2979
Published on আগস্ট 5, 2020জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠপুত্র ও নিজের ভাই মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ কামালের বহুমুখী প্রতিভা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, আজকে কামাল যদি বেঁচে থাকতো তবে, দেশ ও সমাজকে অনেক কিছু দিতে পারতো।
বুধবার (৫ আগস্ট) বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠপুত্র মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ কামালের ৭১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে কামাল যদি বেঁচে থাকতো এই সমাজকে অনেক কিছু দিতে পারতো। কারণ তার যে বহুমুখী প্রতিভাটা সেই প্রতিভা বিকশিত হয়ে দেশের সকল অঙ্গণে অবদান রাখতে পারতো এবং সে রেখেও গেছে সে চিহ্ন।’
‘তার নতুন নতুন চিন্তাভাবনা ছিল। আজকে যদি বেঁচে থাকত হয়ত দেশকে অনেক কিছু দিতে পারত।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছোট বেলা থেকেই কামাল শুধু খেলার মধ্যে তা না, সাংসারিক কাজেও আমার মাকে সবরকম সহযোগিতা করতেন। ওই ছোট্ট বয়স থেকেই যে খুব দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতো।’
শেখ কামালের প্রতিভার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কামাল আমার চেয়ে দুই বছরের ছোট। কিন্তু তার জ্ঞান বুদ্ধি সব কিছুতে একটা পরিণতি বোধ ছিল। তার মেধা বহুমুখী ছিল। একদিকে যেমন ক্রিড়া সংগঠক, সাংস্কৃতিক জগতেও তার বহুমুখী প্রতিভা রয়েছে। স্পন্দন শিল্পগোষ্ঠী সে সৃষ্টি করেছে। ঢাকা থিয়েটার যখন হয় সেখানেও তার অবদান ছিল। সে নিজে অভিনয় করতো, গান গাইতো। সেতার বাজাতো।’
‘খেলাধুলার মাঠে তার সবচেয়ে বড় অবদান। ধানমন্ডি এলাকায় কোন রকম খেলাধুলার ব্যবস্থা ছিল না। সেই উদ্যোগ নেয় এবং ওখানকার সবাইকে নিয়ে আবাহনী গড়ে তোলে। মুক্তিযুদ্ধের পরেও কিন্তু এই আবাহনীকে আরও শক্তিশালী করে। একটা মানুষের মাঝে এই যে বহুমুখী প্রতিভা এটা সত্যিই বিরল ছিল।’
রাজনৈতিক অঙ্গণে শেখ কামালের অবদানের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘রাজনৈতিক অঙ্গণে তার ভূমিকাও অপরিসীম। …রাজনীতির ক্ষেত্রে তার যে সাহসী ভূমিকা। ৬ দফার দেবার পর থেকে যে আন্দোলন সংগ্রাম শুরু হয়; আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় যখন জাতির পিতাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ায় হয়। তারপর থেকে যেভাবে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, গণঅভ্যুর্ত্থান হয়েছে প্রতিটি সংগ্রামে কামালের অনবদ্য ভুমিকা রয়েছে।’
‘ঢাকা কলেজে পড়ার সময় সে মিছিল নিয়ে চলে আসতো বটতলা, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। সেই সাথে সাথে প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকা রেখে গেছে। এমনকি ২৫শে মার্চে রাস্তায় রাস্তায় বেরিকেড দেয়। মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করে। মুক্তিযুদ্ধের একটা সময় সরকারের নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধে সব বাহিনীর প্রধান কর্নেল আতাউল গনি ওসমানীর এডিসি হিসেবে দায়িত্বপালন করে। প্রতিটি ক্ষেত্রে তার অনবদ্য ভূমিকা রয়েছি।’
শেখ কামাল নিজের জন্য কিছু চাইতো না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘৭৫ সালের ৩০ জুলাই আমি আর রেহানা বাংলাদেশ থেকে জার্মানীর উদ্দেশে রওনা হই। জিজ্ঞেস করেছিলাম তোমাদের জন্য কি নিয়ে আসবো। আমার ডায়েরিতে লিখে দিল এডিডাস বুট নিয়ে আসবে আমার খেলোয়াড়দের জন্য।…নিজের জন্য কোনোদিন সে কিছু চাইত না। লেখাপড়া, খেলাধুলা, নাট্যচর্চা নিয়ে ব্যস্থ থাকতো। তার নাটক আমি নিজে দেখতে গেছি; উপস্থিত বক্তৃতা, তার ডিপার্টমেন্টে সুন্দর পরিবেশ সে সৃষ্টি করে রাখতো। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই তার প্রতিভা ছিল।’
আবাহনী ক্লাব এবং স্পন্দন শিল্পগোষীর কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে কামাল আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু আজকে তার সৃষ্টি আবাহনী ক্লাব এখনো আছে। স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠীর অনেকেই মারা গেছে, নতুনভাবে আবার স্পন্দন গড়ে তোলা হয়েছে। ফিরোজ শাহীর ছেলেসহ যারা উদ্যোগ নিয়েছে, তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।
শেখ কামালের সঙ্গে শৈসবের কথা স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে কামাল নেই। আমারা পিঠাপিঠি ভাই-বোন ছিলাম। একসঙ্গে ওঠাবসা, একসঙ্গে খেলাধুলা, চলাফেরা, ঝগড়াঝাটি সবই আমরা করতাম। একসঙ্গে সাইকেল চালানো, যেহেতু আমরা দুই ভাইবোন কাছাকাছি বয়সের। পুতুল খেলায় যেমন আমার সাথে ও থাকত। ওর সাথে ছোট বেলার বাকি সব খেলায় আমিও ওর সঙ্গেই খেলতাম ‘
১৫ আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগ্লাফুত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমি যে সব একদিনে এভাবে হারাব, এটা কখনোই চিন্তাও করতে পারিনি, কল্পনাও করতে পারিনি।’
১৫ আগস্টের হত্যাকারীদের বিচার করতে দীর্ঘদিন অপেক্ষা করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আপনারা একবার চিন্তা করে দেখেন? একটা মৃত্যু হলে তার বিচার দাবি করেন আমার কাছে। আর আমি কিন্তু বিচার পাইনি। আমরা বিদেশে ছিলাম। আমরা দেশে ফিরতে পারিনি। আমাদের দেশে ফিরতে বাধা দিয়েছে। এরপর আমি যখন ফিরলাম, আমি মামলা করতে পারিনি। কারণ মামলা করার কোনো অধিকার আমার ছিল না। আইন করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, যে এই মামলা আমি করতে পারবো না। ২১ বছর পর সরকারে এসে তারপর মামলা করে সেই বিচার করি।‘
ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সংসদ সদস্য সালমান ফজলুর রহমান, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ ও বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল।
অনুষ্ঠানে শহীদ শেখ কামাল ‘আলোমুখী এক প্রাণ’ শীর্ষক স্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।