3271
Published on জুন 7, 2020জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফা দাবি উথাপণের পর এদেশের মানুষের জেগে ওঠার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘৬ দফা দাবিটা জনগণ এমন ভাবে লুফে নিয়েছিল। কারণ বাংলার মানুষ এটা নিয়েছিল তাদের বাঁচার অধিকার হিসেবে।’
রোববার (০৭ জুন) ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি আয়োজিত অনলাইন আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘৬ দফা কেন দেওয়া হয়েছিল? আমাদের মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এ দাবি উথাপণ করেছিলেন। ’
তিনি বলেন, ‘৬ দফা দাবিটা জনগণ এমন ভাবে লুফে নিয়েছিল, আমি জানি না পৃথিবীর কোন দেশে কোন দাবি এত দ্রুত এত বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে কিনা। কারণ বাংলার মানুষ এটা নিয়েছিল তাদের বাঁচার অধিকার হিসেবে। এটা মূলতই তাই ছিল। তার কারণ আমরা বাঙালিরা পাকিস্তান নাম দেশ হওয়ার পর আমরা দেখেছি বাঙালিদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার যে চেষ্টা।’
৬ দফা দাবির পটভূমি তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘এর একটা পটভূমি আছে। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ হয়। আমরা পূর্ববঙ্গ অর্থাৎ তদানিন্তন পূর্ববঙ্গ সম্পূর্ণ অরক্ষিত। একটা প্রদেশ পাকিস্তানের তাকে রক্ষার করার কোন ব্যবস্থাই পাকিস্তানি শাসকরা নেয়নি। সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায় যেন মনে হলো ভারতের দয়ার ওপর আমরা পড়ে আছি। এই যুদ্ধের পর একটি গোলটেবিল বৈঠক ডাকা হয় লাহরে। সর্বদলীয় বিরোধী দল এই গোলটেবিল বৈঠক ডাকে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেই গোলটেবিল বৈঠকে জাতির পিতা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি তাদের সঙ্গে নিয়ে সেখানে যান। সেখানে তিনি এই ৬ দফা দাবি উথাপণ করেন। যে দাবির মূল বক্তব্য ছিল যে প্রদেশ হিসেবে এই দেশের, আমাদের দেশের মানুষকে সুরক্ষিত করা। অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বি করা। এই অঞ্চলের আর্ত-সামাজিক উন্নতি করা এবং প্রতিরক্ষার দিক থেকে এই অঞ্চলকে সুরক্ষিত করা। সেই সাথে সাথে বাঙালির যে অস্তিত্বের দাবি সে দাবিটা তুলে ধরা।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পাকিস্তান ভারত তাসখন্দ চুক্তি করলো সেখানেও আমাদের পূর্ববঙ্গ ছিল সম্পূর্ণ উপেক্ষিত। তারপর ৬ দফা যখন দেওয়া হলো তখন এদেশের মানুষ জেগে উঠলো। এটাই ছিল সবচেয়ে বড় বিষয়।’
‘এদেশের মানুষ এত দ্রুত ৬ দফাকে শুধু সমর্থনই করেনি তারা সায়ত্বশাসনের দাবিকে নিজের দাবি হিসেবে গ্রহণ করলো। বাংলার মানুষের মুক্তির দাবি হিসেবে এই ৬ দফা দাবি উদ্ভাসিত হলো।’
তিনি বলেন, ‘এটা যে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রদেশের সায়ত্বশাসনের দাবি ছিল সে বিষয়টি স্পষ্ট করে তুলে ধরেন। এটা শুধু আমাদের না, প্রতিটি প্রদেশই এই সুবিধা পাবে।’
৬ দফা দাবি আদায়ের আন্দোলন দমনে তৎকালিন পাকিস্তান সরকারের নির্যাতনের কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘পাকিস্তানি শাসকরা থেমে থাকেনি। যখনই প্রতিবাদ হয়েছে অগণিত নেতা-কর্মী, সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার করেছে, অত্যাচার করেছে। কারাগারের রোজনামচা বইটা পড়লে দেখবেন সেখানে কিভাবে অত্যাচার নির্যাতন চলেছিল।’
দমন-নিপিড়নে ৬ দফা দাবি আরো জোরালো হওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই আন্দোলন সংগ্রামের পথ ধরে যখন বাংলাদেশের মানুষ এগিয়ে যাচ্ছে তখন আওয়ামী লীগে যিনি সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাচ্ছেন তাকেই গ্রেফতার করা হচ্ছে। এভাবে অত্যাচার নির্যাতন চলেছে। কিন্তু সাথে সাথে বাংলাদেশের মানুষ আরও বেশি সচেতন হচ্ছে, আরও বেশি সুসংগঠিত হচ্ছে, ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। অবশ্যই কিছু দালাল ছাড়া। সব সময় কিছু দালাল থাকে এটাই সমস্যা। ’
‘এই দাবি যখন সেই সভায় তুলে ধরতে যান তখনও অনেকেই বাধা দেয়। দুঃখজনক হলো আমাদের বাংলাদেশের একজন নেতা অন্য দলের বাধা দিয়েছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৬৮ সালে ১৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাওয়া হল। এবং তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দেওয়া হলো আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে এই মামলা পরিচিতি পেয়েছিল। আসলে মামলাটা ছিল রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব। সেখানে বঙ্গবন্ধুকে এক নম্বর আসামী করে এবং সামরিক-বেসামরিক ৩৪ জনকে মামলার আসামী করা হয়। … এই মামলা যখন শুরু হলো দেশের মানুষ আবার বিক্ষোভে ফেটে পড়লো। এক পর্যায়ে আইয়্যুব খান মামলা প্রত্যাহার করে সবাইকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। শেখ মুজিব মুক্তি পেয়ে জনতার কাছে ফিরে এলেন।’
৬ দফা দাবি আদায়ের আন্দোলনের পথ ধরে বাংলাদেশ স্বাধীনতার পথে এগিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘৬ দফার ভিত্তিতে ৭০ এর নির্বাচন। যে নির্বাচনে সমগ্র পাকিস্তানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সংখ্যা ঘরিষ্টতা পায়। ৬ দফা এবং ৭ই জুন এটা আমাদের, এই যে স্বাধীনতা আমরা অর্জন করেছি এর জন্য এই দিবসটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
‘কারণ আমরা দেখেছি ১৯৫২ সালে রক্ত দিয়ে আমাদের রক্তের অক্ষরে বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে হয়েছে। আবার আমাদের সায়ত্ব শাসনের আন্দোলন সেখানেও রক্ত দিয়ে লিখে যেতে হয়েছে আমরা আমাদের স্বাধিকার চাই।’
পাকিস্তানীদের শোষণ-বঞ্চনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অর্থনৈতিক ভাবে এই অঞ্চল থেকে সমস্ত অর্থ উপার্জন হতো কিন্তু তার সিংহভাগ ব্যয় হতো ঐ পশ্চিম পাকিস্তানে। … তাদের উন্নতি হচ্ছে অথচ আমরা অবহেলিত বঞ্চিত। এই বঞ্চনার কথা তিনি বার বার তুলে ধরেছেন।’
ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকারটা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। ১৯৪৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তখনই তিনি উদ্যোগ নিলেন এবং বাংলাকে মাতৃভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার আন্দোলন তিনি শুরু করলেন। সেই আন্দোলনের পথ ধরে বার বার দেখেছি আমাদের সাংস্কৃতিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। প্রতিবাদে তিনি (বঙ্গবন্ধু) সব সময় সংগ্রাম করেছেন। ’
অনলাইনে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
সঞ্চালনা করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি’র প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।