7840
Published on জুলাই 7, 2018প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আগামী সাধারণ নির্বাচনের জন্য ভোট চাইতে এখন থেকেই মানুষের দ্বারে দ্বারে যাওয়ার আহবান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগই দেশের একমাত্র রাজনৈতিক দল যারা দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে তাদের কল্যাণের জন্য কাজ করে। মানুষ কিন্তু ভুলে যায় এ জন্য আমাদের উন্নয়ন দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে, তাদের বোঝাতে হবে, তাদের কাছে বারবার যেতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভার তৃতীয় পর্যায়ে প্রদত্ত ভাষণে এ কথা বলেন।
সভায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্বাগত বক্তৃতা করেন। দলের দপ্তর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ শোক প্রস্তাব পাঠ করেন। দলের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই দেশের মানুষের উন্নতি হয়। গ্রামের অর্থনীতি আজ উন্নত হয়েছে এবং জনগণের আয় বাড়ায় তারা সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারছে, ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল ভোগ করতে পারছে- এ কথাগুলো সবাইকে বলতে হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ব্যতীত কোন রাজনৈতিক দলই দেশের দরিদ্র মেহেনতী জনগণের জন্য কিছু করেনি।
দেশের মানুষের দোড়গোঁড়ায় স্বাস্থ্যসেবাকে নিয়ে যাওয়ায় তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা মানুষও আর ক্ষুধায় কষ্ট পাবে না, একটা মানুষও আর গৃহহীন থাকবে না, সকলেই প্রয়োজনীয় শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবা পাবে।
‘জনগণের কাছে গিয়ে আওয়ামী লীগের নতা-কর্মীদের ভোট চাইতে হবে। যাতে তারা অতীতের মতো আবারো আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়’- বলেন প্রধানমন্ত্রী।
দল এবং সহযোগী সংগঠনের অভ্যন্তরীণ মতভেদ এবং দ্বন্দ এখনই মিটিয়ে ফেলার আহবান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আপনাদের মনে রাখতে হবে আগামীর নির্বাচন অতীতের যেকোন সময়ের চাইতেই কঠিন হবে।
‘কোন আসন নিয়ে অমনোযোগী হবার সুযোগ নেই, কোন আসন নিয়ে অমনোযোগী হবার মানেই হবে সে আসনে পরাজয়, যার কারণে আমাদের সরকার গঠনের সুযোগ ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে, বলেন তিনি।
তাঁর সরকারের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ টেনে এনে এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, মনে রাখবেন, আওয়ামী লীগ যদি আবার ক্ষমতায় আসতে না পারে তাহলে এই বিচার বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
‘তারা (বিএনপি-জামায়াত) আবার মানুষের ওপর, তাদের জানমালের ওপর আক্রমণ শুরু করে দেবে, দারিদ্র্য বাড়িয়ে শিক্ষার হার কমিয়ে ফেলবে, সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের কর্মসূচি, উন্নয়ন কর্মকান্ড সব বন্ধ করে দেবে, অতীতে যেমনটি করেছিল’- বলেন তিনি।
সরকার প্রধান বলেন, ‘কাজেই আপনাদের শুধু আওয়ামী লীগকেই নয়, এর সহযোগী সংগঠনগুলোকেও শক্তিশালী করে তুলতে হবে।’
‘মহিলা আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ-প্রত্যেকটা সংগঠন যেন সুসংগঠিত হয় এবং নিয়ম মেনে চলে, ডিসিপ্লিন মেনে চলে। সেই বিষয়টাতে লক্ষ্য রাখতে হবে’- বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, দেশের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে আপনারা গ্রামে গ্রামে গিয়ে জনগণের কাছে আগামী ডিসেম্বরের নির্বাচনে নৌকা মার্কায় জনগণ যেন ভোট দেয় সেই আবেদন করবেন। আর অন্যরাতো দেশের স্বাধীনতাই চায়নি, তাই দেশের কোন উন্নয়ন তারা করবে না।
তিনি ২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকানোর নামে খালেদা জিয়ার আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যার সমালোচনা করে বলেন, সেই মানুষ হত্যা করেও সে নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি কারণ জনগণ রুখে দাঁড়িয়েছিল। আর এই জনগণইতো মূল শক্তি। আমাদের শক্তিই হচ্ছে জনগণ। সেই জনগণকে নিয়েই আমরা রাজনীতি করি, তাদের কল্যাণেই আমাদের রাজনীতি।এই কথাটা সাধারণ মানুষের কাছে আপনাদের তুলে ধরতে হবে।
‘নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই গ্রামের মানুষ সুখের মুখ দেখছে, দুটো পয়সা কামাইয়ের সুযোগ পাচ্ছে, ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা পাচ্ছে, হাতে হাতে মোবাইল পাচ্ছে, সুন্দর করে জীবনযাপন করার সুযোগ পাচ্ছে, বাড়ি পাচ্ছে, রাস্তা পাচ্ছে, সবকিছু পাচ্ছে,’বলেন তিনি।
‘বলতে হবে আমরা আপনাদের কাছে ভোট চাই, আপনাদের কল্যাণে কাজ করতে চাই। আপনাদের ভাগ্য আমরা পরিবর্তন করতে চাই। জাতির পিতার আদর্শে দলকে গড়ে তুলে সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করবেন, সেটাই আমি চাই’, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার মহাকাশে স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করেছে,সারাদেশে ইন্টারনেট সার্ভিস চালু করেছে। লার্নিং অ্যান্ড আর্নিংয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়ায় এখন ঘরে বসেই ছেলে মেয়েরা অর্থ উপার্জন করতে পারছে।
জনগণের কল্যাণে কাজ করে যেতে নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ করা মানে শুধু নিজের ভাগ্য গড়া না। এটা বিএনপি-জামায়াতের কাজ। দুর্নীতি, লুটপাট, হত্যা করা, এটাই তো তাদের কাজ। নইলে কেউ এতিমের টাকা চুরি করে খেতে পারে?’
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির আরও মামলা থাকার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিন্তু তিনি হাজিরা দেন না। হাজিরা দিলেই ধরা খাবে।’
খালেদা জিয়া অসুস্থ হলেও মামলায় হাজিরা দিতে না পারার মত অতটা গুরুতর অসুস্থ কি না এ বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
মানবিক কারণে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় প্রদানের প্রসংগ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় সারাবিশ্বের সমর্থন আমরা পেয়েছি, সেই সমর্থন নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনকে সমর্থন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু আমরা নির্বাচন নিয়ে জোট করেছিলাম । আমাদের সেই নির্বাচনী জোটকে বজায় রাখতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘সাথে সাথে যাদেরকে আমরা নমিনেশন দেবো (তৃণমূলের মতামত নিয়ে এবং সার্ভের ভিত্তিতে যে নমিনেশন দেওয়া হবে) যাকে নৌকা মার্কা দেব তাঁর পক্ষে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। যেন নৌকা কোনমতে না হারে।’
‘দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে একটা ধর্ম হয়ে যায়, সবগুলোতেতো জিতবো এই একটা সীটে না জিতলে আর কি হবে, ২০০৮ সালে এই চিন্তাধারাটা ছিল- এটার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়,’ সতর্ক করেন প্রধানমন্ত্রী।
‘কারাগারের রোজ নামচা এবং বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী-তাঁর ডায়রী ভিত্তিক লেখা গ্রন্থ দুটি ইতোমধ্যে প্রকাশি হয়েছে উল্লেখ করে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের ৪৭টি ফাইল নিয়ে বের করতে যাওয়া বৃহৎ প্রকাশনার (৩০-৪০ হাজার পৃষ্ঠাকে সংক্ষিপ্ত করে ৯ হাজার পৃষ্ঠায় আনা) ১৪টি ভলিউমের প্রথম ভলিউম ছাপার কাজ চলছে, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার শুনানি নিয়েও কয়েক খন্ডের বই এবং বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকথা ভিত্তিক একটি গ্রন্থও শীঘ্রই প্রকাশিত হবে বলে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের জানান।
বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রামাণ্য দলিল হতে পারে এই গ্রন্থগুলো, অভিমত ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী ।
তৃতীয় পর্যায়ের এদিনের বিশেষ বর্ধিত সভায় ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর ও খুলনা বিভাগের ইউনিয়ন পর্যায়ের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
এরআগে ৩০ জুন চট্ট গ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের ইউনিয়ন পর্যায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে দ্বিতীয় পর্যায়েরর বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আর গত ২৩ জুন জেলা-উপজেলা, মহানগর, পৌরসভার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, দলীয় সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলার চেয়ারম্যানদের নিয়ে প্রথম পর্যায়ের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়।