981
Published on নভেম্বর 4, 2023যেদিকে চোখ যায় শুধু মানুষ আর মানুষ! স্মরণকালে এমন জনস্রোত আর দেখেনি আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগার রাজধানী ঢাকার মানুষ। কয়েক কিলোমিটার এলাকা যেন মানুষের মহাসমুদ্র! যে সমুদ্রের শুরু থাকলেও কোথায় যে শেষ কেউ তা বলতে পারেনি। ঢাকা বিভাগের সকল জেলার লাখ লাখ মানুষের স্রোতে পুরো ঢাকা মহানগরের একাংশ যেন পরিণত হয়েছিল বিশাল জনসমুদ্রে।
স্বপ্নযাত্রার মেট্রোরেলের মতিঝিল পর্যন্ত উদ্বোধন উপলক্ষে শনিবার আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণকালের বৃহৎ ঢাকা বিভাগীয় মহাসমাবেশের সামনে দাঁড়িয়ে দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য ঢাকা বিভাগের সকল মানুষকে আহ্বান জানালেন টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গেই বললেন, ‘ইনশাআল্লাহ দেশের জনগণ আগামীতেও নৌকায় ভোট দেবে এবং আমরা জনগণের সেবা করে যাব। নৌকা এবার জিতবেই।’
বিশাল জনসমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা আন্দোলনের নামে অগ্নিসন্ত্রাস, সহিংসতা করে দেশের অগ্রযাত্রাসহ সবকিছু ধ্বংস করে দিতে চায়। কে তাদের অধিকার দিয়েছে ধ্বংস করার? অবিলম্বে তাদের এই ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে। না করলে কিভাবে এসব বন্ধ করতে হয় তা আমাদের জানা আছে। কাউকেই ছাড়া হবে না। যারা সন্ত্রাস করছে, অগ্নিসন্ত্রাসের যারা ইন্ধন দিচ্ছে, দেশে-বিদেশে যেখানেই থাকুক ছাড়া হবে না। প্রয়োজনে বিদেশ থেকে ধরে এনে শাস্তি দেব ওই কুলাঙ্গারকে (তারেক রহমান)। আর দেশের মানুষের কাছে আমার একটাই চাওয়া, সবাই যেন স্বাধীন দেশের আত্মমর্যাদা নিয়ে চলে। ওই সন্ত্রাস, অগ্নিসন্ত্রাসী ও দুর্বৃত্তপরায়ণদের যেন প্রত্যাখ্যান করে।
কানা-খোঁড়া যাকেই মনোনয়ন দেই তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে তাকে বিজয়ী করার জন্য দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশ দিয়ে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা আরও বলেন, আগামী নির্বাচনের তফসিল যেকোনো সময় ঘোষণা হতে পারে। সেই নির্বাচনে কানা-খোঁড়া বা যাকেই প্রার্থী দিই তাকেই ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন। এবার নৌকা জিতবেই। এ সময় ওয়াদা চাইলে সমাবেশে উপস্থিত লাখ লাখ নেতাকর্মীরা দু’হাত তুলে এবং নৌকা মার্কার গগণবিদারী স্লোগান দিয়ে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করার অঙ্গীকার করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌকা মার্কাই পারে স্বাধীনতা দিতে, নৌকা মার্কাই পারে উন্নয়ন দিতে। আমি ঢাকাবাসীর প্রতি অনুরোধ করব, একটা বিষয় মাথায় রাখবেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিলেন বলেই এতো উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে কাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, সেটা আমরা নির্ধারণ করব। যাকে মনোনয়ন দেব ঐক্যবদ্ধভাবে সবাইকে তার পক্ষে কাজ করতে হবে। যেন আবারও আমরা এ দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারি। এখনো অনেক উন্নয়নকাজ বাকি সেগুলোও যেন শেষ করতে পারি। কারণ অগ্নিসন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদীরা যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে এ দেশটাকে টিকতে দেবে না। সে জন্যই সকলকেই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে ঢাকা বিভাগীয় মহাসমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, কার্যনির্বাহী সদস্য সাঈদ খোকন, আনোয়ার হোসেন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুই মেয়র ব্যারিস্টার ফজরে নূর তাপস, আতিকুল ইসলাম, সাবের হোসেন এমপি, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, একেএম শামীম ওসমান, যুবলীগের শেখ ফজলে শামস পরশ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের গাজী মেসবাউল হোসেন সাচ্চু, কৃষক লীগের উম্মে কুলসুম স্মৃতি, ছাত্রলীগের সাদ্দাম হোসেন প্রমুখ। যৌথভাবে সমাবেশা সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ।
রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলের আরামবাগে আওয়ামী লীগের ঢাকা বিভাগীয় মহাসমাবেশে দশ লক্ষাধিক মানুষের স্বতঃস্ফুর্ত উপস্থিতি নিকট অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। মহাসমাবেশ স্থল আরামবাগ থেকে মতিঝিল, কমলাপুর, ইত্তেফাক মোড়, দৈনিক বাংলা, পল্টন, ফকিরাপুলসহ চারপাশে পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত ছিল লোকে লোকারণ্য। নানা স্লোগানে, নাচে গানে খ- খ- বর্ণিল মিছিলে মুখরিত হয়ে উঠে ঢাকা মহানগরীর এই প্রাণকেন্দ্রটি। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত ঢাকা মহানগরের অলিগলিতে গণমানুষের ঢল নামে। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে আরামবাগ-মতিঝিলসহ পুরো এলাকার কয়েক কিলোমিটার পথ। পুরো এলাকাই রীতিমত মহাসমাবেশ স্থলে পরিণত হয়েছে। মহানগরের নেতারা এই বিভাগীয় মহাসমাবেশকে রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চ ভাষণের সেই ঐতিহাসিক গণসমাবেশের সঙ্গে তুলনা করেন।
শনিবার সকাল থেকে ঢাকা মহানগরীতে গণমানুষের ঢল থেকে ভাসতে থাকে ‘জয় বাংলা আর বারবার দরকার, শেখ হাসিনার সরকার’ স্লোগান। সকাল ১০টা থেকে ঢাকা মহানগরী সকল থানা, ওয়ার্ড ছাড়া ঢাকা বিভাগের সকল জেলা নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, ঢাকা জেলা, মুন্সীগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, শরিয়তপুরসহ দূর-দূরান্ত থেকে শত শত বাসে-ট্রাকে করে সভাস্থল নগরীর আরামবাগে রঙিন টিশার্ট ও ক্যাপ পরিহিত নেতাকর্মীরা ঢাকঢোল পিটিয়ে আসতে শুরু করে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগারগাঁও স্টেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তরা-মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের উদ্বোধন শেষে মেট্রো ট্রেনযোগেই সমাবেশস্থল আরামবাগে ঢাকা বিভাগীয় মহাসমাবেশে যোগ দেন। আগারগাঁও থেকে মতিঝিল স্টেশনে আসতে সময় লাগে মাত্র ২৫ মিনিট। প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশে আসার আগেই পুরো এলাকা রীতিমত জনসমুদ্রে পরিণত হয়। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে শেষে নিজেই জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, মার্ক কী নৌকা স্লোগান ধরলে মহাসমাবেশে উপস্থিত প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষের পাল্টা স্লোগানে পুরো নগরীই যেন প্রকম্পিত হয়ে উঠে।
সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে দেশকে জাতির পিতা স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। সেই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাটাই আমাদের কাজ। দলের সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। যাতে করে ঘাতকের দল, বিএনপি-জামায়াত এ দেশের মানুষকে আর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারতে না পারে। আর দেশের জনগণের ওপর অত্যাচার করতে না পারে। তার জন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।
সাবধান করে দিচ্ছি, ধ্বংসযজ্ঞ করলে ছাড়ব না
বিএনপিকে ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করার সাবধানবাণী উচ্চারণ করে কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তাদের আন্দোলন হচ্ছে অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ খুন করা আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা করা। সবকিছু ধ্বংস করা। কেন ধ্বংস করবে এভাবে? তাদের কে অধিকার দিয়েছে? কাজেই তাদের এই ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে। আর এটি যদি বন্ধ করতে না পারে কীভাবে বন্ধ করাতে হয় তা আমাদের জানা আছে। এটি আমরা ছাড়ব না।
সমাবেশে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, এরা যেন জ্বালাও পোড়াও ধ্বংস করাই যেন তাদের একটি উৎসব। এই হলো বিএনপির চরিত্র। আমার প্রশ্ন তারা মানুষের ভাত দিতে পারেনি। মানুষের ঘর দিতে পারেনি। মানুষকে কাপড় দিতে পারেনি। তাদের আমলে বিদেশ থেকে পুরান কাপড় এনে আমাদের দেশের মানুষকে পরাত। আর সেই মানুষগুলোর ওপর তারা এই অত্যাচার কিভাবে করে?
ঢাকাবাসীসহ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা আগুন দিয়ে পোড়াবে তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। দরকার হলে তাদের ধরে ওই আগুনের মধ্যে ফেলতে হবে। যে হাত দিয়ে আগুন দেবে সেই হাত আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিতে হবে। তাহলেই তাদের শিক্ষা হবে। তারা (বিএনপি) ভুলে যাচ্ছে, বাসে আগুন দেয়, গাড়িতে আগুন দেয়। তারা কী গাড়িতে চড়ে না? তাদের গাড়ি নাই? তাদের জিনিসপত্র নাই? জনগণ যদি সেগুলো পোড়াতে শুরু করে তখন তারা কোথায় যাবে? কী করবে সেটিও তাদের ভাবা উচিত। আমরা ওই সব বিশ্বাস করি না দেখে এখনো দেশের মানুষ ধৈর্য ধরে আছে। কিন্তু এভাবে কতদিন?
তিনি আরও বলেন, আজকে কোনো জিনিসপত্র-খাদ্যপণ্য আসতে দেয় না। সেখানেও বাধা দেয়। কাজেই আমি তাদের সাবধান করে দিচ্ছি। ক্ষমতা দেওয়ার মালিক আল্লাহ আর এইদিকে জনগণের ভোট। আমার বাবা-মা ভাই, আমার ছোট ভাই রাসেলকেও তো হত্যা করেছিল। ভেবেছিল জাতির পিতার রক্তের আর কেউ কোনোদিন ক্ষমতায় আসবে না। খালেদা জিয়া তো বলেছিল, একশ’ বছরেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আল্লাহর রহমতে ওই কথা তাদের বেলায় ফলে গেছে। আর আওয়ামী লীগ এই চার চার বার ক্ষমতায় আছে। ইনশাআল্লাহ আগামীতেও জনগণ নৌকায় ভোট দেবে এবং আমরা জনগণের সেবা করে যাব।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এই নৌকা মার্কাই হচ্ছে একটা মার্কা; যে মার্কায় ভোট দিয়ে এদেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। যে মার্কায় ভোট দিয়ে এই দেশের মানুষ যেখানে জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে স্বল্পোন্নত দেশে রেখেছিলেন। আজকে আমরা তা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন আজকে সবার হাতে মোবাইল ফোন। ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে। ফ্রিলান্সিং করে টাকা কামাই করতে পারে। কর্মসংস্থানের ব্যাপক ব্যবস্থা নিয়েছি। ১০০টা অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিয়েছি। রাস্তাঘাটের উন্নতি হয়েছে। একেবারে গ্রাম পর্যন্ত আজকে উন্নয়ন। এমনকি প্রবাসী যারা করোনার সময় তাদের আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছি। নৌকায় ভোট পেয়ে ক্ষমতায় এসেছি বলেই এটি আমরা করতে পেরেছি। আর ওই বিএনপি-জামায়াত তো ভোট চোর। জনগণের সম্পদ চোর। ওই চোরদের ঠাঁই বাংলাদেশে নেই।
এদের কী মনুষ্যত্ব আছে? ২৮ অক্টোবর ভয়াল তা-বের ঘটনায় বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে দেশ ভালো থাকে। আর বিএনপি কী পারে? শুধু ভোট চুরি, দেশের অর্থ চুরি, জনগণকে হত্যা করা। নানা ধরনের অত্যাচার নির্যাতন। এই ২৮ অক্টোবর কী ঘটনা ঘটাল তারা! আপনারা একবার বলেন। কোনো মানুষ যার ভেতরে সামান্য মনুষ্যত্ব আছে তারা কি এমনভাবে একজন সদস্যকে হত্যা করতে পারে? বিএনপির তাণ্ডবের মুখে পুলিশ পিছু হটে যায়। তারপরও তারা ওই পুলিশ সদস্যকে ধরে যেভাবে লাঠিপেটা ও কুপিয়ে হত্যা করল, পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে যেভাবে অ্যাম্বুলেন্স পোড়াল, এমনকি তারা আমাদের নারী সদস্যদের ওপরও হামলা চালিয়েছে। তারপরও পুলিশ অনেক ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। এটা কী রাজনীতি?
তিনি বলেন, শুধু এখনই নয়, এর আগেও একইভাবে পুলিশের ওপর হামলা হয়েছিল। ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে ২৯ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছিল তারা। রাজশাহীতে একজন পুলিশ সদস্যকে মাটিতে ফেলে হত্যার কথা স্মরণ রাখা দরকার। গাইবান্ধা থেকে শুরু করে অনেক এলাকায় পুলিশের ওপর হামলা করেছে তারা। পুলিশ কী দোষ করেছে? তারা তো শুধু দায়িত্ব পালন করছে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা তারা দেবে। আজ তারা যানবাহনে আগুন দিচ্ছে। একটি বাসের হেলপার ঘুমিয়ে ছিল, ওই বাসে আগুন দিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
মুচলেকা দিয়ে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসেছিল
২০০১ সালে মুচলেকা দিয়ে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসেছিল মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে, আমি জাতির পিতার কন্যা, আমি তো দেশের সম্পদ অন্যের হাতে তুলে দিতে পারি না। আমি সেটা দেইনি। কিন্তু খালেদা জিয়া ২০০১ সালে মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল।
তিনি আরও বলেন, ২০০১ সালে তারা ক্ষমতায় আসার পরপর কী হয়েছিল? পহেলা অক্টোবর এদেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। জিয়াউর রহমান শুরু করেছিল ‘হ্যাঁ-না’ হ্যাঁ, না ভোট, আর ভোট কারচুপির প্রক্রিয়া। এরশাদও একই কাজ করেছেন। খালেদা জিয়াও ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোট চুরি করেছিল। ভোট কারচুপি করে বঙ্গবন্ধুর খুনি রশিদ-হুদাকে পার্লামেন্টে বসিয়েছিল, বিরোধী দলের নেতা বানিয়েছিল। যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী-উপদেষ্টা বানিয়ে দেশ থেকে স্বাধীনতার চেতনাকেই ধ্বংস করতে চেয়েছিল।
২১ বছর দেশের মানুষ অন্ধকারে ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার যখন ’৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলাম তখন বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছি, সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেছি, রাস্তাঘাট, ব্রিজ করেছি। বড় বড় নদীর ওপর ব্রিজ করেছি। শতভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুতের আলো দিতে পেরেছি। পুরো বাংলাদেশ এখন বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।
বাবার মতো নিজের জীবন উৎসর্গ করেছি
বার বার তাকে হত্যার চেষ্টা তিনি ভীত নন উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমি বাংলাদেশের জনগণের জন্য কাজ করতে এসেছি। বাবা-মা-ভাই সব হারিয়েছি। আমার হারাবার কিছু নেই, আবার পাওয়ারও কিছু নেই। একটাই লক্ষ্য এই দেশের মানুষকে শান্তিতে রাখা।
তিনি বলেন, মহান আল্লাহ আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কারণে আমি বারবার জীবন ফিরে পেয়েছি। আমিও বাবার মতো এই বাংলাদেশের মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছি। যে আদর্শ নিয়ে জাতির পিতা এই দেশ গড়ে তুলেছিলেন, সেই বাংলাদেশ আমি গড়তে চাই। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ আমি গড়তে চাই।
’৭৫ পরবর্তী দুঃসময়ের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাবা-মা, ভাইসহ সবাইকে হারিয়েছি। আমার কোনো কিছু হারানোর বা প্রাপ্তির কিছু নেই। দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই আমার একমাত্র লক্ষ্য। আমরা দুই বোন বিদেশে থাকায় বেঁচে গিয়েছিলাম। ৬ বছর জিয়াউর রহমান আমাদের দেশে আসতে দেয়নি। রেহানার পাসপোর্টও দেয়নি। আমি আওয়ামী লীগ ও দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, যারা আমার অবর্তমানে আমাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করেছিলেন। আমি এমন একটি সময় দেশে ফিরেছিলাম যখন স্বাধীনতা বিরোধী, যুদ্ধাপরাধীরা দেশের ক্ষমতায় ছিল। প্রতিনিয়ত আমার ওপর আঘাত আসে। আমার নেতাকর্মীরা মানবঢাল রচনা করে বারবার আমাকে রক্ষা করে।
মেট্রোরেল ঢাকাবাসীর জন্য উপহার, যতেœ ব্যবহার করবেন ॥ টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজ (শনিবার) আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল উদ্বোধন করলাম। এ মেট্রোরেল ঢাকাবাসীর জন্য উপহার। তবে মেট্রোরেল ব্যবহারে আমাদের যতœবান হতে হবে, যাতে করে এটির ক্ষতি না হয়।
তিনি বলেন, এই ঢাকার মানুষের জন্য আমরা মেট্রোরেল নিয়ে এসেছি। যারা উত্তরায় বসবাস করেন তারা মাত্র ৪০ মিনিটে প্রতিদিন উত্তরা থেকে মতিঝিল আসা যাওয়া করতে পারবেন। ইতোমধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ২৫ হাজার যাত্রী চলাচল করছেন। আমি মতিঝিল থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত এ মেট্রোরেল বর্ধিত করেছি। সেটার কাজও চলছে।
সরকারপ্রধান বলেন, সাভারের হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাতাল রেল হবে। আকাশ রেল দেখলাম, এখন পাতাল রেল আমরা করব। সেটা নিয়েও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। একই সঙ্গে এমআরটি লাইন ফাইভ, অর্থাৎ পাতাল রেলের কাজ উদ্বোধন করে দিয়েছি। এটাও ঢাকাবাসীর জন্য উপহার আমি দিয়ে গেলাম। এমআরটি লাইন-৬ উত্তরা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত বর্ধিত করা হবে। এটার সমীক্ষা চলছে। মেট্রোরেল নির্মাণের জন্য ১২ হাজার প্রকৌশলীর চাকরির ব্যবস্থা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, মেট্রোরেলে চড়ে আমি এ অনুষ্ঠানে এসেছি। মেট্রোরেলটি ঢাকাবাসীর জন্য উপহার। এ ঢাকার মানুষের জন্য আজকে আমরা নিয়ে এসেছি মেট্রোরেল। যানজটে কষ্ট পেতে হবে না, রাস্তায় আটকে থাকতে হবে না। যারা চাকরিজীবী, যারা কর্মজীবী, ছাত্র-শিক্ষক সকলে, বিশেষ করে আমার মেয়েরা, নারীরা নিরাপদে চলাচল করতে পারবে এই মেট্রোরেলে।
আল্লাহর মাইর দুনিয়ার বাইর
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা বিরোধী দলের নেত্রীও হতে পারবে না। আগামী একশ’ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আসলে আল্লার মাইর দুনিয়ার বাইর। এখন নিজেই ভেবে দেখুক কে কোথায় আছে। আমি কখনো গর্ব করি না। আমার কাছে ক্ষমতা হচ্ছে জনগণের সেবা করা। আমি চাই এ দেশের মানুষ সুখে থাকুক।
সরকারপ্রধান বলেন, দারিদ্র্যের হার আমরা কমিয়ে এনেছি। খালেদা জিয়ার আমলে যা ছিল ৪১ শতাংশ, বর্তমানে তা ১৮ শতাংশ। হতদরিদ্র ছিল ২৫ শতাংশ, বর্তমানে আমরা ৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। দেশে আর হতদরিদ্র থাকবে না। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, স্কুলের ছেলে মেয়েদের জন্য বিনামূল্যে বই, উপবৃত্তি, বৃত্তি, গবেষণার জন্য টাকা- সবকিছুই আমরা দিয়ে যাচ্ছি। করোনার সময় বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দিয়েছি, বিনামূল্যে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছি। দেশের মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য নগদ টাকা দিয়ে ভ্যাকসিন কিনে ভাড়া করা বিমানে অনেক টাকা খরচ করে দেশে এনেছি।
অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে শ্রমিকরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন
পোশাক শ্রমিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অন্যের কথায় নেচে কারখানায় হামলা করে, কারখানা ভেঙে, সেখানে অস্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি করে দেশের ক্ষতি করলে, নিজেরই ক্ষতি হবে। আর কারখানা বন্ধ করলে ওই গ্রামেই ফিরে যেতে হবে। বিনা কাজে জীবনযাপন করতে হবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে পোশাক শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, এরপর ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পরেও বেতন বাড়ানো হয়েছে। যে কারখানা আপনাদের রুটি-রুজি দেয়, শ্রম দিয়ে পয়সা কামাই করেন, সেই কারখানা ভাঙচুর করলে আল্লাহও নারাজ হবে। আপনাদের যা প্রয়োজন হয়, অসুবিধা আমরা দেখি।
এ সময় কারখানায় শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় ছিল তখন তো কিছু করেনি। যা করেছে আওয়ামী লীগ সরকারই। আওয়ামী লীগ জানে মানুষের কষ্ট দূর করতে। তিনি বলেন, মজুরি কমিশন বসেছে। ধৈর্য ধরতে হবে। কারা উসকানি দিচ্ছে সেটা আমরা জানি। যার ভাঙচুরে জড়িত, বিএনপির নেতাকর্মীদের বলব হুকুমদাতা দেশেই থাকুক বিদেশেই থাকুক, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, আর ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ গ্রহণ করে হুকুমজারি করে, ওই বিদেশ থেকে ধরে এনে বাংলাদেশে শাস্তি দেব, ওই কুলাঙ্গারকে। কেউ ছাড়া পাবে না।