827
Published on মে 31, 2023শিবির পরিচয়ে জঙ্গিদের মুক্তি দিতো সরকার, নাশকতা চালাতে স্থানীয় সাহযোগিতা দিতো জামায়াত:
২০০৫ সালের ২১ মার্চের খবরে জানা যায়, ২০০৬ সালের শেষের দিকে সম্ভাব্য জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বোমা, সন্ত্রাস ও হত্যা মামলা থেকে সন্ত্রাসীদের নাম প্রত্যাহার করে নেয় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণারয়। আর বোমা বিস্ফোরণ ও জঙ্গিবাদী মামলাগুলোর অপমৃত্যু ঘটানো হয়। চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের এভাবে মুক্ত করে দেওয়ার ঘটনায় গোয়েন্দা সংস্থা ক্ষুব্ধ হয়। এমনকি এসব সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের গ্রেফতারে সম্পৃক্ত গোয়েন্দাদের অনেকের চাকরি নিয়ে টানাটানি পড়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, চাঞ্চল্যকর এসব মামলা থেকে যারা রেহাই পাচ্চে তারা অধিকাংশই জঙ্গি সংগঠনের সদস্য এবং শিবিরের নেতা-কর্মীর সংখ্যাই বেশি।
২০০৫ সালের ২০ আগস্টের পত্রিকায় দেখা যায়, বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে জামায়াতের প্রভাবশালী স্থানীয় নেতাদের বাড়িতে বোমা তৈরির কারখানা বসানো হয় এবং শিবিরের নেতাকর্মীরা বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ নিয়ে হাতবোমা তৈরি করতো। এসব ঘটনায় রাজশাহীতে ৯টি কারখানায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটলেও কোনোটিরই কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পবা উপজেলায় জামায়াত নেতার বাড়িতে বোমা বানোর সময় বিস্ফোরণে দুই ক্যাডার শুকুর ও জাহাঙ্গীরের মৃত্যু হরেও রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলা প্রত্যাহার করে নেয় খালেদা জিয়ার সরকার। এছাড়াও বহরমপুর এলাকায় বোমা বানাতে গিয়ে শিবির নেতা মনিরুলের বিস্ফোরণ, মেহেরচণ্ডি গ্রামে বোমা বানানোর সময় বিস্ফোরণ, কাঁকনহাট ও নারিকেলবাড়িয়ায় বোমা বানানোর সময় জামায়াত নেতাদের বাড়িতে বিস্ফোরণে শিবির ক্যাডারদের মৃত্যু, দারুসা বাজার সংলগ্ন জামায়াত নেতা ড. মোজাম্মেল হকের বাড়িতে বোমা বানানোর সময় বিস্ফোরণে চার জন শিবির ক্যাডার আহত। এবং আহতরা হাসপাতালে পুলিশকে জানান, বোমা বানানোর সময় এই বিস্ফোরণ ঘটেছে। তবে পরবর্তীতে এসব ঘটনা চাপা দিয়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলা প্রত্যাহার করা হয় এবং জড়িতদের ছেড়ে দেওয়া হয় বিএনপি-জামায়াত হাইকমান্ডের নির্দেশে।
২০০৫ সালের ২৩ আগস্টের পত্রিকায় গোয়েন্দাদের বরাতে জানা যায়, বিএনপি-জামায়াত শাসনামলের সময়টাতে কমপক্ষে ১৪টি ভিন্নধারার উগ্রবাদী সংগঠনের ছদ্মবেশে দেশে বিরোধী রাজনীতিকদের ওপর নিপীড়ন চালিয়েছে জামায়াত। জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতায় ও শিবিরের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেই সারাদেশে বিস্তার লাভ করেছে উগ্রবাদি জঙ্গিরা। এরপর জামায়াত-শিবিরের শক্তিতে ভর করেই সশস্ত্র তৎপরতা চালায় তারা। আধুনিক সমরাস্ত্রসহ একটি বড় জঙ্গিদলকে গ্রেফতারের পরেও সরকারে থাকা জামায়াত নেতাদের চাপে ওই জঙ্গিদের ৫৪ ধারায় আটক দেখিয়ে চার্জশিচ না দিয়ে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ।
২০০৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি সংবাদে দেখা যায়, জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতায় আওয়ামী নিধনের অংশ হিসেবে রাজশাহীর বাগমারায় ২২ জন ব্যক্তিকে হত্যা করে বাংলা ভাইয়ের জঙ্গি বাহিনী, গুম করে ১০ জনকে, অমানুষিক নির্যাতনে আহত ও পঙ্গু হয় শতাধিক। এমনকি প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় সহস্রাধিক মানুষ। নওগাঁর রানীনগরের আবদুল কাইয়ুম বাদশাকে হত্যার পর বগুড়ার নন্দীগ্রামে নিয়ে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা এবং মায়ের সামনে আত্রাইয়ের ছাত্রলীগ নেতা খেজুর আলীকে চার টুকরো করে পুঁতে ফেলার ঘটনা পত্রিকায় প্রকাশের পরও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার বাংলা ভাইকে নির্দোষ এবং সরকার সমর্থিত টেলিভিশনে তাকে শান্তির দূত বলে দাবি করেছে।
বাংলা ভাইয়ের সহকারী ড. গালিব এবং তার ভাগ্নে বোমারু মহসীন তিন বছরের বেশি সময় ধরে রাজশাহী অঞ্চলের মসজিদকেন্দ্রিক জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটালেও কখনো তাদের গ্রেফতার করেনি পুলিশ। উল্টো বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতা এমপি-মন্ত্রী-মেয়রেরা তাদের ক্লিনচিট দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অভিযান চালানো থেকে নিবৃত রেখেছে। এমনকি ২০০৪ সাল থেকে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার আলোকনগর গ্রামে রাজাকার রমজান আলীর বাড়িতে ঘাঁটি গড়ে টর্চার সেল পরিচালনা করে বাংলা ভাই। সেখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে সর্বহারা বলে অপবাদ দিয়ে চালানো হতো অমানবিক নির্যাতন। জামায়াত অধ্যূষিত সেই গ্রামে জেএমবির ৬০-৭০ ক্যাডার মিলে বাংলা ভাইয়ের সেই বাড়ির প্রহরীর কাজ করতো। সেখানে ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল পলাশ গ্রামের বাবু নামের এক যুবককে ধরে নিয়ে নিজের হাতে প্রকাশ্যে জবাই করে বাংলা ভাই। এরপর এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত এভাবেই প্রকাশ্যে হত্যা করা হয় ২২ জনকে। কপিকলে উল্টো করে বেঁধে মানুষকে হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হতো, মাইকে সেই আর্তনাদ শোনানো হতো গ্রামবাসীকে। মারা যাওয়ার পর আলোগনগর গ্রামের মাঠে ফেলে রাখা হতো সেই লাশ। অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য শেখ ফরিদকে পিটিয়ে হত্যা- এসব ঘটনা নিয়মিত পত্রিকায় এলেও খালেদা জিয়ার সরকার বাংলা ভাইয়ের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
২০০৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের পত্রিকার প্রতিবেদনে গোয়েন্দা সংস্থার বরাতে জানা যায়, সারা দেশে জামায়াত-শিবিরের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে অপারেশন পরিচালনা করতো জেএমবি, হরকতসহ জঙ্গি সংগঠনগুলো। জেএমবি নেতা শায়খ আবদুর রহমানের পিতা রাজাকার আবুল ফজল মুক্তিযুদ্ধের সময় জামালপুরের আল বদর কমান্ডার এবং পরে কেন্দ্রীয় জামায়াত নেতা ছিল, সেই সূত্রে শায়খ নিজেও স্বাধীনতার পর ছাত্র সংঘের কেন্দ্রীয় নেতা হয়। জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে দীর্ঘ পারিবারির ও সাংগঠনিক সম্পর্ক থাকায় জামায়াতের শীর্ষ নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মুজাহিদের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান। শায়খের ছোটভাই জেএমবির অপারেশনাল কমান্ডার আতাউর রহমান সানিও কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের সাংগঠনিক নেতা এবং সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ভাই আজিজুল হক কলেজে অধ্যয়নকালে শিবিরের ক্যাডার থাকায় তাদের মাধ্যমে দেশজুড়ে শিবির নেতাদের সহযোগিতা পেত এই জঙ্গি সংগঠনটি। এছাড়াও শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টারী মুফতি হান্নানের ভাই মতিউর রহমান মতি গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া বিএনপির প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় তারেক রহমান ও হাওয়া ভবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিল জঙ্গি হান্নান।