372
Published on জুন 11, 2024প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রাকৃতিক দুর্যোগে সৃষ্ট অর্থনৈতিক বিপর্যয় রোধে নানা রকম পদক্ষেপ নিয়ে এসেছে। আওয়ামী লীগ যখন প্রতিষ্ঠিত হয় তখন একদিকে মুসলিম লীগের দুঃশাসন ও অব্যবস্থাপনা, অন্যদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দেশভাগের মারাত্মক প্রভাব এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় দেশব্যাপী চরম খাদ্যাভাব দেখা দেয়। যার প্রেক্ষিতে ১৯৪৯ সালের ১১ অক্টোবর 'খাদ্য মিছিল' করে আওয়ামী লীগ। গ্রেফতার হন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। এর মাঝেও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব।
১৯৫২ সালের বন্যায় আওয়ামী লীগ দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধ কমিটি গঠন করে যথাসম্ভব মানুষকে সহায়তা করে এবং সরকারের অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার বিরুদ্ধে খাদ্য আন্দোলন গড়ে তোলে। ১৯৫৩ সালের কাউন্সিলে ‘আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী’ গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যারা ১৯৫৪ সালে বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে নিরলস সহযোগিতা করে। ১৯৫৫ সালের বন্যায় খাদ্যাভাব ও ১৯৫৬ সালের খাদ্য সংকট মোকাবিলায় ও দুর্গত মানুষের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ দেশের বিভিন্ন এলাকা সফর করেন।
১৯৫৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর যখন পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পায় তখন দেশে খাদ্যাভাব ছিল। সেই দুর্ভিক্ষাবস্থা মোকাবিলায় দেশের বিভিন্ন স্থানে ৬ লাখ মণ চাল বিনামূল্যে এবং ৬ লাখ মণ চাল স্বল্পমূল্যে বিতরণ করা হয়। এ সময় টেস্ট রিলিফের জন্য প্রায় ২ কোটি টাকা ও কৃষি ঋণ বাবদ আরও প্রায় ১ কোটি টাকা বিলি করে পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়। দেশে হাজার হাজার লঙ্গরখানা ও রিলিফ ক্যাম্প খুলে অভুক্ত কোটি কোটি মানুষকে অনাহার থেকে রক্ষা করে আওয়ামী লীগ। এক একটি লঙ্গরখানায় প্রতিদিন ৫০০ থেকে ১ হাজার অভুক্ত মানুষকে খাওয়ানো হতো। আওয়ামী লীগ সরকার প্রত্যেকটি লঙ্গরখানায় বিনামূল্যে ২ মণ বা এর বেশি চাল সরবরাহ করত। প্রায় ২০ মাসের মতো রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাওয়া আওয়ামী লীগ সরকার এসময় বিদেশ থেকে প্রায় ৮০ কোটি টাকার চাল আমদানি করে দেশবাসীকে দুর্ভিক্ষের হাত থেকে রক্ষা করে। ১৯৬০ সালে সুন্দরবন এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের পরে সর্বাত্মক ত্রাণ তৎপরতা চালায় আওয়ামী লীগ। ১৯৬১ সালে প্রলয়ঙ্করী জলোচ্ছ্বাসের পর রাজনৈতিক নিষ্পেশনের শিকার আওয়ামী লীগ ধারাবাহিকভাবে ত্রাণ তৎপরতা চালায় । স্বৈরশাসন, জেল-জুলুম, মামলা-হামলা মাথায় নিয়েই দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে জনগণের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখে আওয়ামী লীগ।
১৯৬৪ সালে পশ্চিম পাকিস্তানি সরকারের চক্রান্তে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি হলে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে আহ্বায়ক এবং কমিউনিস্ট পার্টির আলী আকসাদকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে দাঙ্গা প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হয়। তাদের নেতৃত্বে বাঙালি মধ্যবিত্ত মুসলমানরা উগ্র সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ১৯৬৬ সালে বন্যা প্লাবিত হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ৬ দফা আন্দোলনের মধ্যেই দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে জনগণের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখেন।
১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর আঘাত হানে সর্বকালের ভয়ঙ্করতম 'দ্য গ্রেট ভোলা সাইক্লোন'। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা বন্ধ করে বাংলার দুর্যোগকবলিত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি শুরু করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। নৌকায় চড়ে ও পায়ে হেঁটে দুর্গম এলাকার প্রান্ত থেকে প্রান্তরে ছুটে বেড়িয়ে তিনি দেশের জনগণের খোঁজখবর নেন এবং ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রাখেন।
১৯৭১ সালের মার্চে অসহযোগ আন্দোলনের মাঝেও বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও শহর সংরক্ষণের কাজ, উন্নয়ন ও নির্মাণকাজ, ঘূর্ণিদুর্গত এলাকায় বাঁধ নির্মাণসহ সব উন্নয়নমূলক কাজ, সাহায্য-সহযোগিতা, পুনর্বাসন ও পুনর্নির্মাণ কাজ অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ও বন্যাকবলিত পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হয়। একদিকে যুদ্ধ পরিচালনা অন্যদিকে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া কোটি কোটি মানুষের আহার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা ছিল তখন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মুজিবনগর সরকারের সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ। তারপরও শরণার্থীদের ত্রাণ তৎপরতায় মুজিবনগর সরকার অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দেয়।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৩ কোটি ছিন্নমূল মানুষ, দেড় কোটি অগ্নিদগ্ধ ঘরবাড়ি, ১ কোটি শরণার্থীর পুনর্বাসন, শূন্য খাদ্য গুদাম, অনাবাদি জমি- এসব সংকটাকুল পরিস্থিতি মোকাবিলায় দারুণ সফলতা দেখিয়েছেন। বলা হচ্ছিলো, যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে খাদ্যাভাবে ২ কোটি লোক মারা যাবে! কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সরকার দেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ৪ কোটি ৭৫ লাখ মণ খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে গণহারে মৃত্যুর আশঙ্কা উড়িয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেন। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর আমলেই ‘ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি)’ গঠন করা হয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে ১৯৭৪-এর আকস্মিক বন্যার সামনে দাঁড়িয়ে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু সরকার লড়াই অব্যাহত রেখেছিলো।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলের দুঃসময়েও ১৯৮৭ সালে বন্যাদুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ ও উত্তরবঙ্গে শীতবস্ত্র বিতরণ করে আওয়ামী লীগ। জিয়া-এরশাদ স্বৈরশাসনামলে কৃষকের সমস্যা সমাধানের দাবিতে ১৯৮৭ সালের ১২ এপ্রিল দেশব্যাপী ‘কৃষক দিবস’ পালন করে আওয়ামী লীগ। ১৯৮৮ সালে রাজধানী ঢাকা, সমগ্র উত্তরবঙ্গসহ দেশের অধিকাংশ অঞ্চলের বন্যা ও প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবারও মাঠে নামে আওয়ামী লীগ।
১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের পর বিএনপি সরকার ত্রাণ কার্যক্রমে অনিহা দেখালেও সংসদের বিরোধী দল আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে ব্যাপক ত্রাণ তৎপরতা পরিচালনা করেন। ১৯৯২ সালে আওয়ামী লীগ গৃহীত নয়া অর্থনৈতিক নীতিমালায় ‘বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি সম্পদের ব্যবহার’ শীর্ষক নীতি গ্রহণ করা হয়।
১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পরপরই দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় নীতিমালা প্রণয়ন করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। ১৯৯৭ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পাশাপাশি দল হিসেবেও সাংঠনিকভাবে ব্যাপক ত্রাণ তৎপরতা চালায়। ১৯৯৮ সালে দেশের ৫৩টি জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বিধ্বংসী বন্যায় ২ কোটি মানুষ না খেয়ে মারা যাবে বলে বিরোধী দল যে প্রচার করেছিল, তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়। একজন মানুষও খাদ্যের অভাবে মারা যায়নি। সরকার সাফল্যের সাথে পরিস্থিতির মোকাবিলা করে। ১৯৯৯ এবং ২০০০ সালে বন্যা পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় সরকারের পাশাপাশি দল হিসেবেও আওয়ামী লীগ দেশব্যাপী ব্যাপক ত্রাণ তৎপরতা চালায়।
২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সময়েও বিএনপি-জামাত জোট সরকারের নির্যাতন-নিপীড়নে জর্জরিত আওয়ামী লীগের ত্রাণ তৎপরতা ও মানববিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকে। এরমধ্যে রয়েছে ২০০৩ সালে উত্তরবঙ্গের শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, একই বছরে দেশের বিভিন্ন এলাকার বন্যাকবলিতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ, উত্তরবঙ্গে ভয়াবহ মঙ্গা প্রতিরোধে ত্রাণ তৎপরতা, ২০০৪ সালে নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহের টর্নেডো উপদ্রুত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ, একই বছর পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজারে ধসেপড়া ছয়তলা ভবনের নিহত, আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহায়তা, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যায় ত্রাণ বিতরণ, উত্তরবঙ্গের মঙ্গাপীড়িতমানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ, ২০০৫ সালে উত্তরাঞ্চলে ভয়াবহ টর্নেডোতে ত্রাণ বিতরণ এবং আহতদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করে এবং একই বছরে বন্যাকবলিত উত্তরবঙ্গে খাদ্যাভাব প্রতিরোধে ত্রাণ বিতরণ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ঘূর্ণিঝড় সিডরে ৬ হাজার মানুষ মারা যায়। দল হিসেবে আওয়ামী লীগ সিডরে দুর্গত মানুষের মাঝে ত্রাণ তৎপরতা এবং বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করে।
২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য নিজস্ব তহবিল ঘোষণা করেন। উপকূলীয় বাঁধ সংরক্ষণ, মজবুতকরণ ও সম্প্রসারণ, সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা-২০০৯ ও জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হয়। একইসাথে পরিবেশের ভারসাম্য ও বনাঞ্চল রক্ষা, পানি সম্পদের উন্নয়ন, নৌপথের নাব্য রক্ষা এবং সেচ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে গ্রহণ করা হয় বহুমুখী পদক্ষেপ।
২০০৯ সালে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় আইলা আঘাত হানলে ত্রাণ হিসেবে ২৭ হাজার ৯৫১ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য, ১৩ কোটি ১৩ লাখ ৭৯ হাজার টাকা নগদ অর্থ সাহায্য, ২০ কোটি ২ লাখ ৯২ হাজার টাকা গৃহনির্মাণ বাবদ এবং বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য ১১৬ কোটি টাকা মঞ্জুরী দেওয়া হয়। ২০১০ সালে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিল গঠন করা হয় এবং ২০১২ সালে প্রণয়ন করা হয় আইনও। এই আইনের আওতায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর গঠন করা হয়। ২০১৫ সালে ড় ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার (এনইওসি) প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০১৬ সালের ১ মার্চ আইএফআরসি’র মহাসচিব দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অসামান্য সাফল্যের জন্য শেখ হাসিনার হাতে বিশেষ সম্মাননা সার্টিফিকেট ও ক্রেস্ট তুলে দেন। ২০১৬ সালে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু আঘাত হানলে সরকার ত্রান এবং সহযোগিতার ব্যবস্থা করেছিল আক্রান্ত অধিবাসীদের জন্য ।
ভূমিকম্পে উদ্ধার ও অনুসন্ধান কাজে ব্যবহারের জন্য ৩ হাজার ৩৫টি বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি ক্রয় করা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার আমলে। ২০১৯ সালের মধ্যে ভূমিকম্প-পরবর্তী উদ্ধার অভিযানের জন্য ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবক তৈরিসহ সারাদেশে ৩২ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। নির্মাণ করা হয় ১৮ হাজার ২৫৪টি ব্রিজ ও কালভার্ট। এর মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে ৪৬৮টি এবং গ্রামীণ রাস্তায় ৫ হাজার ৬৪৬টি ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। আরও ১৩ হাজার ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ রয়েছে বাস্তবায়নের পথে। সারাদেশে ৪ হাজার ৩৪৩টি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, ২৩০টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে এবং আরও ৬৪৩টি আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। উপকূলীয় এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৫৫০টি মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়নের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া ১২টি ইর্মাজেন্সি পিকআপ ভ্যান, ৬টি মোবাইল অ্যাম্বুলেন্স বোট, ৪টি সী সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ বোট, ১২টি স্মল মেরিন রেসকিউ বোট ও ৩০টি ট্রাক মাউন্টেড স্যালাইন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি জেলায় ত্রাণ গুদাম ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্যকেন্দ্র নির্মাণ ও গৃহহীনদের জন্য ‘দুর্যোগ সহনীয় বাসগৃহ নির্মাণ’ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। উপকূলীয় জেলায় স্যাটেলাইট টেলিফোনের ব্যবস্থা ও দুর্যোগের আগাম সতর্কতা ও দৈনন্দিন আবহাওয়া বার্তা জানতে মোবাইলে ১০৯০ নম্বরে টোল ফ্রি কল সার্ভিস চালু রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে দেশে বিভিন্ন এলাকায় ১৮টি কমিউনিটি রেডিও সার্ভিস চালু হয়েছে এবং সম্প্রচারিত হচ্ছে। প্রতিটি উপজেলায় অন্তত একটি করে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণের লক্ষ্যে ৩৩০টি নতুন ফায়ার সার্ভিস চালু করা হয়েছে। বজ্রপাত প্রশমনে ৩১ লাখের বেশি তালগাছ বীজ বপন করা হয়েছে। জাতীয় বিল্ডিং কোডে বজ্রপাত নিরোধক স্থাপন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে । গ্রহণ করা হয়েছে শতবর্ষমেয়াদি ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’।
২০২০ সালে মানব-ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ বৈশ্বিক মহামারি প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবিলায় ১৯টি প্যাকেজে জননেত্রী শেখ হাসিনা ১ লাখ ৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকার অর্থনৈতিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছিলেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে ২ হাজার ডাক্তার ও ৫ হাজার ৫৪ জন নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সংক্রমণ রোধে দীর্ঘ প্রায় আড়াই মাস সাধারণ ছুটি রাখা হয়েছিল। কর্মহীন খেটে খাওয়া মানুষের ঘরে ঘরে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এমন কী পবিত্র ঈদ উপলক্ষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৫০ লাখ মানুষের কাছে নগদ অর্থ সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সারাদেশে প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ পরিবারকে খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি ১০ কোটি টাকা নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করেছিল। কৃষকের ধান কেটে ঘরে তুলে দেওয়া, মৃত্যের দাফন সম্পন্ন করা, ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম ও টেলিমেডিসিন ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসাসেবা প্রদান এবং বিভিন্ন এলাকায় ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করা হয়েছিল।
২০১৯ সালে ঘূর্ণিঝড় ফণীর সময়ে নিরাপত্তার লক্ষ্যে ১২ লাখ ৪০ হাজার ৭৯৫ জনকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের টিম স্বশরীরে উপস্থিত থেকে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সহায়তায় সার্বিক উদ্ধার তৎপরতা, ত্রাণ বিতরণ ও পুনর্বাসনে সাহায্য করে। একই বছরে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের সময়েও ত্রান এবং সহযোগিতার ব্যবস্থা করেছিল সরকার। ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবেলায় ১২ হাজার ৭৮টি সাইক্লোন শেল্টারে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষ জনকে সরিয়ে আনা হয়। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় ৭ দিনের মধ্যেই শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপন করে এবং সাধারণ মানুষ সহজেই ঘুরে দাঁড়ায়। ২০২২ সালে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং আঘাত হানার আগেই সরকারের পূর্ব প্রস্তুতিতে সেবারও মানুষ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি থেকে বেঁচে যায়। ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুততম সময়ে পুনর্বাসন, দ্রুততম সময়ে অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ ও মোবাইল সংযোগ নিশ্চিত করা হয়। ২০২৩ সালে ঘুর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানার আগেই সরকারের ব্যাপক প্রচেষ্টা ও প্রচারণা এবং জনগণকে নিরাপদে সরিয়ে আনার কারনে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ সহায়তা ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করে তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। সম্পতিক সময়ে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতের পূর্বেই ৭৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের মাধ্যমে নিরাপদ আশ্রয়ে মানুষকে নিয়ে আসে সরকার । আক্রান্ত এলাকাগুলোতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় সরকারের পাশাপাশি সংগঠন আওয়ামী লীগও উদ্ধার তৎপরতা আর ত্রাণ কার্যক্রম চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি নিজেও দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে দুর্গতদের জন্যে সবরকম সহযোগিতার ব্যবস্থা করেছেন। গণমানুষের দল আওয়ামী লীগ যুগে যুগে এভাবেই জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে, ত্রাণকর্তা হয়ে রক্ষা করেছে সাধারণ মানুষকে।