13095
Published on মার্চ 3, 2018গ্রাম পর্যায় থেকে উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্য রেখেই সব উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
খুলনার খালিসপুরে শনিবার বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের ৫৮তম কনভেনশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “গ্রাম পর্যায় থেকে যেন উন্নয়ন হয়; সে পরিকল্পনা আমরা দিয়েছি।
“একটা সরকার জনগণের সেবা করবে। আমরা জনগণের সেবক। সে কথা মাথায় রেখেই আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিচ্ছি।”
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, “এত উন্নয়ন প্রকল্প আর কোনো সরকার করতে পারে নাই। যেটা আমরা করে যাচ্ছি.. আওয়ামী লীগ সরকার করে যাচ্ছে। যার শুভ ফলও এদেশের মানুষ পাচ্ছে। আমাদের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২৮ ভাগে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি।”
৭ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের যে লক্ষ্য বর্তমান বাজেটে ঠিক করা হয়েছে, তা অর্জনেও দৃঢ় আশাবাদ পোষণ করেন তিনি।
অবকাঠামোগত উন্নয়নে প্রকৌশলীদের সম্পৃক্ত থাকার কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনাদের দ্বারাই তো আমাদের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়।”
স্বাধীন দেশের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তার কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, “যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকেই জাতির পিতা শুধু গড়ে তোলেন নাই, তিনি এই দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ হিসাবে গড়ে তোলার সকল পদক্ষেপ তিনি নিয়েছিলেন। তিনি ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রিকরণ করে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত তিনি নিয়ে গিয়েছিলেন।
“যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে.. তার মাঝেও বন্ধুপ্রতীম দেশগুলোর কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে এসে স্বাধীন দেশের উপযুক্ত প্রতিটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।”
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের আগে প্রবৃদ্ধি সাত ভাগ ছাড়িয়ে যাওয়ার তথ্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “এরপর থেকে বাংলাদেশ আর এগুতে পারে নাই।”
দুর্নীতি নির্মূলে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “তিনি সব সময় এদেশের মানুষের উন্নয়নের কথাই চিন্তা করতেন।”
দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর কয়েকটি কথাও উদ্ধৃত করেন শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “এই বাংলার মাটি থেকে করাপশন উৎখাত করতে হবে। করাপশন আমার বাংলার কৃষক করে না, করাপশন আমার বাংলার মজদুর করে না, করাপশন করে শিক্ষিত সমাজ, যারা তাদের টাকা দিয়ে লেখাপড়া করছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। আইনের শাসন যাতে মানুষ পায়, সেজন্য যথাযথ ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি।”
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ‘দুর্নীতির ধারণাসূচকে’ চলতি বছরে বাংলাদেশের উন্নতির প্রসঙ্গে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দুর্নীতি দূর করবার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দুই ধাপ এগিয়েছে। আমরা উন্নয়নের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি; তার সুফল দেশবাসী পাচ্ছে।”
উন্নয়ন প্রকল্পে যারা সম্পৃক্ত রয়েছেন, তাদের আরও আন্তরিক হওয়ার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “যারাই যে প্রকল্প বাস্তবায়নের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন; তাদের আগে চিন্তা করতে হবে, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আমার দেশের মানুষ সুবিধা ভোগ করবে। এই দেশের মানুষ আপনাদের, আমাদের সকলেরই আত্মীয় স্বজন। সেই কথাটাই সকলকে চিন্তা করতে হবে। দেশের উন্নতি হলে সকলের উন্নতি।”
খাদ্য নিরাপত্তার কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে খাদ্যশস্য সংরক্ষণ কার্যক্রমকে গতিশীল করেছি। বর্তমানে আট লাখ টন খাদ্য মজুদের লক্ষ্যে ১৩টি খাদ্যগুদাম নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
চলতি মেয়াদেই পাঁচ লাখ টন মজুদের খাদ্য গুদাম নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে বলেও তিনি আশাপ্রকাশ করেন।
গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেল, আন্তঃদেশীয় রেল এবং এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ, কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণের মতো ফার্স্ট ট্রাক প্রকল্পগুলোতে প্রকৌশলীদের বিশেষ ভূমিকার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। দারিদ্র্যের হার ২২ শতাংশে নেমে এসেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলারের উপরে। মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৬১০ মার্কিন ডলার।
“সকলক্ষেত্রে আমরা ব্যাপক উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আমাদের এ অগ্রযাত্রা কেউ ব্যাহত করতে পারবে না।”
খবরঃ বিডিনিউজ২৪.কম