8511
Published on ফেব্রুয়ারি 5, 2018শেখ হাসিনাকে যারা পছন্দ করেন তারা যেমন জানেন; যারা করেন না তারাও মানেন তিনি স্পষ্টভাষী। এই সত্যবাদিতা বা স্পষ্টকথন এমনিতে আসে না। অন্তরজুড়ে কালিমা থাকলে কিংবা মনে সন্দেহ থাকলে মানুষ মুখ ফুটে সত্য বলতে পারে না। তিনি পারেন। মিডিয়াজুড়ে তাঁর এই সত্যভাষণ এখন মানুষের মুখে মুখে। প্রথমেই বলি, তিনি কোনভাবেই দেশের আপামর বুদ্ধিজীবী বা সুশীলদের এক করে এসব কথা বলেননি। তাঁর কথাতেই স্পষ্ট, তিনি কাদের বিরুদ্ধে বা কোন্ শ্রেণীর সুশীলদের নিয়ে কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তাঁর কলজের জোরে তাঁর চেতনা থেকেই এমন সাহসী কথা বলতে পারেন।
কোনটা মিথ্যা বা অসত্য বলেছেন তিনি? এই যে মিডিয়ায় ড. কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্যের খবর এও কি সুশীলদের অবদান নয়? গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল বলে যে কথাটা প্রচলিত সেটা তো আমরা এদের দেখলেই বুঝে যাই। সমর্থক নেই কর্মী নেই খালি মাইক্রোফোননির্ভর বক্তৃতা আর বড় বড় কথা। যতদিন আওয়ামী লীগে ছিলেন ড. কামাল হোসেনকে জিতিয়ে আনতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়েছিল দলকে। ঢাকার রাজপথে তখন দেয়াল লিখন ছিল জ্ঞানী শত্রুর চাইতে মূর্খ বন্ধুই উত্তম। কারণ, তিনি কখনও কারও বন্ধু হতে পারেননি। একজন আইনজীবী বা ব্যারিস্টার হিসেবে তাঁর সুনাম-যশ সবই শিরোধার্য। কিন্তু রাজনীতি তো ভিন্ন বিষয়। আমাদের সমাজে মানুষ এখনও কাদামাটির সঙ্গে লেপ্টে আছে। মানুষকে জানতে হলে, ভালবাসতে হলে তাদের কাছে যেতে হবে। সেটা কি ড. কামাল হোসেন বা বি. চৌধুরীরা করেন আদৌ? কিন্তু তাদের একটা বদ্ধমূল ধারণা তাঁরা খুব জনপ্রিয় নেতা। কতটা প্রিয় আর কতটা না সেটা ভোটে দাঁড়ালেই টের পাওয়া যায়।
শেখ হাসিনার ইঙ্গিত আপনি অপছন্দ করতে পারেন কিন্তু অস্বীকার করতে পারবেন না। এসব সুশীল খুব হৈচৈ বাধিয়ে বললেন পদ্মা সেতু করা অসম্ভব। আওয়ামী লীগ পারবে না। আবুল হোসেনকে নিয়ে কত গল্প কত গুজব। তারপর যখন আসল ঘটনা বের হতে শুরু করল তারা সুর পাল্টালেন। এরপর যখন পদ্মা সেতুর দৃশ্যমান কাজ দেখা গেল তখন বলছেন মাঝখানে গিয়ে নাকি আর পারা যাবে না। এদের নেতা খালেদা জিয়ার আজকের মরণদশার কারণ কিন্তু এরাই। এরা তাঁকে দিয়ে বলিয়েছে সেতুতে না উঠতে। এটা পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কি হতে পারে? কোথায় তারা নজরদারি করবেন যাতে টাকাপয়সার সঠিক ব্যবহার হয়, যাতে কাজ শেষ হয় তা না করে বাগড়া দেয়ার এই রাজনীতি মানুষ আর নেয় না। নেয় না বলেই বিএনপি প্রান্তিক মানুষের কাছে প্রিয় হলেও আজ তার করুণদশা। প্রধানমন্ত্রী সুশীল নামধারীদের আসল চেহারাটা ধরতে পেরেছেন। তিনি যখন বললেন যে, এরা বাঁকা পথে গদি চায় বা পরিবর্তনের নামে উন্নয়নের বিরোধিতা করে, আমাদের চোখের সামনে কি সেই চেহারাগুলো ভেসে ওঠে না? যারা কোন কাজকাম ছাড়াই টিভিতে এসে মানুষকে উত্তেজিত করেন?
দেশের কিছু মিডিয়ার দিকে তাকালেও তাঁর কথার সত্যতা প্রমাণ হয়ে যাবে। এসব মিডিয়া ভুলে গেছে কখনও তারা গঠনমূলক কোন কথা বলেছে। তাদের কাজই হলো উস্কে দেয়া। আমরাও পারি বটে। দুধটা বাদ দিয়ে সরটা খাব কিন্তু গাইকে লাথি মারব। এই নীতিতে দেশ এগুতে পারে না। আপনি এসব সুশীল নামধারীকে প্রশ্ন করে দেখুন তারা আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার সমালোচনা ছাড়া কোন সমাধান বা সমস্যার ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দিতে পারবে না। কারণ তারা মাঠে যায় না। কলকারখানার খবর রাখে না। সাধারণ মধ্যবিত্তের জীবন নিয়ে কোন চিন্তা নেই তাদের। কী এক আজব ব্যাপার, চটাং চটাং করে কথা বলতে পারাটাই নাকি বুদ্ধিজীবীর চিহ্ন। শেখ হাসিনার বড় সম্বল এদেশের জনগণ। তাঁরা না চাইলে এতদিন তিনি থাকতে পারতেন না। কারণ, আমরা গোড়া থেকেই দেখছি একটা বিশেষ মহল মিডিয়ার নামে উস্কানি আর ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত। এরা একদা বাম এখন পুরো ডান। নিজেদের জীবনে এরা আধুনিক। দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ানো এবং মানুষকে বৃত্তাবদ্ধ করে রাখাই এদের কাজ। যে কারণে এরা অন্তরে জামায়াত হলেও বাইরে বিএনপি। বিএনপির নেতা সাজসজ্জায় সময় ব্যয় করে দেশ শাসনের সময় না পেলেও এরা চুপ। আর শেখ হাসিনা কথা বললেই দোষ।
সরকার যদি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল করে এরা বলে দেশ সাম্রাজ্যবাদের খপ্পরে। চীনের সঙ্গে মিতালী হলে বলে আরে এ তো মুক্তিযুদ্ধের দুশমন। ভারতের কথা তো বলাই বাহুল্য। ভারত শোষণ করছে এই কথা শুনে আসছি ছেলেবেলা থেকে। যখন পাক-ভারতের সীমান্ত বন্ধ তখনও শুনেছি আর আজ যখন খোলা তখনও এককথা। শোষণ যে করছে না তা বলছি না। কিন্তু শোষণমুক্তির পথ তো বলুন। সে বিষয়ে তারা নীরব। কারণ, উপরে দুশমনী দেখালেও এদের ভারত কানেকশন আমার-আপনার চাইতে হাজার গুণ বেশি। এরা সাধারণ মানুষের মতো ভারতীয় ভিসার জন্য লাইনে দাঁড়ান না। তাদের ভিসাও বাসায় পৌঁছে যায়। এরা দাওয়াত বাড়ির সেই অতিথির মতো, যিনি কম পড়লে বলে এজন্যে কি মানুষকে দাওয়াত দিয়ে আনা হয়েছে? আর বেশি খাওয়ালে বলে, এত খাওয়ায় কেউ? এখন তো গলায় আঙ্গুল দিয়ে বমি করতে হবে। তাই এদের কথা শুনে লাভ নেই। মেধা ও প্রজ্ঞার পাশাপাশি অভিজ্ঞতার জোরে প্রধানমন্ত্রী সেটা বুঝতে পেরেছেন। পেরেছেন বলেই সুশীলদের নিয়ে সত্য বলায় তিনি অকুণ্ঠ।
তবে তাদের দরকার আছে বৈকি। উপমহাদেশের পণ্ডিত চাণক্য বলেছিলেন, বাদুড় আর পেঁচারও দরকার পড়ে। একটি রাতে ডানা ঝাঁপটিয়ে সতর্ক করে আরেকটি ডাক দিয়ে জানায় অশুভের আগমন। এদের বেলায় এখন সতর্কতার বিকল্প নেই। হেন কাজ নেই যা তারা পারেন না। তাদের মূল এজেন্ডা একটাই। আওয়ামী লীগের চাইতেও তাদের বড় দুশমন শেখ হাসিনা। কারণ, দলের অনেককে পোষ মানানো যায়, কেনাও যায়। বঙ্গবন্ধুকন্যাকে কেনা দূরের কথা কাছেও ভেড়া যায় না। আবার বাস্তবতা এই- বিপদে পড়লে বা অসুখ হলে তখন এরাই তদ্বির করে তাঁর কাছে হাত পাতে। না দিলে বলে, আমরা কোথায় যাব? ইনিই তো বাঙালীর ভরসা।
ভরসাই যদি হয় সেই ভরসার গাছটিকে জলপানি, আলো-হাওয়া না দিয়ে তার তলা কাটেন কোন্ সুখে? আমি বা আমার মতো অজস্র মানুষ প্রধানমন্ত্রীর কথায় সন্তুষ্ট। কেবল কথা আর বিতর্কে দেশের মানুষকে আপদের মুখে ঠেলে দেয়া সুশীলদের মানুষ পরিত্যাগ করেছে বলেই বিএনপি আজ এই জায়গায়। আওয়ামী লীগের ভেতর যেসব সুশীল স্তাবকের ভূমিকায় তাদেরও চিহ্নিত করা প্রয়োজন। তবেই শেখ হাসিনার কথা ফলবতী হবে আরও।
সত্যভাষী, স্পষ্টভাষী শেখ হাসিনাকে সময়ই আগলে আছে। আগলে রাখবে। বাঁকাপথের পথিকরা কোন কিছু করতে পারবে না, এই বিশ্বাস রাখি। মানুষের কাছেই তাঁর বিশালতা কোন গোষ্ঠীর কাছে নয়।
সৌজন্যেঃ দৈনিক জনকণ্ঠ