1019
Published on সেপ্টেম্বর 28, 2023মো. আসাদ উল্লাহ তুষারঃ
সমসাময়িক কালের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির অঙ্গনের অন্যতম প্রধান ও প্রবীণ রাজনীতিকের নাম শেখ হাসিনা। একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান হিসেবে টানা বিয়াল্লিশ বছরের পথচলার পাশাপাশি প্রায় দুই দশক রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে দেশ পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তিনি শুধু এই উপমহাদেশে একজন সিনিয়র রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা প্রধানমন্ত্রী নন, তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। একটি দেশের প্রতিষ্ঠাতার কন্যা হিসেবে শেখ হাসিনার জন্য যেমন গৌরব ও সম্মানের তেমনি পিতার আদর্শ, সততা, সাহস নিয়ে নিরবিচ্ছিন্ন পথ চলাও বেশ কষ্টসাধ্য। কারণ সবকিছুতেই মানুষের প্রত্যাশার পরিমাণ থাকে বেশি।
শেখ হাসিনা যখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নেন তখন তার বয়স ছিল চৌত্রিশ। আওয়ামী লীগের মতো একটি বিশাল রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো বয়স সেটা আক্ষরিক অর্থেই ছিল না। তারপরে তখনকার পরিবেশ ছিল খুবই ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ। একদিকে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের দুঃশাসন কাল। অন্যদিকে তার পৃষ্ঠপোষকতায় জাতির পিতার খুনিদের আস্ফালন। সব মিলিয়ে রাজনৈতিক পথ ছিল কণ্টকময়। পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া শেখ হাসিনাকে সব সময় ধাওয়া করে গেছে কোনো না কোনো বুলেট বোমা। কিন্তু ভরসার জায়গা ছিল দেশের মানুষ ও তাদের অফুরন্ত ভালোবাসা এবং আল্লাহপাকের অশেষ রহমত। মানুষের ভালোবাসাকে সম্মান করেই পনেরই আগস্টের বিয়োগান্তক বেদনাকে বুকে ধারণ করে শোককে শক্তিতে পরিণত করে বাংলাদেশের মানুষের জন্য নিরবিচ্ছিন্ন লড়াই-সংগ্রাম করে গেছেন শেখ হাসিনা। সামরিক শাসক জিয়া ছয়টি বছর তাকে দেশেই আসতে দেয়নি। পিতার কবরের পাশে বসে দোয়া দরুদ পাঠ করতে পারেনি। কিন্তু ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে আগমন করার পর থেকেই অমানিশার অন্ধকার কাটতে শুরু করেছিল। বাংলাদেশের মানুষ আবার আশায় বুক বেঁধেছিল। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছিল বাংলাদেশের মানুষ। সেই সংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে শেখ হাসিনাকে বারবার মৃত্যুর মুখে পড়তে হয়েছে। মানুষের দোয়া ও ভালোবাসায় প্রতিবারই তিনি বেঁচে গেছেন।
বঙ্গবন্ধু সিকি শতাব্দী ধরে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের জন্য সংগ্রাম করতে গিয়ে জেল জুলুম নিপীড়ন নির্যাতন সহ্য করে এই ভূখণ্ডকে স্বাধীন সার্বভৌম করে দিয়ে গেছেন। মাত্র সাড়ে তিন বছর রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে বাংলাদেশের যে ভিত্তিমূল তিনি তৈরি করে গিয়েছিলেন তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। কিন্তু পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করে সেই অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা যখন দেশে ফিরে এসে আওয়ামী লীগের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন তারপর থেকে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সম্পাদন করার জন্য নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পঁচাত্তর-পরবর্তী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে যে সংগ্রাম শুরু করেছিলেন তা এখনও অব্যাহত আছে। সেই সংগ্রামের প্রথম পর্যায়ের সামরিক জান্তা জিয়া-এরশাদের দুঃশাসনকে মোকাবিলা করে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের নেতৃত্ব এখনও দিয়ে চলেছেন। এই যে লম্বা পথচলা তা একজন পোড় খাওয়া দেশপ্রেমিক রাজনীতিকেরই পরিচয় বহন করে। তিনি পিতার আদর্শ বহন করে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে একটি উন্নত সমৃদ্ধশালী দেশ নির্মাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তার এই কাজের শক্তির মুল উৎস বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনিই যে তার সব কর্ম এবং উদ্দীপনার সাহস ও প্রেরণা তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি পিতার যোগ্য উত্তরসূরি।
শেখ হাসিনার বড় গুণ হচ্ছে সততা এবং সাহস। যা তিনি তার পিতার কাছ থেকে পেয়েছেন। তিনি দ্রুত সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কারণ তিনি সব সময় জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে জনগণের কল্যাণে রাজনীতি করেছেন। বঙ্গবন্ধুর মতো অসীম সাহস তাকে তার রাজনৈতিক জীবনে বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাত প্রতিকূল পরিবেশ পাড়ি দিতে সহায়তা করেছে। ১৯৮১ সালে পিতা মাতা,ভাই ভাবি সব হারিয়ে দেশে ফিরে এসে আওয়ামী লীগের যখন হাল ধরেন তখন পথটা খুবই কঠিন ছিল। পিতা-মাতা, ভাই-ভাবি, আত্মীয়-স্বজন হারানোর শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে দেশের মানুষের ভালোবাসা নিয়ে শেখ হাসিনা সেই অন্ধকার পথ পাড়ি দিয়েছেন। এ পথ ছিল কাঁটা বিছানো, প্রতি পদে পদে হায়েনাদের বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। কোনোকিছুই দমাতে পারেনি শেখ হাসিনাকে। নিজের দুটি শিশু বাচ্চাকে বিদেশে রেখে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার ও মানুষের ভোট ভাতের অধিকার রক্ষা করার জন্য সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছিলেন। তার প্রাথমিক পরিসমাপ্তি হয়েছিল ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার মধ্য দিয়ে। এই পথ পাড়ি দিতে শেখ হাসিনাকে ’৭৫-এর খুনিদের বিরামহীন ঔদ্ধত্য, পাশাপাশি দেশি-বিদেশি চক্রান্ত, মিথ্যাচার ও অপপ্রচারে জর্জরিত আওয়ামী লীগকে জনগণের আকাংক্ষার প্রতীকে পরিণত করতে দিনরাত নিরলস পরিশ্রম করে গেছেন। সারা দেশের আনাচে-কানাচে প্রতিটি জেলা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করতে সফর করেছেন। ’৭১ ও ’৭৫ খুনিদেরকে পরাজিত করতে এবং সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হয়েছে। তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী তাকে রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করে বারবার দমন করতে চেয়েছে, হত্যা করতে চেয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনার দুর্নিবার সাহস ও মানুষের ভালোবাসা তাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন এবং তিনি বার বার বিজয়ী হয়েছেন।
শেখ হাসিনা তার পিতা বঙ্গবন্ধুর মতোই দয়ালু ও মানুষকে ভালোবাসার বিরল সৌভাগ্যের অধিকারী। তিনি যেমন প্রান্তিক মানুষের দুঃখে নিজে কষ্ট পান ঠিক তেমনি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের নানা কষ্ট দুঃখের ভাগীদার হয়ে মমতার হাত নিয়ে পাশে দাঁড়ান। তিনি জীবনযাপনে যেমন সাধারণ, ব্যক্তিত্বে নেতৃত্বে তেমনই অসাধারণ। বঙ্গবন্ধুর মতোই গ্রামের খেটেখাওয়া অসহায় নিরীহ মানুষকে অবলীলায় বুকে টেনে নিতে পারেন। একইভাবে দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সমানভাবে অন্তর দিয়ে ভালোবাসেন,সহায়তা করেন, তাদের সাহস জোগান। কী সরকারি দল, কী বিরোধী দল কতশত পরিবারকে যে নীরবে-নিভৃতে শেখ হাসিনা তাদের সংসার খরচ, পড়াশোনার খরচ, চিকিৎসার খরচ বহন করেন তা হয়তো আমরা দেশের অনেক মানুষই জানি না। বঙ্গবন্ধু মানুষকে ভালোবাসতেন সাধারণ মানুষের ভালোবাসাই ছিল বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। তাঁর কন্যা হিসেবে শেখ হাসিনাও মানুষের দোয়া ও ভালোবাসায় আজও দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। মানুষের এই ভালোবাসার কাছে সব অপশক্তি আজ পরাজিত।
শুধু দেশেই নয় বিদেশিদের কাছেও আজ শেখ হাসিনা অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে গেছেন। কর্মে, গুনে,বয়সে, অভিজ্ঞতায় তিনি আজ অনেকটা বিশ্ব নেতায় পরিনত হয়েছেন। তাইতো ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী রিষি সুনাক হাটু গেরে সম্মান প্রদর্শন করে শেখ হাসিনার সাথে কথা বলেন,তার নেতৃত্বের ভুয়াশি প্রশংসা করেন। তার কন্যাদের তার মতো হতে পরামর্শ দেন। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো মায়ের মত সম্মান করেন। ভারত,চীন,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়াসহ তাবৎ বড় বড় দেশের সরকার ও রাস্ট্র প্রধানরা তার অভিজ্ঞতা ও দুরদর্শি কর্মতৎপরতার প্রশংসা করেন,সমিহ করেন। দেশকে এগিয়ে নেয়ার যে তার শক্তি ও একাগ্রতার প্রশংসা করেন। অনেকে হয়তো হিংসাও করেন! তিনি সমসাময়িক বিশ্বের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও প্রজ্ঞাবান রাষ্ট্র নায়ক। তিনি সাহসী সৎ ও দেশপ্রেমিক প্রধানমন্ত্রী। কোন অন্যায়ের কাছে মাথানত করেন না। কোন অপশক্তির রক্ত চক্ষুকে পরোয়া করেন না, সে দেশ বিদেশের যে শক্তিই হোক। তার সাহসের জায়গা তার দেশ ও দেশের জনগন। যে জনগন তার পিতার এক ডাকে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পরেছিল এবং ত্রিশ লক্ষ মানুষ জীবন দিয়েছিলেন শহীদ হয়েছিলেন। এই বাংলাদেশের জনগনই তার সবচেয়ে বড় শক্তি। তাদের কারনেই তিনি আজ অনন্য উচ্চতায় পৌছিয়েছেন।
পিছনে বার বার বুলেট তারা করা শেখ হাসিনা ১৯৭৫ সালের পনেরোই আগস্ট ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে শেষ করে দেওয়ার চক্রান্ত করেছিল বিএনপি জামাত সরকার। কিন্তু মানুষের ভালোবাসায় বেঁচে গিয়ে তিনি তার পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে দেশকে উন্নতির উচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন তা একদিন পূরণ হবেই। নানা সময়ে দলের লোকদের দ্বারাও তিনি বাধাগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকেই দুঃসময়ে বেইমানি করে দূরে সরে গেছে। আবার ভুল বুঝে ফিরেও এসেছেন। মোস্তাকের মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়া নেতাদেরও ক্ষমা করে দলে জায়গা দিয়েছেন। আবার তার নিজের সঙ্গেও যারা বেইমানি করেছেন তাদেরকেও ক্ষমা করে কাছে টেনে নিয়েছেন। নিজেই বলেছেন, তিনি নীলকণ্ঠী, বিষ খেয়েও হজম করতে পারেন। এটাও তার নেতৃত্বের একটি বিরাট গুণ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেমন দেশের মানুষের কাছে রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে জাতির পিতা বা বঙ্গবন্ধু হিসেবেই অধিক আপন বা শ্রদ্ধেয়। তেমনই শেখ হাসিনাও প্রধানমন্ত্রীর আসনকে টপকিয়ে রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বিশ্বে এবং বঙ্গবন্ধু কন্যা হিসেবে দেশের মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছেন এটাই শেখ হাসিনার অর্জন। কন্যা হিসেবে তিনি সফল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় এনেছেন এবং তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে দেশকে অনেক উন্নত ও সমৃদ্ধ করেছেন। মা হিসেবেও গর্ব করার মতো একজন মা। যার দুই সন্তানকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে সুসন্তান রূপে গড়ে তুলেছেন, যাদের কিনা ক্ষমতা ও বিত্ত-বৈভব স্পর্শ করতে পারেনি। একইভাবে একাত্তরের ঘাতকদের বিচার করাও শেখ হাসিনার মতো নেতার পক্ষেই কেবল সম্ভব হয়েছে। শহীদদের আত্মা শান্তি পেয়েছে। দল ও সরকারপ্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা ঈর্ষণীয়ভাবে সফল। দলকে চারবার ক্ষমতায় নেওয়া এবং দেশকে উন্নতির উচ্চশিখরে নিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বের ফল। তাইতো তিনি আজ অনন্য উচ্চতায়। তিনি মানুষের দোয়া ও ভালোবাসায় সুস্থভাবে শত বছর বেঁচে থাকুন জন্মদিনে এই প্রার্থনা। শুভ জন্মদিন বঙ্গবন্ধু কন্যা।
লেখক: কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ।