767
Published on অক্টোবর 16, 2022২০০১ সালে ক্ষমতায় যাওয়ার পর হতে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দেশের বড় বড় সব সরকারি প্রকল্প ও টেন্ডার থেকে নিয়মিত পার্সেন্টেজ নিতো তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো। চাহিদা অনুসারে পছন্দের কোম্পনিকে প্রকল্প দেওয়ার জন্য মায়ের ওপর চাপ প্রয়োগ করতো জিয়াউর রহমানের ছোট ছেলে। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর, দুর্নীতির দায়ে আটক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও তারেক রহমানের ব্যবসায়িক পার্টনার গিয়াসউদ্দিন আল মামুন এসব ঘটনার কথা স্বীকার করেন।
২০০৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বরের দৈনিক ইত্তেফাক, ২৫ সেপ্টেম্বরের প্রথম আলো এবং ১০ সেপ্টেম্বর সমকালের প্রতিবেদনে এসব বিস্তারিত তথ্য উঠে আসে।
বাবর জানায়, বাংলাদেশে ব্যবসা করার সুযোগ দিয়ে ওয়ারিদ টেলিকমের কাছ থেকে ১৫০ কোটি ডলার তথা ১৫ হাজার কোটি টাকা কমিশন নেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে তারেক রহমানের ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকো একাই নেয় ৯০০ কোটি টাকা। বাকি ৫০০ কোটি টাকা তারেক রহমানের কাছে দেওয়া হয় বিএনপির দলীয় তহবিলের জন্য, এবং অবশিষ্ট ১০০ কোটি টাকা নেয় বিএনপির এমপি ও খালেদা জিয়ার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি আলী আসগর লবী।
এছাড়াও টিএন্ডটি বোর্ডের একটি খুচরা যন্ত্রাংশের কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য চীনের কোম্পানির কাছ থেকে ৩০ লাখ ডলার তথা ৩ হাজার কোটি টাকা কমিশন নেয় খালেদা জিয়ার পুত্র কোকো। এমনি মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য জার্মান কোম্পানির কাছ থেকেও মোটা অঙ্কের কমিশন নেয় সে। কিন্তু ওই টাকার ভাগ তৎকালীন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের ছেরে সফিউর রহমানকে না দেওয়ায় প্রকল্পটি বাতিল করে দেয় মন্ত্রী।
দেশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন কোম্পানিকে মন্ত্রণালয়ের কাজ পাইয়ে দেওয়ার অর্ত থেকে, খালেদা জিয়ার একান্ত ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি মোসাদ্দেক আলী ফালুর সাথে একটি সিরামিক ও একটি ডায়াপর কারখানা গড়ে তোলে কোকো। ফালুর প্রতিষ্ঠিত দুটি টিভি চ্যানেলেও কোকোর স্ত্রীর শেয়ার আছে বলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গোয়ৈন্দা বাহিনীর কাছে স্ভীকার করে তারেক রহমানের বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুন।
বাবর তার স্বীকারোক্তিতে জানায়, কোকো ঢাকা শহরের বিলবোর্ড ব্যবসায় একচেটিয়া আধিপাত্য রাখতো। কাজ না দিলে সরকারের অনেক মন্ত্রীদের সাথেও খারাপ ব্যবহার করতো সে। এমনকি ব্যবসা করতে গিয়েও সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে এই কোকো।
অন্যদিকে, সরকারের মেয়অদ শেষের দিকে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমোরিং টার্মিনাল বন্দর নির্মাণের জন্য ৩১৭ কোটি টাকার একটি কাজের জন্য চাইনিজ কোম্পানির কাছ থেকে পেতে ১৭ টাকা ঘুষ নেয় কোকো। কিন্তু এরমধ্যেই সরকার বদল হওয়ায় টাকা দিয়েও ফেঁসে যায় ওই কোম্পানি। এমনকি চট্টগ্রাম বন্দর এবং ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনের অভ্যন্তরীণ ডিপোতে মোটা টাকার বিনিময়ে গ্যাটকোকে কাজ পাইয়ে দেয় কোকো। এক্ষেত্রে তার সাথে তৎকালীন নৌমন্ত্রী আকবর হোসেনের ছেলে ইসমাইল হোসেন সায়মন। প্রথমে মন্ত্রণালয় থেকে গ্যাটকোকে বাতিল করা হলেও, মা খালেদা জিয়াকে দিয়ে সেই কাজ গ্যাটকোকেই পাইয়ে দেয় কোকো। এজন্য কোকোকে কয়েক ধাপে প্রায় ৫ কোটি টাকা কমিশন দেয় সায়মন। এই দুর্নীতির মামলাতেই তত্ত্বাবধায়্ক সরকারের সময় গ্রেফতার হয়েছিল কোকো।