1163
Published on ফেব্রুয়ারি 8, 2023অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলের জন্য ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে চরমভাবে বেপরোয়া হয়ে ওঠে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা। এক কোটির বেশি সংখ্যালঘু ভোটার যাতে ভোট দিতে না যায়; সেজন্য তাদের ঘরে ঘরে গিয়ে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালাতে থাকে এই দুর্বৃত্তরা। এমনকি আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রচারণা ক্যাম্পগুলোতে হামলা এবং প্রবীণ প্রার্থীদের সমাবেশেও তাণ্ডব চালায় খালেদা জিয়ার ক্যাডাররা।
২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার সংবাদ থেকে জানা যায়, ফরিদপুরের নগরকান্দায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও সাবেক মন্ত্রী সাজেদা চৌধুরীর গাড়িবহরে দেশীয় এবং অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে নৃশংস হামলা চালায় বিএনপি প্রার্থী কে এম ওবায়দুর রহমানের সমর্থকরা। এই বর্বর হামলা থেকে প্রবীণ নেত্রী সাজেদা চৌধুরীকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হন ছয় জন পুলিশ কর্মকর্তা। এই হামলার কিছুক্ষণ পর এলাকার চৌয়ারা গ্রামের সংখ্যালঘুদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাণ্ডব চালায় বিএনপির সন্ত্রাসীরা। অন্যদিকে মাদারীপুরের শিবচরেও আওয়ামী লীগ প্রার্থী নূরে আলম চৌধুরীর গাড়িবহরে হামলা করে চিহ্নিত বিএনপি ক্যাডাররা। এসময় তাকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হন আট জন আওয়ামী লীগ কর্মী।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি, নোয়াখালীর চর জব্বার ও বেগমগঞ্জ, শরীয়তপুরের গোসাইরহাট, মাদারীপুরের বোয়ালমারীতে আওয়ামী লীগের সামেবশে হামলা; নির্বাচনি অফিস ভাংচুর এবং বোমা-গুলি মেরে শতাধিক আওয়ামী সমর্থককে আহত করে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এসব হামলায় ভীত হয়ে এক সপ্তাহ পরের নির্বাচনের দিন যাতে কোনো আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী প্রাণ ভয়ে ঘর থেকে বের না হয়, সেই সুযোগে ভোট কেন্দ্র এবং ব্যালট বাক্স লুট করে ক্ষমতা দখল করা যায়- সেই নীল নকশা করেছিল বিএনপি।
এদিকে দেশের প্রায় ১০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটার ঐতিহ্যগতভাবেই উগ্রবাদ ও মৌলবাদবিরোধী হওয়ায়, তাদের নারী-শিশুদের ওপরেও শারীরিক নিপীড়ন এবং পুরুষদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন শুরু করে বিএনপি-জামায়াত জোট। ঘরে ঘরে গিয়ে সংখ্যালঘু ভোটারদের ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে যেতে নিষেধ করে খালেদা জিয়ার সন্ত্রাসীরা।
২০১৪ সালে বিএনপি-জামায়াতের এই নরপশুরা যেমন পেট্টোল বোমা মেরে হাজার হাজার নারী-শিশু-শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করেছে; তেমনি ২০০১ সালেও বাগেরহাটে কয়েকদিন ধরে হিন্দুদের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে শতাধিক পরিবারকে ঘরছাড়া করেছে। ৭১-এর কুখ্যাত রাজাকার রজব আলী ও যুবদল নেতা তারিকুলের সরাসরি নেতৃত্বে এসব লাগাতার হামলায় আওয়ামী লীগ অফিস ভাংচুর ও প্রায় অর্ধশত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী আহত হন।
পিরোজপুর ও নাজিরপুরের সংখ্যালঘু ভোটাররা ডাতে ভোটকেন্দ্রে না যায়, সেজন্য ঘরে ঘরে গিয়ে হুমকি দিয়ে আসে জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ক্যাডাররা। সাঈদীকে জয়ী করানোর জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শিবির ক্যাডারদের এনে সশস্ত্র মহড়া দেওয়া হয় পিরোজপুরে। সদর উপজেলার বালিপাড়া ও পাণ্ডাশি ইউনিয়নে ১০ হাজারের বেশি হিন্দু ভোটারকে কেন্দ্রে যেতে নিষেধ করে সাঈদীর ক্যাডার ইলিয়াস। ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে তার নেতৃত্বে হিন্দুরের গ্রামে হামলা চালিয়ে ৬০-৭০ জনকে আহত করা হয়। জামায়াতের এই বর্বর তাণ্ডব থেকে রক্ষা পেতে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে বারবার সাহায্য চান স্থানীয়রা।
ভোলার তজুমদ্দিন, লালমোহন ও বোরহানউদ্দীন উপজেলার সংখ্যালঘু ভোটারদের হত্যার হুমকি দেয় জামায়াত-বিএনপি। উগ্রবাদীদের ধর্ষণের হুমকি পাওয়ার পর হিন্দু গ্রামের নারীরা রাতে নিজগৃহে থাকা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। বিএনপি নেতাদের মৌমাছি বাহিনী নামের একটি ক্যাডার বাহিনী এসময় সব হিন্দু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রাণের ভয় দেখিয়ে চাঁদা আদায় করে। বোরহানউদ্দীনের প্রায় ২০ শতাংশ, তজুমদ্দিনে প্রায় ৩০ শতাংশ এবং লালমোহনের প্রায় ২২ শতাংশ হিন্দু ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে গেলে পরিবারের নারীদের শ্লীলতাহানি ও পুরুষদের হত্যার হুমকি দেয় বিএনপি-জামায়াত নেতারা।
নড়াইলের বিএনপি-জামায়াত প্রার্থী ও খালেদা জিয়ার একান্ত আস্থাভাজন নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকত নেতা মুফতি শহিদুলের বাহিনীর অশ্লীল ও উগ্র স্লোগানে বিব্রত হয়ে পড়ে স্থানীয়রা। তালেবান-ঘনিষ্ঠ এই শহিদুল প্রকাশ্য জনসভায় ফতোয়া দিয়ে বলে যে, আওয়ামী লীগে ভোট দিলে কাফের হয়ে যাবে। এমনকি গ্রামের সাধারণ নারীদের ভোট চেয়ে শপথ করানোর পর ভয় দেখিয়ে বলা হয় যে- কোরআনের ওপর হাত রেখে তারা কথা দিয়েছে, ভোট না দিলে জাহান্নামে যাবে। এসব ঘটনার তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় জনসাধারণের মধ্যে।