বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে সাতটি বড় পরিবর্তন

4695

Published on জানুয়ারি 13, 2023
  • Details Image

২২তম জাতীয় কাউন্সিলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে ৭টি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়েছে। গত ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে এই পরিবর্তনগুলো অনুমোদন দেন উপস্থিত কাউন্সিলররা। গঠনতন্ত্রে ৭টি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হলো : এক. কেন্দ্রীয় কমিটির নাম সুনির্দিষ্ট করে ‘কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ’ করা হয়েছে। দুই. দলের যে কোনো পর্যায়ের কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পরে ৪৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে হবে। আগে এই বাধ্যবাধকতা ছিল না। তিন. দলের উপজেলা, থানা ও ইউনিয়ন কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের সংখ্যা সুনির্দিষ্ট করে ২৭ জন করা হয়েছে। চার. মহানগরের প্রতিটি পর্যায়ের কমিটিতে অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ স্থানীয় ভোটার রাখতে হবে। পাঁচ. স্থানীয় সরকারের উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান, সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে দলের মনোনয়ন দেওয়া হবে না। ছয়. মহিলা শ্রমিক লীগকে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। সাত. আওয়ামী লীগের যে কোনো শাখা কমিটির নিয়মিত সভা এক মাসের পরিবর্তে দুই মাসের মধ্যে করতে হবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলন গঠনতন্ত্র উপ-কমিটির সভাপতি ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র এমনিতে যুগোপযোগী ও আধুনিক। এরপরও আমাদের সাংগঠনিক কাজের সুবিধার জন্য অল্প কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।’

আওয়ামী লীগের আগের গঠনতন্ত্রের ২৫-এর ৭(ক) অনুসারে শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগকে ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এবারের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে এ দুই সংগঠনের সঙ্গে মহিলা শ্রমিক লীগকেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। মহিলা শ্রমিক লীগ ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন হিসেবে তাদের গঠনতন্ত্র অনুসারে পরিচালিত হবে।

দলের গত মেয়াদের গঠনতন্ত্রে ৪ নম্বর অনুচ্ছেদে গঠন প্রণালি অংশের ৩ নম্বরে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নাম লেখা আছে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটি’। আবার গঠনতন্ত্রের ১৮ নম্বর অনুচ্ছেদসহ একাধিক স্থানে কেন্দ্রীয় কমিটির নাম ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ’ লেখা আছে। গঠনতন্ত্র সংশোধন করে এখন থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নাম নির্দিষ্ট করা হয়েছে ‘কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ’।

আওয়ামী লীগের সব শাখা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পরবর্তী ৪৫ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে হবে; না পারলে ওই কমিটি বাতিল করা হবে। তবে বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট কমিটি তাদের অনুমোদনকারী কমিটির কাছেসময় বাড়ানোর লিখিত আবেদন করতে পারবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন।

দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সাংগঠনিক কাজে সম্পৃক্ততা বাড়াতে জেলা, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটিতে উপদেষ্টা পদের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এখন থেকে দলের সব পর্যায়ের কমিটির উপদেষ্টা পরিষদ হবে ২৭ সদস্যের।

আগের গঠনতন্ত্রের ২৬ নম্বর অনুচ্ছেদের উপদেষ্টা পরিষদ অংশের ৩ নম্বরে বলা ছিল, ‘সংগঠনের জেলা, মহানগর, উপজেলা/থানা, ইউনিয়ন পর্যায়েও কেন্দ্রের অনুরূপ উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হইবে। মহানগরে ২৭, জেলায় ২৭, উপজেলা ও থানায় ২১, ইউনিয়নে ১৫ জন সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হইবে।’

দলের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর পদে প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়েছে। আগের গঠনতন্ত্রের ২৮(৪) অনুচ্ছেদের (ক)-তে বলা হয়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও দুজন ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা ও পুরুষ) পদে প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। এবারের গঠনতন্ত্রে ধারাটি পরিবর্তন করে দুজন ভাইস চেয়ারম্যান মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়েছে। আগের গঠনতন্ত্রের ২৮(৬)-এ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর পদে প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়টি উল্লেখ ছিল। এবারের গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন এনে কাউন্সিলর পদে মনোনয়নের অনুচ্ছেদটি বাদ দেওয়া হয়েছে। এবারের গঠনতন্ত্রে মহানগরের যে কোনো স্তরের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে কমিটিতে দুই-তৃতীয়াংশ স্থানীয় ভোটার রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মহানগরের ভোটের রাজনীতিকে শক্তিশালী করতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এবারের গঠনতন্ত্রে সব শাখা কমিটির নিয়মিত সভার মধ্যবর্তী সময়ের ব্যবধান বাড়ানো হয়েছে। আগের গঠনতন্ত্রে প্রতি মাসে একবার করে সভার নিয়ম রাখা হয়েছিল। এবারে তা দুই মাস করা হয়েছে। আগের গঠনতন্ত্রে জেলা পরিষদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে ৬৪ জেলা পরিষদের কথা উল্লেখ ছিল। এবারে তা পরিবর্তন করে ৬১ জেলা পরিষদ করা হয়েছে। কারণ পার্বত্য তিন জেলা পরিষদে নির্বাচন না হওয়ায় প্রার্থী মনোনয়ন দিতে হয় না। এছাড়া আগের গঠনতন্ত্রে উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদের সংখ্যা নির্দিষ্ট করা ছিল না। এবারের গঠনতন্ত্রে এগুলোর সংখ্যা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে।

সৌজন্যেঃ উত্তরণ

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত