581
Published on অক্টোবর 29, 2022ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে আজ শনিবার (২৯ অক্টোবর)। বেলা ২টা ২৫ মিনিটের দিকে দলীয় পতাকা ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলন উদ্বোধন করা হয়। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের শেরেবাংলা নগরের বাণিজ্য মেলার পুরানো মাঠে দলটির নেতাকর্মীদের ঢল দেখা গেছে। দলীয় প্রতীক নৌকার আদলে তৈরি মঞ্চকে ঘিরে দুপুরের আগে থেকেই সমবেত হতে থাকেন তারা।
দোহার, সাভার, ধামরাই, নবাবগঞ্জ ও কেরানীগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত ঢাকা জেলার সম্মেলনে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। দীর্ঘদিন পরে সম্মেলন হওয়ায় এই জেলার নেতাকর্মীদের নামে ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে উপজেলাগুলো। কেন্দ্রীয় নেতাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে তৈরি করা হয়েছে অসংখ্য তোরণ। সম্মেলনকে ঘিরে রাজধানীতে সাজ সাজ রব।
ঢাকা জেলার এই ৫ উপজেলার নেতাকর্মীরা দলে দলে যোগ দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে। প্রতিটি মিছিলে নেতাকর্মীদের ঢল নেমেছে।
সম্মেলনের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করছেন বেনজির আহমেদ। আর সঞ্চালনা করছেন মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুর রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি এই দেশের রিজার্ভ গিলে খেয়েছে। বিএনপি এই দেশের অর্থনীতি গিলে খেয়েছে। বিএনপি এদেশের মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ গিলে ফেলেছে। বিএনপি এ দেশের স্বাধীনতার আদর্শকে গিলে ফেলেছে। এবার যদি ক্ষমতায় যেতে পারে বিএনপির দেশশুদ্ধ গিলে ফেলবে। সাবধান, বিএনপি থেকে সাবধান।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘রংপুরে একটি সমাবেশ হচ্ছে, রংপুরে রং-বেরঙের নাটক চলছে। তিনদিন আগে থেকে লোকজন নিয়ে গিয়ে স্টেজে শুয়ে আছেন, মাঠে শুয়ে আছেন, রাস্তায় শুয়ে আছেন। আর টাকার বস্তার ওপর শুয়ে আছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সম্মেলনের নামে টাকা আসছে, আর তারা টাকার ওপর শুয়ে আছেন।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার চেষ্টায় দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আরও এগিয়ে যাবে। গত ৪৭ বছরে দেশের সবচেয়ে দক্ষ প্রশাসকের নাম শেখ হাসিনা। সবচেয়ে সফল কূটনীতিকের নাম শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতার নাম শেখ হাসিনা। সবচেয়ে সাহসী নেতার নামও শেখ হাসিনা।’
বিএনপির শাসনামলে চার বিলিয়ন রিজার্ভ থাকার প্রসঙ্গ তুলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি এই দেশের রিজার্ভ গিলে খেয়েছে। বিএনপি এই দেশের অর্থনীতি গিলে খেয়েছে। বিএনপি এদেশের মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ গিলে ফেলেছে। বিএনপি এ দেশের স্বাধীনতার আদর্শকে গিলে ফেলেছে। এবার যদি ক্ষমতায় যেতে পারে বিএনপির দেশ শুদ্ধ গিলে ফেলবে৷ সাবধান, বিএনপি থেকে সাবধান।’
বিএনপির উদ্দেশ্যে এই আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘মরণ কামড় আর জীবন কামড় যে যেই কামড়েই দেন আমি ঢাকা জেলার সম্মেলন থেকে বলছি, আন্দোলনে এলে শান্তিপূর্ণভাবে আসেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূত মাথা থেকে নামান। এই ভূত নামিয়ে ফেলুন। তত্ত্বাবধায়ক আর হবে না, আদালত মিউজিয়ামে পাঠিয়েছে। আমাদের দোষ কি? আমরা তো নিষিদ্ধ করিনি? উচ্চ আদালত নিষিদ্ধ করেছে? সেই তত্ত্বাবধায়ক না হলে নির্বাচনে যাবেন না? যাবেন, গাধা পানি ঘোলা করে খায়।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সময় এলে দেখা যাবে নেতাটা কে? মুচলেকা দিয়ে গোপনে ২০০৮ সালে জীবনে আর রাজনীতি করব না লন্ডনে চলে গেছে কে? সেই তারেক রহমান হচ্ছে ফখরুলের নেতা। ফখরুলকে ফরমাশ দেয় লন্ডন থেকে। ফখরুলকে যেমনি নাচায় তেমনি নাচে, ফখরুলের কি দোষ?’
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘হাওয়া ভবন আর খাওয়া ভবন আবারও করবেন? সে জন্য টেকব্যাক বাংলাদেশ? আবারও ভোট চুরি করবে? আবারও গণতন্ত্র হরণ করবে? আবারও খুন করবে? বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছে, শেখ হাসিনাকে একুশে আগস্ট হত্যা করতে চেয়েছিল এই বিএনপি। এই খুনিদেরকে কোনোদিন বাংলার মানুষ ভোট দেবে না, এই খুনিদের সঙ্গে জনগণ নেই।’
‘যত নাচানাচি লাফালাফি করেন কর্মীদের বুঝাচ্ছেন ক্ষমতায় আসছি! আসি আসি! এত আহ্লাদ? এত সুখ, দুবাই থেকে টাকা আসছে আমরা খবর পাচ্ছি? কারা পাঠায় খোঁজ পেয়েছি? ব্যবস্থা হবে।’ বলেও জানান তিনি।
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে যত চেঁচামেচি করুক না কেন, যত সমাবেশ করুক; বাংলাদেশে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে কেউ হারাতে পারবে না। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগই বিজয়ী হবে।’
‘বিএনপি আজকে তাফালিং করতেছে কেন জানেন? জানে, ভোট হলে শেখ হাসিনার সঙ্গে হেরে যাবে। হেরে যাবে ফখরুল। রেগে গেলে আরও হেরে যাবে, আর রাগ করবেন না’ বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।
ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কত লোক হয়েছে তা মির্জা ফখরুলকে তা টেলিভিশনে দেখার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ফখরুল সাহেব মিটিংয়ে যদি থাকেন একটু উঠে গিয়ে টেলিভিশনে দেখুন, ঢাকার ছবিও দেখুন রংপুরের ছবিও দেখুন। আপনাদেরটাও দেখুন আমাদেরটাও দেখুন। এখানে তো শেখ হাসিনা নেই।’
খেলা হবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আন্দোলনে খেলা হবে, নির্বাচনে খেলা হবে। ভোট চুরির বিরুদ্ধে খেলা হবে। ভোট জালিয়াতির বিরুদ্ধে খেলা হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে খেলা হবে। যারা ১৭ কোটি মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে চায় তাদের বিরুদ্ধে খেলা হবে।’
পরে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত ও গতিশীল করার লক্ষ্যে প্রবীণ-নবীনের সমন্বয় ঘটিয়ে দুই সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। সভাপতি পদে বেনজির আহমেদকে বহাল রেখে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণকে সাধারণ সম্পাদক হিসাবে নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
শনিবার রাজধানীর আগারগাঁও শেরেবাংলা নগরের পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সম্মেলন মঞ্চে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন তিনি।
সম্মেলন মঞ্চে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম; বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নজরুল হামিদ বিপু, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম।