1969
Published on ফেব্রুয়ারি 24, 2020স্বাধীন দেশে প্রত্যাবর্তনের প্রায় দেড় মাসের মাথায় নিজের গ্রাম টুঙ্গিপাড়ায় যান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭২ সালের এই দিনটি সপরিবারে নিজের বাড়িতে কাটান তিনি। এর আগে এক বার্তায় পাকিস্তানে অবস্থানরত বাঙালদের দুর্দশা লাঘবে প্রভাব খাটাতে জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। এছাড়া এশীয় সমস্যা সমাধানের চেষ্টা না করার জন্য নিক্সনকে সতর্ক করেন বঙ্গবন্ধু। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে নির্যাতনের শিকার নারীদের পুনর্বাসনে ১০ কোটি টাকার কর্মসূচি নেওয়া হয়। এটি কার্যকর করতে একটি জাতীয় বোর্ডও গঠন করে দেওয়া হয়।
নিক্সনকে সাবধান করেন বঙ্গবন্ধু
চীনা কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান মাও সে তুং ও প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই-এর সঙ্গে আলোচনার জন্য পিকিং যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন। এসব আলোচনায় কারও আপত্তি থাকার কথা নয়, কিন্তু চীনে বসে এশীয় সমস্যা সমাধানের চেষ্টা না করার জন্য নিক্সনকে সতর্ক করেন বঙ্গবন্ধু। খুলনা শহরের দক্ষিণে অবস্থিত পাইকগাছায় অবস্থিত এক জনসভায় ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি একথা বলেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, এশিয়ার দেশগুলো নিজেরাই তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করবে। এসব সমস্যা সমাধানের অধিকার প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে কেউ দেয়নি।
টুঙ্গিপাড়ার জনসভা
বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের এইদিনে টুঙ্গিপাড়ায় তার গ্রামে এক অনির্ধারিত জনসভায় ভাষণ দেন। বঙ্গবন্ধু টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছানোর আগেই বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, তাদের কন্যা শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, শেখ কামাল, শেখ রাসেলকে নিয়ে বাড়ি গিয়েছিলেন। বাসস খবরটি প্রচার করে। দৈনিক বাংলায় ২৪ ফেব্রুয়ারির পত্রিকায় সেই খবরে বলা হয়, খুলনা থেকে ফেরার পথে বঙ্গবন্ধু টুঙ্গিপাড়া যান। বর্বর হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের ১৯ মে বঙ্গবন্ধুর বাড়িটি পুড়িয়ে দেয়। পোড়া বিধ্বস্ত বাড়িটি দেখে বঙ্গবন্ধু আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। বঙ্গবন্ধুর বৃদ্ধ মা-বাবা সেসময়ও বিধ্বস্ত বাড়ির একটি টিনের ঘরে বাস করছিলেন।
পশ্চিম পাকিস্তানের বাঙালিদের নিয়ে চিন্তিত বঙ্গবন্ধু
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের বিভিন্ন অংশে বসবাসকারী বাঙালিদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবের ব্যাপারে তার প্রভাব খাটানোর জন্য জাতিসংঘ সেক্রেটারি জেনারেলের কাছে আবেদন জানান। ২৩ ফেব্রুয়ারি এক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী এই আবেদন জানান। প্রয়োজনে তার প্রতিনিধিকে পাকিস্তানে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানের বসবাসকারী বাঙালিদের অবস্থা সম্পর্কে প্রতিদিন ভয়াবহ খবর আসছে। এসব খবর থেকে জানা গেছে, পাকিস্তানের বাঙালিরা নিরাপত্তার অভাব আর আতঙ্কজনক অবস্থার মধ্যে বসবাস করছে। অনেক জায়গায় তাদের পানি আর বিদ্যুৎ সরবরাহ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই বাঙালিদের অজ্ঞাত বন্দিশিবিরে আটক রাখা হচ্ছে। করাচি ও অন্যান্য শহরে হত্যা নির্যাতন করা হচ্ছে বলেও খবর পাওয়া যাচ্ছে।
হারিয়ে যাওয়া ছবির অ্যালবাম ফিরে পাওয়া
১৯৭২ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু তার হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তিগত ছবির অ্যালবাম ফিরে পেয়েছেন। সেটি উদ্ধার হয় বিমানবন্দর এলাকা থেকে। ডেইলি অবজারভারে এবিষয়ে একটি ছবিসহ সংবাদ প্রকাশ করা হয় ১৯৭২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যালবামটিতে সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা একে ফজলুল হকসহ বিভিন্ন নেতার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ছবি ছিল। ১৯ তারিখ বিমানবন্দর এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া এই অ্যালবামটি বিমানবাহিনীর প্রতিনিধিরা এসে বঙ্গবন্ধুর হাতে তুলে দেন।
নির্যাতনের শিকার নারীদের সহায়তায় জাতীয় বোর্ড
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নির্যাতনের শিকার নারীদের সহায়তা দিতে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা গঠন করে দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এব্যাপারে আনুমানিক ১০ কোটি টাকার একটি বিস্তারিত কর্মসূচি প্রধানমন্ত্রী ১৯৭২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি নীতিগতভাবে অনুমোদন করে দেন বলে বাসসের খবরে প্রকাশ করা হয়। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তাদের দায়িত্ব নির্যাতনের শিকার নারীদের সাহায্য প্রদান ছাড়াও বিভিন্ন রকমের শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। কাজটি সম্পাদনে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সাহায্য সংস্থার কাছে আর্থিক সাহায্য আবেদন করা হয়।
মন্ত্রিসভার বৈঠক, কামরুজ্জামান দায়িত্ব নিচ্ছেন?
১৯৭২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে মন্ত্রিসভার এক বৈঠক প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বলে বাসসের খবরে প্রকাশ করা হয়। বৈঠক শেষে যোগাযোগমন্ত্রী এটিকে মন্ত্রিসভার সদস্যদের এক ঘরোয়া বৈঠক বলে দাবি করেন। তবে ভেতরে ছিলেন যারা তাদের কারও কারও পক্ষ থেকে বলা হয়, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগকে নতুন করে সংগঠিত করার প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা হয় সভায়। সাহায্য ও পুনর্বাসন দফতরের মন্ত্রী এ এইচ এম কামারুজ্জামান আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কমিটির প্রধান দায়িত্ব পালনের জন্য মন্ত্রিসভা ত্যাগ করতে যাচ্ছেন মর্মে খবর নানা পত্রিকায় প্রকাশ করতে দেখা গেলেও সরকারিভাবে জানা যায়নি বলেও উল্লেখ করা হয়।
নজরুল দেশে আসছেন
কাজী নজরুল ইসলাম তার জন্মদিনে ঢাকায় থাকবেন বলে জানানো হয়। ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত আমন্ত্রণে কবি বাংলাদেশে আসবেন এবং তিনি কয়েক মাস থাকবেন বলেও পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়। সে বছর ১১ জ্যৈষ্ঠ তার জন্মবার্ষিকীতে তিনি ঢাকায় থাকার কথা জানান।
সৌজন্যেঃ বাংলা ট্রিবিউন (২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০)