1083
Published on নভেম্বর 9, 2022২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার সময় বিশ্ববিদালয়গুলোতে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে বিএনপি-জামায়াত জোট। একদিকে প্রগতিশীল শিক্ষকদের ওপর যেমন হামলা-নিপীড়ন চালাতে থাকে, তেমনি অন্যদিকে দলীয় বিবেচনায় শুরু করে শিক্ষক নিয়োগ। যোগ্য প্রার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম, সব নিয়ম উপেক্ষা করে মাত্র চার বছরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সাথে যুক্ত ১৬০ জনকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
২০০৭ সালের ৩০ মার্চ প্রথম আলো পত্রিকার প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে আসে। জানা যায়, ২০০২ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত ১৮৮ জন শিক্ষক নিয়োগ পায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরমধ্যে ১৬০ জনই জামায়াতের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। সিনিয়র শিক্ষকরা তাই রসিকতা করে বলতেন, শিক্ষক নিয়োগ নয় উপাচার্য ভোটার নিবন্ধনের কাজ করেছেন। মেধাবীদের বঞ্চিত করে দলীয় বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগের প্রতিবাদে ২০০৪ সালের ১২ আগস্ট আচার্য ও রাষ্ট্রপতিকে চিঠি পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি। পর্যাপ্ত ভাগ না পাওয়ায় ছাত্রদল নেতাকর্মীরাও জামায়াতপন্থী উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি তুলেছিল সেসময়।
জানা যায়- কলা অনুষদে ৩৮, সমাজবিজ্ঞান অনুষদে ২০; আইন বিভাগে ৩, বাণিজ্য অনুষদে ১৫, বিজ্ঞান অনুষদে ৩৯, জীববিজ্ঞান অনুষদে ৩২, সমুদ্রবিজ্ঞান ইন্সটিউটে ৭, এনভারনমেন্টাল সায়েন্সে ৬ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। এদের সবাই জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
প্লানিং কমিশনের সুপারিশ উপেক্ষা করে কোনো প্রথম শ্রেণি না থাকলেও এস এম রিজাউল ইসলামকে বাংলা বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হয়। তার প্রতিদ্বন্দ্বিদের কারো পিএইচডি আবার কারো তিনটি প্রথমশ্রেণি থাকলেও তাদের নেওয়া হয়নি। রিজাউলের একমাত্র যোগ্য, সে ছাত্র শিবিরের কর্মী। অথচ পরীক্ষায় নকলের জন্য এক বছর বহিস্কারও ছিল সে ছাত্রজীবনে। এমনকি প্রভাষক হিসেবে নিয়োগের ২৩ দিন পরেই তাকে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নদি দেন উপাচার্য নুরুদ্দিন। প্রথম আলোর কাছে এই অনিময়ের কথা স্বীকার করেছে স্বয়ং রিজাউল।
নিয়োগের শর্ত ভেঙে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে দুজনকে (আল মারজান ও আবু আহমেদ) প্রভাষক পদে নিয়োগ দেওয়া হয় শিবির পরিচয়ের কারণে। অন্যদিকে সব শর্ত পূরণ করেও সংখ্যা লঘু হওয়ার কারণে বাদ পড়ে যান যোগ্য প্রার্থী। ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগে অ্যাডহক ভিত্তিতে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ পান তৈয়ব চৌধুরী, অথচ এর আগে শিক্ষকতার কোনো অভিজ্ঞতাই নাই তার। শুধু জামায়াতের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হওয়ার কারণেই মাত্র ১১ মাসের মধ্যে তাকে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়।
কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পায় সানাউল্লাহ, তার একমাত্র পরিচয় হলো তিনি লোহাগড়া জামায়াতের আমীরের ভাতিজা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন প্রার্থীকে বাদ দিয়ে চট্টগ্রাম ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা এই প্রার্থীকে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ দিয়ে নিয়োগের শর্ত ভঙ্গ করা হয়।
এছাড়াও অর্থনীতি বিভাগের একটি পদের বাইরে চারজনকে নিয়োগ দেওয়া হয় ২০০৪ সালে। তাদের মধ্য মোরশেদুল হক ও সেলিম উদ্দিন শিবিরের রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত। যাদের বাদ দেওয়া হয়েচে তাদের চারটিতেই প্রথম শ্রেণি, আবার বোর্ডের মেধা তালিকাতেও ছিলেন দুজন। তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান নোট অব ডিসেন্ট দিয়েও এই নিয়োগ ঠেকাতে পারেননি। ভূগোল বিভাগে একটি অধ্যাপক পদের বিপরীতে দুটি প্রভাষক পদের নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়, যা প্লানিং কমিশনের নিয়মবহির্ভূত।
জানা যায়, জামায়াতের শিক্ষকদের দিয়ে ছায়া সিন্ডিকেট গঠন করা হয়েছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারাই নিয়ন্ত্রণ করতো নিয়োগের বিষয়াবলী। আর এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতেন ড. মাহবুব উল্লাহ। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় তিনি নিয়মিত হাওয়া ভবনে যেতেন এবং বৈঠক করতেন। প্রথম আলোর কাছে এটি স্বীকার করেছেন তিনি