ঢাকা মহানগর দক্ষিণের পল্টন থানা ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

624

Published on অক্টোবর 16, 2022
  • Details Image

আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটানোর শক্তি বিএনপি বা কারো নেই বলে মন্তব্য করেছেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। তিনি বিএনপি নেতাদের সরকার পতনের হুংকার বন্ধ করার আহ্বান জানান।

তিনি বলেছেন, বিএনপি নেতারা ১০ ডিসেম্বরের স্বপ্ন দেখছেন। ১০ ডিসেম্বর বলে কিছু নেই। আওয়ামী লীগ কোনো ভূঁইফোড় সংগঠন নয়। কচুপাতার পানি নয় যে ধাক্কা দিলে টলে যাবে। আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া দল। ৭৩ বছরের আওয়ামী লীগের শেকড় বাংলার মাটির অনেক গভীরে।

শনিবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে জামাতখানায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণের পল্টন থানা ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, বিএনপি ক্ষমতা যাওয়ার জন্য আন্দোলন করছে। কিন্তু তাদের মধ্যে দেশ পরিচালনার মেধা ও দক্ষতা নেই। রাজনৈতিক কর্মসূচি যদি গণতান্ত্রিকভাবে পালন করতে পারেন আমাদের পক্ষ থেকে বাধা নেই। আন্দোলনের দোহাই দিয়ে দেশে সন্ত্রাস, সহিংসতা, নাশকতা করে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোরভাবে দমন করবে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রয়োজন পড়বে না, সরকারই যথেষ্ট।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধানের আলোকে বর্তমান সরকারের অধীনে হবে জানিয়ে হানিফ বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচনকে আরও অধিক গ্রহণযোগ্য করার জন্য যদি সংবিধানের মধ্যে থেকে কারও কোনো পরামর্শ থাকে দিতে পারেন। সরকার ও নির্বাচন কমিশন অবশ্যই তা বিবেচনা করবে।

নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, গাইবান্ধা উপ-নির্বাচনে কোথাও সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচন কমিশন ঢাকায় বসে সিসিটিভিতে দেখেছে, কোনো বুথে নাকি একজন ভোট দেওয়ার সময় অন্যজন গিয়েছে। অন্যায়ভাবে কেউ বুথের মধ্যে গেলে তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা যায়। কিন্তু একজনের কারণে ওই এলাকার দুই-তিন হাজার ভোটারের অধিকারকে বঞ্চিত করা কোনোমতেই সঠিক সিদ্ধান্ত হতে পারে না। তারপরও নির্বাচন কমিশন স্বাধীন সংস্থা। কমিশন প্রমাণ করেছে, তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে এবং এ সিদ্ধান্তের ফলে এটাও প্রমাণ হয়েছে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কখনো নির্বাচন কমিশনের কাজে হস্তক্ষেপ করে না।

বিএনপি নেতাদের রাষ্ট্রদ্রোহী বক্তব্যের জন্য দেশের জনগণ বিএনপির ওপর স্থায়ীভাবে নিষেধাজ্ঞা দেবে উল্লেখ করে হানিফ বলেন, চট্টগ্রামে বিএনপির সমাবেশে মির্জা ফখরুল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে বললেন, র্যাবের ওপরে শুধু নিষেধাজ্ঞা না, বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার জন্য। লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যেতে হয়। দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবি করে যে বক্তব্য তিনি দিয়েছেন তা এদেশের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত। তিনি রাষ্ট্রদোহের কাজ করেছেন। ২০১২ সালে তাদের নেত্রী খালেদা জিয়াও জিএসপি বাতিল করে গার্মেন্টস সেক্টরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে চিঠি লিখেছিলেন। তারা স্বাধীন বাংলাদেশে বিশ্বাসী নয়। বাংলাদেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা এনে দেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করতে চায় তারা।

তিনি বলেন, আমি মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই, ধিক্কার জানাই। মির্জা ফখরুলকে বলবো, আপনি যে রাষ্ট্রদ্রোহী বক্তব্য দিয়েছেন তা প্রত্যাহার করে নিন। আপনি জাতির কাছে ক্ষমা চান। অন্যথায় দেশের জনগণ বিএনপির ওপর স্থায়ীভাবে নিষেধাজ্ঞা দেবে।

বিএনপি নেতাকর্মীরা মারামারি করে সরকারের ওপর দোষ দিয়ে মায়াকান্না করছে উল্লেখ করে হানিফ বলেন, লন্ডনে বসে তাদের নেতা তারেক রহমান স্লোগান দিলো ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’। এর মানে কি? বাংলাদেশকে আবারও পাকিস্তানী ভাবধারায় নিয়ে যাওয়া। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে হাওয়া ভবন বানিয়ে সরকারের মধ্যে সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রতিটি সেক্টরে কমিশন বাণিজ্য করেছে। কেউ যেন প্রতিবাদ না করতে না পারে সেজন্য সারাদেশে আওয়ামী লীগের ২৬ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। এ মায়াকান্না তখন কোথায় ছিলো, চোখের পানি কোথায় ছিলো?

তিনি বলেন, ২০০৪ সালে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে ইতিহাসের বর্বর গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিলো। নির্লজ্জ মিথ্যাচার হয়েছে তখন। পালামেন্ট নিন্দা প্রস্তাব পর্যন্ত আনতে দেওয়া হয়নি। তাদের নেত্রী খালেদা জিয়া সংসদে দাঁড়িয়ে তামাশা করে বলেছিলো, শেখ হাসিনা নিজে ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গেছেন। আপনারা আজ সেই অন্যায়ের জবাব পাচ্ছেন। দেশের মানুষ অন্যায়-অত্যাচারের জবাব দিচ্ছে।

হানিফ বলেন, যে বাংলাদেশ খাদ্য সংকটের দেশ ছিলো সেই দেশের ৪০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি পূরণ করে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। বিদ্যুৎহীন দেশকে আলোকিত করেছেন। আর আজ বিদ্যুতের নিচে দাঁড়িয়ে বিএনপি নেতারা হারিকেন জ্বালিয়ে নাটক করে। তারা নিজেরা এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনও বাড়াতে পারেনি।

এতিমের টাকা আত্মসাৎকারী বেগম খালেদা জিয়া ও পলাতক সন্ত্রাসী, খুনি-দুর্নীতিবাজ তারেক রহমান যতদিন বিএনপির নেতৃত্বে থাকবে ততদিন বিএনপিকে রাস্তায় ঘুরে ঘুরে চোখের পানি ফেলতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বৈশ্বিক দুর্যোগের সময়েও বাংলাদেশ স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি দেশের উন্নয়ন, অর্জন দেখে না। চরম দরিদ্র বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত ছিলো। ২০০৯ সালে দরিদ্র দেশের দায়িত্ব নিয়ে শেখ হাসিনা ১৪ বছরে যে উন্নয়ন, অগ্রগতি করেছেন তা আগের ৪০ বছরের সমান। দরিদ্র দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের স্বীকৃতি এনে দিয়েছেন। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মাতারবাড়ি তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ অজস্র উন্নয়ন করেছেন। এসব উন্নয়ন তাদের ভালো লাগে না। কারণ, তারা এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না।

হানিফ বলেন, শেখ হাসিনা ৩ হাজার ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের দেশকে ২৫ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতায় নিয়ে গেছেন। মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছেন। আজ বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উদ্বৃত্তের দেশ। বৈশ্বিক মন্দা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটছে। এ সংকট সাময়িক। আশা করছি নভেম্বরের মধ্যে সমাধান হবে।

ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন উদ্বোধন করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।

পল্টন থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এনামুল হক আবুলের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তবা জামান পপির সঞ্চালনায় সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত