5710
Published on জানুয়ারি 16, 2018‘২০১৪ সালে আপনাদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আজকের এই দিনে আমি তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলাম। আজ চার বছরপূর্তিতে আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে হাজির হয়েছি। আমার উপর যে বিশ্বাস ও আস্থা রেখেছিলেন, আমি প্রাণপণ চেষ্টা করেছি আপনাদের মর্যাদা রক্ষা করার। কতটুকু সফল বা ব্যর্থ হয়েছি সে বিচার আপনারাই করবেন।’
শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বর্তমান সরকারের ৪ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কথা বলেন। ভাষণে বর্তমান সরকারের ‘উন্নয়ন গাঁথা’, ‘আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যত’ এবং সামনের ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন’ এর বিভিন্ন ইস্যু গুরুত্ব পায়।
‘সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে’
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী ২০১৮ সালের শেষদিকে একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কীভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তা আমাদের সংবিধানে স্পষ্টভাবে বলা আছে। সংবধিান অনুযায়ী নির্বাচনের আগে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে। সেই সরকার নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচন পরিচালনায় সব রকম সহায়তা দিয়ে যাবে।’
এবিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘কোনও কোনও মহল আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা করতে পারে। আপনাদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। জনগণ অশান্তি চান না। নির্বাচন বয়কট করে আন্দোলনের নামে জনগণের জানমালের ক্ষতি করবেন, এটা আর এদেশের জনগণ মেনে নিবেন না।’
নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। এই কমিশন ইতোমধ্যে দুইটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ স্থানীয় পর্যায়ের বেশ কিছু নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জন করেছে।’
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি আশা করি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত সব দল আগামী সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেবেন এবং দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে সমুন্নত রাখতে সহায়তা করবেন।’
নির্বাচন নিয়ে সাধারণ জনগণের কাছে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন:
ভাষণে শেখ হাসিনা জনগণের কাছে প্রশ্ন রাখেন, ‘জনগণ সকল ক্ষমতার মালিক। কাজেই লক্ষ্য আপনাদেরই ঠিক করতে হবে- আপনারা কী চান! আপনারা কি দেশকে সামনে এগিয়ে যাওয়া দেখতে চান, না বাংলাদেশ আবার পিছনের দিকে চলুক তাই দেখতে চান। একবার ভাবুন তো মাত্র ১০ বছর আগে দেশের অবস্থানটা কোথায় ছিল? আপনারা কি চান না আপনার সন্তান সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে স্বাবলম্বী হোক? আপনারা কি চান না প্রতিটি ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে যাক! আপনারা কি চান না প্রতিটি গ্রামের রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হোক! মানুষ দু’বেলা পেট পুরে খেতে পাক! শান্তিতে জীবনযাপন করুক!’
সরকারে ভবিষ্যত পরিকল্পনা:
সরকারে ভবিষ্যত পরিকল্পনা বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরাই লক্ষ্য স্থির করেছি যে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠিত করব। শুধু লক্ষ্য স্থির করেই কিন্তু আমরা বসে নেই। সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য আমরা প্রয়োজনীয় কর্মসূচি প্রণয়ন করে সেগুলো বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা বিশ্ব সভায় মাথা উঁচু করে চলব। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলব।’
উন্নয়নের নজির ও অর্জন:
বর্তমান সরকারের উন্নয়নের কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বর্তমানে দেশে ১৩ কোটি মোবাইল সিম ব্যবহৃত হচ্ছে। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। ৮ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল স্থাপন করে ব্যান্ডওয়াইথ বৃদ্ধি করা হয়েছে। গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।’
‘প্রতিটি ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। সেখান থেকে জনগণ ২০০ ধরনের সেবা পাচ্ছেন। সকল ধরনের সরকারি ফরমস, জমির পর্চা, পাবলিক পরীক্ষার ফল, পাসপোর্ট-ভিসা সম্পর্কিত তথ্য, কৃষিতথ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আইনগত ও চাকুরির তথ্য, নাগরিকত্ব সনদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির প্রক্রিয়া, ক্রয়-বিক্রয়সহ বিভিন্ন বিল প্রদানের সুবিধা জনগণ পাচ্ছেন। ঘরে বসে আউটসোর্সিং-এর কাজ করে অনেক তরুণ-তরণী স্বাবলম্বী হয়েছে। বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে প্রবাসীরা আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন।’
২০১৪ সালের নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে পেরেছি বলেই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পেরেছি। ৯ বছর একটানা জনসেবার সুযোগ পেয়েছি বলেই বাংলাদেশ উন্নত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী মন্দা থাকা সত্ত্বেও আমাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছি। জনগণ সুফল ভোগ করছেন।’
প্রধানমন্ত্রী জানান, ‘বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নিন্ম মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা পেয়েছে। মাথাপিছু আয় ২০০৫ সালের ৫৪৩ ডলার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ৬১০ ডলারে উন্নীত হয়েছে। দারিদ্র্যের হার ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২২ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে।’
‘২০০৫-০৬ অর্থবছরে জিডিপি’র আকার ছিল ৪ লাখ ৮২ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা ১৯ লাখ ৭৫ হাজার ৮১৭ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।’
‘১৯৯১-৯৬ সময়ে বিএনপি আমলে মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ শতাংশ। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক আট-চার শতাংশে নেমে আসে।’
‘২০০৫-০৬ অর্থবছরে বৈদেশিক বিনিয়োগ ছিল শুন্য দশমিক ৭৪৪ বিলিয়ন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বৈদেশিক বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।’
‘২০০৫-০৬ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ৬১ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বাজেটের আকার প্রায় ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। সে সময় এডিপি’র আকার ছিল ১৯ হাজার কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এডিপি’র আকার ১ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকায় বৃদ্ধি পেয়েছে।’
‘২০০৫-৬ অর্থবছরে রফতানি আয় ছিল ১০ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা ৩৪ দশমিক আট-পাঁচ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ছিল ৩ দশমিক চার-আট বিলিয়ন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা ৩৩ দশমিক চার-চার বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।’
‘২০০৫ সালে ২ লাখ ৭০ হাজার মানুষের বিদেশে কর্মসংস্থান হয়। ২০১৭ সালে বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে ১০ লাখ ৮ হাজার ১৩০ জনের। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ২০০৫-৬ বছরে ছিল ৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রেমিটেন্স এসেছে ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।’
‘বিগত ৯ বছরে ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়েছে। ১ হাজার ৪৫৮টি গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি আমরা। ৩৬৫টি কলেজ সরকারিকরণ করা হয়েছে। ৫০ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাশরুম স্থাপন করেছি।’
‘বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে ৩৫ কোটি ৪২ লাখ ৯০ হাজার ১৬২টি বই বিতরণ করা হয়েছে। স্বাক্ষরতার হার ৭২ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।’
‘স্বাস্থ্যসেবা গ্রাম পর্যায়ে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সারাদেশে সাড়ে ১৮ হাজার কম্যুনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন করেছি।’
‘৩০ প্রকার ঔষধ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতাল থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা চালু করা হয়েছে।’
‘১১৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ১৬ হাজার ৩৫০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। শতকরা ৮৩ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছেন। ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা হবে।’
‘আমরা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। খাদ্য উৎপাদন ৪ কোটি মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে বিশ্বে আমাদের অবস্থান ৪র্থ। মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৭২ বছর।’
‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় কার্যকর করা হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। বিডিআর হত্যার বিচার হয়েছে। আমরা সফলতার সঙ্গে জঙ্গিবাদ দমন করেছি। জনসচেতনতা সৃষ্টি করে এ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।’
‘আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে। তাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।’
‘সরকারি কর্মচারিদের বেতনভাতা ১২৩ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছি। শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে। সারাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।’
‘পদ্মা সেতুর কাজ অর্ধেকের বেশি সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকায় মেট্টোরেল ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। সমগ্র বাংলাদেশকে রেল সংযোগের আওতায় আনা হচ্ছে।’
‘চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ করা হচ্ছে। ঈশ্বরদীর রূপপুরে দেশের প্রথম পরমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। খুব শিগগিরই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন করা হবে। পটুয়াখালীতে পায়রা বন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে। কক্সবাজারের মাতারবাড়ি এবং রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে।’
‘গ্রিডবিহীন এলাকায় ৪৫ লাখ সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। সৌর বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সঞ্চালনের কাজ শুরু হয়েছে।’
‘গ্যাসের সমস্যা দূর করতে এলএনজি আমদানি শুরু হচ্ছে। রান্নার জন্য দেশে এলপিজি গ্যাস উৎপাদনের কাজ শুরু হয়েছে।’
‘আমরা সারাদেশে সড়ক, মহাসড়ক, সেতু, কালভার্ট নির্মাণসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেছি। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ৪-লেনে উন্নীত করা হয়েছে। চন্দ্রা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক চার-লেনে উন্নয়নের কাজ চলছে।’
‘বিনিয়োগ বৃদ্ধির ফলে সারাদেশে ব্যাপকহারে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও ভারী শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। আমরা বেশ কয়েকটি বন্ধ কারখানা চালু করেছি। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র বিরোধ নিষ্পত্তির ফলে সমুদ্র সম্পদ আহরণ, গবেষণা ও উন্নয়নে ব্লু ইকোনামি কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে।’
‘সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা বহুমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। হতদরিদ্র ৩৫ লাখ মানুষকে বয়স্কভাতা দেওয়া হচ্ছে। ৮ লাখ ২৫ হাজার জন প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। ৮০ হাজার প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী শিক্ষা ভাতা পাচ্ছে।’
‘সারাদেশে ২ কোটি ২৮ লাখ ১৩ হাজার ৪৭৭ জন কৃষকের মধ্যে কৃষি উপকরণ কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। প্রায় ৯৮ লাখ কৃষক ১০ টাকায় ব্যাংক একাউন্ট খুলে ভর্তুকির টাকা পাচ্ছেন। প্রাইমারি থেকে মাস্টারস ডিগ্রি ও পিএইচডি পর্যন্ত ২ কোটি ৩ লাখ শিক্ষার্থী বৃত্তি ও উপবৃত্তি পাচ্ছে। ১ কোটি ৩০ লাখ প্রাইমারি শিক্ষার্থীর মায়ের কাছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বৃত্তির টাকা পৌঁছে যাচ্ছে। শিক্ষা খাতে মোট উপকারভোগীর সংখ্যা প্রায় ৪ কোটি ৩৭ লাখ ৭ হাজার।’
‘সারাবিশ্ব আজ বাংলাদেশকে সম্মানের চোখে দেখে। যে বাংলাদেশকে একসময় করুণার চোখে দেখত, সাহায্যের জন্য হাত বাড়ানোয় করুণার পাত্র মনে করত; আজ সে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্বসভায় সম্মানিত।’
‘আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতিমালা ১৯৭৪-এর আলোকে ফোর্সেস গোল ২০৩০ প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন করছি। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার-ভিডিপি এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স-এর উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।’
‘নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রশংসা অর্জন করেছে। নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গ বৈষম্য নিরসনে আমাদের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে। বাংলাদেশ জেন্ডার সংশ্লিষ্ট এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিশ্বে পঞ্চম স্থান অর্জন করেছে।’
‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে সাফল্য অর্জন করে চলেছে। অতি সম্প্রতি আমাদের মেয়েরা অনুর্ধ-১৫ সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এরআগে আমাদের মেয়েরা এএফসি অনুর্ধ্ব-১৪ ফুটবলে আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে প্রথমবারের মত বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ সফলতা দেখিয়ে যাচ্ছে।’
‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়’’- জাতির পিতার এই আপ্তবাক্য আমাদের পররাষ্ট্র নীতির মূল প্রতিপাদ্য। এই নীতি অনুসরণ করে আজ প্রতিবেশি দেশগুলিসহ সকলের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।’
‘অত্যাচার এবং নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে এসেছে। মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আমরা আশ্রয় দিয়েছি। তাদের মধ্যে সুষ্ঠুভাবে রিলিফ বিতরণ করা হচ্ছে এবং চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।’
বিগত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভা পরিষদ বিগত ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি শপথ নেন। এই হিসেবে ২০১৮ সালের ১২ জানুয়ারি বর্তমান সরকারের ৪ বছর পূর্ণ হল।