২৩ জুনঃ সব হারানো থেকে প্রাপ্তির পথে অগ্রযাত্রা

813

Published on জুলাই 24, 2023
  • Details Image

প্রকৌ. মোঃ তানভীর হাসান তালাশ, প্রকৌ. মোঃ আবু হাসান শাহরিয়ার, MCIPS:

“২৩ জুন” তারিখটি বাঙালি জাতির ইতিহাসে বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ । ১৭৫৭ সালের এই দিনে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের মাধ্যমে বাঙলায় ব্রিটিশ ঔপনিবেশের সূচনা হয়; পরবর্তীতে ১৯৪৯ সালের একই দিনে গঠিত ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ নামের রাজনৈতিক দলটির নেতৃত্বে পরাধীনতার ২১৫ বছর পরে বাঙালি আবার স্বাধীনতা ফিরে পায়। জন্মলগ্ন থেকে স্বাধিকার আন্দোলন, অসাম্প্রদায়িকতা, অর্থনৈতিক মুক্তি, ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথপ্রদর্শক হিসেবে দেশের মানুষকে নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জননেত্রী শেখ হাসিনাসহ বহু বরেণ্য রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতাকামী বিপ্লবী ও মুক্তিযোদ্ধাদের অসামান্য অবদান যুগে যুগে সংগঠনটিকে সাফল্যমন্ডিত করেছে।

প্রাচীনকালে বাঙলা ছিল একটি স্বাধীন ও সমৃদ্ধ জনপদ। মধ্যযুগে মোঘলদের অধীন থাকলেও এদেশের শাসকরা মোটামুটি স্বাধীনভাবেই রাজ্য পরিচালনা করতো। কিন্তু ব্রিটিশ শাসনামলে অর্থনৈতিক আগ্রাসন ও অব্যহৃত সম্পদ পাচারের কারণে দ্রুত দেশের অবস্থা খারাপ হতে থাকে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন ও বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী প্রেক্ষাপটে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তি মিলে। সেসময় লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে বাঙলা অঞ্চলে একটি পৃথক রাষ্ট্র গঠনে বাঙালিদের আকাঙ্খা থাকলেও কেন্দ্রীয় মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের তৎপরতা এবং কিছু সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের অংশ হতে হয়। পাকিস্তান জন্মলাভের সাথে সাথেই পূর্ব পাকিস্তানের উপরে অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক আগ্রাসন চালাতে থাকে পশ্চিম পাকিস্তানীরা। এরকম পরিস্থিতিতে ১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ’। বাংলা ভাষার অমর্যাদা, খাদ্য সঙ্কটের প্রেক্ষিতে অযৌক্তিক কর্ডন প্রথা প্রবর্তন, জিন্নাহ ফান্ডের নামে অর্থ আদায়ে জোর-জবরদস্তি, রাজনৈতিক কর্মীদের জেল-জুলুম, পশ্চিম পাকিস্তানে সম্পদ পাচার, জমিদার ও আমলাতন্ত্র বেষ্টিত মুসলিম লীগের গণবিচ্ছিন্ন কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষিতে সৃষ্ট হতাশাজনক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন রাষ্ট্রভাষা বাংলা, আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ও অর্থনৈতিক মুক্তির দাবিকে সামনে রেখে গঠিত হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’; যা পরবর্তীতে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’ এবং সর্বশেষে “বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ” নাম ধারণ করে ।

খাজা নাজিমুদ্দিন তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সাথে সাথেই বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়া প্রসঙ্গে তার পূর্বের প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ছাব্বিশ মাস যাবত কারাবন্দি বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগ কর্মীদের জানান যে, ১৯৫২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি মুক্তির দাবিতে আমরণ অনশন করবেন। একইসাথে তিনি ২১ ফেব্রুয়ারি সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে রাষ্ট্রভাষা দিবস পালন করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। ২১ ফেব্রুয়ারিতে ছাত্রদের উপর বর্বরোচিত হামলার প্রেক্ষিতে সমগ্র দেশবাসীই ভাষা আন্দোলনে যুক্ত হয় এবং সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিতে বাধ্য হয়। উল্লেখ্য, ২৭ ফেব্রুয়ারি তারিখে লাগাতার অনশনের এগারো দিনের মাথায় বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেওয়া হয়। জনবিচ্ছিন্ন মুসলিম লীগের ক্রমাগত দমন-পীড়নের মধ্যেই সমগ্র বাংলাদেশে বিস্তৃত হতে থাকে আওয়ামী লীগ। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও অন্য চারটি দলের যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠন করে, আর ভরাডুবি হয় মুসলিম লীগের। কিন্তু সরকার গঠনের কয়েকমাসের মাথায় যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রী পরিষদ বাতিল করে পূর্ব পাকিস্তানে গভর্নরের শাসন জারি করা হয়।

পরবর্তীতে ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষণা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সমগ্র পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন সত্ত্বেও দায়িত্ব হস্তান্তর না করা, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র, একাত্তরের গণহত্যা- সব ছাপিয়ে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সৃষ্ট গণবিস্ফোরণের ফলস্বরূপ ১৯৭১ সালের নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ত্রিশ লক্ষ শহীদের সাহসী আত্মত্যাগে এদেশে ফিরে আসে বহুল কাঙ্খিত স্বাধীনতা।

মুক্তিযুদ্ধের পরে বঙ্গবন্ধু সরকার প্রশাসনিক পুনর্গঠন, দ্রুততম সময়ে সংবিধান প্রণয়ন, ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসন, যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন, শিক্ষাব্যবস্থার সম্প্রসারণ, মদ-জুয়া-ঘোড়দৌড়সহ ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধকরণ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা, মাদ্রাসা বোর্ড পুনর্গঠন, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন, পঁচিশ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মাফ, পাকিস্তানিদের পরিত্যক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ জাতীয়করণসহ জনমুখী পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশ গঠনের প্রাথমিক ভিত্তি রচনা করেছিল। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রাষ্ট্রের স্বীকৃতি, ওআইসি ও জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ ছিল বঙ্গবন্ধু সরকারের কূটনৈতিক সাফল্য। কিন্তু পরাজিত দেশি-বিদেশি স্বাধীনতাবিরোধী শত্রুদের চক্রান্তে বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়ার যথেষ্ট সময় পাননি। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা, একই বছরের নভেম্বরে বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত সহচর চার জাতীয় নেতাকে হত্যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে প্রায় বিপন্ন করে ফেলা হয়। পরবর্তীতে সশস্ত্র বাহিনীকে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার, রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে হত্যাকান্ড, স্বাধীনতাবিরোধীদের মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী বানানো, ইতিহাস বিকৃতি এবং সাহায্যনির্ভর অর্থব্যবস্থার মাধ্যমে মুক্তিসংগ্রামের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে রাষ্ট্র ক্রমাগত দূরে সরে যাচ্ছিল।

এরকম আশাহত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বভার নেন বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। বিপর্যস্ত আওয়ামী লীগের পুনর্জাগরণ, ১৯৯৬ সালে একুশ বছর পর দলকে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করা, ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের হত্যাকারীদের বিচার শুরু, পার্বত্য শান্তি চুক্তি, গঙ্গা-পদ্মার পানি বন্টন চুক্তি, ইউনেস্কো কর্তৃক ২১শে ফেব্রুয়ারীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি প্রাপ্তির সফল কূটনীতির মতো অর্জনগুলো বিংশ শতাব্দীতে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুউত্তর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উল্লেখযোগ্য সাফল্য।

তবে এই অগ্রযাত্রার ধারা মোটেই সহজ ছিল না। ১৯৮১ সাল থেকে অদ্যবধি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর উপরে উনিশবার প্রাণঘাতী হামলা হয়। তন্মধ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় শেখ হাসিনাসহ সকল
কেন্দ্রীয় নেতাদের হত্যাচেষ্টাটি ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। এছাড়া ২০০১-২০০৬ সালের মধ্যে হত্যার স্বীকার হন গাজীপুরের জনপ্রিয় নেতা আহসানউল্লাহ্‌ মাস্টার এমপি, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এম এস কিবরিয়া এমপি, আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ আরো অনেক নেতাকর্মী। এ সময়েই দেশে জঙ্গীবাদের চরম উত্থান ঘটে। তবে বারবার হত্যা-হামলা-চক্রান্তের স্বীকার হলেও গণমানুষের ভালবাসা, সংকটকালে তৃণমূল কর্মীদের নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ এবং সর্বোপরি জননেত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্ব দিনে দিনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে আরো শক্তিশালী করেছে।

একুশ শতকের শুরুতে সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, অর্থনৈতিক দুরবস্থা, দুর্নীতি, মারাত্মক বিদ্যুৎ ঘাটতিতে বাংলাদেশ প্রায় ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হতে চলেছিল। এমন পরিস্থিতে ‘দিনবদলের সনদ’ খ্যাত ইশতেহার প্রণয়ন করে ২০০৯ সালে দ্বিতীয় বারের মতো সরকার গঠন করে শেখ হাসিনা। জঙ্গীবাদ দমন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু, শান্তিপূর্ণ বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রায় সমান আয়তনের (১,৩১,০৯৮ বর্গ কি.মি.) সমুদ্রসীমা বিজয়, ভারতের সাথে ছিটমহল বিনিময়ে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের সাথে সাথে ১০০৫০.৬১ একর ভূমি প্রাপ্তি, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ, পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, মডেল কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ (এই উদ্যোগকে বিশ্বনেতারা ‘শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন), দেশকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত করা, নিজস্ব কারিগরি ও আর্থিক ব্যবস্থাপনায় পদ্মা সেতু নির্মাণ, ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে শেখ হাসিনা মডেল’ খ্যাত আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসিত ও স্বাবলম্বী করে তোলা, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে ৫ কোটি মানুষকে মাসিক ভাতা প্রদানসহ অন্যান্য সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়ন, প্রযুক্তিনির্ভর কৃষিবান্ধব নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, মাছের লাইভ জীন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা (ইতোমধ্যে বিলুপ্তপ্রায় ও দেশীয় মিলে মোট ৮৫ প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ করা হয়েছে) ও মৎস্য চাষে প্রয়োজনীয় পৃষ্টপোষকতায় উৎপাদন বৃদ্ধি, উপজেলা পর্যায়ে ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ, দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রির সমমান প্রদান, বছরের প্রথম দিনে স্কুল শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন পাঠ্যপুস্তক বিতরণ, ৯০০১টি শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে অনলাইনে সেবা প্রদান, নিয়মিত বিসিএস নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্নকরণ, তথ্য প্রযুক্তি খাতে ২০ লক্ষাধিক তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান, প্রাথমিক ও এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য সরকারি চাকুরীতে নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধ, রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে দুটি সাবমেরিন ক্রয়সহ সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন, 5G ইন্টারনেট সেবা চালুকরণ, দানাদার খাদ্যশস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, কক্সবাজারে মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল, সড়ক ও রেল যোগাযোগ আবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প, কর্ণফুলি ট্যানেল নির্মাণ, খাদ্যশস্য সংরক্ষণের জন্য আধুনিক সাইলো নির্মাণ প্রকল্প, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পসহ আরো অনেক সাহসী ও দূরদর্শী উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সফলতার কারণে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত। এছাড়াও কোভিড-১৯ অতিমারীকালীন সুষ্ঠু কোভিড ভ্যাক্সিন ব্যবস্থাপনা এবং চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধাবস্থায় বিশ্বব্যাপী সৃষ্ট চ্যালেঞ্জিং সময়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক পর্যায়ে রাখার ক্ষেত্রে জননেত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের সাফল্য সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ‘রূপকল্প-২০৪১’ অনুযায়ী ২০৩১ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্যের অবসান ও উচ্চ-মধ্য আয়ের দেশে উত্তরণ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের অবলুপ্তিসহ স্মার্ট ও উচ্চ আয়ের (মাথাপিছু আয় ১২,৫০০ ডলারের বেশি) দেশে উত্তরণের জন্য কাজ করছে। সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রাকে দীর্ঘমেয়াদে গতিশীল রাখতে গৃহীত হয়েছে “ডেল্টা প্লান-২১০০”। এই মাস্টারপ্লানে ২০৫০ সাল পর্যন্ত মধ্যমেয়াদি এজেন্ডা প্রণয়নের পাশাপাশি ২০৫০ সাল পরবর্তী দীর্ঘমেয়াদি এজেন্ডা সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় যে, বাংলাদেশের অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মতো গবেষণালব্ধ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দেখা যায় না।

মোদ্দাকথা, বঙ্গবন্ধুর ইস্পাতদৃঢ় নেতৃত্বে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মুক্তির মাধ্যমে আমরা যেমন স্বাধীনতা পেয়েছি, তেমনি জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণসহ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির শক্তিশালী ভিত্তি ইতোমধ্যে রচিত হয়েছে। চূড়ান্ত অর্থনৈতিক মুক্তি এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রাপ্তির ইতিহাস যেমন সমৃদ্ধ, এই সংগঠনের উপরে জনগণের প্রত্যাশার চাপও বেশি। সেইসাথে দেশি-বিদেশী চক্রান্তকারীরা বাংলাদেশের সাফল্য নস্যাৎ করতে সদা তৎপর। তাই সকল অপশক্তিকে দমন, সুশাসন ও নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করে আগামীর উন্নত ও বাংলাদেশ বিনির্মাণের মাধ্যমে ঐতিহাসিক সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে সকল দেশপ্রেমিক, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ও বঙ্গবন্ধু ভক্তদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এক ২৩ জুনে পলাশীর যুদ্ধে পরাজয়ের মাধ্যমে আমরা নিঃস্ব হলেও আরেক ২৩ জুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যে অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছিল তা অব্যাহত রাখতে ঐক্যান্তিক সাধনা প্রয়োজন। দেশকে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছানোর মাধ্যমে ২৩ জুনকে পরাধীনতার দিবস নয়, বরং বাঙালি জাতির স্বাধিকার ও জয়যাত্রার পুনরুত্থান দিবসে পরিণত করতে হবে।

লেখকঃ ১) প্রকৌ. মোঃ তানভীর হাসান তালাশ 
পরমাণু বিজ্ঞানী ও
সদস্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-কমিটি
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
২) প্রকৌ. মোঃ আবু হাসান শাহরিয়ার, MCIPS
সাংগঠনিক সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ (পেট্রোবাংলা ও কোম্পানিসমূহ ইউনিট)

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত