চিরঞ্জীব পথের দিশারী

4853

Published on সেপ্টেম্বর 6, 2020
  • Details Image

আতাউর রহমানঃ

'আমি তোমারই মাটির কন্যা, জননী বসুন্ধরা', রবীন্দ্রনাথের গানের এই লাইনটি আমার হৃদয়ে অনুরণন তোলে যখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার অবয়বটি আমার চোখের সামনে প্রতিভাত হয়। মৃত্যুঞ্জয়ী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যিনি কেবল বাঙ্গালিদেরকে পাকিস্তানীদের দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করেননি; তিনি সমগ্র বিশ্বের নিপীড়িত মানুষদেরও মুক্তিরদূত। তাঁরই জেষ্ঠ্য কন্যা পিতার হাতের আলোর বর্তিকাটি নিজ হাতে তুলে নিয়ে আমাদের আজও পথ দেখিয়ে চলছেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে নৃশংস হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ঘৃণ্যতম ঘটনা হিসিবে লিপিবদ্ধ হয়ে আছে। জগতে মানব মুক্তির ঋত্বিকগণ আগেও নিহত হয়েছেন খুনিদের জিঘাংসার অস্ত্রে। সে ছিল ব্যক্তির হাতে ব্যক্তির সংহার।

আমাদের জাতির জনকের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল তাঁরই অনুগ্রহপ্রাপ্ত খুনিচক্র, তাঁরই তথাকথিত স্বজন খন্দকার মোস্তাক এবং জিয়াউর রহমানের ইঙ্গিতে।বিদেশী দুষ্ট চক্রেরও সমর্থন ছিল এই হত্যাকাণ্ডে যারা পাকিস্তানের বিভাজন মেনে নিতে পারেননি, মেনে নিতে পারেনি বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের। খুনিচক্র জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শিশু পুত্র শেখ রাসেলকে পর্যন্ত রেহাই দেয়নি। উইলিয়াম শেকসপীয়রের 'জুলিয়াস সিজার' নাটকে রোমান জেনারেল মার্ক এন্টনি ঠান্ডা মাথায় তাঁর নির্দয় হত্যাকাণ্ডকে বর্ণনা করেছিলেন -" most unkindest cut of all" । জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ড ছিলও তাই; পৃথিবীর নির্দয়তম সংহার।

ভাগ্যক্রমে তাঁরই দুই তনয়া শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা সেই সময়ে বিদেশে থাকার কারণে সমগ্র পরিবার নিধন থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে শেখ হাসিনাই ছিলেন জ্যৈষ্ঠ। তিনি সুশিক্ষিত এবং স্বশিক্ষিত দু'ই ছিলেন। দেখতে অন্যান্য বাঙালি দুহিতার মত। সুভাষিণী, প্রিয়দর্শীনি এবং হৃদয়বান এক অপরূপা। সবার উপরে তিনি এক প্রকৃষ্ট বাঙালি নারী। ভেবে বিস্মিত হতে হয়, এই মহিয়সী নারী কিভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সমগ্র পৃথিবীতে সুসংহত করলেন। বাংলাদেশ ভৌগোলিক আয়তনে একটি ছোট দেশ যেখানে জন সংখ্যার ঘনত্ব অধিক। এই সমস্যাবহুল রাষ্ট্রকে তিনি শৃঙ্খলার পথে পরিচালিত করে দেশের ভাবমূর্তিকে বিশ্বের দরবারে উন্নীত করছেন। তিনি দেশের সবচেয়ে পুরাতন রাজনৈতিক দল, আওয়ামীলীগ; যে দলটি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সেই দলটি, শেখ হাসিনা সুযোগ্য দিক নির্দেশনায়, তাঁর প্ৰ্ৰজ্ঞা ও মেধায় দীর্ঘকাল ধরে দেশকে নেতৃত্ব প্রদান করে পৃথিবীর মানচিত্রে দেশবাসীকে সম্মানীয় স্থানে অধিষ্ঠিত করেছেন।এই কোমল হৃদয় নারী দেশের প্রয়োজনে হয়েছেন অমিত শক্তির অধিকারী এক নারী। তিনি সমগ্র দেশের নেতা, ভগ্নি এবং মাতৃরূপে আজ অধিষ্ঠিত।

বিরোধী দলের নেত্রী হিসেবে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেমন প্রজ্ঞা ও ধৈর্য্যর পরিচয় দিয়েছিলেন, তেমনি তিনি চতুর্থ বারের মত সরকার প্রধান তথা প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশকে সঠিক পথে পরিচালনা করছেন এবং নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আজ সারা বিশ্ব যখন কভিড-১৯ তথা করোনা ভাইরাসে ম্রিয়মান, আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়ার মত উন্নত দেশের সরকারেরাও হিমশিম খাচ্ছে সেখানে এই নারী প্রধানমন্ত্রী ঋজু ও দার্ঢ্যতার সঙ্গে দেশ পরিচালনা করছেন।আমাদের দেশে এই বৈশ্বিক মহাদুর্দিনেও একটি মানুষও খাদ্যাভাবে মৃত্যুবরণ করেনি। এ কেবল সম্ভব হয়েছে তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বের কারণে।তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর যথার্থ সুযোগ্য কণ্যা, যিনি বঙ্গবন্ধুর ভাষায় বাঙালি যেমন বর্ষায় ভিজে কাদামাটি হয়ে যায়, তেমনি শীতে সেই কাদামাটিই কঠিন শিলার রূপ পরিগ্রহ করে।তাঁর নেতৃত্বদানে কোন অন্যায়ের প্রশয় নেই।

আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার জীবননাশের চেষ্টা হয়েছে অগণিতবার। সাধারণ মানুষেরা কেবল জানে ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলার কথা। এছাড়া বহুবার তাঁকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কৌশলে এই পৃথিবী থেকে বাংলাদেশের শত্রুরা সরিয়ে দেবার চেষ্টা করেছে। কারণ; দেশের শত্রুরা, বাঙালি ও বাঙালিত্বের শত্রুরা জানে যে, তাঁকে এই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে পারলে এই দেশটিতে তার উজ্জ্বল ও প্রখর পরিচিতি ম্রীয়মান হয়ে যাবে এবং দেশটি আবার রাজাকারদের খপ্পরে পড়বে। আজ সমগ্র বিশ্ব তাঁর প্রজ্ঞা, সৎ সাহস, মেধা এবং ঔদার্যের কথা খুব ভালোভাবে জানে। যেখানে বাংলাদেশের লোক সংখ্যার ঘনত্বে সর্বাধিক, যেখানে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ১০-১২ লক্ষ রোহিঙ্গাকে তিনি আশ্রয় দিয়েছেন বাংলাদেশে। তিনি অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন। ভারত তাকে 'মাদার তেরেসা' পুরস্কারে ভূষিত করেছেন। তিনি আজ পৃথিবীর অন্যতম ক্ষমতাশালী ও প্রজ্ঞাবান নারী নেতা। অর্জন করেছেন 'মাদার অব হিউম্যানিটি' খেতাব। বিশ্বের ১০০-তম প্রভাবশালী নারীর মধ্যে তাঁর স্থান উপরের কোঠায়। মহাত্মা গান্ধী ডক্টরেট অব ল, পার্ল এস বার্ক পুরস্কার, ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কার, ইউনেস্কো পিস্ পুরস্কার (নারীর ক্ষমতায়নের অন্যতম প্রধান প্রবক্তা হিসেবে) সহ আরো অগণিত দেশ-বিদেশের পুরস্কার ও সম্মাননায় তিনি ভূষিত হয়েছেন। তাঁর উপর নির্মিত চলচ্চিত্র , 'হাসিনা: এ ডটার্স টেল'-এ তাঁর গড়ে উঠা, বেড়ে উঠা এবং আজকের এই অবস্থানে পৌঁছানোর কিছু পরিচয় পাওয়া যায়। নিজ দেশের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডক্টরেট উপাধিতে ভূষিত করছেন।

উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো তার প্রধান পরিচয়বহ নয়। তিনি তাঁর অনন্য জনক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মতই এক মহাপ্রাণ ও মানব দরদী মানুষ । তাঁর কাছে কর্মজীবী মানুষ, কৃষক ও শ্রমিকরাই দেশের প্রধান শক্তি ।শেখ হাসিনা মানবতায় বিশ্বাসী সহজ, সরল, মানব দরদী নেতা। দেশের সাধারন মানুষেরাই তাঁর প্রধান শক্তির উৎস ।

মৃত্যুর অল্প কিছুদিন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন- 'প্রাণের জন্য ভয় নাই, প্রাণই সত্য, তার মৃত্যু নাই'।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের জানাচ্ছেন, "আমার ঘরের কাছে একটি লোহালক্কড় জাতীয় আবর্জনার স্তূপ ছিল। তার নিচে একটা ছোট্ট করবী গাছ চাপা পড়েছিল। ওটা চাপা দেবার সময়ে দেখতে পাইনি, পরে লোহাগুলি সরিয়ে চারাটুকুর খোঁজ পাওয়া গেল না।কিছুকাল পরে হঠাৎ একদিন দেখি ঐ লোহার জঞ্জাল ভেদ করে একটি সুকুমার করবী গাছ উঠেছে একটি লাল ফুল বুকে করে। নিষ্ঠুর আঘাতে যেন বুকের রক্ত দেখিয়ে সে মধুর হেসে প্রীতির সম্ভাষণ জানাতে এল।সে বলল, ভাই মরি নি তো, আমাকে মারতে পারলে ভাই কই?
চারিদিকে পীড়নের ভিতর দিয়ে তার [রক্তকরবি নাটকের নায়িকাঃ নন্দিনীর] আত্মপ্রকাশ। ফোয়ারা যেমন সংকীর্ণতার পীড়নে হাসিতে অশ্রুতে কলধ্বনিতে উর্দ্ধে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে, তেমনি"

আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা দেশের আপামর জনসাধারণের দিকে তাকিয়ে একই কথা যেন বলছেন– এত উৎপীড়নে আমাকে মারতে পারলে কই ভাই? আমার জনকের যেমন মৃত্যু নেই, তেমনি আমারও মৃত্যু নেই। আপনার জন্মদিনে প্রাণ খুলে বলতে ইচ্ছে করে, আপনি জননী বসুন্ধরার মাটির কণ্যা। আপনি আপনার মহান পিতার মত মৃত্যুঞ্জয়ী, চিরঞ্জীব এক মহৎ বাঙালি। জয় হয়েছে আপনার। আমরা আপনার আরও জয়ের প্রতীক্ষায় আছি আমরা। 

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

লেখকঃ ২১শে পদক প্রাপ্ত অভিনেতা, নাট্যনির্দেশক ও কবি এবং বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংস্কৃতিক উপকমিটির সভাপতি এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য 

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত