15236
Published on জুলাই 4, 2020মুনতাসীর মামুনঃ
একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের স্বপ্ন, বাংলাদেশে বসবাসকারী অনেকে দেখেছেন বহুদিন। অতীতে অনেকে সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে চেয়েছেন, যদিও তারা বাঙালি ছিলেন না। গত শতকের গত ৪০ বছরেও অনেকে সে-ভূখণ্ডের কথা বলেছেন, ভারত ভাগ হওয়ার সময় সে-পরিকল্পনাও একবার হয়েছিল।
গত শতকের ষাটের দশকে মওলানা ভাসানীও বাঙালিদের জন্য স্বাধীন ভূখণ্ডের কথা বলেছেন। কিন্তু বাস্তবে সেই স্বপ্নের রূপ পেয়েছিল একেবারে একজন খাঁটি বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে। তিনিই পেরেছিলেন বাঙালিদের জন্য নির্মাণ করে দিতে একটি ভৌগোলিক রাষ্ট্রের সীমানা। বঙ্গবন্ধু বলি, জাতির জনক বলি বা শেখ মুজিব বলি– যে নামেই সম্বোধন করি না কেন, বাংলাদেশের কথা বললেই ভেসে ওঠে তার অবয়ব এবং সে-কারণেই তার স্থান নির্দিষ্ট হয়ে গেছে ইতিহাসে এবং সে-কারণেই আমরা তাকে স্মরণ করি বারবার।
১৯৭১ সালের মার্চের শুরুতেই বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির পত্তন হয়েছিল এবং তা শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে। সম্প্রতি অধ্যাপক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর ‘রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা’ শীর্ষক এক প্রবন্ধে স্পষ্ট ও যুক্তিযুক্তভাবে তা তুলে ধরেছেন। তিনি লিখেছেন, “অসহযোগ আন্দোলনের সময় যে ৩৫টি নির্দেশ শেখ মুজিব জারি করেন তা কর্তৃত্ব প্রতিরোধ এবং অস্বীকার করার মাধ্যমে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সঙ্গে সর্বাত্মক অসহযোগিতা এবং বিপরীত জনমুখী কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে বাঙালির জনসাধারণের সঙ্গে প্রশাসনের সর্বাত্মক সহযোগিতার ভিত্তি করে করে।…
বাঙালি জনসাধারণ একটি স্বতন্ত্র, বিকল্প, স্বাধীন রাষ্ট্রের বাসিন্দা হওয়ার বোধ যুদ্ধের পূর্ব থেকেই বুকের মধ্যে, হৃদয়ের মধ্যে, বুদ্ধির মধ্যে লালন করতে থাকে।”
একটি দেশ সৃষ্টিতে নেতৃত্ব দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এ-কথা ইতিহাসে থেকে যাবে কেউ এই সত্য অস্বীকার করতে চাইলেও। এর কৃতিত্ব আর কোনো রাজনৈতিক দলের নেই।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তাজউদ্দীন আহমদ ও আওয়ামী নেতৃত্বে সরকার গঠন ও মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। এ যুদ্ধের পরিসমাপ্তি হয়; বলা যেতে পারে জানুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরলে। দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু এমন একটি দেশ পেয়েছিলেন যেখানে ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ শহীদ হয়েছেন, ৫ লাখেরও বেশি নারী নির্যাতিত হয়েছেন, আহত অগণিত। রাস্তাঘাট, স্কুল সব কিছু প্রায় ধ্বংস, ছিল খাদ্য সংকটও। সেই যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে বঙ্গবন্ধু যা করেছিলেন তা বিস্ময়কর। মাত্র ৯ মাসে সংবিধান দিয়েছিলেন একটি জাতিকে। যেখানে সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে মূলনীতি করা হয়েছিল এবং যুদ্ধাপরাধ বিচারের ধারাও সংযোজিত হয়েছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা বিরল। আজকের বাংলাদেশের ভিত্তি তিনিই করেছিলেন।
আজ বাংলাদেশে যত প্রতিষ্ঠান কার্যকর দেখছি এবং অনেক আইন ও পুনর্বাসন প্রকল্প বঙ্গবন্ধু সরকারই গ্রহণ করেছিল। আমরা সেগুলো বেমালুম ভুলে গেছি। একদিক শূন্য থেকে দেশ গড়া, আন্তর্জাতিক চাপ, মানুষের মহাপ্রত্যাশা– সব মিলে সরকারকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলেছিল। কিন্তু তার মধ্যেই এসব প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি গড়া হয়েছিল। আমি এখানে তার ৮৫টির তালিকা দিচ্ছি–
বঙ্গবন্ধুর সরকার আমলে গৃহীত পদক্ষেপ:
০১. অস্থায়ী শাসনতন্ত্র আদেশ জারি, ১১ জানুয়ারি ১৯৭২, বাংলা ২৭ পৌষ ১৩৭৮
০২. আদমজী জুট মিল উদ্বোধন, ১৯৭২, দৈনিক আজাদ, ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২
০৩. আমদানি নীতি ঘোষণা, ১৯৭২ সালের ২৪ এপ্রিল
০৪. ইসলামিক ফাউন্ডেশন গঠন, ১৯৭৫ সালের ২২ মার্চ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন অ্যাক্ট-১৯৭৫, পাস হয় ১৪ জুলাই ১৯৭৫
০৫. গণপরিষদ অধিবেশন জারি, ১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল
০৬. গণপরিষদ আদেশ জারি, ১৯৭২ সালের ২৩ মার্চ
০৭. চতুর্থ সংশোধনী, ২৫ জানুয়ারি ১৯৭৫
০৮. জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ গঠন, ২৫ জানুয়ারি ১৯৭২
০৯. জাতীয় পতাকা চূড়ান্তকরণ, ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারি
১০. জাতীয় রক্ষীবাহিনী, ১৯৭২ সালের ৭ মার্চ
১১. জাতীয় সংগীত চূড়ান্তকরণ, ১৩ জানুয়ারি ১৯৭২
১২. জাতীয়করণ, ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ
১৩. তুলা উন্নয়ন বোর্ড গঠন, ১৯৭২ সালের ১৪ ডিসেম্বর
১৪. তৃতীয় সংশোধনী, ২৮ নভেম্বর ১৯৭৪
১৫. বাকশাল, ১৯৭৫ সালের ৬ জুন
১৬. দ্বিতীয় সংশোধনী, ২২ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩
১৭. নির্বাচন কমিশন আদেশ জারি, ২৩ মার্চ ১৯৭২ সালে প্রদত্ত এবং সরকারি হ্যান্ড আউটে
১৮. ন্যাশনাল ডাক্তারদের রেজিস্ট্রেশন প্রদানের নির্দেশ, ১২ জানুয়ারি ১৯৭৩
১৯. পরিত্যক্ত সম্পত্তি প্রসঙ্গ, ১৯৭২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির ১৬ নম্বর আদেশবলে
২০. পার্বত্য চট্টগ্রামকে ৩টি জেলায় বিভক্ত ১৯৭৫, দৈনিক ইত্তেফাক, ২৮ জানুয়ারি ১৯৭৫
২১. প্রথম জাতীয় শোক দিবস, ১৩ জানুয়ারি ১৯৭২
২২. প্রথম বাংলায় গেজেট প্রকাশ, ১৪ জানুয়ারি ১৯৭২
২৩. প্রথম বাজেট, ১৯৭৩ সালের ২ জুন
২৪. বাংলাদেশ সরকার (চাকরি) আদেশ ১৯৭২ (রাষ্ট্রপতির ৯নং আদেশ, ১৯৭২)
২৫. বাংলাদেশ সরকার (চাকরি বাছাই) আদেশ, ১৯৭২ (রাষ্ট্রপতির ৬৭নং আদেশ, ১৯৭২)
২৬. বাংলাদেশ সরকার (চাকরি বাছাই (সংশোধনী) আদেশ, ১৯৭২ (রাষ্ট্রপতির ৯২নং আদেশ, ১৯৭২)
২৭. প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশনস্ অর্ডিন্যান্স বাতিল, ২৮ আগস্ট ১৯৭৩
২৮. বঙ্গবন্ধুর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক, ১৩ জানুয়ারি ১৯৭২
২৯. বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স একাডেমি, ১৯৭৩
৩০. বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদ, ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশ ৩২-এর মাধ্যমে
৩১. বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, ২৭নং আদেশবলে ১৯৭৩ সালে
৩২. বাংলাদেশ জুট মিল কর্পোরেশন, ১৭ এপ্রিল ১৯৭২
৩৩. বাংলাদেশ দালাল (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল) অধ্যাদেশ, ১৯৭২, ২৪.০১.১৯৭২
৩৪. বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন, ১৯৭৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি
৩৫. বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, ১৯৭৪ সালের আগস্ট মাসে
৩৬. বাংলাদেশ বিমান বাহিনী, মুজিবনগর সরকার ১৯৭১ সালের ৮ অক্টোবর
৩৭. বাংলাদেশ ব্যাংক (জাতীয়করণ) আদেশ পাস, ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ (রাষ্ট্রপতির আদেশ নং-২৬, ১৯৭২)
৩৮. বাংলাদেশ ভূমি মালিকানা (সীমিতকরণ) আদেশ ১৯৭২, রাষ্ট্রপতির ৯৮নং আদেশবলে
৩৯. বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি, ১৯৭৪ সালের ১১ জানুয়ারি কুমিল্লায়
৪০. বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি
৪১. বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক, ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির ১২৯নং আদেশবলে
৪২. বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল, ১৯৭২ সালের মার্চ
৪৩. বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী (অবসর) আদেশ ১৯৭২
৪৪. বাংলাদেশ হাইকোর্ট আদেশ জারি, ১৯৭২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি
৪৫. বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন, ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতির ৭নং আদেশবলে
৪৬. বাংলাদেশ হৃত সম্পত্তি পুনরুদ্ধার আদেশ ১৯৭২, ১৯৭২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি
৪৭. বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, ১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতির ১২৬ নম্বর আদেশবলে
৪৮. বীমা কর্পোরেশন আদেশ জারি, ২৬ মার্চ ১৯৭২
৪৯. বীরাঙ্গনাদের পুনর্বাসন ও বঙ্গবন্ধু, ১৯৭২ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি
৫০. বেতবুনিয়া উপকেন্দ্র স্থাপন, ১৪ জুন ১৯৭৫
৫১. মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট, ১৯৭২ সালের সেপ্টেম্বর, রাষ্ট্রপতির আদেশ নম্বর ৯৫
৫২. মুক্তিযুদ্ধের পদক প্রদান, ১৯৭৩ সালের ১৫ জানুয়ারি
৫৩. মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় খেতাব, ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর
৫৪. যৌথ নদী কমিশন, ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে
৫৫. রাষ্ট্রপতি সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন, ২৫ জানুয়ারি ১৯৭২
৫৬. রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব (তৃতীয় সংশোধনী) আদেশ, ৫ আগস্ট ১৯৭২, রাষ্ট্রপতির আদেশ নং-৯৫
৫৭. শিপিং কর্পোরেশন গঠন, ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি
৫৮. শিল্পকলা একাডেমি, ১৯৭৪ সালে ৩১নং ১৯৭৪ অ্যাক্টের
৫৯. সংবিধানের প্রথম সংশোধনী, ১৯৭৩ সালের ১৫ জুলাই
৬০. সরকারি অফিসে বিলাসিতা বন্ধে নির্দেশ, ১৯৭২, দৈনিক আজাদ, ৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২
৬১. সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ব্যবহারের জন্য নির্দেশ, ১৯৭২ সালের ২৫ এপ্রিল
৬২. সশস্ত্র বাহিনী পুনর্গঠন, ১৯৭২, ০৬.০৩.৭২, ০৮.০৪.৭২
৬৩. সস্তায় রেডিও-টিভি দেওয়ার ব্যবস্থা, ২ জুলাই ১৯৭৫
৬৪. সিভিল সার্ভেন্ট ট্রেনিং একাডেমি স্থাপন, দৈনিক পূর্বদেশ, ৯ এপ্রিল ১৯৭৩
৬৫. স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বেতন কমিশন, ১৯৭২ সালের ১৩ জুলাই
৬৬. প্রশাসন ও চাকরি পুনর্গঠন কমিটি, ১৯৭২ সালের ১৫ মার্চ
৬৭. বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম), ১৯৭৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর
৬৮. বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ, ১৯৭২
৬৯. বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি
৭০. বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (বিমক), ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতির ১০ নম্বর আদেশবলে
৭১. বাংলাদেশ বার কাউন্সিল, ১৯৭২ সালের ৪৬নং আদেশবলে
৭২. ঢাকা কর্পোরেশন সৃষ্টি, ১৯৭৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি
৭৩. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ, ১৯৭৩
৭৪. ঘোড়দৌড় নিষেধ করে আদেশ, ১৯৭২ সালের ১৫ জানুয়ারি
৭৫. আন্তর্জাতিক অপরাধসমূহ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ সালের ১৯ জুলাই
৭৬. জাতীয় প্রতীক, ১৯৭২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি
৭৭. বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, ১৯৭৩
৭৮. সাধারণ ক্ষমা, ১৯৭৩ সালের ৩০ নভেম্বর
৭৯. বাংলাদেশ পরমাণু কৃষ্টি ইনস্টিটিউট, ১৯৭৩
৮০. বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন, ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির ৩৪নং আদেশবলে
৮১. শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, ১৯৭২ সালের ২২ ডিসেম্বর
৮২. বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা, ১২৮, ১৯৭২-এর অধীনে ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর
৮৩. শিশু আইন, ১৯৭৪ সালের ২২ জুন চিল্ড্রেন অ্যাক্ট
৮৪. ২৯ ব্যাংক বীমা কোম্পানি সরকারি খাতে গ্রহণ, ১৯৭৩ সালের ১ জানুয়ারি
৮৫. ২৩ মার্চ ৭১ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ছুটি
আত্মবিশ্বাস আর সাহসও ছিল তার। দলের ব্যাপ্তি, মানুষের প্রতি ও নিজের প্রতি আস্থা তা আরও বাড়িয়েছিল। সে-কারণে ৬-দফাকে এক-দফায় পরিণত করতে পেরেছিলেন। এ লক্ষ্যে যে তিনি অবিচল ছিলেন, সঙ্গে সঙ্গে এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে তার যে সাহস ও আত্মবিশ্বাস ছিল, তা ফুটে ওঠে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময়।
১৯৭২ সালে পাকিস্তান থেকে মুক্ত হওয়ার পর তার স্বপ্নের বাংলাদেশে ফিরলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। এখন তার ভূমিকা আর আন্দোলনকারীর নয়। এখন তার ভূমিকা যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন ‘সোনার বাংলা’র তা পূরণ করার এবং ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্টের পূর্ব পর্যন্ত সে-লক্ষ্যেই অক্লান্তভাবে কাজ করে গেছেন। ঐ সময়ের মধ্যেই দেশের পুনর্গঠন শুরু হয় এবং আমরা সংবিধান লাভ করি।
বঙ্গবন্ধু বা তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব ছিল দেশকে একটি শাসনতন্ত্র প্রদান। আর কোনো দেশে এ-রকম একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর এত দ্রুত একটি শাসনতন্ত্র প্রদান সম্ভব হয়েছে বলে জানা নেই। এ শাসনতন্ত্রে রাষ্ট্রের ৪টি মূলনীতি ঘোষণা করা হয়েছিল, তৎকালীন পরিস্থিতিতে তা খানিকটা র্যাডিক্যালও বলা যেতে পারে। শাসনতন্ত্রের মূলনীতিসমূহ ছিল– গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ। মূলত মুক্তিযুদ্ধ যে ক’টি কারণে হয়েছিল শাসনতন্ত্রের মূলনীতিতে তাই বিধৃত হয়েছিল– বিশেষ করে ধর্মনিরপেক্ষতা। যে কারণে প্রতিক্রিয়াশীলরা প্রথমেই মূলনীতিসমূহ, বিশেষ করে ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর আঘাত হেনেছিলেন। এছাড়া শাসনতন্ত্রে বিধৃত হয়েছিল একজন মানুষের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকারসমূহ, রাষ্ট্রের দর্শন। অন্যকথায় এভাবে বিষয়টি দেখা যেতে পারে, মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল অসাম্প্রদায়িক সিভিল সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য। আর ১৯৭২ সালের শাসনতন্ত্রে বিধৃত হয়েছিল সিভিল সমাজের প্রতিষ্ঠানসমূহ। এক কথায় এই শাসনতন্ত্র বাংলাদেশে সিভিল সমাজের ভিত্তি দৃঢ়ভাবে পত্তন করতে চেয়েছিল।
শেখ মুজিবের হত্যার প্রায় চার দশক পর মানুষ আবার অনুভব করেছে শেখ মুজিব কী ছিলেন। কেন তিনি ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি পেয়েছিলেন। মানুষ আজ বুঝতে পেরেছে, তিনি বাঙালিকে বড় করতে চেয়েছিলেন, আর মানুষকে বড় করার একটি পথ নিরস্ত্র মানুষের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া। তার হত্যার পর কত দল ও কত জন শাসন করল বাংলাদেশ; কিন্তু মানুষের মন থেকে তো তাকে মোছা গেল না, যে চেষ্টা এখনও অব্যাহত। কারণ, আজ আমরা দেখছি, আমরা একবারই সে মর্যাদা পেয়েছিলাম, সে-পথ একবারই উন্মুক্ত হয়েছিল আমাদের জন্য ১৯৭১ সালে, যখন শেখ মুজিবুর রহমান নামে একজন নিরস্ত্র বাঙালির নেতৃত্বে আমরা সব ধরনের সশস্ত্রদের হটিয়ে দিয়েছিলাম।
এ জন্য আমি গর্বিত, আমার উত্তরসূরিও হবে গর্বিত। বাঙালি ও বাংলাদেশ নামটিই বেঁচে থাকবে সে-জন্য।
মুল লেখাঃ বিডিনিউজ২৪ এ প্রকাশিত মুনতাসীর মামুনের লেখা ‘আওয়ামী লীগ কী করেছে আমাদের জন্য’ শীর্ষক প্রবন্ধের অংশবিশেষ, বাক্য অর্থবহ করার নিমিত্তে আংশিক পরিমার্জিত।