4246
Published on সেপ্টেম্বর 26, 2019টেকসই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে স্থানীয় এবং বৈশ্বিক পর্যায়ে অর্থবহ অংশীদারিত্ব এবং সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই গ্রহ এবং তার অধিবাসীদের প্রতি অঙ্গীকারে অটুট থাকতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এসডিজি বাস্তবায়নে কার্যকর অংশীদারিত্ব এবং সহযোগিতা স্থানীয় এবং বৈশ্বিক উভয় পর্যায়ে সমভাবেই প্রয়োজনীয়। কাজেই আমি সকল বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আমাদের অঙ্গীকারে অটুট থাকার অনুরোধ জানাব, যা আমরা এই গ্রহ এবং মানুষের জন্য করেছি।’
জাতিসংঘ সদর দপ্তরের ট্রাস্টিশিপ কাউন্সিলে আজ বিকেলে টেকসই উন্নয়নের (এসডিজি সম্মেলন) উপর উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরামে ‘লোকালাইজিং দ্য এসডিজিস’ এ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কো-মডারেটরের দায়িত্ব পালনকালে ভাষণে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী আস্থা প্রকাশ করে বলেন, ‘ধারণার বিনিময় উন্নয়ন যাত্রা সম্পর্কে আমাদের বোধগম্যতাকে বাড়িয়ে তুলবে এবং এটি আমাদের নিজস্ব প্রসঙ্গে সেরা অনুশীলনগুলোর প্রতিরূপে সহায়তা করবে।’
তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত আমরা একত্রে এসডিজির সুবিধাগুলোকে সবচেয়ে প্রান্তিক জনগণের কাছে পৌঁছাতে পারব, যাদের অবস্থান প্রায়শই সমাজের একেবারে তলানিতে থাকে’।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০০ সালে সহস্রাব্দের ঘোষণাপত্র এবং ২০১৫ সালে এসডিজি গ্রহণের অনুষ্ঠানের সময় তিনি ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত থাকার সুযোগ পেয়েছিলেন। এসডিজি হল মানুষের প্রয়োজন, আকাঙ্খা এবং অধিকারের বহিঃপ্রকাশ।
তিনি বলেন, ‘এসডিজি স্থানীয়করণ হল স্থানীয় স্তরে কৌশলগুলো বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণের প্রক্রিয়া যা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগগুলো প্রতিফলিত করে।
তিনি বলেন, ‘স্থানীয়করণ লক্ষ্যকে স্থানীয় বাস্তবতা ও আকাঙ্খায় রূপান্তরিত করে। এটি ব্যক্তি হিসেবে উদ্বুদ্ধকরণ এবং বাস্তবায়নের জন্য একটি সংহত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই পদ্ধতির প্রচার করে’।
বৈশ্বিক এজেন্ডার সুবিধা গ্রহণের চ্যালেঞ্জ হল স্থানীয় পর্যায়ে শেষ ব্যক্তির কাছে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং স্থানীয়করণের বিষয়টি।
এসডিজি’র জন্য স্থানীয়করণ কৌশলের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এসডিজির লক্ষ্যসমূহকে সম্পৃক্ত করেছি এবং আবার আমাদের ২০২১ সাল থেকে ২০২৫ পর্যন্ত অনুষ্ঠেয় ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাতেও জুড়ে দিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের কাজে লাগিয়ে ‘হোল সোসাইটি অ্যাপ্রোচ’ গ্রহণ করেছে, বিশেষ করে তাদের জন্য যারা একেবারে নিচুতে অবস্থান করছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারি দপ্তরের জন্য তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব এবং কাজগুলো চিহ্নিত করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দপ্তরগুলো নিজস্ব অ্যাকশন প্লানগুলো সুসমন্বিতভাবে বাস্তবায়ন করছে। আমরা অভিনব পর্যবেক্ষণ কাঠামোও তৈরী করেছি এবং যার জন্য আমরা বাস্তব সময়ে অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করতে একটি অনলাইন এসডিজি ট্র্যাকার চালু করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়া এবং এর ব্যবহার দ্রুত করতে জাতীয় তথ্য সমন্বয় কমিটি গঠন করেছে। তিনি বলেন, আমরা সম্পদ সংগ্রহ এবং ইনোভেটিভ ফিনান্সিং বাস্তবে রূপ দিতে বেসরকারি সেক্টর ও দায়িত্বশীল সুশিল সমাজকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছি। তবে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো আমাদেরও বহুমুখি ও দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন অংশীদারদের সমর্থন প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এসডিজি বাস্তবায়নে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৪০টি সূচক নির্ধারণ করেছে। এর বাইরে ১৭টি লক্ষ্য থেকে ৩৯টি সূচক বাছাই করা হয়েছে। বাকি একটি সূচক জরুরি প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে স্থানীয় প্রশাসন সনাক্ত করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, সকল পর্যায়ে সকল স্থানীয় স্টেকহোল্ডারদের ক্ষমতায়নে এসডিজি স্থানীয়করণ করাই হচ্ছে একমাত্র প্রক্রিয়া। এর লক্ষ্যই হচ্ছে টেকসই উন্নয়নকে স্থানীয় প্রয়োজন ও প্রত্যাশা পূরণে আরো কার্যকর প্রাসঙ্গিক করা। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার এবং পৌরসভাগুলো স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, ক্ষমতায়ন ও সমাজ সেবা বিশেষ করে সময় সংকটে হবে মূল চালিকা শক্তি। তারা আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করবে। স্থানীয় সরকার এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অ্যাম্বেসেডরের ভূমিকা পালন করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, এসডিজির সুফল জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে স্থানীয়দের ক্ষমতায়নে ২০৩০ এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারি। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ২০৩০ এজেন্ডার লক্ষ্য জনগণের কাছে অর্থবহ করে তুলতে পারে। কার্যকর ফলাফল বয়ে আনতে স্থানীয় নেতাদের জন্য পরিবেশ সৃষ্টি করতে আমাদের সক্ষমতায় ২০৩০ এজেন্ডা বাস্তবায়নই মূল বিষয়। তিনি আরো বলেন, জাতীয় ও স্থানীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য এসডিজি বাস্তবায়নে সংসদ ভূমিকা রাখতে পারে। এজেন্ডা ২০৩০ বাস্তবায়নের প্রকৃত সহযোগিতার চেতনায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির প্রশাসক এ্যাচিম স্টেইনার, ইন্টার পার্লামেন্টারিয়ান ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট গ্যাবরিয়েলা চ্যুয়েভাস ব্যারন, ইন্দোনেশিয়ার সুরাবায়র মেয়র ত্রি রিসমহারিনি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়কারী মো. আবুল কালাম আজাদ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এবং পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক অনুষ্ঠানে যোগ দেন।