বঙ্গবন্ধুর ৬-দফা ও আমাদের স্বাধীনতা

35

Published on জুন 7, 2025
  • Details Image

‘আমাদের বাঁচার দাবী’ খ্যাত বঙ্গবন্ধুর ৬-দফা কর্মসূচি ছিল বাঙালির মুক্তির মহাসনদ । এটি বাঙালির জাতীয় মুক্তির ‘ম্যাগনাকার্টা' নামেও অভিহিত । ১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ই ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের লাহোরে দু-দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত বিরোধী দলের জাতীয় কনভেনশনের প্রথমদিনে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কনভেনশনের সাবজেক্ট কমিটির বিবেচনার্থে ওই কর্মসূচি পেশের নিষ্ফল চেষ্টা চালান । ৬-দফা কর্মসূচি পাকিস্তানি শাসন-শোষণ- নিয়ন্ত্রণ থেকে বাঙালির স্বাধীনতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । এ কর্মসূচি ঘোষণার মাত্র ৫ বছরের মধ্যে সংঘটিত হয় বাংলাদেশ বিপ্লব, ১৯৭১ । অথচ এর পূর্বে দেড় যুগ ধরে পাকিস্তান রাষ্ট্রে বাঙালিদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে নানা দাবি উত্থাপন ও আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হয়েছে । ৬-দফা কর্মসূচি কী করে এত দ্রুত বাঙালিদের জাতীয় মুক্তির চেতনামূলে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে অনিবার্য করে তুলল? এর মর্মবাণীই-বা কী ছিল? কোন পটভূমিতে এটি প্রণীত হয়েছিল? বঙ্গবন্ধু কীভাবে এটি জনসম্মুখে তুলে ধরেন? ৬-দফার প্রশ্নে তিনি কেন এত আপসহীন ছিলেন? ৬-দফার প্রতি পাকিস্তানি শাসক বা কায়েমি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া কী ছিল? এ নিবন্ধে এসব বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।

৬-দফা কর্মসূচি
সংক্ষেপে, ৬-দফা কর্মসূচি ছিল নিম্নরূপ :

দফা-১ : লাহোর-প্রস্তাবের ভিত্তিতে পাকিস্তান হবে একটি ফেডারেশন বা যুক্তরাষ্ট্র । সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত আইন পরিষদের প্রাধান্যসহ সংসদীয় পদ্ধতির সরকার গঠনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

দফা-২ : বৈদেশিক সম্পর্ক ও প্রতিরক্ষা ছাড়া সকল বিষয় অঙ্গরাষ্ট্র বা প্রদেশের হাতে ন্যস্ত থাকবে। উল্লেখিত দুটি বিষয় ন্যস্ত থাকবে কেন্দ্রীয় বা যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের হাতে।

দফা-৩ : পাকিস্তানের দুটি অঞ্চলের জন্য পৃথক অথচ অবাধে বিনিময়যোগ্য মুদ্রাব্যবস্থার প্রবর্তন করতে হবে । অথবা সমগ্র দেশে একটি মুদ্রাব্যবস্থা থাকবে, তবে সেক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে মূলধন পাচার রোধের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এজন্য একটি ফেডারেল ব্যাংকের অধীনে কার্যকরী ব্যবস্থা থাকতে হবে।

দফা-৪ : অঙ্গরাষ্ট্র বা প্রদেশগুলোর কর বা শুল্ক ধার্য করার ক্ষমতা থাকবে। তবে ব্যয় নির্বাহের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার এর একটি অংশ পাবে।

দফা-৫ : পাকিস্তানের দুই অঞ্চলের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পৃথক হিসাব রাখা হবে। অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা স্ব-স্ব অঞ্চলের বা অঙ্গরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এছাড়া কেন্দ্রীয় সরকারের বৈদেশিক নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আঞ্চলিক সরকার বিদেশে বাণিজ্য প্রতিনিধি প্রেরণ
এবং যে-কোনো চুক্তি সম্পাদন করতে পারবে।

দফা-৬ : নিজস্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অঙ্গরাষ্ট্রসমূহ প্যারামিলিশিয়া বা আধা-সামরিক বাহিনী গড়ে তুলতে পারবে।

পটভূমি

কাশ্মীর প্রশ্নে ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ১৭ দিনের যুদ্ধ, জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি, অতঃপর ১৯৬৬ সালের ১০ই জানুয়ারি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে দু-দেশের মধ্যকার বিরোধ নিষ্পত্তির এক সমঝোতা চুক্তি উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দে স্বাক্ষরিত হয়, যা ‘তাসখন্দ চুক্তি' নামে পরিচিত । এ চুক্তি স্বাক্ষরের সঙ্গে সঙ্গে বিশেষ করে পশ্চিম পাকিস্তানের বিরোধী রাজনৈতিক মহল ও জনমনে ব্যাপক বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় । প্রেসিডেন্ট আইয়ুব এর মাধ্যমে কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে ভারতের নিকট থেকে সুস্পষ্ট কোনো অঙ্গীকার আদায় না করে পাকিস্তানের জাতীয় স্বার্থ তথা ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের ওপর পাকিস্তানের দাবি ও কাশ্মীরীদের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের লড়াইকে জলাঞ্জলি দিয়েছেন মর্মে একটি ধারণা প্রায় সর্বমহলে বদ্ধমূল হয়ে ওঠে।

এরূপ অবস্থায়, যুদ্ধোত্তর সামগ্রিক পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণের লক্ষ্যে নবাবজাদা নসরুল্লাহ খানসহ পশ্চিম পাকিস্তানের কতিপয় প্রভাবশালী বিরোধী দলীয় নেতা ১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ই ফেব্রুয়ারি লাহোরে পাকিস্তানের উভয় অংশের বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দের এক জাতীয় কনভেনশন আহ্বান করে । ১৭ দিনের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তান সম্পূর্ণ অরক্ষিত হয়ে পড়েছিল । এমতাবস্থায়, পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র নিরাপত্তার ব্যবস্থাসহ বাঙালিদের ন্যায্য স্বার্থের বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কনভেনশনের বিবেচনার জন্য পূর্বে উল্লিখিত ৬-দফা দাবিনামা পেশের চেষ্টা করেন । কিন্তু সাবজেক্ট কমিটিতেই তা পেশের সুযোগ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি । উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু কনভেনশনের দ্বিতীয় দিনের অধিবেশন বর্জন করে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল নিয়ে ১১ই ফেব্রুয়ারি ঢাকার পুরাতন তেজগাঁ বিমানবন্দরে নেমে সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের নিকট লাহোর সম্মেলনের সঙ্গে তাঁর দলের সম্পর্কচ্ছেদের কারণ ব্যাখ্যা করেন । পাশাপাশি তিনি তাঁর ৬-দফা কর্মসূচির প্রধান প্রধান দিক তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন । এভাবে সর্বপ্রথম তাঁর ৬-দফা কর্মসূচি জনসম্মুখে প্রকাশ পায় ।

তবে ৫ই ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলের কনভেনশন অনুষ্ঠানের একই তারিখে বঙ্গবন্ধুর নামে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আবদুল মোমিন কর্তৃক ৬-দফা কর্মসূচি সংবলিত একটি পুস্তিকা প্রকাশিত হয় । এ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ৬-দফা কর্মসূচি পূর্বেই প্রণীত হয়েছে। আসলে এর পেছনে রয়েছে দীর্ঘ এক পটভূমি।

১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান সোহরাওয়ার্দী-আবুল হাশিম সমর্থক বঙ্গীয় মুসলিম লীগের প্রগতিশীল অংশের নেতা-কর্মীদের এবং অবশ্যই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাষ্ট্রভাবনায় ছিল না । তাঁদের রাষ্ট্রভাবনায় ছিল পূর্ব ভারতের এ অঞ্চলে বাঙালিদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা । এর ভিত্তি ছিল ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব । দেশ বিভাগের প্রাক্কালে যুক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বঙ্গীয় কংগ্রেসের নেতা কিরণ শংকর রায়, নেতাজী সুভাষ বসুর অগ্রজ শরৎ চন্দ্র বসু, বঙ্গীয় মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশিম প্রমুখকে সঙ্গে নিয়ে সে লক্ষ্যে ‘স্বাধীন অখণ্ড বাংলা রাষ্ট্র' প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন । কিন্তু নানা কারণে সেদিন তা সফল হয়নি। বঙ্গবন্ধু এ উদ্যোগের সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থেকে কলকাতায় এর পক্ষে একাধিক ছাত্র-জনতার সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।

বাঙালিদের সমর্থন ও ভোট ছাড়া পাকিস্তান রাষ্ট্রই প্রতিষ্ঠা পেত না। ওই রাষ্ট্রে বাঙালিরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ (শতকরা ৫৬ ভাগ), অথচ পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রথম থেকেই তাদের ওপর শুরু হয় পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শাসন, শোষণ ও জাতি-নিপীড়ন । অন্যকথায়, পূর্ব বাংলার ওপর প্রতিষ্ঠা পায় পশ্চিম পাকিস্তানের এক ধরনের ঔপনিবেশিক শাসন ।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ভাষানীতিও ছিল চরম অগণতান্ত্রিক ও ঔপনিবেশিক । বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার বাঙালিদের দাবি ন্যায়সংগত হওয়া সত্ত্বেও, তা আদায়ে শুধু আন্দোলনই নয়, বাঙালিদের রক্ত পর্যন্ত দিতে হয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদের কোনোরূপ অংশীদারিত্ব ছিল না । ১৯৭০ সালের পূর্বে পাকিস্তানে কোনো সাধারণ নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়নি, আর সেটিই ছিল প্রথম ও শেষ নির্বাচন ।

১৯৫৮ সালে এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জেনারেল আইয়ুব খান ক্ষমতা দখল করেন । এর ফলে বাঙালিদের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানি সেনা-আমলাতান্ত্রিক কেন্দ্রীয় শাসন-নিয়ন্ত্রণ নিরঙ্কুশ ও পাকাপোক্ত হয় । পরোক্ষ পদ্ধতির তথাকথিত মৌলিক গণতন্ত্র (১৯৫৯) ব্যবস্থার ওপর প্রতিষ্ঠিত আইয়ুবি শাসনে বাঙালি জনপ্রিয় রাজনীতিকদের অংশগ্রহণের প্রায় সকল পথই বন্ধ হয়ে যায় । পাকিস্তানের উভয় অংশের মধ্যে বৈষম্য দিন-দিন আরও বৃদ্ধি পায় । বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। রেডিও-টেলিভিশনে রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ হয় । নানা কালাকানুন প্রবর্তিত হয়। উদ্ভূত অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পূর্ব বাংলার কতিপয় অর্থনীতিবিদ পাকিস্তানের আঞ্চলিক বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরে এর প্রতিকারে ‘দুই অর্থনীতি তত্ত্ব' (Two Economy Theory) উপস্থাপন করেন।

৬-দফা প্রচারে বঙ্গবন্ধুর কৌশল

বিরোধী দলের লাহোর কনভেনশনের সঙ্গে সম্পূর্ণ সম্পর্কচ্ছেদ করে ঢাকা ফিরে এসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২০শে ফেব্রুয়ারি ১৯৬৬ সালে তাঁর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাসভবনে আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির বর্ধিত সভা আহ্বান করেন । সিনিয়র সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওয়ার্কিং কমিটির সভায় এর সদস্য ছাড়াও জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য এবং জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকগণ যোগদান করেন । দীর্ঘ ১৫ ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে বঙ্গবন্ধু লাহোরে বিরোধী দলের কনভেনশনের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্কচ্ছেদের কারণ ব্যাখ্যা শেষে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নতুন রাজনৈতিক কর্মসূচি ও কর্মপন্থা গ্রহণের আবশ্যকতার বিষয়ে বক্তব্য রাখেন । ওয়ার্কিং কমিটির এ সভা তাঁর ৬-দফা কর্মসূচির প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করে । সভায় ১৮, ১৯ ও ২০শে মার্চ দলের কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় ।
৬-দফা কর্মসূচি ঘোষণার পর এর প্রতি বঙ্গবন্ধু অন্য আর কোনো দলের সমর্থন পাননি । এমনকি বঙ্গবন্ধুর নিজের দল আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতৃত্বের কেউ কেউ ৬-দফার ব্যাপারে সন্দিহান ছিলেন এবং এদের একটি অংশ পিডিএম-পন্থি আওয়ামী লীগ দাঁড় করানোর চেষ্টাও করেন । বঙ্গবন্ধুর ভরসা ছিল সারাদেশে আওয়ামী লীগের একদল পরীক্ষিত নেতা-কর্মী, দলের অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতৃত্ব ও ছাত্র-যুব সম্প্রদায় । বাঙালির মুক্তির প্রশ্নে ৬-দফাই যে সঠিক কর্মসূচি, সে সম্বন্ধে বঙ্গবন্ধুর অবিচল বিশ্বাস ছিল । তাই তিনি ঘোষণা করেন, “সরাসরি রাজপথে যদি আমাকে একা চলতে হয়, চলবো । কেননা ইতিহাস প্রমাণ করবে বাঙালির মুক্তির জন্য এটাই সঠিক পথ।”

অন্যদিকে, আইয়ুব সরকার যে বঙ্গবন্ধুকে ৬-দফা কর্মসূচি নিয়ে বেশিদূর অগ্রসর হতে দেবে না, সে সম্বন্ধেও বঙ্গবন্ধুর পরিষ্কার ধারণা ছিল। তাই, তাঁর কৌশল ছিল, যত দ্রুত সম্ভব ৬-দফা কর্মসূচি জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া। সে কারণে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের অনুমোদনের অপেক্ষা না করে, একদিকে তিনি দলের নেতা-কর্মী ও সর্বসাধারণের নিকট এ কর্মসূচি যাতে বোধগম্য হয়, সেদিকে লক্ষ রেখে দফাওয়ারি ব্যাখ্যাসহ সহজ-সরল ভাষায় ৬-দফা কর্মসূচি পুস্তিকা আকারে ছাপিয়ে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করেন, অপরদিকে তিনি ৬-দফা কর্মসূচি নিয়ে ব্যাপক গণসংযোগে নেমে পড়েন । ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং-এর পাঁচ দিনের মধ্যে ২৫শে ফেব্রুয়ারি তিনি তাঁর নতুন কর্মসূচি নিয়ে চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানের জনসভায় হাজির হন । এটিই ছিল প্রকাশ্য কোনো জনসভায় সর্বপ্রথম ৬-দফা কর্মসূচি পেশ। জনসভায় ৬-দফা কর্মসূচিকে ‘নূতন দিগন্তের নূতনদের মুক্তির সনদ' হিসেবে আখ্যায়িত করে চট্টগ্রামবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন :
একদিন সমগ্র পাক-ভারতের মধ্যে বৃটিশ সরকারের জবরদস্ত শাসন-ব্যবস্থাকে উপেক্ষা করিয়া এই চট্টগ্রামের জালালাবাদ পাহাড়েই বীর চট্টলের বীর সন্তানেরা স্বাধীনতার পতাকা উড্ডীন করিয়াছিলেন । আমি চাই যে, পূর্ব পাকিস্তানের বঞ্চিত মানুষের জন্য দাবী আদায়ে সংগ্রামী পতাকাও চট্টগ্রামবাসীরা চট্টগ্রামেই প্রথম উড্ডীন করুন ।১১

লালদীঘির জনসভার পর ২৭শে ফেব্রুয়ারি নোয়াখালীর মাইজদী, একইদিন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ, ১০ই মার্চ মুক্তাগাছা, ১১ই মার্চ ময়মনসিংহ, ১৪ই মার্চ সিলেট প্রভৃতি স্থানের জনসভায় এবং এসব স্থানের দলের নেতা-কর্মীদের সভায় বঙ্গবন্ধু ৬-দফার ব্যাখ্যাসহ দিনির্দেশনাপূর্ণ বক্তব্য রাখেন । এরপর ১৮ই মার্চ ঢাকার মতিঝিলে ইডেন হোটেল প্রাঙ্গণে শুরু হয় তিনদিনব্যাপী আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন । দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয় । এ অধিবেশনের উদ্বোধনী সংগীত ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি' (ইত্তেফাক, ১৯শে মার্চ ১৯৬৬, পৃ. ১, ৮), যা আজ বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত । এরপর কাউন্সিলে সাংগঠনিক অন্যান্য বিষয়াদি স্বল্প সময়ে সম্পন্ন করে অতঃপর সারাদেশ থেকে আগত কাউন্সিলরদের সম্মুখে বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞার আলোকে ক্ষুরধার যুক্তিসহ ৬-দফা কর্মসূচির ওপর দীর্ঘ লিখিত বিশ্লেষণধর্মী এক বক্তব্য পেশ করেন । কাউন্সিলে ৬-দফা কর্মসূচি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয় এবং তা বাস্তবায়নে কাউন্সিলরগণ যে-কোনো ত্যাগ স্বীকারে তাদের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন । কাউন্সিল সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বসম্মতিক্রমে দলের সভাপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন । কাউন্সিল উপলক্ষ্যে সভামণ্ডপের পথ, ফটক, অধিবেশন স্থল-সর্বত্র অসংখ্য ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড, প্রচারপত্রে ভরে গিয়েছিল । এসব ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ডের বক্তব্য ছিল খুবই প্রণিধানযোগ্য । যেমন—

‘৬-দফা আমাদের বাঁচার দাবী,’ 'লাহোর প্রস্তাবের বাস্তবায়নেই শক্তিশালী পাকিস্তান গড়ে উঠবে,' ‘গণতন্ত্র ফিরিয়ে দাও', 'সোনার দেশ আজ শ্মশান কেন?’, ‘অর্থ পাচার বন্ধ কর’, ‘দমননীতি বন্ধ কর', ‘জনসংখ্যার ভিত্তিতে রাজস্ব বণ্টন চাই’, ‘একূল ভেঙ্গে ওকূল গড়া আর নয়’, ‘মৃত্যুমুখী জনতাকে বাঁচাও’, “জনসংখ্যার ভিত্তিতে সেনা বাহিনীতে লোক নিয়োগ কর’, ‘বিমানবাহিনীর প্রধান কার্যালয় পূর্ব পাকিস্তানে চাই’, ‘নৌ-দফতরের প্রধান কার্যালয় চট্টগ্রামে চাই’, ‘দুই অর্থনীতি কায়েম কর’, ‘সংগ্রামী জনতা এক হও’, ‘সংগ্রামই আনবে মুক্তি’, ‘শোষণনীতি বন্ধ কর’, ‘যুদ্ধ নয় শান্তি চাই', ‘দেশ রক্ষায় পূর্ব পাকিস্তানকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হবে’, ‘৬-দফা আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হউন’, ‘৬-দফা গণমুক্তির মহাসনদ', ‘সংগ্রাম চলবে অবিরাম’, ‘মীরজাফরদের রুখিয়া দাঁড়াও' ইত্যাদি ।

কাউন্সিল অধিবেশনের তৃতীয় দিবস (২০শে মার্চ) থেকে শুরু হয় ৬-দফা কর্মসূচিভিত্তিক দ্বিতীয় দফা গণসংযোগ । প্রথমে ঢাকার পল্টন ময়দান । প্রধান বক্তা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । চরম প্রতিকূল আবহাওয়া সত্ত্বেও তিনি ৬-দফা কর্মসূচির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে জনতার উদ্দেশে আহ্বান জানিয়ে বলেন :
চরম ত্যাগ স্বীকারের প্রস্তুতির এই বাণী লইয়া আপনারা দিকে দিকে ছড়াইয়া পড়ুন, পূর্ব পাকিস্তানের প্রত্যন্ত প্রদেশের প্রতিটি মানুষকে জানাইয়া দিন, দেশের জন্য, দশের জন্য, অনাগতকালের ভাবী বংশধরদের জন্য সবকিছু জানিয়া-শুনিয়াই আওয়ামী লীগের নেতা ও কর্মীরা এবার সর্বস্ব পণ করিয়া নিয়মতান্ত্রিক পথে ৬-দফার ভিত্তিতে দেশব্যাপী আন্দোলনের জন্য আগাইয়া আসিয়াছে ।১৩

পল্টনের জনসভার পর বঙ্গবন্ধু তাঁর ৬-দফা কর্মসূচি নিয়ে দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে উল্কার মতো ছুটে চলেন : ২৬শে মার্চ সন্দ্বীপ, ২৭শে মার্চ সাতকানিয়া, ৭ই এপ্রিল পাবনার নগরবাড়ি ও পাবনা, ৮ই এপ্রিল বগুড়া, ৯ই এপ্রিল রংপুর, ১০ই এপ্রিল দিনাজপুর, ১১ই এপ্রিল রাজশাহী, ১৩ই এপ্রিল ফরিদপুর, ১৫ই এপ্রিল যশোর, ১৬ই এপ্রিল কুষ্টিয়া, ১৭ই এপ্রিল খুলনা, ২৯শে এপ্রিল কুমিল্লায় জনসভায় ভাষণ দেন । এসব জনসভার প্রতিটিতে বিপুল সংখ্যক মানুষের সমাগম ঘটে । সভা প্রায়ই সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত পর্যন্ত চলে ।
৬-দফার জনপ্রিয়তা যত দ্রুত চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ছিল, ততই সরকারের নির্যাতন-নিবর্তনমূলক আচরণ বৃদ্ধি পাচ্ছিল । তথাকথিত পাকিস্তান নিরাপত্তা আইনে একের পর এক বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হতে থাকে—কখনো যশোর, কখনো সিলেট, ময়মনসিংহ, কখনো ঢাকা আবার কখনো নারায়ণগঞ্জে । এর মধ্যেও বঙ্গবন্ধু মামলায় হাজিরা বা জামিন আবেদনের উদ্দেশ্যে যখন যেখানে গিয়েছেন, তখন সেখানে সুযোগ পেলেই ৬-দফার পক্ষে জনসভা করেছেন । ৬-দফা প্রচারকালে তিনি ৩ মাসে মোট ৮ বার গ্রেপ্তার হন । দেশ জুড়ে ৬-দফার প্রচারকার্য তিনি প্রায় গুছিয়ে নিয়ে এসেছিলেন । এমনি অবস্থায় ৮ই মে নারায়ণগঞ্জের জনসভায় যোগদান করে ঢাকায় ফেরার পর রাতে নিজ বাসভবন থেকে বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হন এবং প্রায় তিন বছর একনাগাড়ে কারারুদ্ধ থাকেন । অতঃপর আইয়ুব সরকার কর্তৃক রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে দায়েরকৃত আগরতলা মামলায় ঢাকার ক্যান্টনমেন্টে তাঁকে বিচারের সম্মুখীন হতে হয় । ৬-দফাভিত্তিক আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধুর গ্রেপ্তার সম্বন্ধে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী তালুকদার মনিরুজ্জামান বলেন :

Bengal seemed to be in the grip of a 'mass revolution', prompting the central For about three months (from mid-February to mid-May) the urban centres of East
government to arrest Sheikh Mujib.8

৬-দফা প্রচারকালে বঙ্গবন্ধুর বক্তব্য

লাহোরে বিরোধী দলের কনভেনশনে (৫-৬ই ফেব্রুয়ারি ১৯৬৬) যোগদানের প্রাক্কালে ৬-দফা সম্বন্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে বক্তব্য রাখেন সেখান থেকে শুরু করে ৮ই মে চূড়ান্তভাবে গ্রেপ্তার হওয়ার পূর্ব-পর্যন্ত ৬-দফা প্রচারকালে তিনি বিভিন্ন জনসভা, সাংবাদিক সম্মেলন, দলের ওয়ার্কিং কমিটি ও কাউন্সিল এবং নেতা-কর্মীদের সমাবেশে যেসব বক্তব্য রাখেন, তার প্রধান বিষয়সমূহ ছিল এরূপ : ‘জনগণের ইচ্ছানুযায়ী দেশের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করিতে হইবে’, ‘পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে পাঁচ কোটি [তখনকার বাঙালি জনসংখ্যা] মানুষের সহিত বিশ্বাসঘাতকতা করা সম্ভব নহে', ‘দেশবাসী যাহাতে স্বাধীনতার সত্যিকারের স্বাদ ভোগ করিতে পারে—আওয়ামী লীগের ৬-দফা দেশবাসীর ঈপ্সিত সেই [...] সুস্পষ্ট রূপরেখা', '১৮ বছরব্যাপী পূর্ব পাকিস্তান শোষণ ২ শত বছরের বৃটিশ শোষণকেও হার মানাইয়াছে’, ‘৬-দফা কায়েমী স্বার্থের মূলে আঘাত হানিয়াছে—তাই বিরোধিতা’, ‘৬-দফার বাণী ঘরে ঘরে পৌছাইয়া দিন’, ‘দেশপ্রেমিক কে? ৬-দফার সমালোচকরা ? —ওরা তো বহুরূপী?’, ‘গণদাবী লইয়া সংগ্রাম করিলেই বিচ্ছিন্নতাবাদী আখ্যা দেওয়া হইয়া থাকে', ‘৬-দফার উপর গণভোট হইয়া যাক’, ‘জেল-জুলুম ও নির্যাতন সম্পর্কে সচেতন হইয়াই ৬-দফা দাবী ঘোষণা করেছি’, ‘৬-দফার দাবী লইয়া গ্রামে-গ্রামে আপনারা ছড়াইয়া পড়ুন’, ‘৬-দফা দাবী আদায়ের জন্য যারা সংগ্রাম করিবে, তাদের উপর অত্যাচার আসিবে, নির্যাতন হইবে, কিন্তু এই অত্যাচার ও নির্যাতন সহ্য করিয়া লইয়া ৬-দফার সংগ্রামকে সাফল্যমণ্ডিত করিতে হইবে’, ‘সর্বস্ব পণ করিয়াই আমরা আজ আন্দোলনের এ কণ্টকাকীর্ণ পথে পা বাড়াইয়াছি’, ‘জেল, জুলুম ও হয়রানি দ্বারা ন্যায্য জনদাবীর সংগ্রামের গতিরোধ করা যায় না’, ‘একদিনে ইহার সাফল্য আসিবে না, জনগণের দৃঢ় ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের ফলেই ৬-দফা সফল হইবে’, ‘৬-দফা প্রশ্নে কোনো আপস নাই, যে কোনো ত্যাগের বিনিময়ে দাবী আদায় করা হইবে’, ‘জেল বহুবার দেখিয়াছি, বুলেটের আঘাতও পরীক্ষা করিয়া দেখিতে প্রস্তুত' ইত্যাদি । বঙ্গবন্ধুর উপর্যুক্ত বক্তব্য স্বব্যাখ্যেয়।

জাতীয় মুক্তি বা স্বাধীনতার ‘মহাসনদ’

পাকিস্তান এক জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র ছিল না । এটি ছিল ‘এক রাষ্ট্র দুই দেশ’ বা ‘এক রাষ্ট্র দুই জাতি' । বস্তুত, ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান বাঙালি রাজনীতিকদের মধ্যে সোহরাওয়ার্দী-আবুল হাশিমের নেতৃত্বাধীন প্রগতিশীল অংশের অনেকের রাষ্ট্রভাবনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ছিল না, যা পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে ।
পাকিস্তানি ২৪ বছরের রাষ্ট্রীয় শাসন আমলে বাঙালির শৃঙ্খলমুক্তি বা জাতীয় স্বাধীনতা অর্জনই হয়ে দাঁড়ায় বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির মূল লক্ষ্য বা কেন্দ্রবিন্দু । এ লক্ষ্য অর্জনে তাঁকে ‘স্টেপ বাই স্টেপ' অগ্রসর হতে হয়েছে।

১৯৭৪ সালের ১৮ই জানুয়ারি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধু তাঁর উদ্বোধনী ভাষণে অতীতের রাজনৈতিক স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ৬-দফা কর্মসূচি প্রণয়নের পেছনে ক্রিয়াশীল মৌলিক চিন্তা ও এর আসল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বলেন :

আমরা চিন্তা করে দেখলাম এদের [পশ্চিম পাকিস্তানিদের] সাথে আর আমাদের চলবে না । যেখানে আদর্শের মিল নাই, মতের মিল নাই, ভাষার মিল নাই, চিন্তার মিল নাই, সেখানে এক রাষ্ট্র চলতে পারে না [...] ১৯৬৬ সালে আমার দেশবাসী জানতে চায় পরিষ্কার রাস্তা কোথায়? [...] পরিষ্কার রাস্তা হিসেবে [...] ৬-দফা দেয়া হলো । আইয়ুব খান অস্ত্রের ভাষা ব্যবহার করবেন বলে হুমকি দিলেন । আইয়ুব খান বোকা ছিলেন না । আইয়ুব খান বুঝতে পারলেন, ৬-দফা আওয়ামী লীগ কেন দিয়েছে? এর পিছনে উদ্দেশ্য কী? আমরা জানতাম আমাদের উদ্দেশ্য কী এবং কোথায় আমরা যাবার চাই ।১৬

শুরু থেকেই বঙ্গবন্ধু ৬-দফা কর্মসূচির প্রশ্নে ছিলেন আপসহীন । তাঁর কাছে এটি দফার রাজনীতি, নিছক দলীয় ম্যানিফেস্টো বা ভোট লাভের কৌশলপত্র ছিল না । ৬-দফা প্রচারকালে বঙ্গবন্ধুর প্রদত্ত বিভিন্ন ভাষণ থেকেও তা সুস্পষ্ট । যেমন :

‘এ দাবী সস্তা রাজনৈতিক স্লোগান নয়’, ‘ছয়-দফা কোনো দল বিশেষের কর্মসূচি কিংবা ভোট লাভের কৌশল নয় । ইহা রূঢ় বাস্তবতার প্রতিধ্বনি এবং আমাদের জীবন মরণ প্রশ্ন', ‘৬-দফা বিনিময়যোগ্য বস্তু নয়’, ‘৬-দফা আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্ন', ‘ছয়-দফা রাজনৈতিক দরকষাকষির কোনো ব্যাপার নহে, ইহার সহিত জড়িত রহিয়াছে পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষের জীবন-মরণ প্রশ্ন’, ‘পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তিসনদ ৬-দফা’, ‘আমাদের অস্তিত্ব বজায় থাকিবে, না আমরা নিশ্চিহ্ন হইয়া যাইব, ছয়-দফার সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা হইতে তাহা বোঝা যাইবে’, ‘কোনো কিছুর বিনিময়ে ৬-দফা প্রত্যাহার করার প্রশ্ন উঠে না । কারণ, ৬-দফা কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয় [...] দেশবাসীও ৬-দফাকে তাদের মুক্তি সনদ বলিয়া আদৃত করিয়াছেন । [...] ৬-দফা আজ দেশবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক’, ‘অতীতে জেল খাটিয়াছি, মামলার আসামী হইয়াছি । এবারও জেল খাটিতে প্রস্তুত আছি । কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের ন্যায্য পাওনা বা দাবীর ব্যাপারে কোনোরূপ আপস করিতে প্রস্তুত নই’, ‘প্রয়োজন হইলে মৃত্যুকে আলিঙ্গনের জন্য প্রস্তুত থাকিতে হইবে'।

বঙ্গবন্ধুর এসব বক্তব্য বা উক্তি দ্বারা বোঝা যায়, ৬-দফা প্রশ্নে তিনি কতটা অনড় বা আপসহীন ছিলেন । পাকিস্তানি রাষ্ট্রকাঠামোর মধ্যে ৬-দফার ভিত্তিতে বাঙালিদের ন্যায্য দাবি-দাওয়া আদায় কিছুতেই বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য ছিল না, তা সম্ভবও ছিল না । তাঁর লক্ষ্য ছিল, পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র-কাঠামো ভেঙে বাঙালির জাতীয় মুক্তি বা স্বাধীনতা অর্জন । ৬-দফার মর্মকথাই ছিল তাই, যদিও একটি রাষ্ট্রীয় কাঠামোর অভ্যন্তরে থেকে সরাসরিভাবে তেমন করে বলার রাজনীতি বিজ্ঞানসম্মত ছিল না । রাজনীতি বিজ্ঞানের এ পাঠ বঙ্গবন্ধুর ভালো করেই রপ্ত ছিল । তাই, একজন সুনিপুণ কৌশলীর মতো তিনি উপযুক্ত সময়টির জন্য অপেক্ষা করেছেন । এর মধ্যে নানাভাবে ও ভাষায় তিনি ৬-দফার পেছনে তাঁর মূল রাজনৈতিক লক্ষ্য বাঙালিদের নিকট তুলে ধরতে সচেষ্ট হয়েছেন ।

৬-দফা আন্দোলনে টার্নিং পয়েন্ট

৬-দফা কর্মসূচি পাকিস্তানি কায়েমি শাসকগোষ্ঠীকে শঙ্কিত করে তোলে । এ কর্মসূচি ঘোষণার পর আইয়ুব সরকারের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল অত্যন্ত কঠোর। জেনারেল আইয়ুব ৬-দফাকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী’, ‘ধ্বংসাত্মক’, ‘বিদেশি মদদপুষ্ট’, ‘বৃহত্তর বাংলা প্রতিষ্ঠার কর্মসূচি' হিসেবে আখ্যায়িত করেন। একইসঙ্গে এর প্রবক্তা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানের ‘এক নম্বর দুশমন’ হিসেবে চিহ্নিত করে ৬-দফাপন্থিদের দমনে ‘অস্ত্রের ভাষা’ প্রয়োগের হুমকি দেন । আমেরিকার মতো (১৮৬৩) পাকিস্তানে ‘গৃহযুদ্ধের অবস্থা' সৃষ্টি হতে পারে বলেও তিনি সবাইকে সতর্ক করে দেন । এ কর্মসূচি ঘোষণার পর পাকিস্তান নিরাপত্তা আইনে বঙ্গবন্ধুকে বারবার গ্রেপ্তার করা হয়, যা পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে ।

জেল থেকে পাঠানো বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অনুযায়ী আওয়ামী লীগ ৭ই জুন (১৯৬৬) ৬-দফা দাবি আদায় ও গ্রেপ্তারকৃত নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে প্রদেশব্যাপী সর্বাত্মক হরতাল পালনের কর্মসূচি ঘোষণা করে । আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে এ কর্মসূচির সমর্থনে দলের পক্ষ থেকে সভা-সমাবেশ, মশাল মিছিল, প্রচারপত্র বিলির চেষ্টা চলতে থাকে । সরকারের পক্ষ থেকে শুরু হয় দেশব্যাপী আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেতা- চা-কর্মীদের গ্রেপ্তার, ধরপাকড় । ১লা জুন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আবদুল মোমিন, কোষাধ্যক্ষ ও ঢাকা শহর আওয়ামী লীগ সভাপতি হাফেজ মূসা, নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগ সভাপতি মুস্তফা সরওয়ারসহ ৮ জন নেতা গ্রেপ্তার হন । আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী এবং জাতীয় পরিষদে দলের সদস্যবৃন্দ হরতাল সফল করতে এক বিবৃতিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান । উল্লেখ্য, এ হরতাল সম্বন্ধে অন্যান্য বিরোধী দল নীরব থাকে । তাই আওয়ামী লীগের জন্য এটি ছিল শক্তির পরীক্ষা ।
৭ই জুনের হরতাল দমনে সরকার কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে । তা সত্ত্বেও সমগ্র প্রদেশ জুড়ে হরতাল পালিত হয় । কলকারখানা, দোকানপাট, গাড়ির চাকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সব বন্ধ থাকে । জনগণের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ হরতালের মাধ্যমে প্রকাশ পায় । এ হরতালের একটি বিশেষত্ব হলো, এতে শ্রমিক সমাজের ব্যাপক অংশগ্রহণ । ন্যাপের প্রচারপত্রে ৭ই জুনের হরতালের বিবরণ ছিল এ-রকম :

পাকিস্তানের জীবনেতিহাসে এমন হরতাল আর দেখা যায় নাই । পিকেটিংয়ের প্রয়োজন হয় নাই, স্বেচ্ছা-সেবকের কথা কেউ চিন্তাও করে নাই—তবুও ৭ই জুন ভোরবেলা দেখা গেল লক্ষ জনতা নিজেরাই স্বেচ্ছাসেবক, চোখেমুখে তাদের দৃপ্ত শপথ, আত্মশক্তিতে গভীর আস্থা—কোনও ভ্রুকুটি, কোনও চণ্ডনীতিই তাহাদিগকে টলাইতে পারিবে না ।১৮

৭ই জুন হরতালে ঢাকা, টঙ্গী ও নারায়ণগঞ্জে পুলিশ ও ইপিআর-এর গুলিতে সরকারি ভাষ্য অনুযায়ীই ১১ জন নিহত হন । অনেকে গুরুতর আহত হন । এ ধরনের কর্মসূচি পালনকালে একদিনে এত লোকের প্রাণহানি পূর্বে আর কখনো ঘটেনি । নিহতদের মধ্যে তেজগাঁ শিল্প এলাকার শ্রমিক মনু মিয়া এবং আবুল হোসেনের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ্য । নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের কাছে পুলিশের গুলিতে ৬ জন শ্রমিক প্রাণ হারান । এ ঘটনায় শ্রমিকসমাজ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে । তাদের সঙ্গে যোগ দেয় ছাত্র-জনতা। এরা ১৪৪ ধারা ভেঙে এগিয়ে যায় । ট্রেন থামিয়ে দেয়, রেলের স্লিপার তুলে নেয় এবং সিগন্যাল লাইন কেটে দেয় । সরকারি অফিস, থানা, কালেক্টরেট ও স্টেট ব্যাংক আক্রান্ত হয় । বাস, গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় । পার্লামেন্টারি সেক্রেটারির মোটর গাড়ি পুড়িয়ে ভস্মীভূত করা হয়। সার্বিকভাবে এক বিপ্লবী পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে। একদিনেই গ্রেপ্তারের সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়ে যায়। সন্ধ্যায় সরকার শ্রমিক এলাকাগুলোতে কারফিউ জারি করে । কঠোর সেন্সরশিপ আরোপের কারণে সরকারি ভাষ্য ছাড়া পরের দিন পত্রপত্রিকায় হরতালের কোনো খবরই প্রকাশিত হয়নি । The Pakistan Observer (p. 1) পত্রিকায় লেখা হয় : “IT'S GOVERNMENT PRESS NOTE. TEN KILLED IN FIRING. We are not publishing our staff correspondent's reports on the incidents owing to some unavoidable circumstances-Editor" মানুষ হত্যা আর সরকারি জুলুমের প্রতিবাদে ৮ই জুন দৈনিক সংবাদ-এর প্রকাশনা বন্ধ থাকে । ৯ই জুন প্রথম পৃষ্ঠায় ‘আমাদের নীরব প্রতিবাদ' শিরোনামে বক্তব্যসহ পত্রিকাটি বের হয় । এতে বলা হয় :
যে মর্মান্তিক বেদনাকে ভাষা দেওয়া যায় না, সেখানে নীরবতাই একমাত্র ভাষা । তাই গতকল্য ‘সংবাদ’ প্রকাশিত হইতে পারে নাই । আমাদের এই নীরব প্রতিবাদ একক হইলেও ইহাতে আমাদের পাঠকরাও শরীক হইলেন, ইহা আমরা ধরিয়া লইতেছি—কর্মাধ্যক্ষ, সংবাদ ।১৯

অপরদিকে, হরতালের দিন পুলিশ ও ইপিআর-এর গুলিবর্ষণে মানুষ হত্যা সম্বন্ধে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে বিরোধী দলের মুলতুবি প্রস্তাব সরকারি দল কর্তৃক অগ্রাহ্য হলে বিরোধী দলের সদস্যরা প্রতিবাদে ওয়াকআউট করেন।

৭ই জুনের পরও সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ওপর সরকারের নির্যাতনের স্টিমরোলার চলতে থাকে । ১৬ই জুন দৈনিক ইত্তেফাক সম্পাদক ও জনপ্রিয় কলাম লেখক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিঞা-কে পাকিস্তান দেশরক্ষা আইনে গ্রেপ্তার করা হয় । একইদিন গভর্নর মোনায়েম খানের আদেশে দৈনিক ইত্তেফাক-এর নিউ নেশন প্রেস বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করা হয় । ১৬, ১৭ ও ১৮ই জুন আওয়ামী লীগ দেশব্যাপী ‘জুলুম প্রতিরোধ দিবস' পালন করে । ২২শে জুন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী তাঁর চাঁদপুরের বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার হন । এভাবে আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির ৩৯ সদস্যের অধিকাংশই জেলে নিক্ষিপ্ত হন । সে সময়ে আওয়ামী লীগের এক প্রচারপত্রের সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৬ সালের শুধু সেপ্টেম্বর মাসেই বিভিন্ন দফায় সারাদেশে ৯ হাজার ৩ শ' ৩০ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয় । কিন্তু এরপরও ৬-দফা আন্দোলন থেমে থাকেনি।

৬-দফা থেকে স্বাধীনতা

৬-দফা আন্দোলন চিরতরে নস্যাৎ ও বঙ্গবন্ধুকে নিঃশেষ করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে জেলে বন্দি থাকা অবস্থায় তাঁকে এক নম্বর আসামি করে আইয়ুব সরকার ১৯৬৮ সালে 'রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান এবং অন্যান্য' এ নামে রাষ্ট্রদ্রোহী ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা' দায়ের করে । এর প্রতিক্রিয়ায় পূর্ব বাংলায় সংঘটিত হয় উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান । ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে এ গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দানে এগিয়ে আসেন ডাকসু-র তখনকার ভিপি তোফায়েল আহমেদ । এরপর ৭ই জুনের বিপ্লবী চেতনা '৭০-এর নির্বাচন হয়ে '৭১-এ বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে ধ্বনিত, অনুরণিত হয়।

৬-দফার পেছনে বঙ্গবন্ধুর মূল লক্ষ্য ছিল বাঙালির জাতীয় মুক্তি বা স্বাধীনতা অর্জন । তাই ৬-দফা প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু ছিলেন অনড়, আপসহীন। '৭০-এর নির্বাচনের পর ৬-দফার প্রশ্নে কিছুটা ছাড় দিয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রিত্বের আসন গ্রহণের আমন্ত্রণ জানালে, বঙ্গবন্ধু তাঁর ৭ই মার্চের ভাষণে তাকে সাফ জানিয়ে দেন, “আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না, আমরা এদেশের মানুষের অধিকার চাই ।” এখানে ‘অধিকার বলতে বোঝানো হয়েছে বাঙালির পূর্ণ স্বাধীনতা । অতঃপর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মার্চের অসহযোগ আন্দোলন শেষে '৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা পায় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

তথ্যসূত্র :

১. ইংল্যান্ডের ইতিহাসে জনগণের স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক অধিকারের প্রথম সনদ । ১২১৫ সালে কিং জন কর্তৃক এটি প্রদত্ত হয়।

২. হারুন-অর-রশিদ, আমাদের বাঁচার দাবী : ৬ দফা'র ৫০ বছর (বাংলা একাডেমি, ঢাকা ২০১৬, বিস্তারিত পরিশিষ্ট:: তিন), পৃ. ৩৫-৩৬

৩. দ্রষ্টব্য : ঢাকার পুরাতন বিমান বন্দরে সাংবাদিকদের নিকট লাহোর সম্মেলনের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া বক্তব্য (ইত্তেফাক, ১২ই ফেব্রুয়ারি ১৯৬৬), পৃ. ১, ৮

৪. শেখ মুজিবুর রহমান, অসমাপ্ত আত্মজীবনী (দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, ঢাকা ২০১২), পৃ. ২২ । বিস্তারিত : হারুন-অর-রশিদ, বঙ্গীয় মুসলিম লীগ, পাকিস্তান আন্দোলন, বাঙালির রাষ্ট্রভাবনা ও বঙ্গবন্ধু (অন্যপ্রকাশ, ঢাকা ২০১৮), পৃ. ৩৩-৩৮

৫. শেখ মুজিবুর রহমান, অসমাপ্ত আত্মজীবনী, প্রাগুক্ত, পৃ. ৩৮-৩৯; হারুন-অর-রশিদ, ৬ দফা'র ৫০ বছর, পরিশিষ্ট : এক । লাহোর প্রস্তাবে ভারতের উত্তর-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে 'Independent States' বা ‘স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ’ প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়।

৬. বিস্তারিত Harun-or-Rashid, The Foreshadowing of Bangladesh: Bengal Muslim League and Muslim Politics, 1906-1947 (UPL, Dhaka 2018), pp. 257-322

৭. হারুন-অর-রশিদ, বঙ্গীয় মুসলিম লীগ, পৃ. ৩৬-৩৭; সাপ্তাহিক মিল্লাত, ৩০শে মে ১৯৪৭, পৃ. ৭ Harun-or-Rashid, The Foreshadowing of Bangladesh, p. 323

৮. মওলানা ভাসানী পর্যন্ত ঘোষণা করেন, 'তাহার দল পাকিস্তানের ঐক্য ও সংহতির ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে গৃহীত কোনো প্রচেষ্টায় শরীক হইবে না।' ইত্তেফাক, ৯ই এপ্রিল ১৯৬৬, পৃ. ১, ৮

৯. দ্রষ্টব্য হারুন-অর-রশিদ, ৬ দফা'র ৫০ বছর, পৃ. ৫১-৫২, নোট ১৩ ১০. আবু আল সাঈদ, আওয়ামী লীগের ইতিহাস, ঢাকা ১৯৬৬, পৃ. ১৩৫

১১. দ্রষ্টব্য হারুন-অর-রশিদ, ৬ দফা'র ৫০ বছর, পরিশিষ্ট : চার

১২. ইত্তেফাক, ১৯শে মার্চ ১৯৬৬, পৃ. ১, ৮

১৩. হারুন-অর-রশিদ, ৬ দফা'র ৫০ বছর, পরিশিষ্ট : সাত

১৪. Talukder Maniruzzaman, The Bangladesh Revolution and Its Aftermath (UPL, Dhaka, 1980), p. 24

১৫. দ্রষ্টব্য হারুন-অর-রশিদ, ৬ দফা'র ৫০ বছর, পৃ. ৪৩-৪৫

১৬. মিজানুর রহমান মিজান সম্পাদিত, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, ঢাকা ১৯৮৯, পৃ. ১৩০-১৩১

১৭. দ্রষ্টব্য, হারুন-অর-রশিদ, ৬ দফা'র ৫০ বছর, পরিশিষ্ট : নয় ও দশ

১৮. হারুন-অর-রশিদ, ৬ দফা'র ৫০ বছর, পৃ. ৪৮

১৯. হারুন-অর-রশিদ, ৬ দফার ৫০ বছর, পৃ. ১৫৮

লেখকঃ অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ; জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত