744
Published on ফেব্রুয়ারি 20, 2023রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মিন্টু রোডে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) "ভাষা আন্দোলন, বঙ্গবন্ধু ও বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদের নবজাগরণ" -শীর্ষক একটি আলোচনা সভার আয়োজন করে।
সভায় প্রধান অতিথি'র বক্তব্যে মাননীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, 'দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরেই গড়ে উঠেছিল। বঙ্গবন্ধু দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে ভাবতেন। বর্তমানে চিকিৎসকদের মধ্যে যারা রাজনীতি করছেন, তাদেরকে বলব যে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করাই হওয়া উচিত বড় রাজনীতি।'
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, 'স্বাস্থ্য সেবায় বঙ্গবন্ধু অনেক কিছু দিয়ে গেছেন। বিসিপিএস, পঙ্গু হাসপাতালসহ অনেক কিছুই দিয়ে গেছেন। তার দেখানো পথ ধরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা করোনাকে নিয়ন্ত্রণ করেছি। সফলভাবে মানুষকে টিকার আওতায় এনেছি।'
স্বাচিপ নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'স্বাচিপ স্বাধীনতার পক্ষের একটি সংগঠন। সামনে দিনে আরও জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। কারণ সামনে নির্বাচন। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলেই স্বাস্থ্য সেবায় ভালো কিছু হবে, নতুন নতুন চিকিৎসক নিয়োগ পাবে। স্বাচিপ শুধু কাজেই নয়, পরামর্শ দিয়ে আমাদেরকে সহযোগিতা করবে। আমরা কীভাবে স্বাস্থ্য সেবাকে ভালো করতে পারি, কীভাবে চিকিৎসকদের কর্মস্থল নিরাপদ করা যায়। আপনাদের পরামর্শ আর সহযোগিতা নিয়েই আমরা এগিয়ে যেতে চাই।'
সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী সদস্য এবং বিএমএ সভাপতি ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, 'পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু। ভাষা আন্দোলন বিষয়ে নেতাদের তিনি দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন। তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন বলেই ছাত্ররা আন্দোলনের মাধ্যমে ভাষা প্রতিষ্ঠিত করেছিল।'
ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, ‘একটা মহল জাতির পিতার এই ভূমিকা লুকিয়ে রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর অবদান কেউ মুছে ফেলতে পারবে না। ইতিহাসকে, সত্যকে কখনো ঢেকে রাখা যায় না।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, পাকিস্তান নামক এই বিচ্ছিন্ন জন্মভূমিতে কখনো স্বাধীন দেশ গড়ে উঠতে পারে না। তাই পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই তিনি স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলেন।‘
ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু তখন জেলে, তার শরীর খারাপ। তিনি অনুমতি নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হলেন। কিন্তু তিনি শুধু হাসপাতালে শুয়ে-বসে থাকেননি, ভাষা আন্দোলন বিষয়ে নেতাদের দিকনির্দেশনাও দিয়েছেন। তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন বলেই ছাত্ররা আন্দোলনের মাধ্যমে ভাষা প্রতিষ্ঠিত করেছিল।’
সভায় স্বাচিপ সভাপতি ডাঃ মোঃ জামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব দেওয়ার ইতিহাস লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল। জাতির পিতা ভাষা আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন। দেশের সব আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অংশগ্রহণ ছিল। তিনি জেলে থেকেও আন্দোলনে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।’
তিনি আরো বলেন, 'অবিভক্ত পাকিস্তানের শতকরা ৫৯ ভাগ অধিবাসীর মুখের ভাষা ছিল ‘বাংলা’। সুতরাং রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা প্রাধান্য পাবে এটাই ছিল স্বাভাবিক। পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশনে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত প্রথমে দাবি উত্থাপন করেন। কিন্তু শাসকচক্র বাঙালির প্রাণের দাবির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু করে। ১৯৪৮ সালের ২১শে মার্চ পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জনসভায় উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দেন এবং ২৪শে মার্চ কার্জন হলের অনুষ্ঠানেও তিনি এ ঘোষণা পূনর্ব্যক্ত করেন। ১৯৫২ সালের ৩০ শে জানুয়ারি ঢাকার এক জনসভায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে ঘোষণা করলে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে সমগ্র বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠী। সকলস্তরের বাঙালির অংশগ্রহণে মিছিল, মিটিং স্লোগানে মুখরিত হয় বাংলার আকাশ-বাতাস এবং তা চূড়ান্ত রূপ লাভ করে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি। অনেক রক্ত, অনেক প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয় রাষ্ট্রভাষা বাংলা।'
অনুষ্ঠানে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডাঃ মোঃ জামাল উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ মোঃ কামরুল হাসান মিলনের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলা একাডেমী পদকপ্রাপ্ত বঙ্গবন্ধু গবেষক সুভাষ সিংহ রায়।