গরীবের ত্রাণের টিন লুট করে বাড়ি ও প্রতিষ্ঠান বানায় কোটিপতি বিএনপি-জামায়াত নেতারা

1287

Published on ফেব্রুয়ারি 16, 2023
  • Details Image

২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ নেতাকর্মীরা যেমন চাঁদাবাজি ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট করে, তেমনি তারা অসহায় গরিবদের জন্য বরাদ্দ ত্রাণের টিন ও শীতবস্ত্র পর্যন্ত আত্মসাৎ করেছে। গৃহহীন দুস্থ মানুষদের গুহ নির্মাণের জন্য জনগণের করের টাকায় যেসব ত্রাণের টিন দেওয়া হয়েছিল, তা গতদরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ না করে নিজেদের বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও দলীয় কার্যালয় নির্মাণ করেছে বিএনপি-জামায়াত নেতারা।

গণমানুষের প্রতি তাদের এই অবিচার ও সীমাহীন শোষণ দেখার পর, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সরকারে আসার পর প্রতিটি এলাকার ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে পাকা ঘর তৈরি করে দিচ্ছেন।

বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ ও লুটপাটের কারণে ভীত হয়ে সাধারণ মানুষ তাদের ত্রাণ লুটের প্রতিবাদ পর্যন্ত করতে পারেনি। কিন্তু ২০০৭ সালে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান শুরু করলে মুখ খোলে জনগণ। এরপর জনগণের সহায়তা নিয়ে সারা দেশ থেকে বিএনপি নেতাদের বাড়ি ও প্রতিষ্ঠান তল্লাশি করে কয়েক লাখ ত্রাণের টিন উদ্ধার করা হয়।

হাজার কোটি টাকার মালিক মোসাদ্দেক আলী ফালুও আত্মসাৎ করে সরকারি ত্রাণের কয়েক হাজার টিন

২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব এবং সংসদ সদস্য হন মোসাদ্দেক আলী ফালু। এসময় প্রভাব বিস্তার করে কয়েকশ বিঘা জমি এবং বেশকিছু ব্যবসা ও মিডিয়ার মালিক হন মোসাদ্দেক আলী ফালু। হাজার কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুললেও দেশের অসহায় মানুষদের ত্রাণ চুরির অভ্যাস পরিত্যাগ করতে পারেননি এই ধনকুবের। এমনকি দুস্থদের জন্য বরাদ্দ সরকারি কয়েক হাজার ত্রাণ টিন আত্মসাৎ করে নির্মাণ করেছিলেন নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ১৩০ ফুট দৈর্ঘের কয়েকটি বড় ঘর।

২০০৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলো পত্রিকার সচিত্র প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ফালুর মালিকানাধীন সাংহাই সিরামিক কারখানায় অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এসময় মোট ১৩০ ফুট দৈর্ঘের পাঁচটি ঘর নির্মাণে ব্যবহৃত টিনগুলোতে সরকারি ছাপ্পায় লেখা দেখা যায় 'ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদফতরের ত্রান সামগ্রী, বিক্রয়ের জন্য নহে'। তবে নিজে এমপি হওয়ায় তার এলাকার হতদরিদ্রদের মধ্যে বিতরণের জন্য বরাদ্দ এসব ত্রাণের টিন পান খালেদা জিয়ার একান্ত আস্থাভাজন নেতা ফালু। তিনি এরপর অসহায়দের মধ্যে বিতরণ না করে নিজের প্রতিষ্ঠান নির্মাণে ব্যবহার করেন এসব টিন।

গরিবদের জন্য বরাদ্দ এসব সরকারি টিন দিয়ে সাভারের শিমুলিয়ায় নির্মাণ করা ফালুর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঘরগুলো থেকে এসব টিন খুলতে কয়েকদিন সময় লাগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। অভিযানের সময় স্থানীয়রা সেখানে ভিড় করে ফালুর প্রতি ধিক্কার জানান। অনেক দুস্থ ব্যক্তিকে ত্রাণ আত্মসাতের কারণে ফালুর প্রতি অভিশাপ দিতেও দেখা যায়।

প্রশাসনিক সূত্রে জানা যায়, ২০০ বিঘা জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এই কারখানাটি রফতানিমুখী বলা হলেও তারা স্থানীয় বাজারে পণ্য সরবরাহ করে আসছিল। ব্যবসা পরিচালনায় যেমন অনিয়ম করছিল তারা, তেমনি এই জমির মালিকানা অর্জনের সময়েও ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়েছিল মোসাদ্দেক আলী ফালু।

খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ এমপির বাড়ির মাটি খুঁড়ে অজস্র ত্রাণ সামগ্রী উদ্ধার করে যৌথবাহিনী

ত্রাণের টিন উদ্ধারে দেশব্যাপী যৌথবাহিনীর অভিযান শুরুর পর, নিজেদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে তা সরিয়ে ফেলতে শুরু করে বিএনপি-জামায়াত নেতারা। অনেকে এসব টিন খুলে পুকুরের পানিতে ডুবিয়ে রাখে, আবার অনেকে পাশের বাড়ির খড়ের গাঁদার নিচে রাখে। তবে স্থানীয়দের সহায়তায় অভিযান চালিয়ে মাটির নিচে পুঁতে রাখা বিএনপি নেতাদের আত্মসাৎ করা ত্রাণের টিনও উদ্ধার করা সমর্থ হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, ঝিনাইদহের বিএনপির এমপি সহিদুল মাস্টারের বাড়ির মাটু খুঁড়ে উদ্ধার করা হয় প্রায় পাঁচশ ত্রাণের টিন। এমনকি ত্রাণের শাড়ি-লুঙ্গি-কম্বলসহ ত্রাণের বিভিন্ন সামগ্রীও উদ্ধার হয় মাটির নিচ থেকে। মেজর হুমায়ুনের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর অভিযানে এসব অবৈধ পণ্য জব্দ করা হয়।

নোয়াখালীর সেনবাগ পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম চৌধুরীর বাড়ি থেকেও ৭৯৫টি ত্রাণের টিন উদ্ধার করা হয়। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফতেপুর গ্রামের জামায়াত রোকন ওমর ফারুকের হেফাজতে থাকা ৫৭টি টিন, ঝালকাঠীর নলছিটি উপজেলার রানাপাড়া ইউপির বিএনপি নেতা আবদুল মান্নানের বাড়ি থেকে ৯৭টি ত্রাণের টিন এবং সেতু নির্মাণের সামগ্রী উদ্ধার করা হয়। টাঙ্গাইলের বিএনপি নেতা এবং জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর বাবার নামে করা প্রতিষ্ঠান থেকে ১৮০টি ত্রাণের টিন, বরগুনার বিএনপির এমপি মতিয়ার রহমানের ঘনিষ্ঠদের বাড়ি থেকে কয়েকশ আলকাতরা মারা ত্রাণের টিন উদ্ধার করা হয়।

প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের কম্বল ও শীতবস্ত্রে বাণিজ্যিক গুদাম বানায় বগুড়ার বিএনপি নেতারা

সারাদেশে যখন অসহায় মানুষদের জন্য বরাদ্দ সরকারি ত্রাণের টিন হরিলুট করে নিজগৃহ ও দলীয় কার্যালয় বানাতে ব্যস্ত ছিল বিএনপি-জামায়াতের নেতারা, সেখানে তারেকের মদতে বগুড়ার নেতারা আরো একধাপ এগিয়ে গেছে। তারেকের দক্ষিণহস্ত হিসেবে বগুড়ায় লুটপাটের অন্যতম হোতা বিএনপি নেতা শোকরানা এবং সাইফুল সরকারি ত্রাণের কম্বল ও শীতবস্ত্র জমিয়ে গুদাম গড়ে তুলেছিল। অসহায় মানুষদের জন্য বরাদ্দ কাপড়গুলো নিলামি বাজারে লট হিসেবে বিক্রি করতো কোটিপতি এই বিএনপি নেতারা।

অভিযানে গুদামগুলো থেকে ৪ হাজার ৭৭৫টি ত্রাণের কম্বল, ১ হাজার ৯০০ শাড়ি, ৮৯০টি সোয়েটার, ৫২ হাজার ৮০০ বস্তা মসুর ডাল পাওয়া যায়।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক শোকরানা ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুলের ১১টি গুদামে অভিযান চালিয়ে এসব পণ্য উদ্দার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শোকরানা তখন এসব পণ্য হাওয়া ভবন থেকে তারেক রহমান কর্তৃক তাকে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করে। কিন্তু জেলা বিএনপি নেতাদের উপস্থিতিতে এসব পণ্যের বস্তার ওপর প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সিল-ছাপ্পর থাকায় মেজিস্ট্রেট তা বাজেয়াপ্ত করে।

সরকারি ত্রাণ আত্মসাতের ঘটনায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও রাজাকারপুত্র সাইফুল ইসলাম এবং শোকরানাকে আটক করা হয়। তারা বগুড়ার প্রতিটি প্রোগ্রামে তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে তার পাশেই অবস্থান করতো।

হাওয়া ভবন সিন্ডিকেটের মন্ত্রী দুলুর বাড়ি থেকে ত্রাণের টিন উদ্ধার, নাটোরে শ্রমিকদের মিষ্টি বিতরণ

২০০৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলো পত্রিকার প্রতিবেদনে জানা যায়, অসহায় মানুষদের জন্য বরাদ্দ ত্রাণের টিন আত্মসাতের ঘটনায় আটক হয় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক ভূমি উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। এই সংবাদ জানার পর এলাকার দুস্থ মানুষরা নিজেদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করে। নাটোরের স্টেশন বাজার চত্বরে এক শ্রমিক সাংবাদিকদের বলেন, 'আমি রেলের জমিতে কুঁড়েঘরে বাস করি। কয়েকটা টিনের জন্য দুলুর কাছে অনেকবার গেছি। একটা টিনও দেয়নি। এখন শুনি, তার বাড়ি থেকে ত্রাণের টিন উদ্ধার হচ্ছে।'

একজন স্থানীয় পান বিক্রেতা বলেন, 'আমার সামনে দিয়া বাংলা ভাই দলবল নিয়ে দুলুর সাথে দেখা করতে গেছিলো, অথচ সে এখণ বলে যে কাউকে চেনে না। বাংলা ভাইয়ের মতো দুলুরও বিচার হওয়া উচিত।'

স্টেশন বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানান, 'সন্ত্রাসের হাত থেকে বাঁচার জন্য আমরা লাঠি-বাঁশি সমিতি করে পাহারা দিতাম। দুলু সেটাও নিজের লোক ঢুকায়ে দখল করে নিছিলো, যাতে তার সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজির সুবিধা হয়। ভাবটা ছিল যে দুনিয়াটার মালিক সে একাই। বাকিরা তার চাকর।'

নাটোরের দুলু থেকে লালমনিরহাটের দুলু: টিন চুরির প্রতিযোগিতায় তারেক-ঘনিষ্ঠ বিএনপির মন্ত্রীরা

লালমনিরহাটের বিএনপি নেতা এবং খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভার সাবেক উপমন্ত্রী আসাদুল হাবিব দুলুর এবং নীলফামারীর এমপি আমজাদ হোসেন সরকারও ত্রাণের টিন আত্মসাতে পিছিয়ে নেই। বিএনপির এমপি আমজাদের বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত কলেজ থেকে ২৮২টি তআরণের টিন উদ্ধার করেছেন যৌথ বাহিনী।

অন্যদিকে লালমনিরহাটের উপজেলা বিএনপি নেতাদের বাড়ি এবং বিএনপির ইউনিয়ন কার্যালয়গুলো থেকে কমপক্ষে ৪০০ ত্রাণের টিন উদ্ধার করা হয়। এরা সবাই তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ বিএনপি নেতা আসাদুল হাবিব দুলুর সহযোগী। ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোর প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে।

দুস্থদের ত্রাণের টিন দিয়ে বিএনপি-জামায়াত নেতাদের বাড়িঘর নির্মাণ

মুন্সীগঞ্জ, বরগুনা, ভোলা, মেহেরপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের নেতাদের বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ ত্রাণের টিন উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসব টিন দেশের গৃহহীন অসহায় মানুষদের ঘর বানানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়ার কথা ছিল। অথচ বিএনপি-জামায়াত নেতারা এসব টিন আত্মসাৎ করে নিজেদের অতিরিক্ত ঘরের নির্মাণে এবং দলীয় কার্যালয় নির্মাণে ব্যবহার করেছে।

নলডাঙ্গা থানার ওসি জানান, বিএনপি নেতা কুদ্দুস তালুকদার দুলুর বাড়ির ভেতর থেকে লুকিয়ে রাখা ৫২টি ত্রাণের টিন উদ্ধার করে থানায় এনেছে পুলিশ। সেনাসূত্র জানায়, বিএনপির সাবেক এমপি রেজা হাবিবের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান থেকে ৩৪২টি ত্রাণের টিন, তার চাচাতো ভাই লোকমানের দোকান থেকে ৪৫টি ত্রাণের টিন উদ্ধার করা হয়েছে মেজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে। অভিযানে উপস্থিত মেজন জিয়া জানান, এখানে গরিবের হক আত্মসাৎ করা সরকারি ত্রাণের টিন উদ্ধার শেষ হতে হতে তা হাজার ছাড়িয়ে যাবে।

অভিযানে থাকা পুলিশ জানায়, বিএনপি নেতা হারুনুর রশিদের বাড়ির ডোবায় লুকিয়ে রাখা বেশকিছু ত্রাণের টিন উদ্ধার করা হয়েছে। এমনকি পাশের বাড়িতে সরিয়ে রাখা অর্ধশত টিনও জব্দ করেছে পুলিশ।

মুন্সীগঞ্জের বিএনপি নেতা আবদুল হাইয়ের নয়াগাঁওয়ের বাড়ি ও গুদাম থেকে ৩২টি ত্রানের টিন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার বায়েক ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নাদিউজ্জামান ভূইয়া রুমীর বাড়ি থেকে ৩২টি টিন, ভোলার বোরহানউদ্দীন পৌর বিএনপির আহ্বায়ক সাইদুর রহমান মিলনের 'মিমু ব্রিকফিল্ড' থেকে ত্রাণের ১১০ বান্ডিল টিন উদ্ধার করে নৌবাহিনীর সদস্যরা। এসব টিন দিয়ে নিজের ব্যবসার জন্য নয়টি ঘর তৈরি করেছিল এই বিএনপি নেতা।

সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার জামতৈল ইউপি বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামানের বাড়ি থেকে ১৪টি টিন ও ৬টি কম্বল, মেহেরপুর গাংনী উপজেলার ধনখোলা ইউপি বিএনপির সভাপতি নুরুল হুদার বাড়ি থেকে ৬৪টি ত্রাণের টিন, উপজেলা ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক কাওছার আলীর বাড়ি থেকে ও ধনখোলা বিএনপির নেতা মশিউর রহমানের বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ টিন উদ্ধার করে পুলিশ।

শেরপুর-৩ আসনের বিএনপি সংসদ সদস্য মাহমুদুল হক রুবেলের ঘনিষ্ঠ শ্রীবরদী উপজেলার কাকিলাকুড়া বিএনপির সভাপতি আলিফউদ্দীনের বাড়ি থেকে ১২ বান্ডিল টিন ও বৈদেশিক মুদ্রা উদ্ধার করা হয়।

২০০৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলো পত্রিকা থেকে জানা যায়, ভোলার লালমোহন উপজেলার পৌর চেয়ারম্যান এনায়েত করিমের ভাই সোহেল আজিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে ত্রাণের ১২৯টি টিন উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এছাড়াও হবিগঞ্জ বাজারের হাফেজ মো. সিরাজের দুই তলা টিনের ঘর থেকে ত্রাণের ১৭১টি টিন উদ্ধার করা হয়। রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বেলপুকুর ইউপি বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং সাংসদ নাদিম মোস্তফার ঘনিষ্ঠ আব্দুর রহমানের ভাইয়ের খামার থেকে তিন বান্ডিল টিন উদ্ধার হয়।

মানিকগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, গাজীপুর, ফেনী, লালমনিরহাট, নেত্রকোণা, নোয়াখালীর বিভিন্ন উপজেলার বিএনপির অফিস ও বিএনপি নেতাদের বাড়ি থেকে শত শত বান্ডিল ত্রাণের টিন উদ্ধার করে সেনাবাহিনী।

ত্রাণের টিন আত্মসাৎ করে দলীয় কার্যালয় নির্মাণ করেছিল বিএনপি-জামায়াত

এমনকি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার জিয়া পরিষদের তিনটি কার্যালয়ও অসহায় মানুষদের জন্য বরাদ্দ ত্রাণের টিন দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় অভিযানে পুলিশ সেসব ঘর খুলে টিনগুলো জব্দ করে।

অন্যের ভূমি দখল করে স্থাপন করে কাটাখালি পৌর বিএনপির কার্যালয়টি নির্মাণের সময়েও তা ত্রাণের টিনে তৈরি করে বিএনপি নেতারা। ২০০৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সংবাদে বলা হয়, ১০ দিন আগে পুলিশ সেই অবৈধ স্থাপনা ভাঙার পর টিন খোলার সময় ত্রাণের টিনে দলীয় কার্যালয় তৈরির বিষয়টি জানাজানি হয়।

এ বিষয়ে কাটাখালী পৌর বিএনপির সভাপতি মাহাফুজুর রহমান বাদশা জানান, ২০০৩ সালের আগেই এসব করা হয়েছে। এরপর তিনি সভাপতি সভাপতি হয়েছে। এসবের সম্ভবত আগের কমিটির সভাপতি করেছেন। তার নিজের সঙ্গে এসবের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

এমনকি নীলফামারির জলঢাকায় জামায়াতের এমপি মিজানুর রহমানের বাড়ি থেকেও আত্মসাৎ করা ১৯০টি ত্রাণের টিন উদ্ধার করা হয়েছে এবং জামায়াতের দলীয় কার্যালয় আল ফালাহ থেকে উদ্ধার করা হয় আরো ৬৫টি ত্রাণের টিন ও বেশকিছু সরকারি কম্বল।

নাটোরের প্রভাবশালী বিএনপি নেতা ও খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ মন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর বাড়ি, পাবনার এমপি রেজা হাবিবের বাড়ি ও তার প্রতিষ্ঠিত কলেজ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের এমপি ও তারেকের আস্থাভাজন বিএনপি নেতা হারুনুর রশিদের খামারবাড়ি থেকেও বিপুল সংখ্যাক ত্রাণের টিন উদ্ধার করা হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়। ২০০৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলো পত্রিকার প্রতিবেদনে এসব বিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়।

গাছখেকো কোটিপতি বিএনপি নেতার সরকারি ত্রাণের টিন বিক্রি

মেহেরপুর জেলার সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামকে ত্রাণের টিনসহ আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পাঁচ বছরে সরকারি গাছ কেটে কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয় এই বিএনপি নেতা। মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কের শতবর্ষী গাছগুলো অবৈধভাবে কেটে ফেলে সে। এলাকাবাসী প্রতিবাদ করেও তার ক্ষমতার দাপটে চুপ হয়ে যেতে বাধ্য হন। এমনকি মসজিদের জন্য সরকারি অর্থ বরাদ্দ আত্মসাৎ এবং স্কুলের জমি পর্যন্ত দখল কের বিক্রি করে দিয়েছে এই সাইফুল।

জানা যায়, আগে তেমন কিছু না থাকলেও মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে আড়াই কোটি টাকা দিয়ে তিনটি বাস কিনেছেন, নির্মাণ করেছেন একটি মার্কেট এবং জমি কিনেছেন ৯০ বিঘা। সাইফুলের রাতারাতি এতো সম্পদের মালিকানা অর্জন চমকে দিয়েছে এলাকাবাসীকেও।

আলকাতরা লাগিয়ে ত্রাণের টিনের ছাপ লুকানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ বিএনপি নেতারা

২০০৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলো পত্রিকার সংবাদে বলা হয়, রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা পৌর বিএনপির সভাপতি ও পৌর চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন ত্রাণের টিন দিয়ে নিজের বাড়ির গোয়াল বানিয়েছেন। সাংবাদিকরা সরেজমিনে দেখতে পান, ত্রাণের টিনের ওপর আলকাতরা দিয়ে রঙ পরিবর্তন করেছেন এই বিএনপি নেতা। স্থানীয়রা জানান, নিজের ঘরেও ত্রাণের টিন লাগিয়েছিলেন মকবুল, তবে ধরাধরি শুরু হওয়ার পর তা খুলে ফেলেন। পরবর্তীতে ঘরের সেই জায়গাগুলোতে ফাঁকাই দেখতে পান সাংবাদিকরা।

স্থানীয়রা আরো জানান, থানার ওসির সঙ্গে সখ্যতার কারণে ওসি আগেই অভিযানের কথা জানিয়েছিলেন মকবুলকে। ওসির পরামর্শেই তিনি টিনের ওপর আলকাতরা মারেন। যদিও ওসি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে সরেজমিনে সাংবাদিকরা দেখতে পান, ত্রাণের টিনের ওপর আলকাতরা লাগালেও আবছাভাবে টিনের ওপরের ছাপ দেখা যাচ্ছিলো 'ত্রাণের টিন, বিক্রয়ের জন্য নয়'।

অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেখতে পায়, রাজশাহীর সিটি করেপারেশনের ১৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক কার্যালয় এবং ওয়ার্ড কমিশনার ও মহানগর যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মনিরুজ্জামান শরীফের বাড়িও ত্রাণের টিন দিয়ে তৈরি করা হয়।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত