708
Published on আগস্ট 16, 2023যেহেতু সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলা নেই, তাই বাংলাদেশে কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার হতে পারে না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ১৯৯৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার সংবাদে দেখা যায়, চট্টগ্রামের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে সার্কিট হাউসে আয়োজিত সুধী সমাবেশে এই কথা বলেন তিনি। এসময় খালেদা জিয়া আরো বলেন, সংবিধান অনুযায়ী, নিরপেক্ষ ব্যক্তি বলতে কারো হাতে ক্ষমতা দেওয়া যাবে না। নির্বাচিত প্রতিনিধি ছাড়া কোনো ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন না।
১৯৯৫ সালের ২৩ নভেম্বর দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকার সংবাদে দেখা যায়, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেছেন বিশ্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো নজির নেই। তাই এটি গ্রহণ করা যাবে না। যশোরের ঈদ-গাঁ ময়দানে আয়োজিত বিএনপির জনসভায় খালেদা জিয়া আরো বলেন, সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো বিধান নেই। বিরোধী দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বাহানা তুলেছে। কিন্তু জনগণ এমন কোনো ম্যান্ডেট আমাদের দেয়নি। তাই এটি করা যাবে না।
১৯৯৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে রাজধানীর গুলিস্তানের সমাবেশে খালেদা জিয়া বলেন, সংবিধানের আওতার বাইরে কোনো কিছু করা যাবে না। তত্ত্বাবধায়কের অগণতান্ত্রিক দাবি গ্রহণযোগ্য নয়। ২ সেপ্টেম্বরের ইত্তেফাক আরো জানায়, আন্দোলনের নামে দেশে কোনো বিশৃঙ্খলা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণাও দেন খালেদা জিয়া।
১৯৯৫ সালের ২ সেপ্টেম্বরের দৈনিক বাংলা, ডেইলিস্টার এবং জনকণ্ঠের প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর জনসভায় বিএনপি চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া যেকোনো মূল্যে গণতন্ত্র ও সংবিধান সমুন্নত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তিনি হরতাল না দেওয়া বা কোনো আন্দোলন কর্মসূচি পালন না করার জন্যেও হুশিয়ার করে দেন। এসময় তত্ত্বাবধায়কের দাবি ছেড়ে দিয়ে, সংবিধান মেনে নির্বাচন আয়োজনের জন্য খোলা মন নিয়ে আলোচনায় বসার জন্য আওয়ামী লীগসহ বিরোধীদলগুলোকে আহ্বান জানান তিনি। তত্ত্বাবধায়কের জন্য আন্দোলন না করতে বিরোধীদলগুলোর প্রতি হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, আন্দোলন করে আমাদের ক্ষমতা থেকে সরানো যাবে না। বরং সংবিধান মেনে আলোচনায় বসুন। কারণ এদেশের মানুষ তত্ত্বাবধায়ক চায় না, তাই তা করতে দেওয়া হবে না।
জোরালো কণ্ঠে খালেদা জিয়া বলেন, নির্বাচনের ৩০ দিন আগে মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করবে। এসময় সরকার কীভাবে চলবে তা সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। কিন্তু সবকিছু সংবিধানের মধ্যে থেকে হতে হবে। তত্ত্বাবধায়কের কথা সংবিধানে নেই। সংবিধানের বাইরে এক পাও যাব না। বিরোধী দলের আন্দোলন কর্মসূচির প্রতি হুশিয়ারী দিয়ে তিনি আরো বলেন, আন্দোলনের নামে দেশের ক্ষতি করতে দেয়া হবে না। কর্শসূচির নামে দেশের সম্পদ নষ্ট করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার। তাতে বিরোধী দলের কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সরকার দায়ী থাকবে না।
৬ নভেম্বর চাঁপুরের এক সমাবেশে খালেদা জিয়া বলেন, সংসদীয় গণতন্ত্রে অনির্বাচতি ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হতে পারে না। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা সম্ভব না। এসময় তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে বিরোধী দলগুলোর করা হরতাল-ধর্মঘট ও রাজনৈতিক কর্মসূচির বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
২০০৬ সালের ৫ মে জনকণ্ঠ পত্রিকার প্রতিবেদনেও তত্ত্বাবধায়ক বিষয়ে একই সুর বলতে শোনা যায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে। তিনি বলেন, রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে কোনো দাবি আদায় করা যায় না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং নির্বাচন কমিশন সংস্কারের জন্য আওয়ামী লীগের দাবির বিষয়ে তিনি একথা বলেন। খালেদা জিয়া আরো বলেন, যারা রাজনৈতিকভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে তারাই তত্ত্বাবধায়ককে ইস্যু করে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে।
মনে রাখবেন, এই কথাগুলো ক্ষমতায় থাকার সময় নিজে বলেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। আর এখন তারা কী বলছে! তারা কী আসলেই রাজনৈতিক দল? তারা কী আসলেই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে? নাকি শুধু আওয়ামী লীগের পেছনে কুৎসা ছড়ানোই তাদের কাজ? তত্ত্বাবধায়ক বিষয়ে খালেদা জিয়ার দ্ব্যর্থহীন অবস্থান আর আজকের বিএনপির কর্মকাণ্ড- পুরোপুরি বিপরীত? এখন আপনারাই বলুন, জনগণের সঙ্গে এভাবে ধোঁকাবাজি করার অর্থ কী? তারা আসলে কী চায়? দেশের যে উন্নয়ন চলমান আছে, সেই গতিকে নাশকতার মাধ্যমে স্থবির করে দিতে চায় তারা। এই দ্বিমুখী সন্ত্রাসবাদী চক্রের ফাঁদে পা দেবেন না। সতর্ক থাকুন। সামাজিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করুন।