1226
Published on মার্চ 16, 2023হীরেন পণ্ডিত:
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের পাটগাতী ইউনিয়নের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিশুকাল থেকেই ছিলেন জনদরদী। শিশু মুজিব দরিদ্র ও অসহায় ছাত্রদের শিক্ষা প্রদানের জন্য নিজ পরিবারসহ পাড়া প্রতিবেশীদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ করতেন। তিনি অনেক ছাত্রের লেখাপড়ার খরচ জুগিয়েছেন। ছাত্রজীবন থেকে দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত অসংখ্যবার কারাবরণ করেছেন। তিনি নিজ আদর্শ এবং দেশের মানুষের কল্যাণের ব্রত থেকে সরে যাননি কখনও।
মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য পাকিস্তানিদের শত বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে তিনি মানুষের জন্য লড়াই করেছেন, অধিকাংশ সময় অসহায় জীবনযাপন করেছেন। পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধুকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে আখ্যায়িত করলেও তিনি সুকৌশলে এগিয়েছেন কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার দিকে। স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর আক্রমণ হতে পারে-ভারত, কানাডাসহ বহু দেশ থেকে এমন সতর্কবার্তা দেয়া হলেও বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করেছিলেন তার অফিসারদের; তিনি বলেছিলেন, সবাই তার সন্তান, তারা এমন কাজ করতে পারে না। তিনি আরও বলেছিলেন, প্রাণের ভয়ে তিনি জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অতিরিক্ত নিরাপত্তা নেবেন না। বঙ্গবন্ধু মৃত্যুঝুঁকির কথা জেনেও জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাননি। অথচ আজ বঙ্গবন্ধুর আদর্শের নামে রাজনীতি করা অনেক ব্যক্তি এখন নিজেদের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখেন। নানা অপকর্ম করে মিডিয়ায় আসেন দল ও নেতাকর্মীরা বিব্রত হন সরকার বিব্রত হয়, দেশ, জাতি বিব্রত হয়। বিপথগামী নেতাকর্মীরা এমন কাজ থেকে বিরত থাকবেন এই প্রত্যাশা সকলের।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পুরো জীবনকাল ছিল দেশ ও দেশের কল্যাণে নিবেদিত, যেখানে ছিল না কোনো বিলাসিতা, ছিল না অর্থেও লোভ, ছিল না হিংসা-বিদ্বেষ। ছিল শুধু দেশের জন্য ও সাধারণ মানুষের জন্য ভালোবাসা এবং ভালো রাখার প্রচেষ্টায় ভরা বিশাল হৃদয়। তাই শুধু মুখে নয়, মুজিব আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হোক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনকালের নানা জনকল্যাণমুখী কাজের মতো কর্ম দিয়ে।
বাঙালি জাতির জনকের আদর্শের রাজনীতির বাহক হবে আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের সব অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী, সমর্থকরা এবং দলমত নির্বিশেষে দেশের তরুণরা। তারা দেশের জন্য বঙ্গবন্ধুর মতোই নিঃস্বার্থে কাজ করবে, অহঙ্কারমুক্ত থাকবে, মানুষের সঙ্গে মানুষের ভেদাভেদ না করে সব ধর্মের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিতের মাধ্যমে সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়বে।
আমাদের আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের যারা নেতা কর্মী আছেন, একেবারে ওপরে থেকে শুরু করে গ্রাম্য পর্যায়ের বেশ কিছু সংখ্যক নেতা কর্মী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বক্তব্য ঠিকমতো বুঝতে পারেন না, অথবা বুঝেও তারা তাদের নিজস্ব বিদ্যা-বুদ্ধি দিয়ে ইচ্ছে মত চলেন। যার জন্য দেখা যায় দেশব্যাপী সত্যিকারে দলের বা সরকারের কাজ যা করা দরকার, অনেকেই তা করছেন না। নেতা-কর্মীদের মধ্যে এখন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মেনে কাজ করার প্রবণতায় গাটতি দেখা যায়। কেমন যেন গা-ছাড়া ভাব নিজেদেও নিয়ে ব্যস্ত। বঙ্গবন্ধু একা একা ছোট একটি দল থেকে এই বড় রাজনৈতিক দল গড়ে তুলেছেন। অনেক বাধাবিপত্তির পর বঙ্গবন্ধু আমাদের একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছেন। তাঁকে বহু ত্যাগ করতে হয়েছে। জেল খাটতে হয়েছে। পরিবারকে তিনি সময় দিতে পারেননি। আর রাজনীতি করতে হলে এটা কম-বেশি সবাইকে করতে হবে। আদর্শবাদী রাজনীতি হোচট খায় মাঝে মধ্যেই, বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হতে হলে আদর্শ থেকে বিচ্যুত হলে চলবে না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শিত পথে শেখ হাসিনার নির্দেশে সবাইকে কাজ করতে হবে।
নেতা-নেত্রীদের দেখা করা, তাঁদের সাথে একটু কথা বলাই নিজেদের ধন্য মনে করার কোন সূচক নয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের এমনো অনেক নেতা আছেন যারা সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে খোঁজ খবর রাখেন না। আওয়ামী লীগ বা অঙ্গসংগঠনে যারা নেতৃত্বে আছেন তাঁরা নেত্রীর যে দর্শন, বঙ্গবন্ধুর যে দর্শন সেই দর্শনকে বাস্তবায়িত করবেন। নেত্রী যে কাজ দিয়েছেন সেগুলো জনগণকে জানাবেন এবং এর মাধ্যমে জনগণের হৃদয় থেকে ভালোবাসা নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নির্বাচিত হতে হবে।
বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবসময় বলতেন, ‘ছাত্রলীগের ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাস’। বাংলা, বাঙালি, স্বাধীনতা ও স্বাধীকার অর্জনের লক্ষে ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের অ্যাসেম্বলি হলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা করেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রতিষ্ঠার সময় ছিল পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ। পরবর্তী সময়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের পরিবর্তে হয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৪ বছরের ইতিহাস জাতির মুক্তির স্বপ্ন, সাধনা এবং সংগ্রামকে বাস্তবে রূপদানের ইতিহাস।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার পর সর্বপ্রথম মাতৃভাষা বাংলার জন্য সংগ্রাম করেছিল। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জল ভূমিকা ছিল। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী ছিলেন, যাতে ছাত্রলীগ বঙ্গবন্ধুর ভ্যানগার্ড ছিল। ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের অগ্রণী ভূমিকা ছিল।
১৯৬৬ সালের ৬ দফা যা ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাহসী আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল। ১৯৬৯ সালে ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে ঐতিহাসিক ভূমিকা ছিল। তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ বাংলার ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেন, যা ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের গতিকে ত্বরান্বিত করে। জাতিকে স্বাধীনতা যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ ও যুক্ত করার ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি।
বঙ্গবন্ধু আমাদের ছাত্রসমাজ ও ভাবতেন তিনি বলতেন “ছাত্র ও যুব সমাজের প্রতিটি সদস্যকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তারাই হয়ে ওঠবে এক আদর্শবান শক্তি। এই আদর্শ মানুষ বলতে তিনি এমন ব্যক্তিকে বুঝিয়েছেন, যে উন্নত মানবিক গুণাবলি ধারণ করবে ও অন্যের জন্য অনুসরণযোগ্য হবে। অর্থাৎ সামাজিকভাবে যা কিছু ভালো-শ্রেষ্ঠ মহৎ ও কল্যাণকর সব কিছুই থাকবে ছাত্রমাজের প্রতিটি সদস্যের মধ্যে। আদর্শ মানুষ হতে হলে সবার ভেতর যেসব গুণ থাকা দরকার সেগুলো হলো- সততা, নিষ্ঠা, পরিশ্রমী ও পরোপকারী মনোভাব, মানবদরদি-সহমর্মিতা, নির্লোভ-নিরহংকার এবং সাহস। বঙ্গবন্ধু নিজে ছিলেন একজন আদর্শবাদী মানুষ। বাংলার শোষিত-নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের মুক্তিই ছিল তার জীবনের মূল লক্ষ্য ও আদর্শ। যে লক্ষ্য বাস্তবায়নে তিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন।
১৯৭৩-এর ১৯ আগস্ট ছাত্রদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন- “বাবারা একটু লেখাপড়া শেখ। যতই জিন্দাবাদ আর মুর্দাবাদ করো, ঠিকমতো লেখাপড়া না শিখলে কোনো লাভ নেই। আর লেখাপড়া শিখে যে সময়টুকু পাবে বাবা-মাকে সাহায্য করেবে। প্যান্ট পরা শিখছ বলে বাবার সাথে হাল ধরতে লজ্জা করো না। দুনিয়ার দিকে চেয়ে দেখ। গ্রামে গ্রামে বাড়ির পাশে বেগুনগাছ লাগাও, কয়টা মরিচগাছ লাগাও, কয়টা লাউগাছ লাগাও ও কয়টা নারিকেলের চারা লাগাও। বাপ-মাকে একটু সাহায্য কোরো। শুধু বিএ-এমএ পাস করে লাভ নেই। দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে।”
১৯৭৩-এ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী দিবসের বক্তৃতায় তিনি বলেছেন- “বাংলার মানুষ, বিশেষ করে তরুণ সম্প্রদায়কে আমাদের ইতিহাস জানতে হবে। বাংলার যে ছেলে তার অতীত বংশধরদের ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারে না, সে ছেলে সত্যিকারের বাঙালি হতে পারে না।”
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ছাত্রলীগ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ভূমিকা প্রশংসনীয়। গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনে যুদ্ধাপরাধ মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাজপথে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে এখনো রাখছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ ও উন্নত রাষ্ট্রে রূপান্তরের লক্ষ্যে ছাত্রলীগের সব নেতাকর্মী রাজপথে সাহসী ভূমিকা রেখেছে। ছাত্রলীগের ইতিহাসে যেমনই হাজার হাজার যোগ্য নেতার জন্ম হয়েছে তেমনই কিছু সংখ্যক অযোগ্য নেতা-কর্মীর জন্ম হয়েছে। যার কারণে মাঝে-মধ্যে বিতর্কিত হতে হয় বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংঠনটিকে।
ছাত্রলীগের কতিপয় নেতা নেত্রীর আচরণ ও ছাত্রলীগের কিছু সংখ্যক ও হাতে গোনা বিপথগামীদের চরম নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কথা শুনে এলেও কয়েক বছর ধরে সংগঠনটির সঙ্গে জড়িত কিছু শিক্ষার্থী তথা নেতাকর্মীর এ ধরনের সম্পৃক্ত থাকার ঘটনা সামনে চলে আসছে। এসবই অনাকাক্সিক্ষত ও অনভিপ্রেত। এমনটি আমাদের আশাবাদের জায়গাকে হতাশায় ভরে দেয়। ছাত্রলীগের প্রতাপশালীদের দু’একজনের সিট বাণিজ্য, চাঁদাবাজি এবং নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। ছাত্র রাজনীতি, বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের বিপথগামীদের কর্মকাÐ প্রত্যক্ষ এসবের মধ্যে ইতিবাচক কর্মকাÐলোকে বিতর্কিত করে ফেলছে।
অতীতেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ধরনের অস্থিরতার একপর্যায়ে তাদের লাগাম টেনে ধরতে কঠোর অবস্থান নিয়ে অপকর্মে যে বা যারাই জড়িত থাকুক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। মনে করা হয়েছিল, এর মধ্য দিয়ে বিপথগামীদের আত্মোপলব্ধি হবে এবং সংগঠনের নেতাকর্মীরা সব নেতিবাচক কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের মুক্ত রেখে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার বাস্তবায়নে শামিল হবেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এর পরও ছাত্রলীগের বিপথগামীরা যে অবস্থায় ছিল সেখানেই রয়ে গেছে এবং বিতর্ক যেন ক্রমেই শাখা-প্রশাখা বিস্তার করছে। ফলে সরকার একদিকে দেশকে উন্নয়নের অনেক সূচকে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে যখন বিশ্বের অনেক দেশ ও সংস্থার প্রশংসা অর্জন করেছে, একই সঙ্গে বিপরীত ছাত্রলীগের বিপথগামীদের কারণে দলের ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে। গণমাধ্যমে প্রতিনিয়ত নেতিবাচক সংবাদের শিরোনাম হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে আমাদের স্বাধীকার আন্দোলন থেকে স্বাধীনতার ইতিহাস এবং সেই সময়ের ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতিগুলো স্মরণ করে অনেকবার আবেগতাড়িত হয়েছেন। তাঁর বক্তব্যে ফুটিয়ে তুলেছেন কীভাবে তারা বঙ্গবন্ধুর আস্থা অর্জন করে বিশ্বাসের জায়গাজুড়ে আন্দোলন-সংগ্রামে সম্মুখ সারিতে অবস্থান নিয়ে তাঁর ডাকে স্বাধীনতার আন্দোলন বেগবান করেছিলেন। ঐতিহাসিক এ রকম অনেক ঘটনা বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্য বিভিন্ন সময়ে আমাদের আবেগতাড়িত করলেও যাদের উদ্দেশে এসব কথা, তাদের খুব একটা স্পর্শ করেছে বলে মনে হয় না।
কিছু অপকর্মকারীর কারণে ছাত্রলীগের অতীত ঐতিহ্য নষ্ট হোক তা কেউ চাইবেন না। ছাত্রদের মৌলিক অধিকারের জায়গা সমুন্নত রেখে দরকার ছাত্র রাজনীতিতে একটি শুদ্ধি অভিযান প্রয়োজন। এ অভিযানের জন্য দরকার জোর প্রচেষ্টা, আর এ ক্ষেত্রে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে সরকারকে। গুটিকয়েক বিপথগামীর নেতিবাচক কর্মকাণ্ড ছাত্র রাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য কলঙ্কিত করবে, তা কোনোভাবেই হতে দেওয়া যায় না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিল তিল করে গত এক দশকে দেশকে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যেতে এবং ভিশন ২০২১ অর্জনের পর ভিশন ২০৪১ বা স্মার্ট বাংলাদেশ অর্জনে দৃঢ় নেতৃত্বে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে তাঁর বক্তব্যে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, অপরাধীদের পরিচয় একটাই তারা অপরাধী। তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে এবং কতিপয় হীনস্বার্থবাদীর অপচেষ্টা, যারা ব্যক্তিগতভাবে সুবিধাভোগীদেও চিহ্নিত কওে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা জরুরি হয়ে পড়েছে। এর মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর সরকারের অনেক ভালো কাজ চাপা পড়ে যাচ্ছে, যা নিয়ে হীনস্বার্থবাদীরা মোটেও চিন্তিত নয়। যারা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা সঠিকভাবে প্রতিপালন না করে প্রকারান্তরে সরকারকে বিতর্কিত করছে, তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারার বিষয়টি নিশ্চয়ই হতাশার।
যদি জাতীয় বা কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে বিপথগামীদের নিয়ন্ত্রণে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া না হয়। এসব বিপথগামীরা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠবে। আজকাল তাদের নিজেদের মধ্যেও অনেক ক্ষেত্রেই ঐক্য দেখা যায় না। সংগঠনের ভেতর উপদল, সেই উপদল থেকে নানাবিধ কোন্দল, এ সবকিছুরই বলি হচ্ছে সাধারণ ছাত্ররা। ছাত্র চরিত্র কেমন হওয়া উচিত, ছাত্রসমাজের মূল্যবোধ কেমন হওয়া উচিত, অনেক পড়–য়ার মধ্যেই কি সেই বোধ আজকাল লোপ পাচ্ছে? চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ভয় দেখানোর মতো কাজ তাদের জন্য মামুলি নস্যি। যাকে খুশি তাকে অপমান, লাঞ্ছনা, নির্মম মারধর তারা ক্যাম্পাসে করছে। অপরাধ করে তার একপক্ষীয় বয়ানও তারা দিচ্ছে। কারও যেন কিছু বলার নেই।
ছাত্রলীগের-বদনামের-পেছনে-আলতুফালতু-লোক ঢুকে পড়ছে বলে প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের এক সভায় সতর্ক করেছেন নেতাদের। এক সভায় তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় এবং ছাত্রলীগ বড় সংগঠন হওয়ার সুযোগে অনেক ‘আলতুফালতু’ লোক সংগঠনে ঢুকে ‘গোলমাল’ করায় বদনাম হচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে নিয়ে সংবাদমাধ্যমে যেসব নেতিবাচক খবর আসে এমন বাস্তবতায় ছাত্রলীগকে আরো সাবধান থাকতেও বলেন। কারণ বদনামটা ছাত্রলীগের ওপর পড়ে। ছাত্রলীগকেও সংগঠন করার সময় নিজেদের বদনাম, দলের বদনাম, দেশের বদনাম না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের শেখ হাসিনা বলেন, ‘চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে উঠে ত্যাগ স্বীকার করে এগোতে পারলে সঠিক নেতা হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা যায়, কিন্তু গড্ডলিকা প্রবাহের মতো অর্থ-সম্পদের পেছনে ছুটলে, ওই অর্থ সম্পদে ভেসে যেতে হয়; নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা থাকে না, দেশকেও কিছু দেয়া যায় না, মানুষকেও দেয়া যায় না।’
করোনাকালে মানুষ নানাবিধ সহযোগিতা ও দুর্যোগে কৃষকের ধান কেটে দেয়ার মত মানবিক কাজ কওে ছাত্রলীগ। মানবিকতার কাজ ছাত্রলীগ করেছে। পাশাপাশি যেটা সব থেকে বেশি দরকার, লেখাপড়া শিখতে হবে। উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে আমাদের আজকের প্রজন্ম বা প্রজন্মের পর প্রজন্মকে প্রস্তুত করতে হবে। বর্তমানে স্মার্ট বাংলাদেশ প্রশ্নে ছাত্র-জনতার মধ্যে অভূতপূর্ব ঐক্য তৈরি হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরি হয়েছে। প্রযুক্তির প্রবেশগম্যতাকে ব্যবহার করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। অর্থনৈতিক এই রূপান্তরের জন্য শিক্ষাব্যবস্থায়ও রূপান্তর প্রয়োজন। সে জন্য ছাত্রলীগ স্মার্ট ক্যাম্পাস ও গবেষণাভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কাজ করতে চায়। এটিই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে বিপথগামী ও ভাবমূর্তি বিনষ্টকারীদের ব্যাপারে এখনই সতর্ক হতে হবে।
তবে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সময়োপযোগী নেতৃত্বে সব পর্যায়ের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা অবিচল এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে থাকবে সততা, নিষ্ঠা, পরিশ্রম ও পরোপকারী মনোভাব, মানবদরদি-সহমর্মিতা, নির্লোভ-নিরহংকার এবং সাহস। বঙ্গবন্ধু নিজে ছিলেন একজন আদর্শবাদী মানুষ ছিলেন। ছাত্রলীগ সব ভুল সংশোধন করে আগামীদিনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে রাজপথে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ও দিকনির্দেশনায় কাজ করে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবে এটাই সবার প্রত্যাশা।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক