জাতীয় সংসদের সুবর্ণ জয়ন্তী: গৌরবের পথ চলায় বিএনপির ‘সংসদীয় পাপ’

1102

Published on এপ্রিল 11, 2023
  • Details Image

অজয় দাশগুপ্তঃ

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করেছে ৭ এপ্রিল, ২০২৩ তারিখ। ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর বলবৎ হওয়া সংবিধানের অধীনে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ। এক মাস পর ১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল এ সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক বছর আগে এ অধিবেশন কক্ষেই সংবিধান প্রণয়নে গঠিত গণপরিষদের প্রথম বৈঠক উদ্বোধন করতে গিয়ে বলেছিলেন- ‘এ ভবনের প্রতিটি দেয়ালে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের রক্তের দাগ।’ বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ভবনে অফিস করেন, সেটা ছিল তখন সংসদ ভবন। ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ এ ভবনেই সংবিধান প্রণয়নের জন্য পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক জান্তা অধিবেশন স্থগিত করে এবং বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দেয় নিষ্ঠুর গণহত্যা। ২৫ মার্চ থেকে শুরু হওয়া গণহত্যা ছড়িয়ে দেওয়া হয় গোটা বাংলাদেশ ভূখণ্ডে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। তাঁর আহ্বানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণ অস্ত্র তুলে নেয় এবং ১৬ ডিসেম্বর তাদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করে। স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালে সংসদ ভবনটি সামরিক জান্তা ব্যবহার করে টর্চার কেন্দ্র হিসেবে। একুশের গানের সুরকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ মাহমুদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা শাফী ইমাম রুমি, রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী ইকবাল আহমদ, প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ ফরিদ, রোকেয়া হলের ছাত্রনেত্রী রীণা খানসহ অগণিত নারী-পুরুষকে এখানে এনে নিষ্ঠুর অত্যাচার চালানো হয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণের কারণে। অত্যাচারিতদের বেশিরভাগ ফেরেনি পরিবারের কাছে।

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সুবর্ণ জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় জাতীয় সংসদ রেখেছে অনন্য ভূমিকা। এ সংসদ রাজনৈতিক-অর্থনৈতিকসহ জাতীয় জীবনের সকল কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে যেন কাজ করে সে জন্য তিনি এবং তাঁর সরকার নিরলস কাজ কওে চলেছেন।

১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় যে সংবিধানের ভিত্তিতে তার রচয়িতারা নির্বাচিত হয়েছিলেন ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ ও পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে। এদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল গণপরিষদ। পাকিস্তানি জান্তা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিবর্তে গণহত্যা চাপিয়ে দিলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। জনপ্রতিনিধিদের অনেকে স্বাধীনতা যুদ্ধে সশস্ত্র হয়ে অংশ নেন। অন্যরা স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে বিজয়ী হয়ে তারাই ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন করেন। স্বাধীনতার জন্য পার্লামেন্ট সদস্যরা রণাঙ্গনে এবং বিজয়ের পর ফের পার্লামেন্টে সংবিধান প্রণয়নের জন্য- বিশ্বে এমন নজির মিলবে না।

এ সংসদেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগীদের বিচারের জন্য আইন প্রণীত হয়েছিল। এ সংসদই ১৯৭৪ সালের ১৬ মে স্বাক্ষরিত মুজিব- ইন্দিরা স্থল সীমান্ত চুক্তি অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধন করে। এ চুক্তি অনুযায়ী ছিটমহল সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান হয়- বাংলাদেশ প্রতিবেশি ভারতকে যতটা জমি হস্তান্তর করে, ভারতের কাছ থেকে পেয়ে যায় তার চেয়ে বেশি। সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে যুদ্ধ পর্যন্ত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ও ভারত এ সমস্যা মিটিয়ে ফেলেছিল শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে। এই সংসদেই ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে The Territorial Waters and Maritime Zones Act, 1974 অনুমোদিত হয়। তখন পর্যন্ত বিশ্বে এ ধরনের আইন প্রণীত হয়নি। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ২০১২ সালের মার্চ মাসে মিয়ানমারের সঙ্গে এবং ২০১৪ সালের জুলাই মাসে ভারতের সঙ্গে সমুদ্র সীমা নিয়ে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারে। এ রায়ের ফলে বাংলাদেশ যে সমুদ্র অঞ্চলের ওপর নিয়ন্ত্রণ পায় সে বিষয়ে ভারতের দি টেলিগ্রাফ ২০১৪ সালের ৯ জুলাই লিখেছিল- India has lost to Bangladesh a swathe of sea larger than the area of Bengal in a landmark ruling by a UN tribunal.

এমন ঐতিহাসিক অর্জন এসেছিল বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সুদক্ষ ও দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে।

১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতভাবে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সংসদে এ প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন চীফ হুইপ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন। দুর্ভাগ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী খুনি খন্দকার মোশতাক আহমদ ও অন্যদের সঙ্গে তিনি হাত মেলান। খুনিচক্র খন্দকার মোশতাক, অলি আহাদ ও শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের নেতৃত্বে গঠন করেছিল ডেমোক্রাটিক লীগ নামের রাজনৈতিক দল।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনি চক্র নির্বাচিত জাতীয় সংসদ বাতিল করে দেয়। সংবিধান লংঘন করে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন খন্দকার মোশতাক। জারি হয় সামরিক শাসন। খুনি মোশতাক সেনাবাহিনীর প্রধান পদে সবচেয়ে বিশ্বস্ত লোক হিসেবে ২৪ আগস্ট নিয়োগ দেন জিয়াউর রহমানকে। ১৯৭৫ সালের ৬ নভেম্বর বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম প্রথম জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন। তিনি রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদ গ্রহণ করেন। তাকে বাংলাদেশের প্রথম প্রধান বিচারপতির সম্মান দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি পবিত্র সংবিধান ও জাতীয় সংসদের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদ প্রদান করা হয় সেনাবাহিনী প্রধান জিয়াউর রহমানকে। বিচারপতি সায়েম তার ‘বঙ্গভবনে শেষ দিনগুলি’ গ্রন্থে ক্ষোভের সঙ্গে লিখেছেন- ‘মিলিটারি বা সেনাবাহিনীর শাসন মানে সেনাপ্রধানের নেতৃত্ব।’ [পৃষ্ঠা ২৯]

কীভাবে এই সেনাপ্রধান রাষ্ট্রের সর্বময় কর্তৃত্ব গ্রহণ করেন? এ প্রসঙ্গে অ্যান্থনি মাসকারেনহাস তার ‘বাংলাদেশ: রক্তের ঋণ’ গ্রন্থে লিখেছেন- ‘১৯৭৬ সালের ২৮ নভেম্বর জিয়াউর রহমান সিদ্ধান্ত নেন যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দুটি পদে বিচারপতি সায়েমকে রাখা ঠিক হবে না। তিনি উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এইচ এম এরশাদ, চীফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর, নবম ডিভিশনের কমান্ডার মেজর জেনারেল মীর শওকত আলী এবং বিমান ও নৌবাহিনীর প্রধানদ্বয়কে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গভবনে উপস্থিত হন। সঙ্গে ছিলেন রাষ্ট্রপতির বিশেষ সহকারী বিচারপতি আবদুস সাত্তার। বিচারপতি সায়েম প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদ ছাড়তে রাজী ছিলেন না।... রাত একটার দিকে বিচারপতি সায়েম একটু নরম হলেন এবং প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদ হস্তান্তরের কাগজে সই করেন।... আসলে জিয়ার দরকার ছিল ক্ষমতা আর প্রকৃত ক্ষমতা।... কিন্তু জিয়ার উচ্চাভিলাষের শেষ ছিল না। তিনি রাষ্ট্রপতি হবার পর আজীবন রাষ্ট্রপতি হবার বাসনা মনে পোষণ করতে থাকেন।’ [পৃষ্ঠা ১৫৫-১৫৬]

বিচারপতি সায়েমকে ‘নরম’ করা হয়েছিল মাথায় রিভলবার ঠেকিয়ে এবং সেটা করেছিলেন জিয়াউর রহমান ও তার সহযোগী সামরিক অফিসাররা। কীভাবে জিয়াউর রহমান প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদ দখল করার পর রাষ্ট্রপতির পদও ছিনিয়ে নিলেন? বিচারপতি সায়েম লিখেছেন- ‘১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল উপদেষ্টা কাউন্সিলের কতিপয় সিনিয়র সদস্য আমাকে রাষ্ট্রপতি পদে ইস্তফা দেওয়ার অনুরোধ করেন। তারা বলেন, সেনাপ্রধান ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জিয়াউর রহমানের অধীনে তারা কাজ করতে চান।’ [বঙ্গভবনে শেষ দিনগুলি, পৃষ্ঠা ৩৫]

প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পর রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব হাতে নিয়ে জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালের মে মাসের প্রথম দিকে একক ক্ষমতাবলে বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধন করেন। সংবিধান থেকে রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতির অন্যতম ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ বাদ দেওয়া হয়। স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণকারী জনপ্রতিনিধিরা যে সংবিধান প্রণয়ন করেন তা একক কর্তৃত্বে স্বেচ্ছাচারমূলকভাবে সংশোধন করে জিয়াউর রহমান কেবল সংবিধান লংঘন করেননি, রাষ্ট্রদ্রোহ অপরাধ সংঘটিত করেছেন। তিনি বাংলাদেশের জনগণের ‘বাঙালি’ পরিচয় মুছে দিয়ে ‘বাংলাদেশি’ চালু করেন।

বিচারপতি সায়েম লিখেছেন, ‘জিয়া তার অবস্থান সংহত করার উদ্দেশ্যে একটি গণভোট (৩০ মে, ১৯৭৭) করে ফেলেন। কিন্তু সেই গণভোটে হ্যাঁ বাক্সে এত বেশি ভোট পড়ে যে জনগণ সেই ফলাফলকে হাস্যকরভাবে অবিশ্বাস করে।’ [বঙ্গভবনে শেষ দিনগুলি, পৃষ্ঠা ৩৭]

ক্ষমতার ওপর নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পর জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের ৩ জুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আয়োজন করেন। এ নির্বাচন করার সময় তিনি ছিলেন একইসঙ্গে সেনাবাহিনী প্রধান, সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও রাষ্ট্রপতি। ‘নির্বাচিত রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার’ পর জিয়াউর রহমান জাতীয় সংসদ দখলে নিতে সচেষ্ট হন। ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাত্র সাড়ে পাঁচ মাস আগে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপি দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসন দখল করে। সামরিক শাসনের অধীনে বেতার-টিভি- সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ প্রথম অধিবেশনেই ভয়ঙ্কর অপরাধ সংঘটিত করে। সংসদ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডে নিন্দা ও দোষীদের শাস্তি দাবি করে কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। বরং বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চারনেতার হত্যাকাণ্ডসহ ১৫ আগস্ট থেকে সংঘটিত সকল অসাংবিধানিক ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেয়। এ সংসদেই বিএনপির সংসদ সদস্যরা সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করে। খুনি মোশতাক এ অধ্যাদেশ জারি করেছিলেন ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। এ আইনের দ্বারা বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের সদস্যদের নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দায়মুক্তি প্রদান করা হয়। জিয়াউর রহমানের দল বিএনপি এ কুখ্যাত অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত না করলে তা আপনা আপনি বাতিল হয়ে যেত। জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের বিচার করা যাবে না- জাতীয় সংসদে এ আইন পাস করে বিএনপি ভয়ঙ্কর ‘সংসদীয় পাপ’ করেছে, যার কোনো ক্ষমা হতে পারে না। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ এ অপরাধের জন্য এখনও বিএনপিকে অভিযুক্ত করতে পারে।

জিয়াউর রহমান ও তার দল বিএনপির ‘কাটাছেড়া করা’ বাংলাদেশের সংবিধান স্থগিত করে সামরিক শাসন জারির মাধ্যমে সেনাবাহিনী প্রধান এইচ এম এরশাদ ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ ফের রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ করেন। জিয়াউর রহমান ১৯৭৬ সালের নভেম্বরে সশস্ত্র অবস্থায় বঙ্গভবনে হাজির হয়ে বিচারপতি সায়েমকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদ ছেড়ে দিতে বাধ্য করার জন্য যাদের সঙ্গী করেছিলেন, সেই দলে ছিলেন এইচ এম এরশাদ। সাড়ে চার বছর পর তিনি একইভাবে বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে রাষ্ট্র্রপতির পদ ছেড়ে দিতে বাধ্য করেন। নিজে গ্রহণ করেন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদ। এমনকি তিনি রাষ্ট্রপতি (একইসঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক) পদে নিয়োগের ক্ষমতাও নিজের হাতে রাখেন। জিয়াউর রহমানের মতো তিনিও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নেন। তার শাসনামলে সামরিক শাসনের মধ্যে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সামরিক ফরমান বলে সংঘটিত সকল কর্মকাণ্ড ‘বৈধ’ করে নেয়।

লক্ষণীয় যে এইচ এম এরশাদের শাসনামলে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ১৫ দলীয় জোট এবং খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন ৭ দলীয় জোট রাজপথে সক্রিয় ছিল সামরিক শাসনের অবসানসহ ৫ দফা দাবিতে। সে সময়ে প্রচুর হরতাল-অবরোধ এবং সমাবেশ-মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। আন্দোলনের কর্মসূচি সফল করায় রাজপথে বেশি সক্রিয় ছিল আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্ররা। ১৫ দল দুটি বড় সমাবেশ করেছিল (১৯৮৪ ও ১৯৮৮) মানিক মিয়া এভিনিউতে। ওই দুই সমাবেশের দিনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ৭ দল সমাবেশ করেছিল গুলিস্তান চত্বরে, অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র পরিসরে। নির্যাতন-নিপীড়নের শিকারও বেশি হয়েছিল আওয়ামী লীগ এবং তাদের মিত্ররা।

দুই জোটের আন্দোলনের মধ্যেই এইচ এম এরশাদ ১৯৮৬ সালে গঠিত তৃতীয় জাতীয় সংসদ ১৯৮৭ সালের নভেম্বর মাসে বাতিল করে দিয়ে ১৯৮৮ সালের মার্চ মাসে প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠান করে। এ সময় তার প্রধান সহযোগীর ভূমিকা নেয় আসম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল বা জাসদের একটি অংশ এবং পরবর্তী সময় বিএনপির শীর্ষ নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আমদ। এই চতুর্থ জাতীয় সংসদ সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে যুক্ত করে। ভোটারবিহীন নির্বাচনে গঠিত সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন আসম আবদুর রব, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ দায়িত্ব পান উপরাষ্ট্রপতির।

জিয়াউর রহমান ও এইচ এম এরশাদ সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর সমালোচনা করেছেন। কিন্তু চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি শাসিত পদ্ধতি বহাল রেখেছেন। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ সংসদে তাদের দুই ভাগের বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকার পরও সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় ফিরে যেতে আগ্রহ কেউ দেখাননি। তারা সামরিক শাসনের পাশাপাশি রাষ্ট্রপতির নিরঙ্কুশ ক্ষমতা ব্যবহার করেছেন ব্যক্তি ও গোষ্ঠী স্বার্থে। একইসঙ্গে সংসদকে করে রেখেছেন রাবার স্ট্যাম্প। খালেদা জিয়ার আমলে ১৯৯০ সালের নভেম্বরে বিএনপি তিন জোটের রূপরেখায় সই করেছিল। এতে সংসদীয় পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়ার অঙ্গীকার ছিল। কিন্তু ১৯৯১ জামায়াতে ইসলামীর সাহায্য নিয়ে সরকার গঠনের পর খালেদা জিয়া সংসদীয় পদ্ধতি গ্রহণ করায় গরিমসি করতে শুরু করেন। তিনি চেয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি পদ্ধতি চালু থাকুক। তার কূটচাল ছিল এভাবে- ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর থেকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্বপালন করা বিচারপতি সাহাবউদ্দিন আহমদ ‘স্বাস্থ্যগত’ কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করবেন। একই সময়ে বিএনপি থেকে স্পিকার পদে খালেদা জিয়া নির্বাচিত হবেন এবং তিনি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। এ পদে থেকেই তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন দেবেন এবং রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করবেন। কিন্তু সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় ফিরে যেতেই হবে- শেখ হাসিনা এবং তাঁর দল আওয়ামী লীগ এ বিষয়ে অনমনীয় অবস্থান গ্রহণ করায় ৫ম জাতীয় সংসদ ১৯৯১ সালে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করার পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি প্রহসনের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ আয়োজন করে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রবল গণআন্দোলন গড়ে তোলার কারণে মাত্র দেড় মাসের মধ্যে এ সংসদ বাতিল হয়ে যায়। তিনি তখন সংসদ সদস্য নেই, প্রধানমন্ত্রী বা সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার পদও নেই তাঁর। কিন্তু তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ সচিবালয়ের জুনিয়র অফিসার থেকে সচিব পদমর্যাদার শত শত অফিসার রাজপথে নেমে এসে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতিষ্ঠিত ‘জনতার মঞ্চের’ সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন। তারা ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ বাতিলের দাবির প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন। বিশ্বের রাজনৈতিক আন্দোলনের ইতিহাসে এ ধরনের সমতুল্য ঘটনার নজির মিলবে না।

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ২১ বছর পর ক্ষমতায় ফিরে আসে। এ সংসদেই বাতিল হয় কুখ্যাত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স। বিএনপি যে ‘সংসদীয় পাপ’ করেছিল ১৯৭৯ সালের এপ্রিলে, তার অবসানের জন্য ১৯৯৬ সালের ১৪ নভেম্বর জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হয় ইনডেমনিটি রহিতকরণ বিল, ১৯৯৬। কিন্তু কয়লা ধুলেও ময়লা যায় না- এ প্রবাদ সত্য প্রমাণ করে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি এ বিল সমর্থন করেনি। তারা অবস্থান নেয় ১৫ আগস্টের খুনিদের পক্ষে, গণতন্ত্র হত্যাকারীদের পক্ষে। কিন্তু সংসদ কলঙ্কমোচন করতে পারে শেখ হাসিনার সাহসী পদক্ষেপের কারণে। কুখ্যাত ইনডেমনিটি আইন খালেদা জিয়ার বিরোধিতার পরও বাতিল হয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের জন্য বিশেষ আদালত বা ট্রাইব্যুনাল গঠন করেননি। তিনি সাধারণ নাগরিকদের মতো বিচার প্রার্থনার জন্য গিয়েছেন নিম্ন আদালতে। বিচারিক প্রক্রিয়ার সকল ধাপ অতিক্রম শেষে খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়েছে। এ সব খুনি খন্দকার মোশতাক, জিয়াউর রহমান, এইচ এম এরশাদ ও খালেদা জিয়ার প্রশ্রয়ে দম্ভভরে বলেছিল- ‘আমরা মুজিববে হত্যা করেছি। সাহস থাকলে বিচার করুক।’

খালেদা জিয়া এবং তার দল বিএনপি ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদেরও বাঁচাতে পারেনি। যুদ্ধারপাধীদের এ দেশীয় সহযোগীদের বেশিরভাগ ছিল জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপিতে। ২০০৯ সালের ২৯ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানিয়ে প্রস্তাব উত্থাপন করেন এবং তা পাস হয়। খালেদা জিয়া তখন জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা। কিন্তু তিনি এবং তার দল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রস্তাব সমর্থন করেননি। ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তরুণ প্রজন্ম শাহবাগ এলাকায় গণজাগরণ মঞ্চ স্থাপন করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য নব পর্যায়ের আন্দোলন সূচনা করে। ক্রমে গোটা দেশে ‘যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই’ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। জাতীয় সংসদ গণজাগরণ মঞ্চের দাবিতে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালের গণহত্যাকারী, ধর্ষক ও আগুন সন্ত্রাসীদের বিচারে প্রণীত আইন সংশোধন করে। কিন্তু বিএনপির সংসদ সদস্যরা এর প্রতি সমর্থন জানাননি। বরং খালেদা জিয়া এবং তার অনুগামীরা গণজাগরণ মঞ্চের তরুণ প্রজন্মের আন্দোলনকারীদের অভিহিত করেন ‘নাস্তিক’ ও ‘ইসলামের দুশমন’ হিসেবে।

শেখ হাসিনা এবং তাঁর দল আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক মিত্রদের নিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শক্তিশালী করার আন্দোলনে সামিল হয়েছেন। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলে যতবার সামরিক শাসন জারি হয়েছে, মিলিটারির বুটে পিষ্ট হয়েছে যারা তাদের বড় অংশ ছিল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। সামরিক শাসকরা নির্বাচন প্রক্রিয়া বার বার ধ্বংস করেছে। এর বিরুদ্ধে বার বার রাজপথে নেমেছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ আন্দোলন করেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিল। ২০০১ সালের ১৫ জুলাই শেখ হাসিনা বিচারপতি লতিফুর রহমানের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করার পর নিজের বাসভবনে ফেরার আগেই জানতে পারেন যে বাংলাদেশের নানা প্রান্তে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। ‘নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ’- এ অঙ্গীকার থেকে লতিফুর রহমানের সরকার সরে যায়। আওয়ামী লীগকে কোনঠাসা করার জন্য নেওয়া হতে থাকে একের পর এক পদক্ষেপ। অথচ বাংলাদেশের ইতিহাসে কেবল ২০০১ সালের ১৫ জুলাই শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের অনন্য নজির স্থাপন করেছিলেন শেখ হাসিনা।

২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনের আগে ও পরে দেশব্যাপী বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী সংগঠিতভাবে আওয়ামী লীগ এবং তাদের সমর্থকদের ওপর ভয়ঙ্কর অত্যাচার চালায়। সাম্প্রদায়িক অপপ্রচার চলে সর্বত্র। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার এর প্রতিকারে এগিয়ে আসেনি। বরং অনেক ক্ষেত্রে উৎসাহ পায় হামলাকারীরা। এ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সরকার পরবর্তী নির্বাচন পরিচালনার জন্য তাদের পছন্দের ব্যক্তি বিএনপির সাবেক নেতা বিচারপতি কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান পদে অধিষ্ঠিত করার জন্য জাতীয় সংসদের ক্ষমতা অপব্যবহার করে সংবিধান সংশোধন করে। এটা ছিল আরেকটি ‘সংসদীয় পাপ’। খালেদা জিয়া ও কুখ্যাত আলবদর বাহিনীর নেতা মতিউর রহমান নিজামীর সরকার তাদের একনিষ্ঠ সমর্থক বিচারপতি এম এ আজিজের নেতৃত্বে এমন একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করে, যারা ‘এক কোটির বেশি ভূয়া ভোটার’ সংবলিত একটি ভোটার তালিকা প্রণয়ন করেছিল। নির্বাচন সুসম্পন্ন করার জন্য তিনশ’ সংসদীয় আসনের প্রতিটিতে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের ক্যাডারদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল নির্বাচনী অফিসার হিসেবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ‘লগি-বৈঠার’ আন্দোলন এ সব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিতে সক্ষম হয়।

বিএনপি এবং তাদের মিত্র একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দুষ্কর্মের ঘৃণ্য সহযোগী জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে একটি ধর্মান্ধ চরমপন্থি গোষ্ঠী। এ মহলটি বাংলাদেশকে তালেবানী অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার চক্রান্ত করছে। সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা, কার্যকর সংসদ, আইনের শাসন- এ সব তাদের কাছে অগ্রহণযোগ্য। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট এ অপশক্তি বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের সমাবেশে ভয়ঙ্কর গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাসহ গোটা আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে হত্যার অপচেষ্টা চালিয়েছিল। অথচ সংসদেও বিরোধীদলীয় নেতা এবং আরও কয়েকজন সদস্যর ওপর গ্রেনেড হামলার নিন্দা এবং দোষীদের শাস্তি জানিয়ে সংসদে কোনো আলোচনা অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হয়নি।

পরের বছর ১৭ আগস্ট জঙ্গি অপশক্তি দেশব্যাপী প্রায় ৫শ’ স্থানে একযোগে বোমা হামলা চালায়। এই অগণতান্ত্রিক শক্তি রয়েছে বিএনপির সঙ্গে, যাদের নিয়ে বিএনপি ‘নির্বাচনের পর জাতীয় সরকার’ গঠন করার ঘোষণা দিয়েছে রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফা কর্মসূচিতে। নির্বাচনে জয়ী সংসদ সদস্যদের নিয়ে নয়, বিএনপি জাতীয় সরকার গঠন করতে চাইছে ‘আন্দোলনের মিত্রদের’ নিয়ে। বুঝতে সমস্যা হয় না যে নির্বাচন নয়, বিএনপির ভরসা সেই সব জঙ্গি অপশক্তি ও সন্ত্রাসীদের ওপর যারা সহিংস পন্থায় শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতাচ্যূত করতে পারবে। আমাদের এটাও জানা আছে বিএনপির আন্দোলন মানেই হচ্ছে পেট্রল বোমা ও অগ্নি সন্ত্রাস। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচন তারা ভণ্ডুল করতে চেয়েছে জনসমর্থনের জোরে নয়- রক্তাক্ত সন্ত্রাসের পথে। পরের বছর তারা একটানা তিন মাস সরকার পতনের আন্দোলনের জন্য হরতাল-অবরোধ করেছে সহিংস পন্থার ওপর ভর করে। এ আন্দোলন ব্যর্থ হয়েছে। ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে তারা অংশ নিয়েছে ‘হেলাফেলা’ করে। বিএনপি দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত দুই ব্যক্তিকে এমনকি তাদের গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা লঙ্ঘন করে দলের শীর্ষ পদে বহাল রাখে। এ নেতৃত্ব অনেক সংসদীয় আসনে চার-পাঁচ জনকে দলীয় মনোনয়ন দেয়। এমনকি নির্বাচন কমিশন যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করলেও বিএনপি তাদের ‘আন্দোলন ও নির্বাচনের মিত্র’ এ দলের প্রার্থীদের জন্য ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছিল।

বাংলাদেশ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে। যে বিশাল উন্নয়নমূলক কর্মযজ্ঞ সম্পাদনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা অনন্য জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন, বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের বদনাম ঘুচিয়ে তুলে দিয়েছেন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায়, ডিজিটাল বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করার লক্ষ্য যিনি যথাসময়ে সামনে এনেছেন তাকে নির্বাচনে পরাভূত করা যাবে না। জনগণ রয়েছে তার চারপাশে। তারা বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা রুখতে দেবে না। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে, ‘সংসদীয় পাপ’ এবং আরও বহুবিধ অপকর্ম করে চলেছে যে অশুভ শক্তি তারা নীরবে থাকবে না। ত্রিশ লাখ নারী-পুরুষ-শিশুর আত্মদানে অর্জিত উন্নত-সমৃদ্ধ-গর্বিত বাংলাদেশ প্রতিনিয়ত তাদের গায়ে জ্বালা ধরায়। তবে তাদের ভয় বাঙালির ঐক্য ও সংকল্পকে। একাত্তরের রণধ্বনি জয় বাংলা ও জয় বঙ্গবন্ধু তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। তবে আমরা এটাও জানি বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত