২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াতের প্রাক নির্বাচনি সহিংসতা: খালেদা জিয়ার মদতে মুক্তিযোদ্ধা নির্যাতন, ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে নির্মম তাণ্ডব

1073

Published on ফেব্রুয়ারি 7, 2023
  • Details Image

প্রতিবারই জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির হাত ধরে সামাজিকভাবে প্রকাশ্যে নাশকতা শুরু করে জামায়াত-শিবির। বিএনপি-ছাত্রদল-যুবদল প্রথমে সরকারবিরোধী অবস্থানের নামে দেশজুড়ে সন্ত্রাস শুরু করে, এরপরেই জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতন চালাতে থাকে। ২০০১ সালের নির্বাচনের সময় তাদের নিপীড়নের এই ধারা ২০১৪ সালে পেট্রোল বোমায় গণহারে মানুষ পুড়িয়ে মারার মতো বর্বরতায় রূপ নেয়।

১৮ সেপ্টেম্বর ২০০১ সালের জনকণ্ঠ পত্রিকার সংবাদ থেকে জানা যায়, ১ অক্টোবরের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির ছত্রছায়ায় সামাজিকভাবে পুনর্বাসিত হয় মুক্তিযুদ্ধকালে হত্যা-ধর্ষণ-লুটপাটের ক্রীড়নক জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। পাবনার দুই আসনে জোট থেকে নির্বাচন করার জন্য দুই শীর্ষ জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও আবদুস সোবহানকে মনোনয়ন দেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরপরেই পুরো জেলা শহরের দখল নেওয়ার জন্য বেপরোয়া কার্যক্রম শুরু করে জামায়াত।

অথচ ৭১-এর ঘৃণিত ভূমিকার কারণে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনেও এই দুই নেতা উল্লেখ করার মতো কোনো ভোট পায়নি। খালেদা জিয়া নিজের হাতে তাদের পুনর্বাসিত না করলে এলাকায় তারা কোনো প্রভাবই রাখতে পারতো না বলে মন্তব্য করেন একাধিক বিএনপি নেতা। তারা মনে করেন, খালেদা জিয়া জামায়াতকে প্রধান্য দেওয়ায় বিএনপি এখন জামায়াতের বি-টিমে পরিণত হয়েছে, মূল কার্যক্রম চলে গেছে জামায়াতের হাতে।

এদিকে নির্বাচনের আগে আগে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি, সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী এবং মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সমর্থকদের ওপর অমানবিক নির্যাতন শুরু করে বিএনপি-জামায়াত জোট। ভোটের দুই সপ্তাহ আগে, ১৬ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার বাশদহা, আগারবাড়ি, শিবপুর, সিংড়ীতে দিনদুপুরে প্রকাশ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলা চালায় জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা। এমনকি একাত্তরের ঘাতক দালালবিরোধী পোস্টার লাগানোর কারণে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারসহ একাধিক মুক্তিযোদ্ধা গলায় জুতার মালা পর্যন্ত পরিয়ে দেয় তারা। রাতে বাড়িতে গিয়ে তাদের ওপর মারপিট ও লুটপাট চালায়।

জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা সশস্ত্র থাকায় স্থানীয়রা প্রাণ বাঁচানোর স্বার্থে তাৎক্ষণিকভাবে এর কোনো প্রতিবাদ করতে পারেনি। কিন্তু পরের দিন এলাকাবাসী এই বর্বরতায় বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বিচার দাবি করে। মুক্তিযোদ্ধারা থানায় অভিযোগ দিলেও, তারেক রহমানের সিন্ডিকেটের কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নীরব ভূমিকা পালন করে। এমনকি এই পৈশাচিকতায় বিএনপির হাইকমান্ডের সমর্থন থাকায় জামায়াত অফিসে আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হয় মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর।

অন্যদিকে নির্বাচনে কেন্দ্র দখল ও ব্যালট ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামের কুখ্যাত খুনীদের জেল থেকে বের করে নিয়ে আসে রাজাকার ও বিএনপি নেতা সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী। পটিয়ার টপ টেরর এহসানকে জামিন না দিতে কোর্ট ইন্সপেক্টর ও সিআইডি-এর সুপারিশ থাকার পরেও, সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরীর প্রভাবের কারণে ২০০০ সালে আটক হওয়া একাধিক খুনের মামলার আসামি এহসানকে জামিনে ছেড়ে দেয় আদালত।

এমনকি পটিয়ায় নাগালে পেয়েও দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার হুমায়ুন ও তার সহযোগীদের ধরতে ব্যর্থ হয় পুলিশ। সন্ত্রাসী দিদারের বাড়িতে অবস্থানকালে পুলিশ তাদের ঘেরাও করে। এই খবর পেয়ে বিএনপির হাইকমান্ডের নির্দেশে বিএনপি-জামায়াত জোট প্রার্থী নাজিবুল বাশার মাইজভাণ্ডারী মিছিল নিয়ে সেখানে যান। এরপর পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করে ঘটনাস্থ থেকে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। স্থানীয়রা জানান, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত নেতারা সন্ত্রাসীদের হাতে অত্যাধুনিক অস্ত্র তুলে দিয়েছে। পুলিশের তুলনায় তাদের অস্ত্র আধুনিক হওয়ায় পুলিশ পিছু হঠতে বাধ্য হয়।

এছাড়াও, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তিন মাস সময়কালে সশস্ত্র মহড়া দিয়ে দেশের চার বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও সিলেট শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দখল দেয় ছাত্রদল-শিবির। তিন মাসের মধ্যে দেশের বিভিন্ন কলেজসহ অর্ধশত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসীদের নিয়ে অবস্থান করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অচল করে দেয় তারা। এর আগে, কোনো সামরিক বা রাজনৈতিক সরকারের আমলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এতো সন্ত্রাস হয়নি বলে জানান শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও স্থানীয়রা। ছাত্রদল ও শিবির ক্যাডারদের ধর্ষণ ও ধর্ষণের হুমকির ফলে নিরাপত্তাহীনতার কারণে হাজার হাজার নারী শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়। ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সন্ত্রাসীদের আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করে বিএনপি-জামায়াত জোট।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত