মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭ তম জন্মদিন - তুমিও অজেয় রবে জনকের মতো

974

Published on সেপ্টেম্বর 28, 2023
  • Details Image

স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে দুটি তারিখ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, একটি হচ্ছে ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি আরেকটি ১৯৮১ সালের ১৭ই মে। প্রথম তারিখটিতে বাঙালি জাতির দীর্ঘদিনের শৃঙ্খল মুক্তির সংগ্রাম পূর্ণতা পায়,এইদিন পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে বিজয়ীর বেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। ঐতিহাসিক এই প্রত্যাবর্তনকে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের অন্ধকার থেকে আলোর পথে অভিযাত্রা বলা হয়ে থাকে। দ্বিতীয় তারিখেও ঠিক আরেকটি ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন ঘটেছিল,পঁচাত্তরের পর দেশ যখন নিভৃত অন্ধকারে ছেয়ে গিয়েছিল তখনই আলোর মশাল হাতে বঙ্গবন্ধু তনয়া গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরেছিলেন। দেশে ফিরেই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনসহ তাঁর পিতার ঘামে রক্ত মাংসে গড়া দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে সারাদেশে সফর করেন। বঙ্গবন্ধু যে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার জন্য সোনার মানুষ গড়তে চেয়েছিলেন, তার অনন্য প্রতিচ্ছবি তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা। পিতার মতোই সাহসী নেতৃত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সকল অপশক্তি দমিয়ে,যার সর্বোৎকৃষ্ট প্রমাণ বৈশ্বিক ষড়যন্ত্রের মুখে ছাই ফেলে নিজের টাকায় পদ্মা সেতুর মতন স্থাপনা আজ দৃশ্যমান। শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ফলেই বাঙালি আজ শুধু সমৃদ্ধিই অর্জন করছে তা নয়,প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে নিজেকে মেলে ধরছে বিভিন্নভাবে।

শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর প্রথম সন্তান, তার জন্ম ১৯৪৭ এর এমন এক উত্তাল সময়ে যখন ভারত-পাকিস্থান দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে কেবল জন্ম নিয়েছে। পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টির ফলে বাংলাদেশ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান নামে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত প্রদেশ হিসেবে থাকে,পাকিস্তানের বাকি অংশ পশ্চিম পাকিস্তান নাম পায়। তবে প্রতিষ্ঠার প্রথম থেকেই দেশ গঠনে অবদান পূর্ব পাকিস্তানিদের বেশী থাকলেও তারা বরাবরই পশ্চিম পাকিস্তানিদের চেয়ে কম সুবিধা পায় এবং তাদের দ্বারা শোষণ নিপীড়ন নির্যাতনের শিকার হয়। এমনকি বাঙালির মুখের ভাষা পর্যন্ত পাকিস্তানি শোষকের দল কেড়ে নিতে চায়। সারা দেশব্যাপী 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, আমাদের দাবি মানতে হবে' স্লোগান ধ্বনিত হতে থাকে। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু এদেশের আপামর ছাত্রসমাজকে উদ্বুদ্ধ করেন, নির্দেশনা প্রদান করেন। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু তাঁর স্মৃতিকথায় উল্লেখ করেছেন, ‘হাচু (হাসিনা) আমার গলা ধরে প্রথমেই বললো—আব্বা রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, রাজবন্দিদের মুক্তি চাই।’ মাত্র সাড়ে চার বছর বয়সী শেখ হাসিনা একটি রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে ওঠার ফলে, ছোটবেলা থেকেই যে সেই আদর্শে বড় হয়েছেন এ থেকে তার প্রমাণ মেলে।

বঙ্গবন্ধু ও তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা যে একই পথে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন তা তাদের বিভিন্ন সময়ে বলা নানা কথার মাঝে খুঁজে পাওয়া যায়। স্বাধীনতা থেকে সমৃদ্ধি, তাঁদের ত্যাগ মূলত বাংলার মানুষের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ। বঙ্গবন্ধু বলেছেন,'আমি যদি বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে না পারি, আমি যদি দেখি বাংলার মানুষ দুঃখী, আর যদি দেখি বাংলার মানুষ পেট ভরে খায় নাই, তাহলে আমি শান্তিতে মরতে পারব না।' তেমনি তাঁর কন্যাও দীপ্ত কণ্ঠে উচ্চারণ করেছেন, 'আমি চাই বাংলার মানুষের মুক্তি। শোষণের মুক্তি। বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য বঙ্গবন্ধু সংগ্রাম করেছিলেন। আজ যদি বাংলার মানুষের মুক্তি না আসে, তবে আমার কাছে মৃত্যুই শ্রেয়।’

ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত একটি দেশের রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধু অসাম্প্রদায়িক চেতনার জাগরণ ঘটিয়েছেন,৬ দফা থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের যে কণ্টকাকীর্ণ যাত্রা তা অপশক্তির বিরুদ্ধে মহাপ্রলয় রচনা করে ঐতিহাসিক বিজয়গাঁথা রক্তাক্ষরে লিখিত হয়েছে বিশ্ব ইতিহাসের পাতায়। তেমনি তার কন্যা স্বাধীন বাংলাদেশের গণতন্ত্র যখন স্বৈরাচারের বেয়নেটের খোঁচায় জর্জরিত তখন স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলেন,এদেশের মানুষকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে উজ্জীবিত করতে নিজের জীবন বাজি রেখে প্রতিটি গ্রাম পাড়া মহল্লায় ছুটে বেড়ান।

স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরেই বঙ্গবন্ধু একটি উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন,কিন্তু দূর্ভাগ্য আমাদের এমন একজন নেতাকে আমরা ঘাতকের নির্মম বুলেট থেকে রক্ষা করতে পারিনি। অথচ মাত্র তিন বছরের শাসনামলেই (১৯৭২-৭৫) তিনি জীর্ণভগ্ন যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে তিনি পুনর্জাগরণের উদ্যোগ নেন। তিনি প্রাদেশিক সরকারকে কেন্দ্রীয় সরকারে উন্নীতকরণ, মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র সমর্পণ,বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর প্রত্যাহার, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন,পরিকল্পনা কমিশন গঠন,স্বাধীন দেশের প্রথম বাজেট উপস্থাপন,সংবিধান প্রণয়ন, অর্থনৈতিক ও পররাষ্ট্র নীতি প্রণয়ন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক গঠন,বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ কর্মসূচী,মুদ্রা ও ডাকটিকেট প্রবর্তন,সামরিক বাহিনী গঠন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দৃঢ়তার সাথে মোকাবিলা,
মুজিব-ইন্দিরা চুক্তিসহ দেশের কৃষিখাতে সমবায়
ভিত্তিক অগ্রগতি, শিল্প ও বাণিজ্য ব্যবস্থার একটি সুশৃঙ্খল কাঠামো তৈরি করেন। তবে পরবর্তী দশকে বন্দুকের মুখে ক্ষমতার রদবদল, স্বৈরাচারের শাসনামল এদেশের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করে। বঙ্গবন্ধু কন্যা তার পিতার রেখে যাওয়া কাজগুলি সম্পন্ন করতেই দেশে ফিরে আসেন এবং ১৯৯৬,২০০৮,২০১৪,২০১৮ এই চারবার তার নেতৃত্বে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। তার শাসনামলে দেশের প্রতিটি খাতে অভাবনীয় উন্নয়ন সাধিত হয়,খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা,স্বাস্থ্য খাতে সারাদেশে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন,পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি, ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি বণ্টন,২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা অর্জন,কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচারের আইনের প্রক্রিয়া শুরু হওয়া, একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য সম্পন্ন করা, সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি ও সমুদ্রবক্ষে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ব্লু ইকোনমির নতুন দিগন্ত উন্মোচন, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট সফল উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশ জয়, সাবমেরিন যুগে প্রবেশ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, অসংখ্য উড়াল সেতু, মহাসড়কগুলো ফোর লেনে উন্নীত করা, এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, দারিদ্র্যের হার হ্রাস, মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি, দেশের প্রায় শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা, যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন, সাক্ষরতার হার উন্নীতকরণ, বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে নতুন বই পৌঁছে দেওয়া, মাদ্রাসা শিক্ষাকে মূলধারার শিক্ষার মতো স্বীকৃতি দান, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, প্রতিটি জেলায় একটি করে সরকারি/বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ, নারীনীতি প্রণয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ, মোবাইল প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়ন সহ ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমাণের যে স্বপ্ন তিনি বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষকে দেখিয়েছেন তা হবে এদেশের মানুষের উন্নত সমৃদ্ধ জীবন বাস্তবায়নেরই প্রতিফলন। শুধু তাই নয় মায়ানমার থেকে জীবনের সন্ধানে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে ছুটে আসা লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গাকে তিনি আশ্রয় দিয়েছেন, তাদের দায়িত্ব নিয়েছেন- তিনি তো বঙ্গবন্ধুর কন্যা, নিপীড়িত মানুষকে তিনি ফিরিয়ে দিতে পারেননি।

বঙ্গবন্ধুর অবিচল নেতৃত্বেই আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা পেয়েছি, স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের ইচ্ছাশক্তি কতটা, তাদের সক্ষমতা কতটা সেটি তার কন্যা অপরাজেয় নেতৃত্বে বিশ্ব দরবারে বারবার প্রমাণ করেছেন। তিনি পিতার আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে কখনোই অন্যায়ের সাথে আপোষ করেননি, ষড়যন্ত্রকারীদের সমুচিত জবাব দিয়েছেন। কঠিন পরিস্থিতিতেও বিচলিত হননি,কারণ তার সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল এদেশের মানুষের তার প্রতি প্রবল বিশ্বাস। এদেশের মানুষের জন্য নিজের ব্যক্তিজীবনকে উৎসর্গ করেছেন,শুধু তাই নয় বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দিয়েছেন মানবতার বার্তা। পদ্মার উত্তাল স্রোত থেকে বঙ্গোপসাগর, ৫৬ হাজার বর্গমাইলের প্রতিটি কোণা আজ জানান দেয়, হে বঙ্গকন্যা তুমিও অজেয় রবে জনকের মতো।

লেখক-
আশেক মাহমুদ সোহান
উপ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত