্রী (শেখ হাসিনা) নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, সারা বাংলাদেশে আমাদের কতজন মারা গেছেন, এটার তথ্য তুলে নিয়ে আসো। সে অনুযায়ী তথ্য সংগ্রহ চলছে। আরও কয়েকটি সাংগঠনিক জেলার তথ্য পাওয়া বাকি আছে। সেগুলোর তথ্য পেলে এই তালিকা পূর্ণাঙ্গ হবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের উপদফতর সম্পাদক সায়েম খান বলেন, এ তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আমরা আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলমান রেখেছি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দফতর থেকে গত ৫ জুলাই সব সাংগঠনিক জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নিজ নিজ জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী দলীয় নেতাকর্মীদের বিস্তারিত তথ্য দিতে অনুরোধ করা হয়। দলের ডাটাবেজ টিম সারাদেশে সাংগঠনিক জেলাগুলোর সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এসব তথ্য সংগ্রহ করতে শুরু করে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ চলাকালীন এ তথ্য সংগ্রহ চলমান থাকবে।
দলের দফতর সূত্র বলছে, ডাটাবেজ টিম গত ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সব সাংগঠনিক জেলায় যোগাযোগ করে এ পর্যন্ত ৫৮টি জেলায় আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনের তথ্য সংগ্রহ করেছে। এসব জেলায় ৫২২ জন নেতাকর্মীর মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য রয়েছেন চার জন। তারা হলেন— দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান এবং উপদেষ্ঠা পরিষদ সদস্য আলহাজ্ব মকবুল হোসেন।
তথ্য অনুযায়ী ঠাকুরগাঁওয়ে একজন, লালমনিরহাট তিন জন, কুড়িগ্রাম একজন, রাজশাহী মহানগরে তিন জন, বগুড়ায় আট জন, জয়পুরহাটে এক জন, নওগাঁতে দুই জন ও পাবনায় এক জন মারা গেছেন।
সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জে একজন, সিলেটে আট জন, সিলেট মহানগরে তিন জন, মৌলভীবাজারে ১৩ জন ও সুনামগঞ্জে ৯ জন মারা গেছেন করোনা সংক্রমণে। খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গায় সাত জন, মেহেরপুরে ২২ জন, কুষ্টিয়ায় একজন, ঝিনাইদহে একজন, সাতক্ষীরায় আট জন ও বরগুনায় দুই জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী মারা গেছেন। আর বরিশাল বিভাগের মধ্যে ভোলায় একজন, পটুয়াখালীতে পাঁচ জন, বরিশালে একজন ও ঝাালকাঠীতে একজনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে।
করোনায় সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন ঢাকা বিভাগে। এই বিভাগের গাজীপুরে ১১ জন, মুন্সীগঞ্জে ২৪ জন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণে ১৭৩ জন, গোপালগঞ্জে ছয় জন, ঢাকা মহানগর উত্তরে ১৩ জন, ঢাকা জেলায় চার জন, শরীয়তপুরে তিন জন, রাজবাড়ীতে চার জন, নারায়ণগঞ্জে তিন জন, মাদারীপুরে সাত জন, টাঙ্গাইলে ১৬ জন, গাজীপুর মহানগরে পাঁচ জন মারা গেছেন।
অন্যদিকে ময়মনসিংহ বিভাগের নেত্রকোনায় তিন জন, শেরপুরে একজন ও ময়মনসিংহে চার জন মারা গেছেন। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোর মধ্যে চাঁদপুরে ১২ জন, কক্সবাজারে পাঁচ জন, বান্দরবানে দুই জন, ফেনীতে ৯ জন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলায় ৬৫ জন, কুমিল্লা উত্তর জেলায় চার জন, নোয়াখালীতে ১৪ জন, কুমিল্লা মহানগরে ৯ জন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৯ জন মারা গেছেন করোনায়।
আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মধ্যে যুবলীগের ছয় জন ও বাংলাদেশ আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের তিন জন নেতাকর্মী মারা গেছেন করোনার ছোবলে।