1595
Published on আগস্ট 15, 2020১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট, স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস ইতিহাস লেখা হয়েছিল এই দিনে। ঘাতকদের হাতে নিহত হয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের প্রায় সকল সদস্য, আতীয়-স্বজন এবং বাসায় কর্মরত কর্মচারী ও নিরাপত্তাকর্মীরা। এই নির্মম ঘটনার পরে কেমন ছিলো বাংলাদেশ? ৭৫-পরবর্তী বাংলাদেশের কথা তুলে ধরতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আজ আয়োজন করেছিলো ’৭৫-পরবর্তী বাংলাদেশ ও কিছু অজানা কথা’ শীর্ষক একটি ওয়েবিনারের।
ওয়েবিনারের শুরুতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমরা প্রতিবছর এই দিনটি শ্রদ্ধা ভালোবাসায় পালন করতাম। যেভাবে আমরা দিনটি পালন করতাম এবার এই কোভিড ১৯ এর সময়ে তা হচ্ছে না। কিন্তু যার জন্ম না হলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না তাকে শ্রদ্ধাভাবে স্মরণ করছি।জাতির পিতা ১২ টি বছর কারাগারের অন্ধকারের প্রকোষ্ঠে কাটিয়েছেন।তাঁর ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, “তিন বছর সাত মাসে দেশটাকে যখন স্বাভাবিক করলেন তখনই ঘাতকের নির্মম বুলেটের আঘাতে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে প্রাণ দিতে হল। এরপর আবার শুরু হল জেল জুলুম হত্যা। বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকার যেন আর কেউ না থাকে সে কারণে নিষ্পাপ রাসেলকে হত্যা করেছিল এই খুনিরা।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার হাতে ঐক্যের প্রতীক হিসেবে আওয়ামী লীগের পতাকা তুলে দিয়েছিলাম। দীর্ঘ ২১ বছর পরে সেই পতাকা ক্ষমতায় আসলো। এরপরে আমরা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে জাতির পিতা হত্যা কান্ডের বিচার কার্য শুরু করা হয়। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা দিয়েছেন, এরপর তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে সততার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, পঁচাত্তরের পরে খুনিরা মাঝে মাঝেই বন্দুক উঁচিয়ে তাদের বীরত্ব জাহির করত। তখন যারা ছাত্রলীগ ছাত্র ইউনিয়ন এবং আমরা যারা রাজনৈতিক কর্মী ছিলাম তারা ডাকসুর নেতাদের নেতৃত্বে ৩২ নম্বরের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে কলাবাগান থেকেই আমাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তখন ৩২ নম্বরে যাওয়াটা প্রায় অঘোষিত নিষিদ্ধ ছিল।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু রাতের আলোতে রাজনীতি করতেন না, যা করতেন দিনের আলোতে করতেন। এবং মানুষকে সাথে নিয়ে করতেন। এক দুজন মানুষ না, তিনি লক্ষ লক্ষ মানুষ নিয়ে রাজনীতি করতেন।
ভিডিও বার্তায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে জুলিয়াস সিজার থেকে শুরু করে আমেরিকার আব্রাহাম লিংকন, ইন্ডিয়ার মাহাত্মা গান্ধীসহ যতগুলো রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে এর মধ্যে সবচেয়ে জঘন্যতম, বর্বরতম হত্যাকাণ্ড এই ১৫ অগাস্টের হত্যাকাণ্ড।
তিনি বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসের এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড কারবালাকেও হার মানিয়েছে। কারণ ওই সব হত্যাকাণ্ডে অবলা নারী, অবুঝ শিশু, আন্তঃসত্ত্বা নারীকে হত্য করা হয়নি।
নূহ-উল-আলম লেনিন বঙ্গবন্ধুকে ৫ বার হত্যাচেষ্টার ঘটনাবলি উল্লেখ করেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা সহ নানান ভাবে হত্যা চেষ্টা করা হয়। এরপরে পাকিস্তানি ২ জন নাগরিক দিয়ে হত্যাচেষ্টা চালানো হয়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বক্তব্যের শুরুতে ১৫ আগস্টের নির্মম ঘটনায় নিহতদের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন,
তিনি বলেন, “আমি তখন বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। তখন আমি ঢাকা আসি। আমরা শুনতে পেলাম এমন ভয়াবহতার কথা। আমাদের কাছে খবর এলো প্রতিবাদ নয় শুধু গ্রেফতার চলছে। কি ভয়াবহতা চোখের সামনে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে যদি দেশে ফিরে না আসতো তাহলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতো না। তাহলে কোনদিন ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের বিচার হতো না।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, সেদিন আমাদের জাতির জনকের হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে আমাদের চেতনাকে হত্যা করা হয়। পাকিস্তানি ভাবধারার রাজনীতির প্রচেষ্টা করা হয়েছিলো ৭৫ এর হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে।
শিক্ষামন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মণি এমপি বলেন, বঙ্গবন্ধু পরিবার হত্যাকান্ডের পরে পুরো জাতিকে পাকিস্তানি ভাবধারায় করার চেষ্টায় লিপ্ত ছিলেন জিয়াউর রহমান। তিনি হত্যাকান্ডের বিচারকার্য বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি বেতার বাংলাকে পাকিস্তানের আদলে রেডিও বাংলাদেশ করলেন। সর্বোপরি ৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশ ছিল অন্ধকার, যা পুরোটা পাকিস্তানের আদলে সাজাতে চেয়েছেন জিয়া। ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিতে নানা কৌশল করেছিল তৎকালীন ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমানসহ অনেকে। তার আমলে এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হয়। জারি করা হয় ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ।
তিনি বলেন, “পঁচাত্তর পরবর্তী সময়টা নতুন প্রজন্মের কাছে বোঝাটা কষ্টকর। কারণ পঁচাত্তর পরবর্তী বাংলাদেশ আর এখনকার শেখ হাসিনার বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের কাছে চিন্তা করা কঠিন বিষয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করল, হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করল, বিচার কাজ বন্ধ করা হল। পাকিস্তানের আদলে বাংলাদেশ করল তারা। ইতিহাস বিকৃত করে বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলার জন্য নানা কৌশলে ষড়যন্ত্র করা হল।
দীপু মণি বলেন “জিয়াউর রহমানের আমলটা কেমন ছিল? স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসিত করলো আর বলল এটাই বহুদলীয় গণতন্ত্র। টেলিভিশন থেকে শুরু করে সব জায়গায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হল।”
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিনিয়র সাংবাদিক অজয় দাশ গুপ্ত। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচারিত হয় এই অনুষ্ঠান। এছাড়াও আরও সম্প্রচারিত হয় বিজয় টিভি, বিডিনিউজ২৪, বাংলানিউজ২৪, বার্তা২৪, সমকাল, যুগান্তর, ইত্তেফাক, সারাবাংলা, ভোরের কাগজ, জাগোনিউজ২৪ ও বাংলাদেশ জার্নালের ফেসবুক পাতায়।