4670
Published on আগস্ট 12, 2018১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনককে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে ঘাতকরা মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনায় আঘাত হানে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ শুধু দেশ স্বাধীনের লড়াই ছিল না, এটি ছিল অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনেরও জনযুদ্ধ। ভাষা আন্দোলনে বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার যে জাগরণ শুরু হয় তারই পূর্ণ প্রকাশ ঘটে মুক্তিযুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধে ধর্ম সম্প্রদায় নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল।
পাকিস্তানিদের গণহত্যা, অন্যায় নির্যাতন, সাম্প্রদায়িক আঘাতের বিপরীতে রুখে দাঁড়ায় বাংলার মানুষ। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের পর সদ্য স্বাধীন দেশে সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত পরিবেশের সূচনা হয়। বাংলাভাষা ও বাঙালির জয় ঘোষিত হয় সর্বত্র। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর দেশ গিয়ে পড়ে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর হাতে।
যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে দেশে ফিরিয়ে আনা, জামায়াত-শিবিরের রাজনীতিকে বৈধতা দান ও তাদের শক্তি প্রদান করা ৭৫ পরবর্তী সরকারগুলোর মূল কাজ ছিল। ১৫ আগস্টের পর থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে একের পর এক সেনা অভ্যুত্থান, সেনাবাহিনীর অন্তর্দ্বন্দ্ব, মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্যদের হত্যা ও তাদের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলে। ৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকে ১৯৮১ সালের ৩০ মে পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ২২টি সেনা অভ্যুত্থান ঘটে যা চরম অরাজক দেশের চিত্রই তুলে ধরে।
স্বৈরশাসক এরশাদের আমলে ৮ম সংশোধনীর মাধ্যমে ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ করায় বাংলাদেশকে পুরোপুরি একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়। দেশে মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলো শক্তি অর্জন করে এবং দেশ প্রতিক্রিয়াশীলতার অন্ধকারে ডুবে যায়।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করে এ দেশে পাকিস্তানি ধ্যান-ধারণার পুনর্প্রচলনের অপচেষ্টা চলে। পাঠ্যপুস্তক থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার সব রকম চেষ্টা দেখা যায়। গণআন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করা হয় সব রকমে। এমনকি জাতীয় সংগীতেরও অবমাননা করা হয় বিভিন্নভাবে। সে সময় অনেক সরকারি অনুষ্ঠানেও জাতীয় সংগীতের পরিবর্তে শুধু সুর বাজানো হয়।
মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাদের দ্বারা নির্যাতিত নারীদের পুনর্বাসনের কাজ বন্ধ হয়ে যায় এবং সামাজিকভাবে তাদের হেয় করা হয় বা একঘরে করা হয়। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসনের কাজও কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। গণতন্ত্রকে রুদ্ধ করে চলে স্বৈরতন্ত্রের তাণ্ডব।
বঙ্গবন্ধুর হত্যা তাই জাতির জন্য বয়ে আনে দীর্ঘস্থায়ী দুর্ভাগ্যের কালো মেঘ।