972
Published on সেপ্টেম্বর 28, 2022ড. প্রণব কুমার পাণ্ডে:
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট সব সময়ই কণ্টকাকীর্ণ ছিল। খুব সহজে কোনো কিছু অর্জিত হয়নি এই দেশে। বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবদ্দশায় বাংলার মানুষকে স্বাধীনতা প্রদানের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন বিধায় তাঁরই নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশ গড়ার প্রত্যয়ে বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরেই কাজ শুরু করেছিলেন।
কিন্তু তিনি তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারেননি, কারণ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের দল তাঁকে পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যের সঙ্গে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। বঙ্গবন্ধু-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের জনগণ এক কালো অধ্যায় অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য এবং বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যাঁর অবদান সবচেয়ে বেশি তিনি হচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা। আজ ২৮ সেপ্টেম্বর আমাদের সেই মহীয়সী নেত্রীর জন্মদিন। এই শুভ দিনে আপনাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
১৯৭৫-পরবর্তী সময়ের সামরিক সরকার চেষ্টা করেছিল আওয়ামী লীগকে ভেঙে টুকরা টুকরা করে ফেলার। সেই ভঙ্গুর আওয়ামী লীগের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৭ মে ভারত থেকে দেশে ফিরে। আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নিয়ে তিনি দলকে সুসংগঠিত করেছেন এবং তৎকালীন স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৬ সালে দলকে ক্ষমতায় নিয়ে এসে দেশের উন্নয়নের পরিকল্পনার সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। কিন্তু সেই সময় তিনি অনেক কাজ সমাপ্ত করে যেতে পারেননি, কারণ ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যেতে ব্যর্থ হয়েছিল।
২০০৮-পরবর্তী সময়ের ইতিহাস বাংলাদেশের জন্য এক সোনালি যুগের ইতিহাস। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করেছিলেন। গত সাড়ে ১৩ বছরে বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। মাথাপিছু আয় আড়াই হাজার ডলার ছাড়িয়েছে, জিডিপির হার অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে, পৃথিবীর অনেক দেশের তুলনায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্ত অবস্থানে রয়েছে, পদ্মা সেতুর মতো বিভিন্ন মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে দেশে, দারিদ্র্যের হার কমেছে, শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহতম দুর্যোগ করোনা অতিমারি সফলতার সঙ্গে মোকাবেলা করা হয়েছে এবং একই সঙ্গে করোনা-পরবর্তী সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা সফলতার সঙ্গে মোকাবেলা করা হচ্ছে।
এত কিছু অর্জন শুধু সম্ভব হয়েছে একজন বলিষ্ঠ, যোগ্য এবং দূরদর্শী নেতার কারণে। তবে বাংলাদেশকে বদলে দেওয়ার এই যাত্রা খুব সুখকর ছিল না। বিভিন্ন সময়ে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পর্যায়ের পরিকল্পনায় গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। আসলে ভাগ্যদেবতা বরাবরই শেখ হাসিনার পক্ষে ছিলেন।
তাঁর বলিষ্ঠ এবং দূরদর্শী নেতৃত্বের সঙ্গে ব্যক্তিগত সততা বাংলাদেশের মানুষের কাছে উদাহরণ হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তি এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া একটা স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এ ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা ব্যতিক্রম হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, কারণ তিনি বা তাঁর নিকটতম পরিবারের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ নেই। তাঁর সততা জনগণের কাছে প্রশংসিত হয়েছে বিধায় বাংলাদেশের জনগণ পর পর তিনবার নির্বাচনে তাঁর ওপর আস্থা রেখেছে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাঁর দৃঢ়তা, যা একজন নেতাকে অন্য নেতার থেকে আলাদা করে। ২০১২ সালে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক যখন অর্থায়ন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল, সেই সময়ে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্ব এবং চারিত্রিক দৃঢ়তার কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে ঘোষণা করেছিলেন, বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরি করবে। গত ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে সেটি তিনি প্রমাণ করেছেন। একই সঙ্গে ঢাকা মেট্রো রেল প্রকল্প কিংবা কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ বহির্বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। শেখ হাসিনা সবার কথা শোনেন, কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নিজের বিবেক যা বলে সেটাই করেন, যা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবদ্দশায়। আর এ কারণেই বাংলাদেশের মানুষ শেখ হাসিনার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবি দেখতে পায়।
বাংলাদেশকে বদলে দেওয়া এই নেতার শুভ জন্মদিন আজ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি সুস্থ এবং ভালো থাকুন—এই প্রত্যাশা আমাদের সবার। আপনি এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধুর মতো বাংলাদেশের মানুষের আশা-ভরসার আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছেন। বাংলাদেশের মানুষ বর্তমান সময়ে যেমন আপনার ওপর বিশ্বাস রেখেছে, ভবিষ্যতেও আপনার ওপর আস্থা রাখবে—এই কামনা করি! আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের কাতারে অন্তর্ভুক্ত হবে—এটাই জনগণের প্রত্যাশা। শুভ জন্মদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
লেখক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক
সৌজন্যেঃ কালেরকণ্ঠ