4134
Published on আগস্ট 5, 2023২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকার সময় টাকা ছাড়া সহজে চাকরি জুটতো না কারো। একটি চাকরির জন্য প্রয়োজন হতো ৩ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা। ছাত্রদল অথবা শিবিরের দলীয় পরিচয় থাকলে অবশ্য কিছুটা ডিসকাউন্ট থাকতো। পিএসসি-এর মাধ্যমে নিয়োগ বাণিজ্য করায় সাধারণ পরিবারের মেধাবী সন্তানরা নিমজ্জিত হয়েছিলেন চরম দুর্ভাগ্যে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পরই শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে স্বচ্ছ করেছে পিএসসি-কে। ফলে এখন মেধা অনুসারে উত্তীর্ণ হয়ে সরকারি চাকরি পাচ্ছে লাখ লাখ মানুষ।
তবে তারেক রহমান কীভাবে পিএসসি-কে কলুষিত করেছিল, কীভাবে রাষ্ট্রীয়ভাবে চাকরির নিয়োগে দুর্বৃত্তায়ন করতো খালেদা জিয়ার সরকার- আসুন, পুরনো দিনের পত্রিকায় প্রকাশিত খবর দেখে সেসব লুটপাটের কিছু নমুনা দেখে নেই.....
মূলত, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার গঠনের পরপরই সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে দলীয়করণ শুরু করা হয়। এমনকি পিএসসি-এর মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকেও দুর্নীতির আঁখড়ায় পরিণত করে তারা। ২৪-তম বিসিএসের প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সীমাহীন দুর্নীতির কারণে ২৭-তম বিসিএস পরীক্ষার ভাইভার রেজাল্টও বাতিল ঘোষণা করতে বাধ্য হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ২০০৭ সালের ২৭ জানুয়ারি সমকালের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এসব দুর্নীতির নথিপত্রসহ বিভিন্ন প্রমাণ উঠে আসে।
প্রথমে ১০ সদস্যকে দলীয় বিবেচনায় পিএসসি-এর সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেন খালেদা জিয়া। এরপর তাদের মাধ্যমে নিয়োগবাণিজ্য শুরু করে তারেক রহমান। এক্ষেত্রে চাকরিপ্রার্থীদের সাথে হাওয়াভবন ও পিএসসি সদস্যদের 'কন্ট্রাক্টম্যান' হিসেবে কাজ করতো ২৫তম বিসিএস-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত পিএসসির সদস্য অধ্যাপক মাহফুজুর রহমানের আপন ভাই মামুনুর রশিদ। সে নিজে জোট সরকারের প্রতিমন্ত্রী লুৎফর রহমান খান আজাদের এপিএস হিসেবে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় এবং এনজিও ব্যুরোতে কাজ করতো। তারেক রহমানের আজ্ঞাবাহ পিএসসি চেয়ারম্যান জেডএন তাহমিদা বেগমের সঙ্গে লিঁয়াজো রক্ষা করতো এই মামুন।
টাকা লেনদেনের হিসেব ও নেতাদের সুপারিশ যে ডায়রিতে লিখতো মামুন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে তা পরে ধরা পড়ার পর এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। অন্যদিকে, এদিকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পরিচয় শুনলেই ভাইভা বোর্ড থেকে প্রার্থীকে বের করে দিতেন আরেক পিএসসি সদস্য ও সাবেক যুগ্ম-সচিব মোজাম্মেল হক।
২৭ তম বিসিএস বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত পিএসসির আরেক সদস্য আশরাফুল ইসলাম চৌধুরী ব্যাপক দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি পিএসসির একজন সহকারী পরিচালক ও নিজের পিও এর মাধ্যমে লেনদেন করতেন বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপকভাবে তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। তার রেফারেন্স দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক প্রার্থী আগে থেকেই এএসপি হবে বলে এলাকায় বলে বেড়াতো, এবং সে হয়েছে। জনশ্রুতি আছে ২১ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে এই নিয়োগে।
২৬তম বিশেষ বিসিএস ছিল শুধু শিক্ষা ক্যাডারের জন্য। সেটির অধিকাংশ নিয়োগে গড়ে পাঁচ লাখ টাকা করে লেনদেন এবং বিএনপি-জামায়াত দলীয় ব্যক্তিদের স্বজনদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। লিখিত পরীক্ষায় মার্কশিট বদল করে নাম্বার বাড়িয়ে দেওয়া এবং ভাইভায় বেশি নাম্বার দেওয়ার মাধ্যমে এই দুর্নীতি করা হতো। এছাড়া তারেক রহমানের তালিকা ধরে শুধু বগুড়া ও আজিজুল হক কলেজ ছাত্রদল নেতাকর্মীদের মধ্য থেকে ২৫ জনের অধিক ব্যক্তিতে পুলিশ ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়ার মতো জঘন্য ও নিন্দনীয় ঘটনাও ঘটিয়েছে বিএনপি-জামায়াত আমলের পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। দেশে এরকম ন্যাক্কারজনক ঘটনা এর আগে বা পরে আর কখনোই ঘটেনি।
এমনকি হাওয়া ভবনের তালিকা অনুযায়ী কয়েক হাজার চিকিৎসকদের চাকরি ও প্রমোশন দিয়েছেন পিএসসি চেয়ারম্যান তাহমিদা বেগম। বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাব-এর নেতা ড. এজেডএম জাহিদ হোসেনের মাধ্যমে হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ এবং স্বাস্থ্য-চিকিৎসা খাতে দুর্নীতি-লুটপাটে মেতে ওঠে তারেক গং। ২০০৭ সালের ২৪ মার্চ প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
২০০৫ সালের ১৭মে ও ১৯ সেপ্টেম্বর, এরপর ২০০৬ সালের ২৮ মে- এই তিন দফায় মোট ৫০০ চিকিৎসককে দলীয় বিবেচনায় সহকারী অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগ এবং পদোন্নতি দেওয়া হয় বিএনপি সরকারের সময়। এসব নিয়োগের ক্ষেত্রে বিএমডিসি নির্ধারিত যোগ্যতা, প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা এবং স্বীকৃত জর্নালে প্রকাশিত প্রবন্ধ- কিছুই ছিল না এদের। শুধু হাওয়াভবনের সুপারিশের কারণে জুনিয়র কনসালটেন্ট পদ থেকে সরাসরি সহকারী অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগ পান এই চিকিৎসকরা।
এছাড়াও ক্ষমতার শেষের তিন মাসে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করে বিএনপির এমপি-মন্ত্রীরা। এসময় দ্রুততার সঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থা, স্কুল-কলেজ ও পুলিশে ২০ হাজারের অধিক নিয়োগ দেয় তারা। ২০০৬ সালের ১৯ জুলাই এর দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকা থেকে এসব তথ্য জানা যায়। এমনকি পিএসসির মাধ্যমে রাতারাতি ৩০০ পদধারী ছাত্রদল নেতাকে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়ে ভোট জালিয়াতি করার নীল নকশাও করেছিল খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান। তবে পরবর্তীকারে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাদের এই অপপ্রয়াস নষ্ট হয়ে যায়।