9273
Published on অক্টোবর 3, 2019প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ এবং মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানের পর সমাজ থেকে বৈষম্য দূর করতেই তিনি দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেন।
জাতিসংঘ অধিবেশনের ফাঁকে নিউ ইয়র্কে ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এভাবেই নিজের সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আমাদের দলের কে, কী- সেটা আমি দেখতে চাই না। আমার আত্মীয় পরিজন- আমি দেখতে চাই না। কে কত বেশি উচ্চবিত্ত সেটা আমি দেখতে চাই না। অনিয়ম যেখানে আছে, দুর্নীতি যেখানে আছে, বা আমাদের দেশকে ফাঁকি দিয়ে যারা কিছু করতে চাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।”
শেখ হাসিনার কাছে ভয়েস অব আমেরিকা জানতে চেয়েছিল, দুর্নীতিবিরোধী এই অভিযানের সিদ্ধান্ত তিনি কীভাবে নিলেন। কেনইবা এই শুদ্ধি অভিযান শুরু করতে হল।
উত্তর দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি আমলে দেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিস্তার ঘটার পাশাপাশি অস্ত্র চোরাচালান ও মুদ্রা পাচারের প্রসঙ্গ টানেন।
তিনি বলেন, “এই যে ঘটনাগুলো হচ্ছিল, আমরা কিন্তু সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা দিয়ে অভিযান শুরু করলাম
এবং সন্ত্রাস আমরা দমন করলাম। এটা যে শুধু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে তা নয়, আমার সব কাজে আমি জনগণকে সম্পৃক্ত করি।
“আমি দেশবাসীকে আহ্বান করলাম এবং সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে… আপনি অভিভাবক বলেন, বাবা-মা বলেন, শিক্ষক বলেন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বলেন, পুলিশ, গোয়েন্দা সবাইকে এক করে বললাম, আমাদের জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে হবে কারণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা আমাদের লক্ষ্য।”
জঙ্গি দমন অভিযানের পরপরই মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “একটা পর্যায়ে এসে মাদক আমরা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান এখনও চলছে।
“কিন্তু সেই সাথে আমি মনে করলাম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান যদি না চলাই, আমাদের সমাজে একটা বিরাট বৈষম্য সৃষ্টি হয়ে যাবে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমাজে একজন যখন সৎভাবে জীবন যাপন করছে, আরেকজন একই কাজ করেও দুর্নীতির মাধ্যমে বিশাল অর্থের মালিক হচ্ছে। তাদের জীবনযাপনে সেই বিত্তের প্রকাশ ঘটানো হচ্ছে ‘অসুস্থভাবে’। এর প্রভাব পড়ছে ছেলেমেয়েদের ওপর।
আবার সরকার যখন ‘অক্লান্ত পরিশ্রম’ করে উন্নয়ন প্রকল্প নিচ্ছে, তার যতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে, তাতে দেশের উন্নতি হচ্ছে ঠিক। কিন্তু অসৎ ব্যক্তিদের কারণে সেখানে দুর্নীতি হলে সেই বরাদ্দ পুরোপুরি কাজে লাগছে না।
“আমার যেটা চিন্তা, আমরা যতটুকু উন্নয়নের কাজ করছি বা যতটুকু বরাদ্দ দিচ্ছি, যথাযথভাবে সেটা যদি কাজে লাগাতে পারি, আমাদের দেশ আরো উন্নতি করবে, সমাজের এই বৈষম্য দূর হবে। আমাদের বাচ্চাদের তখন লোভ-লালসার দিকে মনটা যাবে না তারা একটা আদর্শ নিয়ে বড় হবে, একটা নীতি নিয়ে বড় হবে।”
আদর্শ আর নীতি নিয়ে চলতে পারলেই সমাজ এগিয়ে যাবে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “সেই চিন্তা থেকেই কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি বললাম যে কোথায় একটা কিন্তু রয়ে গেছে। সেটা খুঁজে বের করতে হবে এবং তার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চালাতে হবে, ব্যবস্থা নিতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রী বরেন, “সম্পদ দেখানোর একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা, একটা অসুস্থ মানসিকতা…. এখান থেকে আমাদের সমাজটা রক্ষা করতে হবে।”
রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে এবার জাতিসংঘ সফরে প্রধানমন্ত্রী কেমন সাড়া পেলেন- তা জানতে চেয়েছিল ভয়েস অব আমেরিকা।
উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, “সমস্যাটা এখন প্রায় তৃতীয় বর্ষে পদার্পণ করেছে। আমরা মিয়ানমারের সাথে একটু আলোচনা শুরু করেছিলাম, চুক্তিও আমাদের সাথে হয়েছে। কিন্তু যতবারই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, তালিকা হচ্ছে, তখনই সমস্যা একটা দেখা দিচ্ছে, আর ফেরত যাচ্ছে না।”
নিউ ইয়র্কে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আলোচনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “যাদের সাথে আমার আলোচনা হয়েছে, তারা সকলেই সহানুভূতিশীল। মিয়ানমার তাদেরকে ফিরিয়ে নেবে এটাই সবাই আশা করে। কিন্তু মিয়ানমারের কাছ থেকে যতটা সাড়া পাওয়ার কথা, ততটা পাই না।”
এ সমস্যা মিয়ানমারের সৃষ্টি করা এবং সমাধান তাদেরই করতে হবে মন্তব্য করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মিয়ানমারের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হচ্ছে, কিন্তু তারপরও মিয়ানমার তাদের ফিরিয়ে নিচ্ছে না।”
মিয়ানমার সরকারের এই ভূমিকার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমার কাছে খুব অবাক লাগে। মিয়ানমার সরকারের কি কোনো আত্মসম্মানবোধ নেই? তাদের নাগরিক অন্য দেশে রিফিউজ হিসেবে থাকছে। এতে যে কোনো সময় আরো খারাপ পরিস্থিতি হতে পারে। সুতরাং তাদের উচিত ব্যবস্থা করা “
গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ যখন ৫০ বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে, তখনও কেন একটি শক্তিশালী বিরোধী দল গড়ে উঠল না- সেই প্রশ্ন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সামনে রেখেছিল ভয়েস অব আমেরিকা।
উত্তরে তিনি বলেন, সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াই করে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আবারও সেই সামরিক শাসকরাই ক্ষমতায় আসে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকতে পারেনি বলেই শক্তিশালী বিরোধী দল গড়ে ওঠা সম্ভব হয়নি।
“এখানে সমস্যাটা হচ্ছে. যখন একটা মিলিটারি ডিক্টেটর সংবিধান লংঘন করে ক্ষমতা দখল করে, প্রথমে তারা রাজনীতিবিদদের যথেষ্ট গালিগালাজ করেই আসে, দোষারোপ করেই আসে। এরপর নিজেরাই রাজনীতিবিদ হয়ে যায়, একটা দল গঠন করে।
“ক্ষমতায় বসে থেকে ক্ষমতার সুযোগ-সুবিধা নিয়ে তারপর যখন একটা দল গঠন করে এবং সেই দল নিয়ে নির্বাচনী প্রহসন দিয়ে তারা ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার চেষ্টা করে।”
শেখ হাসিনা বলেন, “অন্য দলগুলো মানুষের আস্থা-বিশ্বাস হারিয়েছে। সেখানে আওয়ামী লীগ মানুষের আস্থা অর্জন করেছে বলেই আমরা বারবার ক্ষমতায় আসতে পেরেছি।”