756
Published on জানুয়ারি 27, 2024কোনো ক্ষেত্র থেকে কাউকে নিরুৎসাহ বা নিবৃত্ত করতে বৈশ্বিকভাবে নানা পন্থা অলবম্বন করা হয়। যেমন, সম্প্রতি একটি উন্নত দেশের একটি বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠান নোটিশ জারি করেছিল যে তারা তাদের কার্যালয় দুর্গম পর্বতে স্থানান্তরিত করবে। আসলে এটা ছিল কর্মী ছাঁটাইয়ের কৌশল। কারণ দুর্গম এলাকায় যাতায়াতের কথা ভেবে অনেকে নিজে থেকেই কাজ ছেড়ে দেবে এবং হয়েছিলও তা-ই।
বাংলাদেশের রাজনীতির ক্ষেত্রে বিএনপিও এমনই পন্থা অবলম্বন করেছে। গণতন্ত্রমুখী জনগণকে নির্বাচন থেকে নিরুৎসাহ ও বাধাগ্রস্ত করতে নির্বাচনের পূর্বে জ্বালাও-পোড়াও, সন্ত্রাস এবং নির্বাচন বর্জনের ‘নোটিশ-বাস্তবায়ন’ জুড়ে দিয়েছিল। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘নিশ্চিত পরাজয়’ জেনে বিএনপি এমন পন্থা অবলম্বন করেছিল।
‘নিশ্চিত পরাজয়’ শব্দ ব্যবহারের কারণ জনগণকে জয় করবার জন্য বা প্রয়োজনে পাশে থাকার যে গণতান্ত্রিক রীতি-রেওয়াজ তা বিএনপির নেতা-কর্মী-সমর্থকরা পালন করেনি। উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণ, বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতি কিংবা বৈশ্বিক মন্দাবস্থায় জনগণ বিএনপিকে খুঁজে পায়নি। বিষয়গুলো বিএনপিও উপলব্ধি করতে পেরেছে। যার কারণে বিএনপি নির্বাচন থেকে সটকে পড়ার কৌশল প্রয়োগ করেছে।
শুধু তা-ই নয়, দেশের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি বেশ কয়েকটি ফ্রন্টও খুলেছিল। যেমন, নির্বাচন-পূর্ব ও পরবর্তী সহিংসতা এবং কিছু বহুমুখী ষড়যন্ত্র। নির্বাচনের আগে তারা চেষ্টা করেছিল যেন কোনোভাবেই নির্বাচন না হয়। এখন চেষ্টা করছে যেন কেউই জাতীয় নির্বাচনকে স্বীকৃতি না দেয় এবং দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক ধ্বংস হয়। এ ক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার দল বলিউডের মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্র ‘টুয়েলভ ফেল’ সিনেমার টুয়েলভ ফেল ব্যক্তির মতো সফল হতে পারেনি, পারবেও না।
টানা চতুর্থবার নির্বাচনে জয়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব কিছু মোকাবেলা করে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর জয়কে সাধুবাদ ও স্বীকৃতি দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, কানাডা, জাপান, চীন, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশের বিদেশি পর্যবেক্ষকরা মত প্রকাশ করেছেন। এরই মধ্যে ৬০টি দেশের সরকারপ্রধান, জাতিসংঘ মহাসচিবসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকারও ব্যক্ত করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিজয়ে খেই হারানো বিএনপি শেষমেশ জাতীয় নির্বাচনের গড় ভোট সংখ্যাকে টার্গেট করে বাহাস করার চেষ্টা করেছে। নির্বাচন কমিশন মধ্য দুপুরে ভোট পড়ার সংখ্যা যা বলেছিল আর শেষতক যা বলা হয়েছে তার মধ্যে নাকি সংগতি নেই। শীতের আবহে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের কর্মতৎপরতা বাড়ে। সব কিছুতে অংশগ্রহণ বাড়ে। নির্বাচনের শেষবেলায় ভোট পড়ার ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। এটা কমন সেন্স।
এ ক্ষেত্রে কেউ যদি বিএনপির স্বৈরশাসক জিয়ার মতো অস্ত্রবাজির মাধ্যমে হ্যাঁ-না ভোটের শতভাগ অংশগ্রহণ কামনা করেন সেটা অকল্পনীয় হবে। কারণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বহুদলীয় অংশগ্রহণ থাকে। সেখানে তাদের নিজস্ব ভোট ব্যাংক থাকে, নতুন ও ভাসমান ভোটার থাকে। কাজেই কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে তাদের অনুসারীরাও ভোটের বাইরে থাকবে, এটাও স্বাভাবিক। তা ছাড়া উন্নত দেশগুলোয় ভোট পড়ার সংখ্যাটা আরো কম।
বাঙালির শান্ত সাহস শেখ হাসিনা টানা তিন মেয়াদে বাংলাদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক খাতকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। করোনার সময় লাখ লাখ পোশাক শ্রমিকের বেতন নিশ্চিতে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া, সাত লাখের অধিক মানুষকে বিনা মূল্যে বাড়ি তৈরি করে দেওয়া, নারী ও শিশুদের সেবা প্রদানের জন্য মোট ১৪টি ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস স্টোর, ৪৭টি জেলা সদর হাসপাতালে ও ২০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৬৭টি ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেল স্থাপন, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ এবং বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ২৪ ঘণ্টা হটলাইন সেবা ১০৯ চালু করেছেন। তৃণমূল পর্যন্ত নারীকে স্বাস্থ্যসেবা দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক ব্যবস্থা চালু করেছেন।
নারীকে অবৈতনিক শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবেও সমান তালে এগিয়ে নিয়েছেন, যার প্রমাণ জিডিপিতে নারীর অবদান প্রায় ২০ শতাংশ।
শক্তিমান লেখিকা আশাপূর্ণা দেবীর উপন্যাস ‘শশীবাবুর সংসার’ এর কাহিনি নিয়ে নির্মিত ছবিতে একজন অবসরপ্রাপ্ত দাপুটে শ্বশুরের আপত্তি অগ্রাহ্য করে পুত্রবধূ অরুন্ধতী দেবীকে কর্ম করতে হয়েছে। বাঙালির মণিরত্ন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলার নারীদের জন্য সেই অচলাবস্থা রাখেননি। বরং নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অংশগ্রহণকে সহজ, সাবলীল ও মননশীল করে তুলেছেন। শিক্ষাঙ্গনসহ সব ক্ষেত্রে সাম্যাবস্থার মাধ্যমে দেশকে সুস্থ ধারায় এগিয়ে নিচ্ছেন। এ জন্যই বিশ্ববাঙালি এবং বিশ্ববিবেক শেখ হাসিনার টানা চতুর্থ বিজয়কে সানন্দে গ্রহণ করেছে এবং তাঁর পথযাত্রাকে জয়যাত্রায় উদযাপন করেছে। এখানেই সব অপশক্তির পরাজয়।
লেখক : হায়দার মোহাম্মদ জিতু; রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব
সৌজন্যেঃ কালের কণ্ঠ