বিএনপির সমাবেশ থেকে বারবার শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের হত্যার ঘোষণা, চলছে নির্বাচনকেন্দ্রিক সন্ত্রাসের চূড়ান্ত প্রস্তুতি

1854

Published on জুন 18, 2023
  • Details Image

একেকটি জাতীয় নির্বাচন এলেই মানুষ মারার মহোৎসবে মেতে ওঠে বিএনপির নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রতি হত্যাযজ্ঞ ও নাশকতা চালিয়ে জনমনে ভীতি সৃষ্টির বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয় বিএনপির হাইকমান্ড থেকে। সেই ধারাবাহিকতায় আবারো আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রতি সহিংসতা চালানোর আবহ তৈরি করছে বিএনপি। বিশেষ করে ১৬ জুন এবং ১৯ মে দুটি জনসভায় প্রকাশ্যে শেখ হাসিনাকে মেরে ফেলা এবং আওয়ামী লীগ সমর্থকদের খুন করার যে ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি, তা দলটির দীর্ঘদিনের সহিংস চরিত্রেরই বহির্প্রকাশ। তবে এবার তারা জেলায় জেলার এই প্রকাশ্যে এই হত্যা চালানোর ঘোষণার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যঅ করে নির্বাচনকেন্দ্রিক সন্ত্রাস চালানোর সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এ বছরের ১৬ জুন সিরাজগঞ্জে আয়োজিত বিএনপির সমাবেশে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে শেখ হাসিনাকে মেরে ফেলার ঘোষণা দিয়ে স্লোগান দেন জেলা বিএনপির যুগ্মসাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম রঞ্জন। প্রধান অতিথি মির্জা ফখরুল, বিশেষ অতিথি রুমীন ফারহানা ও ইকবাল হোসেন টুকুকে স্বাগত জানিয়ে তাদের সামনেই প্রকাশ্য মাইকে শেখ হাসিনাকে হত্যার ঘোষণা দেয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। এরপরপরই দেশজুড়ে আওয়ামী লীগ সমর্থকদেরও মেরে ফেলার ঘোষণা দেয় তারা।

সিরাজগঞ্জে মানুষ হত্যার ঘোষণা দিয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের উচ্চস্বরে স্লোগান দেওয়ার সময় তা উস্কে দিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতানেত্রীরা। এর আগে, ১৯ মে রাজশাহীতেও বিএনপির সমাবেশ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খুন করে কবরস্থানে ফেলে রাখার প্রকাশ্য হুমকি দেয় রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ। এরপরেই ২০মে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গদিচ্যুত করার ঘোষণা দেন। এমনকি ২১ মে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সভায় মির্জা ফখরুল আবারো যেকোনো উপায়ে নির্বাচিত আওয়ামী সরকারকে ফেলে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।

বিএনপির হাইকমান্ড সর্বদাই গণতন্ত্রকে পাশকাটিয়ে, জনমতকে উপেক্ষা করে এবং সন্ত্রাসের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পাঁয়তারা করেছে। এবার আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও তারা দেশব্যাপী সর্বোচ্চ সন্ত্রাসের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন পলাতক তারেক রহমানের নির্দেশে তাই সিনিয়র বিএনপি নেতারা জেলায় জেলায় গিয়ে কিছু মানুষকে বিপদগামী করে তোলার নীলনকশা বাস্তবায়ন করে চলেছেন।

বিএনপি কেন বারবার হত্যাযজ্ঞ চালানোর ঘোষণা দিচ্ছে, রহস্য কী :

বিএনপি আসলে কোনো রাজনৈতিক দল নয়। রাজনৈতিক দলের ছদ্মবেশে দুর্বৃত্তদের একটি সংঘবদ্ধ চক্র এটি। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকাকালে গণমানুষের ওপর হত্যাযজ্ঞ, নারীদের অবমাননা, ধর্ষণ, রাষ্ট্র ও নাগরিকের সম্পদ লুটপাট, চাঁদাবাজি, জবর-দখল এসবের মাধ্যমে মানুষের আস্থা হারিয়েছে তারা।

এমনকি পরবর্তীতে বিরোধীদলে থাকার সময়েও ২০১৩ ও ২০১৪ সালে চলন্ত বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ এবং ঘুমন্ত মানুষের ঘরে অগ্নিসংযোগ করে শত শত মানুষকে হত্যা করে বিএনপি। তাদের এই বর্বর হামলায় কয়েক হাজার মানুষ স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ব হয়ে গেছে।

২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময়ও ভোটকেন্দ্র দখল ও ব্যালট লুট করে অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের জন্য অনেকগুলো কেন্দ্রে সহিংস হামলা চালায় বিএনপি। তাদের এই নির্মম হামলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ ১১ জন ব্যক্তি প্রাণ হারায়।

এরপর থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনকে ভণ্ডুল করতে দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সৃষ্টির চেষ্টা করে বিএনপি। বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান, মির্জা আব্বাসরা লাগাতার ধর্মীয় উস্কানি দিয়ে দাঙ্গার মাধ্যমে মানুষ মারার ক্ষেত্র তৈরি করে। এমনকি গত বছর ২০২২ সালের ৮ অক্টোবর রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আয়োজিত এক সমাবেশে আমানউল্লাহ আমান ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগের ওপর হামলা করে বিএনপির নেতাকর্মীদের শহীদ হওয়ার নির্দেশ দেন।

এছাড়াও ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী লক্ষীপুরে আয়োজিত বিএনপির সমাবেশে পেশীশক্তির মাধ্যমে অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের হুমকি দেন। তিনি বলেছিলেন, ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে দেশ চলবে খালেদা জিয়ার কথায়।

খেয়াল করে দেখবেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা গত কয়েক বছর ধরে তৃণমূলে একটি বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে। আর তা হলো, গণমানুষ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর সহিংসতা ও হত্যাযজ্ঞ চালানো। রাজশাহী ও সিরাজগঞ্জের বিএনপি নেতারা তাদের হাইকমান্ডের সামনে যেভাবে শেখ হাসিনাকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন, তাতে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে দেশব্যাপী বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের নাশকতার জন্য প্রস্তুত করছে বিএনপির হাইকমান্ড।

কারণ বিএনপির শীর্ষ নেতারা জানেন যে, নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে কোনোভাবেই সাধারণ মানুষকে নিজেদের পাশে নিয়ে আসতে পারবেন না তারা। এতোদিন বিভাগীয় সমাবেশের নামে সেই চেষ্টা করে ব্যর্থ হন তারা। মূলত ক্ষমতায় থাকার সময় সীমাহীন অত্যাচার এবং বিরোধী দলে থাকাকালেও আগুন ও বোমা মেরে মানুষ হত্যার মাধ্যমে জনমন থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বিএনপি। সাধারণ মানুষ এই দলের নাম শুনলে ভয় পায়।

আর বিএনপির ইতিহাসও বলছে যে, দলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সাধারণ জনগণের রক্তে রঞ্জিত করতে অভ্যস্ত দলের শীর্ষ নেতারা। এমনকি দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও ধ্বংস করেছিল তারা। এমনকি ক্ষমতায় থাকার সময় তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার ওপর ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে হত্যা করে তারা। আহত হলেও ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা।

বিএনপি কোনোদিনই জনগণের ওপর আস্থা রাখতে পারেনি। তাই জনমতকেও তারা কখনো মূল্যায়ন করে না। একারণে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সরকারে থাকা অবস্থাতেই সব রাজনৈতিক দলকে বাদ দিয়ে শুধু রাজাকার ও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের নিয়ে একতরফা নির্বাচনের আয়োজন করে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করেছিল খালেদা জিয়া। এমনকি ২০০৬ সালেও ক্ষমতায় থাকাকালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নাটক সাজিয়ে এক-এগারোর মতো জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে খালেদা-তারেক গং। তবে প্রতিবারই তাদের সব অপচেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছেন বাংলার জনগণ।

বিএনপিকে বারবারই প্রত্যাখান করেছে বাংলাদেশের মানুষ। ২০০৮ সালের অবাধ নির্বাচনে বিএনপির দুর্নীতি ও সন্ত্রাসকে প্রত্যাখান করে কল্যাণকামী রাষ্ট্র হওয়ার অভিলাস থেকে আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে ভোট দেয় গণমানুষ। ফলে দুই তৃতীয়াংশের বেশি আসনে জিতে ইতিহাস সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগ। এরপর থেকেই জনগণের ওপর ক্ষুব্ধ বিএনপি। তাই বারবার আন্দোলনের নামে জনগণের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করে বিএনপির হাইকমান্ড। ভোট না পাওয়ার জন্য সাধারণ মানুষের প্রতি তীব্র ক্ষোভ থেকে বিএনপি নেতারা সন্ত্রাস চালিয়ে বারবার হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে এই দেশে। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণমানুষের ওপর তাদের এই বর্বর হামলা প্রতিরোধের ঘোষণা দিলে, এরপর থেকে শেখ হাসিনাকে হত্যা এবং দেশজুড়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর সহিংসতা ও হত্যাযজ্ঞ চালানোর মিশনে নেমেছে তারা এখন।

বিএনপি কেন নির্বাচনি পরিবেশ চায় না, কেন তারা নির্বাচনকালীন সহিংসতা চায়:

বিএনপির থিঙ্ক ট্যাংক ভালো করেই জানে যে, সাধারণ মানুষ তাদের সাথে নেই। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গণমানুষের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে, প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আইনের শাসন। তাই বিএনপির ডাকা কোনো আন্দোলনে সাধারণ মানুষ যেতে চায় না।

কারণ, মানুষ জানে যে- এই বিএনপি আবার ক্ষমতায় এলে আবারো ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মতো নিজ ঘরে নিরাপদে থাকার পরিবেশটাও হারিয়ে ফেলবেন তারা। এছাড়াও নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বিএনপি অতীতেও কখনো আন্দোলন করেনি, তারা কখনোই তা করতে পারে না। বিএনপির আন্দোলন মানেই জ্বালাও-পোড়াও, সহিংসতা ও হত্যাডজ্ঞ; যার মূল শিকার হয় সাধারণ মানুষ।

ফলে বিএনপির প্রতি গণমানুষের মনে ভীতি ঢুকে গেছে। একারণে বিএনপিও গণমানুষের ওপর ক্ষুব্ধ। বিএনপির শীর্ষ নেতারা জানে যে, গণমানুষ তাদের ভোট দেবে না। ভোট সুষ্ঠু হলে তারা বরাবরই হেরে যায়। একারণে সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ নষ্ট করার সর্বোচ্চ চেষ্টা বিএনপি অতীতেও করেছে, বর্তমানেও করছে। নির্বাচন এলেই তাই সহিংসতা করে পরিবেশ নষ্ট করাই থাকে বিএনপির প্রথম লক্ষ্য। এরপর সেই বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করাই তাদের নেশা।

রাজনীতি নামে বিএনপির নির্বাচনকেন্দ্রিক খুনখারাপি ও সহিংসতার জন্য বারবার সঙ্কটের মুখে পড়েছে দেশের গণতন্ত্র ও অর্থনীতি। সহিংসতা সৃষ্টির মাধ্যমে গণমানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে গণতান্ত্রিক সঙ্কট সৃষ্টি করা বিএনপির পুরনো খেলা। এবারও তারা সেই নোংরা খেলায় মেতে উঠে দেশবাসীর সঙ্গে নিষ্ঠুর তামাশা করার সুপরিকল্পিত ছক আঁটছে। জনগণকে ভয় দেখিয়ে ভোট থেকে দূরে রেখে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে নস্যাৎ করে দিতে চায় বিএনপি।

কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষের প্রতি সহিংস হলে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ায়, বিএনপির ঘাতকেরা তাদের প্রধান লক্ষ্যতে পরিণত করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের। এরপরেই তারা জনমত ও গণতন্ত্রকে কবর দিয়ে সর্ভোচ্চ বর্বরতা নিয়ে হামলে পড়বে সাধারণ জনগণের ওপর।

তাই এই সহিংসতাকারী বিএনপির লোকদের থেকে সতর্ক থাকুন, অন্যকে সতর্ক করুন। নিজেদের সমাজব্যবস্থাকে স্থির ও সুশৃঙ্খল রাখুন; ভবিষ্যত প্রজন্মের নিরাপদে বেড়ে ওঠার জন্য একটি সুন্দর সামাজিক পরিবেশ গঠনে আওয়ামী লীগ সরকারকে সহায়তা করুন।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত