7437
Published on জানুয়ারি 23, 2018এখন স্বপ্ন দেখেন স্বপ্ন দেখান স্বপ্ন পূরণ করেন শেখ হাসিনা। তবে স্বাধীন বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা, ২৩ বছরের নির্যাতিত, নিপীড়িত, শোষিত-বঞ্চিত অসহায় খেটে খাওয়া বাঙালীর মুক্তির দিশারী, যিনি বাংলাদেশকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে; যিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন বাঙালী জাতিকে দৈন্য-দুর্দশা দূর করে উন্নত জীবনযাপন করার; যিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন বাঙালী জাতি বিশ্বের বুকে মর্যাদার সঙ্গে মাথা উঁচু করে বাঁচবে- তিনি হলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী, বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা এই মহান নেতার নেতৃত্বে দেশকে গুছিয়ে নিতে পারিনি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একদল ঘাতক আমাদের কাছ থেকে এই মহান নেতাকে কেড়ে নেয়ার পর বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার, যারা মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সরাসরি পাকিস্তান সরকারের পক্ষে কাজ করেছিল, যারা আমাদের দেশের মা-বোনদের ইজ্জত নষ্ট করেছিল; যারা আমাদের নিরীহ জনগণকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্বিচারে হত্যা করেছিল, সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার অঙ্গীকার নিয়ে নির্যাতনভোগীদের ভাগ্য বদলানোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা।
আল্লাহর অশেষ রহমতে ১৯৮১ সালে জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা আজকের প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসায় প্রাণ ফিরে পায় বাংলার জনগণ। বাবার বড় সন্তান হওয়ার সুবাদে খুব কাছ থেকে দেখতে পেয়েছিলেন জাতির পিতা এই দেশের জনগণকে নিয়ে কতটা চিন্তা করতেন। কতটা স্বপ্ন দেখতেন। শেখ হাসিনা সেই থেকে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন তিনি তার বাকি জীবন বাবার স্বপ্নের পথ ধরে এদেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে যাবেন। আর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে তিনি রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনা স্বপ্ন দেখেছেন এদেশের মানুষ শিক্ষিত ও প্রযুক্তিসমৃদ্ধ উন্নত জীবনযাপন করবে। তিনি স্বপ্ন দেখেছেন এদেশের মানুষ আর না খেয়ে থাকবে না। তিনি স্বপ্ন দেখেন এদেশের মানুষ আর চিকিৎসার অভাবে মারা যাবে না। তিনি স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশ প্রযুক্তিসমৃদ্ধ উন্নত দেশে পরিণত হবে। শেখ হাসিনার পরিশ্রমে আজ সাক্ষরতার হার ৭৫ শতাংশ। তিনি বিগত ৯ বছরে ২৬ হাজার ১৯৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছেন, ১ হাজার ৪৫৮টি নতুন প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। ৩৬৫টি কলেজ সরকারীকরণ করেছেন। ৫০ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব প্রতিষ্ঠা করেছেন। বছরের প্রথমদিন ৩৫ কোটি ৪২ লাখ ৯০ হাজার ১৬২টি বই সারাদেশে শিক্ষার্থীর মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে এখন। প্রাইমারি থেকে শুরু করে পিএইচডি পর্যন্ত প্রচলিত হয়েছে প্রায় দেড় কোটি বৃত্তি ও উপবৃত্তি। ১ কোটি ৩০ লাখ প্রাইমারি শিক্ষার্থীর মায়েরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বৃত্তির টাকা পাচ্ছেন। গ্রাম পর্যায়ে জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সারাদেশে সাড়ে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। সারাদেশে কৃষির ওপর উন্নত প্রশিক্ষণ দেয়ার পাশাপাশি বিনামূল্যে বীজ ও সার প্রদান করা হচ্ছে। যার ফলে বর্তমানে খাদ্য উৎপাদন ৪ কোটি টনে উন্নীত হয়েছে। কৃষিশস্য সংরক্ষণ করার জন্য বিভিন্ন সংরক্ষণাগার তৈরি করা হয়েছে। ফলে এদেশে কৃষক তাদের শস্যের উপযুক্ত মূল্য পাচ্ছেন। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়ার জন্য ১৬ হাজার ৩৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনে ১১৯টি বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করেছেন। বর্তমানে শতকরা ৮৩ ভাগ মানুষ বিদ্যুত সুবিধা পাচ্ছেন। ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করা হবে। যাতে বাংলাদেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুত সুবিধা ভোগ করতে পারে। বর্তমানে মাথাপিছু আয় বেড়ে ১৬১০ ডলারে উন্নীত হয়েছে। যার ফলে দারিদ্র্য ২২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ রয়েছে ৩৩.৪৪ বিলিয়ন ডলার যার পুরোটাই দেশরতœ শেখ হাসিনার অবদান। বর্তমানে ১৩ কোটি মোবাইল সিম ব্যবহারের পাশাপাশি ৮ কোটি মানুষ ইন্টারনেট সেবা পাচ্ছে যার সবটাই শেখ হাসিনার অবদান। গ্রামাঞ্চলে ব্রডব্রান্ড সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তার আগেই প্রতিটি ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করার মাধ্যমে জনগণকে ২০০ ধরনের সেবা দেয়া হচ্ছে। সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুর অর্ধেক কাজ শেষ করার পাশাপাশি ঢাকার মেট্রোরেল ও এলিভেটেট এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের পাশাপাশি সারাদেশকে রেল যোগাযোগের আওতায় আনা হচ্ছে। ঈশ্বরদীর রূপপুরে দেশের একমাত্র পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। শেখ হাসিনাই পটুয়াখালী পায়রাবন্দর নির্মাণের কাজ শুরু করে দিয়েছেন। কক্সবাজারের মাতারবাড়ি, বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে। খুব শীঘ্রই তিনি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করবেন যা কখনও কারও কল্পনায়ও ছিল না। আজ ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে। চন্দ্রা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমাবিরোধ নিষ্পত্তির ফলে সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও গবেষণা এবং উন্নয়নে ব্লুু ইকোনমি কার্যকর করা সম্ভব হয়েছে। আজ আমাদের প্রতিরক্ষা খাতকে ফোর্সেস গোল অর্জনের লক্ষ্যে প্রস্তুত করা হচ্ছে। আমাদের দেশের নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গ বৈষম্য নিরসনের পাশাপাশি বাংলাদেশ আজ নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে বিশ্ব দরবারে প্রশংসিত হচ্ছে। বাংলাদেশ জেন্ডার সংশ্লিষ্ট এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিশ্বে পঞ্চম স্থান অর্জন করেছে। আইসিসি ক্রিকেটে বাংলাদেশ আজ অন্যতম ক্রিকেট দল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমাদের মেয়েরা অনুর্ধ-১৪ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। অত্যাচার এবং নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্থান দেয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশ আজ সকল প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই আজ বাংলাদেশের জনগণের একটাই স্লোগান ‘শেখ হাসিনার হাতে থাকলে দেশ পথ হারাবে না বাংলাদেশ।’
লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সৌজন্যেঃ দৈনিক জনকণ্ঠ