6274
Published on মার্চ 17, 2018বাংলাদেশ নামটির পরিপ্রেক্ষিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যৌবনেই কেবল শুরু নয়, কিশোর বয়স থেকেই বাংলার মানুষের স্বাধীনতা নিয়ে ভাবতেন বঙ্গবন্ধু। তাই তো বাঙালি, বাংলাদেশ আর বঙ্গবন্ধু শব্দগুলো যেন অবিচ্ছেদ্য। বাঙালির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, হাজার বছর ধরেই এই জাতি অন্যের শাসনে শোষিত, নির্যাতিত আর অধিকারবঞ্চিত। সময়ের পরিক্রমায় যে বাঙালির স্বাধিকার অপরিহার্য, তা কেবল বঙ্গবন্ধুর ভাবনা-চিন্তা ও আন্দোলন কর্মসূচিতেই প্রতিফলিত হয়। যার ফলও মেলে একাত্তরে, স্বাধীন বাংলাদেশ।
কিশোর মুজিবের অল্প বয়সেই তার মনে গভীর দেশপ্রেম, মানবতার প্রতি ভালোবাসা আর মমত্ববোধ ছিল। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আবহমান গ্রামবাংলার পরিচয় ছিল সব সময়ের। তিনি মানুষকে চিনতেন, জানতেন। অনেক কাছে থেকে দেখেছেন তাদের সমস্যা। সর্বদা জনগণের সেবা ও কল্যাণে কাজ করার আদর্শে নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন। বঙ্গবন্ধু যখন স্কুলে পড়তেন তখনই তাঁর একজন শিক্ষকের নেতৃত্বে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। যার কাজ ছিল ধানের মৌসুমে গোলায় যখন ধান উঠত, সেই ধান বা টাকা-পয়সা জোগাড় করে দরিদ্র ছেলেমেয়েদের বই কিনে দিয়ে তাদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করা।
সাহস, দূরদৃষ্টি, উদারতার এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত যে ব্যক্তি সেই শেখ মুজিব মহাকালের মহানায়ক, বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের বন্ধু, পিতা শেখ লুৎফর রহমান ও মাতা ছায়রা খাতুনের কোল আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করে ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ। এ দিনটি জাতীয় শিশু দিবস। পিতা-মাতার চার কন্যা এবং দুই পুত্রের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। খোকা নামের সেই শিশুটি পরবর্তী সময়ে হয়ে ওঠেন নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালির ত্রাতা ও মুক্তির দিশারী। কিশোর বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত উদার প্রকৃতির ছিলেন। কিশোর মুজিবের জন্য প্রতি মাসেই বই, ছাতা, নয়তো কাপড় কিনতে হতো। কারণ এগুলো তিনি দরিদ্র শিশুদের মাঝে বিলিয়ে দিতেন। এমনকি দূরের শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতি বেলাতেই ঘরে খাবার খেতে চলে আসতেন। তিনি ছোট্ট শিশুদের সব সময়ই মনে করতেন এই শিশুরাই তো একদিন মানুষের মতো মানুষ হবে। কাজেই তাদের প্রতি ভালোবাসা ছিল তার অসাধারণ।
গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, আত্মত্যাগ এবং জনগণের প্রতি মমত্ববোধের কারণে পরিণত বয়সে হয়ে ওঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। এক রাজনৈতিক সংগ্রামবহুল জীবনের অধিকারী এই নেতা বিশ্ব ইতিহাসে ঠাঁই করে নেন স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার হিসেবে। বঙ্গবন্ধু এ দেশে জন্মেছিলেন, এ দেশের মানুষকে ভালোবেসেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন, এটা বাঙালির সৌভাগ্যের কথা। তিনি নিরলস পরিশ্রম করে চারণের মতো সারাদেশ ঘুরে মানুষকে জাগিয়েছেন, পাকিস্তানি স্বৈরাচারী সামরিক শাসকদের জেলে বছরের পর বছর বন্দি থেকে অকুতোভয় বীরের মতো নিজ সঙ্কল্পে অটল থেকেছেন। মুক্তির মহামন্ত্রে জাতিকে জাগিয়েছেন। স্বাধীনতার পথ ধরে জাতিকে পৌঁছে দিয়েছেন স্বপ্ন পূরণের চূড়ান্ত লক্ষ্যে- এ কৃতিত্ব তাঁরই। কারণ তিনিই স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা এবং প্রতিষ্ঠাতা। দেশের মানুষের স্বার্থের ব্যাপারে তিনি সব সময় ছিলেন আপসহীন। পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে তিনি সব সময় ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছেন দেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থ, কখনো কোনো কিছুর বিনিময় বা প্রলোভনে বা ভয়ে বিন্দুমাত্র নতি স্বীকার করেননি। টিক্কা খান বলেন, ‘আমি ভালো করেই জানতাম শেখ মুজিবের মতো নেতা তাঁর নিজের লোকদের ছেড়ে যাবে না কোথাও।’
স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক মাইলফলক। তিনি বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ তাঁর মন্ত্রমুগ্ধ আহ্বানে মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাংলার লাখো মুক্তিপাগল মানুষ। ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। আমাদের স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু। তিনিই তাঁর আজীবন সংগ্রাম ও নেতৃত্বের মাধ্যমে জাতিকে পৌঁছে দিয়ে গেছেন স্বাধীনতার স্বর্ণ তোরণে।
বিশ্ব নেতাদের মাঝেও বঙ্গবন্ধু ছিল চিরভাস্বর। বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে প্যাট্রিস লুমুম্বার মতো সাহসিকতা, নেলসন ম্যান্ডেলার মতো ঔদার্য, সুকর্নের মতো বাগ্মিতা, হো চিন মিনের মতো দৃঢ়চেতা মনোভাবের প্রকাশ দেখতে পাই। এ যেন একের মাঝে অনেক নেতার সমাহার। বঙ্গবন্ধুর বঙ্গকন্যা, মাদার অফ হিউম্যানিটি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পিতার মতোই মানব প্রেমের উজ্বল দৃষ্টান্ত বিশ্বের বুকে সৃষ্টি করে চলছেন। তারই এক অনন্য উদাহরণ রোহিঙ্গা শরণার্থী। এ ঘটনা যুগে যুগে কালে কালে মনে রাখবে পৃথিবীর মানুষ।
জাতির পিতা বাঙালি জাতিসত্তার এক মহান নির্মাতা। তাঁর ন্যায্য অবস্থান, স্বচ্ছ ও উন্মুক্ত নেতৃত্ব, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও মানুষের ক্ষমতায়নে তাঁর নিবেদন ও প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসের দুর্দান্ত সাহস তাঁকে এনে দেয় স্বাধিকারের আন্দোলন থেকে শেষ পর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জন। পরবর্তী সময়ে স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার অভিযাত্রায় সফল নেতৃত্ব প্রদানে। বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশের প্রতি অবদানের জন্য বিশ্বনন্দিত নেতা ইতিহাসের মহানায়ক। মানুষের হৃদয়ে পরম যতেœ রাখা পরম পুরুষকে তাই গভীর শ্রদ্ধা জানাই বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ।
সৌজন্যেঃ ভোরের কাগজ
প্রকাশকালঃ ১৭ মার্চ, ২০১৮