বঙ্গবন্ধু মে দিবসকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন

340

Published on মে 1, 2024
  • Details Image

হীরেন পণ্ডিত

১৮৮৬ সালের ৪ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে দৈনিক ৮ ঘণ্টা শ্রমের দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর গুলি চালিয়ে ১০-১২ জন শ্রমিককে হত্যার ঘটনার প্রেক্ষাপটে বিশ্ব মে দিবস পালন করা হয়ে থাকে। তখন কাজ করতে হতো ১২-১৪ ঘন্টা। ১৮৮৯ সালে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব সোশ্যালিস্ট গ্রæপস এবং ট্রেড ইউনিয়নস যৌথভাবে পহেলা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।

মে দিবস সারা বিশ্বে শ্রমিকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন এই দিনে শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস প্রতিফলিত হয়েছে এবং একটি ন্যায্য, অধিকতর ন্যায়সঙ্গত সমাজ বিনির্মাণের প্রতিশ্রæতি ব্যক্ত হয়েছে। মে দিবসের মূল চেতনার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে, বাংলাদেশ এবং সারা বিশ্বের শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার এবং শ্রমিক শ্রেণির ক্ষমতায়নের সপক্ষে সোচ্চার হওয়ার জন্য ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের অধিকার পাওয়া নিঃসন্দেহে শ্রমিক অধিকারের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক। শ্রমিকদের একত্রিত হওয়া দুনিয়ার মজদুর এক হও এবং অবস্থার পরিবর্তনের দাবি করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করা মে দিবসের তাৎপর্য উপলব্ধির এক ফলিত দিক।

আমরা যাকে ঐতিহাসিক মে দিবস হিসেবে জানি, তা আবার আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস নামেও পরিচিত। বিশ্বব্যাপী শ্রমিক আন্দোলনের দীর্ঘ সংগ্রাম এবং তার অর্জনকে স্মরণ করার জন্যে প্রতিবছর পহেলা মে বিশ্বজুড়ে এই দিবস পালিত হয়। দিবসটির শেকড় নিহিত আছে শ্রমিকদের ঐতিহাসিক সংগ্রামের মধ্যে, যারা উন্নত কর্মপরিবেশ, ন্যায্য মজুরি এবং সংগঠিত হওয়ার অধিকারের জন্য লড়াই করেছিলেন যুগের পর যুগ ধরে। প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন অকাতরে।

বিশ্বের সব শ্রমিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট আন্দোলনের প্রেরণা হিসেবে কার্যকর ভূমিকা পালন করে আসছে। সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের জন্য চলমান লড়াই বাস্তবায়নের ক্ষেত্র প্রসারিত করছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং শ্রমিক আন্দোলনের ভূমিকার সাথে জড়িত। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শ্রমশক্তির উৎস, কোটি কোটি শ্রমিক দেশে-বিদেশে বিভিন্ন শিল্প, যেমন-টেক্সটাইল, কৃষিসহ রকমারি উৎপাদনে নিযুক্ত। বাংলাদেশের গার্মেন্ট চীনের পর বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রফতানিকারক শিল্প।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিলের রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় ১১৭৫ জন শ্রমিক নিহত এবং ২ হাজারেরও বেশি আহত হয়েছিলেন, যা বিশ্বের ইতিহাসে তৃতীয় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়। এই ঘটনা বাংলাদেশের শ্রমবাজারে মারাত্মকভাবে এক নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে আসে। একবিংশ শতাব্দীর রকমারি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার সঙ্গে সঙ্গে মে দিবস শ্রমিকদের অধিকারের জন্য চলমান সংগ্রাম এবং আরও ন্যায্য ও ন্যায়সঙ্গত সমাজের জন্য লড়াইয়ে চালক হিসেবে কাজ করে। সমাজে শ্রমিকদের মৌলিক ভূমিকার স্বীকৃতি এবং তাদের প্রতি ন্যায্য আচরণ ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান মে দিবসের তাৎপর্য বর্ধন করে।

বিশ্বজুড়ে শ্রমিকদের অবস্থান ঐতিহাসিকভাবে প্রান্তিক হয়ে পড়ছে। শ্রমিকরা আজও নানামুখী শোষণ, অনিরাপদ কাজের পরিস্থিতি এবং মৌলিক অধিকার ও  অন্যান্য আনুষঙ্গিক সুবিধা বঞ্চিত থেকেই যাচ্ছে। মে দিবসের ঐতিহ্যপুষ্ট শ্রমিক জাগরণ সমস্যাগুলোর সমাধান নিশ্চিত করে শ্রমিকদের প্রাপ্য মর্যাদা ও যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের পথ সুগম করে। আন্তর্জাতিক শ্রমিক আন্দোলন ও শ্রম অধিকার আদায়ের এ দিনটি বছরের পর বছর ধরে বিশ্বব্যাপী যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে। শ্রমিকদের সম্মানে মে দিবস বা পয়লা মে জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে পালন করে বিশ্বের শতাধিক দেশ। কিন্তু যাঁদের নিয়ে এই দিবস, তাঁরা এ সম্পর্কে কতটা অবগত? অনেক শ্রমিক জানেনই না এর ইতিহাস।

শ্রমিকদের অধিকার ও দাবির প্রতি সম্মান দেখিয়ে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে মে দিবস পালিত হয়। স্বাধীনতার পর মে দিবস রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে মহান মে দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে মে দিবসকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর থেকে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয় মে দিবস। এই দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য থাকে শ্রমিকদের তাঁদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা। যাতে করে তাঁরা মে দিবসের প্রকৃত ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারেন ও নিজ অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে আমরা মে দিবস পালন করি, সেটি কতটা সফল হয়, তা নিতে প্রশ্ন আসতে পারে। আসাটা বেশ স্বাভাবিক।

শ্রমিকরা তাদের দাবি মালিকপক্ষ বা সরকারের কাছে তুলে ধরতে পারে। তাতে শ্রমিক ও মালিকপক্ষের দূরত্ব অনেকখানি লাঘব হচ্ছে। শ্রম আইনগুলো কঠোরতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে হবে। সেই সঙ্গে তৈরি করতে হবে শ্রমিকবান্ধব আইন, যা শ্রমিকদের স্বার্থে কথা বলবে। এর মাধ্যমে গড়ে উঠবে একটি বৈষম্যহীন শ্রমিক সংঘ এবং এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের অর্থনীতি।

১৮৮৬ থেকে ২০২৪। শ্রমের মর্যাদা, মূল্য ও ন্যায্য মজুরি শুধু নয়, যুক্তিসঙ্গত কর্ম সময় নির্ধারণের আন্দোলনের ১৩৮ বছর। গত ১৩৮ বছরে অনেক পরিবর্তন হয়েছে মানুষের সমাজ ও সভ্যতার। কিন্তু, এই প্রশ্নের আজো উত্তর খুঁজতে হয়, এতো উন্নতি-অগ্রগতি সাধিত হলেও শ্রমিকের অধিকার কতটুকু প্রতিষ্ঠিত হয়েছে?

বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকেই মে দিবস সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। মে দিবসের প্রধান দাবি ৮ ঘণ্টা কর্মদিবস ২২ লাখের বেশি সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীদের ক্ষেত্রে বাস্তবায়িত হলেও কোটি কোটি বেসরকারি শ্রমিক কর্মচারীরা এখনও ৮ ঘণ্টা কর্মদিবসের সুফল পায় না। বরং কৌশলে ১০ ঘণ্টা কাজের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। নিম্ন মজুরির ফাঁদে শ্রমজীবী মানুষ এমনভাবে আটকে যায় যে শ্রমিকরা এখন বাধ্য হয় ওভার টাইম করতে, তা না হলে তার সংসার চালানো অসম্ভব। শ্রমিকের শ্রম, সময় বাড়ানো আর যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ানো। ফলে কর্মঘণ্টা বাড়ছে, উৎপাদন বাড়ছে। সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বেকারত্ব।

প্রতি বছর শ্রমবাজারে কাজ প্রত্যাশী ২০ থেকে ২২ লাখ তরুণ-যুবক আসে যাদের মাত্র দুই-তিন লাখ লাখের মতো কর্মসংস্থান রাষ্ট্র করতে পারে। এরপর, সাত থেকে ১০ লাখ মানুষ পাড়ি জমায় বিদেশে কাজ করতে। আর বাকিরা দেশে কোনোমতে কাজ খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করে। দেশের ছয় কোটি ৩৪ লাখ শ্রমজীবীর মধ্যে প্রায় তিন কোটি কাজ করে কৃষিখাতে। যেখানে বছরে ৩ মাসের বেশি কাজ থাকে না ফলে বহু ধরনের অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজের মাধ্যমে তারা টিকে থাকার চেষ্টা করে। এর বাইরে ৪০ লাখ শ্রমিক গার্মেন্টসে; ৩০ লাখের বেশি নির্মাণ খাতে; ৫০ লাখ পরিবহন খাতে; ১০ লাখের বেশি দোকান কর্মচারী; পাট, চা, চামড়া, তাঁত, রি রোলিং, মোটর মেকানিক, লবণ, চিংড়ি, সংবাদমাধ্যম, হাসপাতাল-ক্লিনিক, পুস্তক বাঁধাই, হকার, রিকশাভ্যান চালক, ইজি-বাইক চালক, সিকিউরিটি গার্ডসহ বিভিন্ন খাতে কাজ করছে।

শ্রম শক্তির ১ কোটি ২ লাখ প্রাতিষ্ঠানিক খাতে আর বাকিরা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে থাকে। মজুরি বোর্ডের মাধ্যমে ৪৩টি সেক্টরের শ্রমজীবীদের নিম্নতম মজুরি নির্ধারণের ব্যবস্থা থাকলেও বাকি কোটি কোটি শ্রমিকের কাজ নাই তো মজুরি নাই নীতিতে কাজ করানো হয়ে থাকে। শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার পথে আইনি এবং আইন বহির্ভূত অসংখ্য বাধা।

অটোমেশনের কারণে অনেক শ্রমভিত্তিক কাজ যন্ত্রনির্ভর হবে। যন্ত্রের শক্তি মানুষের শ্রমকে লাঘব করবে। ফলে অল্প সময়ে বেশি উৎপাদন হবে- এই প্রত্যাশা থাকলেও বাস্তবে শ্রমিকের শ্রম সময় কমছে না। নারী শ্রমিকের শিল্পে আগমন বেড়েছে কিন্তু তাদের মাতৃত্ব, সংসারের কাজ নিয়ে দ্বিগুণ চাপ বহন করতে হচ্ছে। কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরিশ্রম এবং একঘেঁয়ে সাংসারিক কাজ নিংড়ে নিচ্ছে নারীদের শ্রমশক্তি।

মুনাফা এবং মজুরির যে বিরোধ- সেই বিরোধে শ্রমিক সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও দুর্বল এবং শোষিত। ফলে সারাদুনিয়াতে খাদ্য-পণ্য ও ব্যবহারিক পণ্য উৎপাদন বাড়লেও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। পুষ্টিকর খাদ্যদ্রব্য তা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। আয়ের বড় অংশ খাদ্য, বাড়িভাড়া, পোশাক, চিকিৎসায় ব্যয় হয়ে যাওয়ার ফলে সঞ্চয় যেমন থাকছে না তেমনি দক্ষতা অর্জনের জন্য বাড়তি খরচ করাও শ্রমিকের জন্য সম্ভব হয়ে উঠছে না।

তবে শ্রমিকদের কল্যাণে কাজ করছে সরকার। তাদের জীবনমান উন্নয়ন এবং সুরক্ষায় আইনগত কাঠামো সূদৃঢ় করা হয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির নিশ্চয়তা, চাকরির নিরাপত্তা এবং শ্রমিক কল্যাণ ও ট্রেড ইউনিয়ন অধিকারের স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে সরকার। এছাড়া পুরুষ ও নারী শ্রমিকদের বেতন বৈষম্য দূর করতে নেওয়া হয়েছে কার্যকরী উদ্যোগ। শ্রমিক-মালিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি দেশে ৪৩টি শিল্প সেক্টরের মধ্যে ৪০টি সেক্টরে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি শতভাগ বৃদ্ধি করে ৮ হাজার ৩০০ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার।

বাংলাদেশ কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির দেশ। কৃষিকে শিল্পে রূপান্তরের পাশাপাশি সরকার কৃষি কাজে নিয়োজিতদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। পোশাক শিল্পে পরিকল্পিত অন্তর্ঘাত এবং ফ্যাক্টরিতে উপর্যুপরি দুর্ঘটনা রোধ করতেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে শ্রম আইন নীতিমালা, শিশু  শ্রম নিরসন, গৃহকর্মী সুরক্ষা ও পেশাগত নিরাপত্তা বিধানে আইনগত কাঠামো সূদৃঢ় করা হয়েছে।

 প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে দেশের শ্রমজীবী মানুষের জীবন-মান উন্নয়ন ও কল্যাণে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। বিশ্বের শ্রমজীবী ও মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার গৌরবোজ্জ্বল ত্যাগের ঐতিহাসিক দিন মহান মে দিবসে ১৮৮৬ সালের পহেলা মে।  সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন শোষিত, বঞ্চিত ও শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন। শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি ১৯৭২ সালে শ্রমনীতি প্রণয়ন করেন। তিনি পরিত্যক্ত কল-কারখানা জাতীয়করণ করে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী এবং শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেন।

মালিক-শ্রমিকের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সুসম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে নিরাপদ কর্মপরিবেশ, সামাজিক নিরাপত্তা ও শ্রমিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ শ্রম আইন যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন করে বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন-২০১৮ প্রণয়ন করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন খাতে কর্মরত শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়েছে।

এই তহবিল থেকে যেকোনো শ্রমিক কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনাজনিত কারণে স্থায়ীভাবে অক্ষম হলে অথবা মৃত্যুবরণ করলে, জরুরি চিকিৎসা ব্যয়নির্বাহ ও দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসার জন্য এবং শ্রমিকদের সন্তানের উচ্চ শিক্ষার জন্যেও আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন। আমরা রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস শিল্পে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের সার্বিক কল্যাণে আর্থিক সহায়তা প্রদানে একটি কেন্দ্রীয় তহবিল গঠন করেছে এবং সহযোগিতা অব্যাহত রাখা হয়েছে। সব সেক্টরে শ্রমিকদেও বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়েছে।

শ্রমিকদের সামাজিক মর্যাদা, স্বাস্থ্য ও সেইফটি নিশ্চিতকল্পে জাতীয় শ্রমনীতি-২০১২, জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি-২০১০, জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি নীতিমালা ২০১৩, বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা-২০১৫ এবং গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি-২০১৫ প্রণয়ন করা হয়েছে; যা বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে স্থিতিশীল শিল্পসম্পর্ক এবং উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে।

সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এবং কার্যক্রম আরো সুদৃঢ় হয়েছে। শিল্প-কারখানায় কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন পরিদপ্তরকে অধিদপ্তরে উন্নীত করা হয়েছে। শ্রমিক ও তাদের পরিবারের কল্যাণে বিভিন্ন সেবার সম্প্রসারণ ও জোরদারকরণে শ্রম পরিদপ্তরকে অধিদপ্তরে রূপান্তর করা হয়েছে। শ্রমিক ভাই-বোনদের যেকোনো সমস্যা সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ, অভিযোগ নিষ্পত্তি ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানের জন্য সার্বক্ষণিক টোল ফ্রি হেল্প লাইন (১৬৩৫৭) চালু করা হয়েছে। শিল্প কারখানায় বিশেষ করে গার্মেন্টস শিল্পে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাযথ পরিদর্শন ও মনিটরিং ব্যবস্থা চলমান রয়েছে। এছাড়া শ্রমিকদের জন্য শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার প্রয়াসের অংশ হিসেবে রাজশাহীতে জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাবিষয়ক গবেষণা এবং প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট নির্মাণ করা হচ্ছে।

মহান মে দিবসের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শ্রমিক এবং মালিক পরস্পর সুসম্পর্ক বজায় রেখে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধিতে নিবেদিত হবেন। আমরা শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণ ও দেশের সার্বিক উন্নয়নের মধ্য দিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।

লেখকঃ হীরেন পণ্ডিত; প্রাবন্ধিক, গবেষক ও কলামিস্ট

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত