851
Published on ডিসেম্বর 8, 2017প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনে বিএনপি’র অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তাঁর ব্যক্তিগত তরফ থেকে কোন রকম উদ্যোগ গ্রহণের সম্ভবনাকে নাকচ করে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘সংসদীয় গণতন্ত্রের রীতি অনুযায়ী যেভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, ঠিক সেভাবেই ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রত্যেকটি দলেরই কর্তব্য।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আর অপাত্রে ঘি ঢালতে যাব না। আর নির্বাচনও কারো জন্য অপেক্ষা করে থাকবে না।’
তিনি বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক কম্বোডিয়া সফর নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হলেও আগামীর সংসদ নির্বাচনে বিএনপি’র অংশগ্রহণ এবং সৌদি আরবের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যানুযায়ী জিয়া পরিবারের প্রায় ৫শ’ কোটি টাকা সেখানকার ধনকুবেরদের ব্যবসায়ে লগ্নীকরণের বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকরা তাঁকে প্রশ্ন করেন। মামলায় সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়টিও অনুসন্ধিৎসু সাংবাদিকদের প্রশ্নে ঘুরে ফিরেই স্থান পায়। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেশে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এবং জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণার মত আন্তর্জাতিক বিষয়গুলোও উঠে আসে সাংবাদিকদের প্রশ্নে।
প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে বিএনপি’র অংশগ্রহণ সম্পর্কে বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের নিজেদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তারা নির্বাচন করবে কি না। তবে, আমার মনে হয় বিএনপি ২০১৪ সালের মত ভুল আর করবে না’- বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বিএনপিকে ২০১৪ সালের নির্বাচনে আনতে গিয়ে দলটির চেয়ারপার্সনের কাছ থেকে প্রাপ্ত অশালিন ও অমানবিক আচরণের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, যাদের মধ্যে এতটুকু ভদ্রতা জ্ঞান নেই তাদের সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন মনে করি না।
বেগম জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো’র মৃত্যুর পর সহানুভূতি জানাতে গেলে তাঁকে ভবনে প্রবেশ পর্যন্ত করতে না দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়ার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেই ফেলেন, তাঁকে পুনরায় তাদের (বিএনপি ও বেগম জিয়া) দরজায় কোন অনুরোধ নিয়ে যাবার মত জুলুম যেন আর করা না হয়। সেইসাথে নির্বাচনে না এসে অতীতের মত যদি বিএনপি কোন ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডে জড়ানোর চেষ্টা করে তাহলে জনগণই তাদের প্রতিরোধ করবে বলেও তিনি বিএনপিকে সতর্ক করে দেন।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সাম্প্রতিক কম্বোডিয়া সফরের সাফল্য নিয়ে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনাকেও নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে এমন কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি যে আমাদের আগাম নির্বাচনে যেতে হবে।’
রোহিঙ্গা সংকট সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার এই ইস্যুতে অব্যাহতভাবে বিপুল বৈশ্বিক সমর্থন পাচ্ছে এবং তিনি তাঁর কম্বোডিয়া সফরকালে নমপেনকে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আসিয়ান নেতাদের ওপর চাপ সৃষ্টির অনুরোধ জানিয়েছেন।
বিএনপি ক্ষমতায় এলে ক্ষমা করে দেয়া সংক্রান্ত খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিক ্একটি মন্তব্যের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর কাছে এ মন্তব্যটি দ্ব্যর্থক মনে হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি সম্পূর্ণ পরিস্কার নই, বিএনপি চেয়ারপার্সন ক্ষমা করছেন, নাকি ২০০৪ সালে আমাকে হত্যা করতে গ্রেনেড হামলা চালানোর জন্য ক্ষমা চাচ্ছেন।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কি অপরাধ করেছি যে, আমার তার ক্ষমা প্রয়োজন?’ তিনি বলেন, ‘বরং সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাস্টার এমপি, ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা এবং ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর কয়েক হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যার জন্য বিএনপি চেয়ারপার্সনের ক্ষমা চাওয়া উচিত।’ প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রাণনাশের সকল প্রচেষ্টার জন্য বিএনপি’কে অভিযুক্ত করে বলেন, ‘প্রতিটি ঘটনাই তাদের উস্কানি ও হুমকির পর পর ঘটেছে।’ তিনি বলেন, ‘তারা আমি কখনো প্রধানমন্ত্রী বা বিরোধীদলীয় নেতা হতে পারবো না ঘোষণা দেয়ার পর আমাকে হত্যার জন্য ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রেখেছিলো।’
বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার তার বিরুদ্ধে একটি মামলাও দায়ের করেনি। অথচ বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর তার (শেখ হাসিনা) বিরুদ্ধে ডজনখানেক মামলা দায়ের করেছিলো।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির সকল অভিযোগ এনেছে গত তত্ত্বাবধায়ক সরকার, যে সরকারে রাষ্ট্রপতি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান ও তৎকালীন সেনাপ্রধানের মতো লোক ছিলো, যাদের সকলেই খালেদা জিয়ার প্রিয়ভাজন ছিলেন।
খালেদা জিয়ার বিচার এড়ানোর মানসিকতার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি একটি দুর্নীতির মামলা স্থগিত করতে দেড়শ’বারের বেশি আবেদন করেছেন এবং বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করতে ২২/২৩টি রিট পিটিশন দায়ের করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বিশেষ করে আওয়ামী লীগ এমপি ছবি বিশ্বাস ও পুলিশের ওপর বিএনপি সমর্থকদের হামলার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘প্রতিবার আদালতে যাওয়ার পথে তিনি (খালেদা) নগর জীবনে বিশৃংখলা ও গন্ডগোল সৃষ্টি করেছেন।’
শেখ হাসিনা ২০১৩-১৪ ও ১৫ সালে সারাদেশে বিএনপি-জামায়াতের আগুন সন্ত্রাসের কথা স্মরণ করে বলেন, সেসব অপকর্মের জন্য খালেদা জিয়ার নিজের জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ সম্পদ সৌদি আরবে পাচারের অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুঃখের বিষয় যে, বিদেশী সংবাদ মাধ্যমে খবর এসেছে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে আসেনি। তিনি বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক যে, দুটি টিভি চ্যানেল ও দুইটা সংবাদপত্র ছাড়া এ খবর প্রকাশের ব্যাপারে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম কোন আগ্রহ দেখায়নি। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে, দেশে বর্তমানে চালু আছে এমন অধিকাংশ সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স তার সরকারই দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সংবাদ মাধ্যমের মালিক ও সাংবাদিকদের জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট এমন সংবাদের ওপর মনোনিবেশ করার ক্ষেত্রে আরো সাহস দেখানো আহবান জানিয়ে বলেন, ‘মিডিয়া খুনিদের পৃষ্ঠপোষক ও স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির প্রতি এতো দুর্বল কেনো তা আমি বুঝতে পারি না।’