1142
Published on নভেম্বর 14, 2023হায়দার মোহাম্মদ জিতু:
যুদ্ধ-বিপ্লব এবং নৈরাজ্য শিল্প-সাহিত্যে যতটা নান্দনিক বাস্তবে তা ততটাই ধ্বংসাত্মক। যদিও তা কিছু কিছু ক্ষেত্রে অধিকার আদায়ের হাতিয়ারও। বাস্তিল কারাগার ভাঙা থেকে ফরাসি বিপ্লবের রক্তাক্ত অধ্যায় এবং এ অঞ্চলের দেশভাগ থেকে মুক্তিযুদ্ধ, সমগ্র পথটাই রক্তপাত, বেদনা ও অর্জনের। ক্ষুদিরাম বসু, প্রফুল্ল চাকি, সূর্যসেন, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র, বঙ্গবন্ধু সকলেই সেই ঐতিহাসিক সময়গুলোকে বয়ে আনা সন্তান। যদিও শুধু স্বার্থের জন্য এসব ঐতিহাসিক চরিত্রগুলোর সাথে ষড়যন্ত্রের গর্ভে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা কিছু ব্যক্তিরও তুলনা চলে! এক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক হিসেবে, স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের নাম আসে।
নিজে একজন স্বৈরশাসক হলেও গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারকে মিলিয়ে বেশ রূপসজ্জা সমেত আওয়াজ দিয়েছিলেন। স্বৈরশাসক হিসেবে ক্ষমতায় থেকে দল গঠন এবং রাজনীতিকে রাজনীতিবিদদের জন্য কঠিন করাসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
মুখে গণতন্ত্র ও নির্বাচনের কথা বললেও এরা পূর্বাপরই জনবিচ্ছিন্ন থেকেছে। প্রহসন ও প্রবঞ্চনায় বরাবরই জনগণের সাথে প্রতারণা করেছে।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের নামে ২০২৩-এর ২৮ অক্টোবর আবারও বিএনপি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুর করেছে। এদের বাধা দেওয়ায় পুলিশকে আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে। এদের আক্রমণে ১ জন পুলিশ সদস্য নিহত ও ৪১ জন আহত হয়েছেন। এরা রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালসহ দুটি পুলিশ অ্যাম্বুলেন্সে আগুন দিয়েছে। এছাড়া ১টি পুলিশ ভ্যান ভাঙচুরসহ পুলিশ হাসপাতালের ৫টি মোটরসাইকেলে আগুন দিয়েছে।
সংবাদকর্মীরাও এদের হামলা থেকে রেহাই পায়নি। ২৮ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। সাধারণ জনগণের ওপর চড়াও হয়ে এরা ১২টি বাস, ১৫টি মোটরসাইকেল ও ১টি পিকআপে আগুন দিয়েছে।
রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সবসময় বিরোধীদের প্রতি সহনশীল থেকে যুক্তি উপস্থাপন ও জনগণকে সাথে নিয়ে জিততে হয়। কিন্তু বিএনপি তা কোনোকালেই পারেনি। উল্টো আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের ৩০ নেতাকর্মীকে বেদমভাবে আহত করেছে। ৪ জন নারী কর্মীকে হেনস্থা করেছে। বিএনপিকে যারা তার ঐতিহ্যগত অপরাধ থেকে দায়মুক্তি দিতে চায় বা চাওয়ায় জন্য লবিং করেন-করছেন, এদের কাছে বিএনপির হত্যা কিংবা নৈরাজ্য মূলক আন্দোলনের ব্যাখ্যা কী?
সেই সাথে তাদের প্রাপ্তিযোগই বা কি হলো, সেটাও জানা জরুরি।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের বাইরে যে কয়টি পক্ষ এখন পর্যন্ত ক্ষমতায় এসেছে এদের প্রত্যেকেই স্বৈরশাসকদের ব্রেইন চাইল্ড বা বর্ন চাইল্ড।
বিএনপির চেয়ারপারসন এতিমের টাকা আত্মসাৎ ও দুর্নীতির দায়ে জেলে, ভাইস চেয়ারম্যান হত্যা মামলাসহ পলাতক, দেশে থাকা নেতারাও বিভ্রান্ত। ২৮ অক্টোবর সরকার পতনের মতো ফাইনাল খেলার কথা বলে ২৯ অক্টোবর আবারও হরতালের মতো সেমিফাইনাল খেলতে চাওয়ায় রাজনৈতিকভাবে বিএনপির আবারও পরাজয় ঘটেছে। নিরীক্ষা দৃষ্টিতে এরা রাজনৈতিকভাবে এতটাই দেউলিয়া হয়ে গেছে যে এদের নিয়ে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘তারিখের পর তারিখ, বিএনপির বাতিক,’। কেউ কেউ আরেকটু বাড়িয়ে বলছে, ডিম আগে না মুরগি আগে, এই বিতর্কেরও অবসান সম্ভব।
কিন্তু বিএনপির আন্দোলন আর সম্ভব নয়। যার প্রমাণ, কিছু দিন আগেও এরা অনশন, আন্দোলনের ডাক দিলেও এদের নেতাকর্মীদের রুটি-কলার দোকানে ভিড় করতে দেখা যায়।
গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠের মাঠ ও ভোটই শেষ কথা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সেই প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে নেমেছে। কিন্তু এনিয়েও বিএনপি নেতারা যেভাবে বিদেশিদের অভিযোগ করে আসছে তাতে মনে হয় তারা ওয়াকওভার প্রত্যাশা করে। কিন্তু গণতন্ত্র মানে তো ওয়াকওভার কিংবা আঁতাতের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় আশা নয়। এখানে মাঠ ও ভোট, দুই স্থানেই সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রমাণ দিতে হয়।
জনমানুষের দল হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সবসময় দুর্বার। ক্ষমতাকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার উন্নয়ন দর্শন ও মমতা দিয়ে তা আরও পোক্ত করে তুলেছে। কাজেই আওয়ামী লীগে ভোট দেবার অপরাধে গফরগাঁওয়ের কামরুজ্জামানের দশটি হাতের আঙুল কেটে ফেলা কিংবা পূর্ণিমাসহ নারীদের ধর্ষণের ঘটনা দিয়েও যেখানে আওয়ামী লীগকে দাবায়ে রাখা যায়নি সেখানে আজ তা আরও অসম্ভব। বিষয়গুলো আওয়ামী বিরোধী শিবিরগুলোর বুঝে গেছে। এজন্যই এত আঁতাত, এত হাঁসের ডিম অনুসন্ধান।
দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি সুদ মহারাজ ড. মুহাম্মদ ইউনূস, মানবাধিকার কর্মী ও একসময়ের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আদিলুর রহমানের ‘অধিকার’ দিয়েও আওয়ামী লীগকে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ফ্রন্ট খুলেছেন। যা লেজ তোলার মধ্য দিয়ে জনগণ বুঝে নিয়েছে। কাজেই আল্টিমেটাম, আঁতাত এবং ঘরে-বাইরের লোক দেখানো আন্দোলন, নৈরাজ্য দিয়ে জনগণের ক্ষতি না করে জনবান্ধব রাজনীতির চর্চা আবশ্যক। এক্ষেত্রে তারা ঐতিহাসিক হিসেবে বঙ্গবন্ধু এবং বর্তমান হিসেবে শেখ হাসিনাকে অনুসরণ করতে পারেন।
লেখক: সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও রাজনৈতিক কর্মী
সৌজন্যেঃ বাংলা ট্রিবিউন