635
Published on নভেম্বর 26, 2022ঢাকায় ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি যদি কোনো ষড়যন্ত্রের পথ খুঁজলে তার উচিত জবাব দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি।
তিনি বলেন, ঢাকায় ১০ ডিসেম্বর তারা সমাবেশ ডেকেছে, এমন ভাব যেন সরকারই থাকবে না। ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে নাকি দুর্নীতিবাজ খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দেশ থাকবে। পরিষ্কারভাবে বলে দিতে চাই, ডিসেম্বর মাস, আমাদের বিজয়ের মাস। ডিসেম্বর মাস, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির মাস। ডিসেম্বর মাস কোনো রাজাকার-আলবদরদের মাস হতে পারে না। এই সরকার আওয়ামী লীগের সরকার, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সরকার। এই সরকারকে যদি দুর্বল ভাবেন তাহলে ভুল করবেন।
শনিবার চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি ইচ্ছা করে পায়ে পাড়া দিয়ে গোলযোগ করতে চায় বলে অভিযোগ করে মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি নেতারা সমাবেশের নামে বিভিন্ন জায়গায় উস্কানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। রাজাকার-আলবদর এবং তাদের দোসর পাকিস্তানের পরাস্ত করে দেশ স্বাধীন করেছি। ডিসেম্বর মাসে কোনো রাজাকার, আলবদরের হুমকি বাংলাদেশের মানুষ পরোয়া করে না। যদি ডিসেম্বর মাসে বিএনপি কোনো ষড়যন্ত্র, নৈরাজ্য করতে মাঠে নামে বাংলার জনগণ তার উচিত শিক্ষা দেবে।
তিনি বলেন, ডিসেম্বরের ১০ তারিখের সমাবেশ নাকি হবে মহাসমাবেশ। ১০ লাখ মানুষ সমাবেশে আসবে। ১০ লাখ মানুষের জমায়েত করেন বা ৩০ লাখ মানুষ করেন আওয়ামী লীগের অসুবিধা নেই। এই বিএনপি ১০ লাখ মানুষের সমাবেশ পল্টনে করার জন্য পুলিশ কমিশনারের কাছে আবেদন করেছে। পুলিশ কমিশনার বলেছেন আপনাদের বড় জমায়েত হবে এর জন্য সবচেয়ে ভালো জায়গা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। কিন্তু তারা নাকি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করবেন না। রাস্তার মধ্যে বিএনপি অফিসের সামনে তারা সমাবেশ করতে চায়। কারণ ওখানে তো ৫০-৬০ হাজারের বেশি মানুষ হবে না। আপনারা লাখ লাখ মানুষের সমাবেশ করতে চান আর রাস্তায় যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটাতে চান, এর কারণ কী?
হানিফ বলেন, বিএনপি সমাবেশ পল্টনে করার দুটি কারণ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত জায়গা। এই উদ্যানে জাতির পিতা ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ স্বাধীনতার ডাক ঘোষণা দিয়েছিলেন। এই উদ্যানে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সরকারের পতন ঘটেছিল, তারা আত্মসমর্পণ করেছিল। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়া পাকিস্তানের এজেন্ট পরাজয়ের চিহ্ন মুছে ফেলতে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিশুপার্ক বানিয়েছিলেন। সেই কারণে তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যেতে চায় না। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান রাজাকার-আলবদরদের জন্য মনের কষ্টের জায়গা।
হানিফ বলেন, বিএনপি নেতারা নয়াপল্টনে সমাবেশ করে জনজীবন বিপর্যস্ত করে সরকারকে বিব্রত করতে চায়। এটা তাদের আরেকটি লক্ষ্য।
আওয়ামী লীগের এই সিনিয়র নেতা বলেন, ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে আপনার নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আন্দোলন করেছিলেন। সারাদেশে জ্বালাও-পোড়াও ভাঙচুর করে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছিলেন। ভেবেছিলেন সরকার পতন ঘটানো যাবে, যায়নি। প্রায় সাড়ে তিনশ’ মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছিলেন। শত শত গাড়ি আগুন দিয়েছিলেন এ পাপের কারণে আজ খালেদা জিয়াকে জেল খাটতে হচ্ছে। আপনাদের যদি ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিকল্পনা মাথায় থাকে তাহলে যে শাস্তি ভোগ করতে হয়েছে তার চেয়ে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। রেহাই পাওয়ার সুযোগ নেই। এটা সরকারের কথা। আর এর সাথে আছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে যাচ্ছে। কেউ উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করবে দেশের জনগণ বরদাশত করবে না, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও বরদাশত করবে না-বলেন তিনি।
তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগের প্রাণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই স্বাধীন রাষ্ট্রে মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জিত হয়েছে।
দলের দুর্যোগে, ক্রান্তিকালে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা নিজের সম্পদ বিক্রি করে সংগঠনের পাশে দাঁড়িয়েছেন। যার কারণে বারবার সংকটের মধ্যে পড়েও আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বারবার রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছে। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে দিয়েছে। আবারো সময় এসেছে, নেতা-কর্মীদের আহবান জানাবো সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য। কোনো অপশক্তি দেশকে যেন আর কখনো পিছিয়ে নিতে না পারে তাদের সকল ষড়যন্ত্র অপতৎপরতা রুখে দেয়ার জন্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশে এমন কোনো অপশক্তি নেই আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটাতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী। সম্মেলন উদ্বোধন করেন চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নাছির উদ্দীন আহমেদ।
হাজীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হেলাল উদ্দিন মিয়াজীর সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নাঈম পাটওয়ারী দুলাল।