তত্ত্বাবধায়ক বা সহায়ক নয়, সংবিধান অনুযায়ী নিরপেক্ষ সরকার চাইঃ বিপ্লব বিশ্বাস

6371

Published on জানুয়ারি 25, 2018
  • Details Image

দেশের সব রাজনৈতিক দলের সামনেই এখন একটি মাত্র ইস্যু, আর তা হলো আগামী নির্বাচন ও নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা। গণমাধ্যমগুলোও এ নিয়েই আলোচনায় ব্যস্ত। দেশে অনেক সমস্যাই রয়েছে আর সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো। এ ছাড়াও দেশে রয়েছে জঙ্গিবাদ, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির তৎপরতা, সাম্প্রদায়িকতা, খুন, গুম, ধর্ষণসহ সামাজিক ও পারিবারিক অপরাধ প্রবণতা ইত্যাদি। অথচ আমাদের ধারণা একটি অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলেই দেশের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এ কারণেই দেশের রাজনীতিবিদদের কাছে এখন মুখ্য বিষয় হলো ক্ষমতা আর দেশ ও জনগণ হলো গৌণ বিষয়। আমাদের রাজনীতির একটি বড় অংশেই এখনো দেশবিরোধী অপশক্তির অবস্থান রয়েছে। যতদিন পর্যন্ত আমাদের রাজনীতিকে জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, স্বাধীনতাবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির কবল থেকে মুক্ত করা যাবে না, ততদিন দেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন, গণতন্ত্র ও সুস্থ ধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করাও সম্ভব হবে না।

বাংলাদেশের ছেচল্লিশ বছরের ইতিহাসে হ্যাঁ-না, হোন্ডা-গুণ্ডা ও অস্ত্র দিয়ে কেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, জালভোট, মাগুরা ও ঢাকা-১০ মার্কা নির্বাচনসহ অনেক কলঙ্কজনক নির্বাচনের উদাহরণ রয়েছে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস যে, এই সব কলঙ্কজনক নির্বাচনের যারা সমর্থক তারাই আবার আগামীতে নিরপেক্ষ নির্বাচনের উপদেশও দিচ্ছেন। আর নিরপেক্ষ নির্বাচনের দোহাই দিয়ে তারাই আবার স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তিকে ক্ষমতায় আনার চেষ্টাও চালাচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে যে কয়টি স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়েছে তা শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের অনেক গণতান্ত্রিক দেশের জন্যই উদাহরণ। পত্রপত্রিকা ছাড়াও সরাসরি সম্প্রচারিত টকশোগুলোতে যেভাবে সরকারের সমালোচনা করা যাচ্ছে, তা আগে কখনো সম্ভব হয়নি। অথচ অনেকেই বলছেন দেশে গণতন্ত্র নেই, বাক স্বাধীনতা নেই। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নামে জ্বালাও, পোড়াও আর পেট্রলবোমা ও ককটেল দিয়ে সাধারণ মানুষ হত্যা করার আন্দোলনকে গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে দাবি করা যায় না। যারা এক সময় এ ধরনের ধ্বংসাত্মক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, কোনো দায়িত্বশীল সরকারের পক্ষেই তাদের আবারো এ ধরনের আন্দোলনের অনুমতি দিতে পারে না। কারণ তারা এখনো তাদের ভুল স্বীকার করে জনগণের কাছে ক্ষমা চায়নি। দেশপ্রেমিক, জ্ঞানী, গুণী ও বিবেকবান কোনো নাগরিক এ ধরনের ধ্বংসাত্মক রাজনীতিকে সমর্থন করতে পারে না। আর এ সব ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডকে প্রতিহত করে জনগণের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষায় দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অবশ্যই কঠোর অবস্থানে থাকবে আর এর মধ্য দিয়েই দেশের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা আরো শক্তিশালী হবে এবং এগিয়ে যাবে।

এখন যারা তত্ত্বাবধায়ক বা সহায়ক সরকারের দাবি জানাচ্ছেন তারা হয়ত ভুলে গেছেন, ২০০৬ সালে বিচারপতিদের বয়স বাড়িয়ে, তৎকালীন রাষ্ট্রপতিকে প্রধান উপদেষ্টা বানিয়ে, এক কোটিরও বেশি ভুয়া ভোটার সৃষ্টি করে, একজন দায়িত্বহীন ব্যক্তিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বানিয়ে নানাভাবে তৎকালীন জোট সরকার জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের যথেষ্ট চেষ্টা করেও সফল হতে পারেনি। তখন তাদের দ্বারাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ও নির্বাচন কমিশনকে অকার্যকর ও ধ্বংস করা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, দেশে এক ভয়াবহ রাজনৈতিক সংকট ও অরাজক পরিস্থিতিরও সৃষ্টি করা হয়েছিল। তার পরবর্তী ঘটনা সবারই জানা অর্থাৎ পরোক্ষভাবে সামরিক বাহিনীকেই দেশের রাজনীতিবিদদের নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নিতে হয়েছিল যা এবটি গণতান্ত্রিক দেশের জন্য শুধু লজ্জাজনকই নয়, দেশের জন্য বিপজ্জনকও। অথচ বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, এখনো কোনো কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি সেই অনির্বাচিত ও দায়িত্বহীন ব্যর্থ তত্ত্বাবধায়ক বা সহায়ক সরকারের পক্ষেই দাবি জানাচ্ছেন। শুধু ২০০৬ সালেই নয়, ২০০১ সালেও তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্ভব হয়নি। তখন নির্বাচনের আগে ও পরে সারা দেশে আতঙ্ক সৃষ্টি করে, সংখ্যালঘুদের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে, তাদের ভোটদানে বাধা দিয়ে এক প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করা হয়েছিল। হাজার হাজার সংখ্যালঘু পরিবার চরমভাবে নির্যাতিত ও লাঞ্ছিত হয়ে ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল। আর এ জন্যই তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সহায়ক সরকার বা অরাজনৈতিক সরকার ব্যবস্থা দেশ, জাতি ও গণতন্ত্রের মঙ্গলের জন্যই বর্জন করা উচিত। স্বাভাবিক ক্ষমতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সীমিত রেখে নির্বাচনকালীন সময়ে রাজনৈতিক সরকারেরই ক্ষমতায় থাকা উচিত এবং একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনকেও আরো বেশি দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে ব্যর্থ হলে কমিশনকেও জবাবদিহির মধ্যে আনতে হবে। নির্বাচনকালে দেশে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা, নির্বাচনে ধর্ম ও অর্থের অপব্যবহার বন্ধ করা, সংখ্যালঘুসহ সব ভোটারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব নির্বাচনকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে নিতে হবে। এখানে ব্যর্থতার কোনো সুযোগ নেই এবং ব্যর্থ হলে তাদের অবশ্যই জাতির কাছে জবাবদিহি করার বিধান থাকতে হবে।

সৌজন্যেঃ ভোরের কাগজ

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত