বৈশ্বিক সংকটের প্রভাবে অস্থিতিশীল বাংলাদেশের জ্বালানী খাতঃ পরিস্থিতি মোকাবেলায় ও ভবিষ্যতে সুরক্ষা নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর আওয়ামী লীগ সরকার

1533

Published on আগস্ট 30, 2022
  • Details Image

কোভিড-১৯ এর রেশ কাটতে না কাটতেই  রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ পরিস্থিতি সারা বিশ্বকেই গভীর এক সংকটে ফেলেছে। এই সংকট শুধু উন্নয়নশীল দেশেই না অনেক উন্নত দেশেও এর আঁচ লেগেছে। যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বের জ্বালানি পরিস্থিতিকে চরম অস্থিতিশীল করে তুলেছে। আন্তর্জাতিক খাদ্য পণ্যের বাজারও বেসামাল। বৈশ্বিক এই সংকট বাংলাদেশকে বিপদে ফেললেও তা দীর্ঘস্থায়ী হবে না বলে ইতিমধ্যেই জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)- এর মতো প্রতিষ্ঠান এবং যুক্তরাজ্যভিত্তিক পত্রিকা ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস।

গত ২৪শে ফেব্রুয়ারি হতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যের ক্রমবর্ধমান উর্ধ্বগতি, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, জ্বালানি তেলের পাচার রোধ, বিপিসি কর্তৃক গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন এবং জ্বালানি নিরাপত্তার স্বার্থে আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার

জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণ বিষয়ভিত্তিক নিম্নে উপস্থাপন করা হলো:

ক)   বৈশ্বিক পরিস্থিতির প্রভাব:

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। জানুয়ারি ’২২ এ ৯৬.৯৫ ডলার/ব্যারেল ছিল তা জুন’২২ এ হয় ১৭০.৭৭ ডলার/ব্যারেল এবং জুলাই ’২২ ছিল ১৩৯.৪৩ ডলার/ব্যারেল।

জুন’২২ এ গড়ে বাংলাদেশ পেট্টোলিয়াম করপোরেশনের লোকসান ছিল প্রতিদিন প্রায় ১০০ কোটি টাকা। জুলাই ’২২ এ গড়ে বাংলাদেশ পেট্টোলিয়াম করপোরেশনের লোকসান ছিল প্রতিদিন প্রায় ৭৮ কোটি টাকা।

ফেব্রুয়ারি’২২ হতে জুলাই’২২ পর্যন্ত বিপিসির জ্বালানি তেল (সকল পণ্য)  বিক্রয়ে মোট লোকসান হয় ৮০১৪.৫১ কোটি টাকা।

ডিজেলের ক্ষেত্রে সর্বশেষ গত ২৬/০৮/২০২২ তারিখের প্লাটস অনুযায়ী (১৪৭.৬২ ডলার/ব্যারেল) বিপিসি’র কস্টিং ১২৮.৬১ টাকা/লিটার; অর্থাৎ লিটার প্রতি লোকসান ১৯.৬১ টাকা।

(খ)   মার্কিন ডলারের বিনিময় হারের প্রভাব:

  • ০৩ নভেম্বর ২০২১ তারিখ সরকার যখন জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করেছিল তখন ডলার ও টাকার বিনিময় হার ছিল ৮৫.৮৫ টাকা, যা বর্তমানে ৯৫.০৫ টাকায় উন্নীত হয়েছে। অর্থাৎ  প্রতি ডলারের বিপরীতে ইতোমধ্যে প্রায় ১০/- টাকা তারতাম্য হওয়ায় লিটার প্রতি ১০.৩০ টাকা ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
  • আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য যদি পূর্বাবস্থায় ফিরেও আসে তথাপি শুধুমাত্র ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার ১.০০ টাকা বৃদ্ধি পেলে বিপিসি’র লিটার প্রতি ব্যয় প্রায় ১.০৩ টাকা বৃদ্ধি পাবে।
  • অধিকন্তু, ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকসমূহ BC (Bill for Collection বা বাংলাদেশ ব্যাংকের রেট) রেটে বিপিসি’র এলসি খুলতে অনীহা প্রকাশ করায় বাংলাদেশ ব্যাংক মার্কেট রেটে ডলার সংগ্রহের নির্দেশনা প্রদান করে। ফলে এক্ষেত্রে বিপিসি’র ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।

(গ)   পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সাথে তারতম্য:

  • বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের ঊর্ধ্বগতির কারণে পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিভিন্ন দেশে নিয়মিত জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করে থাকে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতির কারনে প্রতিবেশী দেশ ভারতের কলকাতায় গত ০৬ এপ্রিল, ২০২২ তারিখ ডিজেলের মূল্য লিটার প্রতি সর্বোচ্চ ৯৯.৮৩ রুপি এবং পেট্রোলের মূল্য সর্বোচ্চ ১১৫.১২ রুপিতে উন্নীত হয়।
  • পরবর্তীতে শুল্ক-করাদি হ্রাসের মাধ্যমে ২২ মে, ২০২২ তারিখে কলকাতায় ডিজেল লিটার প্রতি ৯২.৭৬ রুপি এবং পেট্রোল লিটার প্রতি ১০৬.০৩ রুপি নির্ধারণ করা হয়, যা অদ্যাবধি বিদ্যমান রয়েছে।
  • দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের পূর্বে ০৪/০৮/২০২২ তারিখের তথ্য অনুযায়ী কলকাতায় ডিজেল লিটার প্রতি ৯২.৭৬ রুপি বা সমতূল্য ১১৭.৩৪ টাকায় (১রুপি= গড় ১.২৬৫ টাকা) বিক্রয় হচ্ছিল যা বাংলাদেশ থেকে প্রায় (১১৭.৩৪-৮০.০০) ৩৭.৩৪ টাকা বেশী ছিল এবং পেট্রোল লিটার প্রতি ১০৬.০৩ রুপি বা সমতূল্য ১৩৪.১৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল যা বাংলাদেশ থেকে (১৩৪.১৩-৮৬.০০) ৪৮.১৩ টাকা বেশী ছিল। ফলে মূল্য পার্থক্যের কারণে পাশ্ববর্তী দেশে জ্বালানি তেল পাচারের আশংকা দেখা দেয়।

(ঘ)   বিপিসি’র উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়ন:

  • দেশে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বর্তমানে বিপিসি কর্তৃক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্প যেমন: (১) সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডবল পাইপলাইন, (২) ইআরএল ইউনিট-২, (৩) ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইন, (৪) জেট এ-১ পাইপলাইন, (৫) ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ পাইপলাইন, (৬) মহেশখালি-মাতারবাড়ি এলপিজি টার্মিনাল, (৭) বিপিসি অফিস ভবন, (৮) সিতাকুন্ডে এলপিজি বটলিং প্লান্ট, (৯) মংলা-রংপুর পাইপ লাইন, (১০) নতুন ডিপো ও স্টোরেজ ট্যাংক (১১) কাস্টডি ট্রান্সফার ফ্লো-মিটার এ্যাট ইআরএল ট্যাংক ফার্ম অর্থাৎ মোট ১১টি প্রকল্প মোট প্রায় ৩৪,৬২৫.৮০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন আছে।
  • তন্মধ্যে ইআরএল ইউনিট-২ প্রকল্পের সমুদয় অর্থ (প্রায় ১৯,৭৬৮.৯৫ কোটি টাকা) বিপিসির নিজস্ব তহবিল হতে সংস্থানের জন্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে।
  • আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যের ক্রমবর্ধমান উর্ধ্বগতির কারণে স্থানীয় বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য পুনঃনির্ধারণ/সমন্বয় না হলে বর্ণিত প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নে বিপিসি আর্থিক সক্ষমতা হারিয়ে ফেলত।
  • গত ২৪/০২/২০২২ তারিখ হতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেলেও ফেব্রুয়ারি –জুলাই ২০২২ পর্যন্ত দীর্ঘ ৬মাস সরকারের কাছ থেকে কোন অর্থ না নিয়ে এবং জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় না করেই বিপিসি বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতে সংস্থানকৃত এফডিআরসমূহ (প্রায় ১৩,২৬৫.১০ কোটি টাকা) নগদায়ন করে জ্বালানি তেলের পেমেন্ট নিশ্চিত করে।
  • কিন্তু জুন ’২২ থেকে পর্যায়ক্রমে বিপিসি’র আর্থিক চাপ বৃদ্ধি পেতে থাকলে পেমেন্ট নিশ্চিত করার জন্য ২ মাসের জ্বালানি তেলের মূল্যের সমপরিমাণ অর্থ চলতি মুলধন হিসেবে রাখা সম্ভব হচ্ছিল না।

দেশের অর্থনীতিতে তথা সরকারি কোষাগারে বিপিসি’র অবদান:

বিপিসি’র ইতঃপূর্বে ১৯৯৯-২০০০ হতে ২০১৩-১৪ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় স্থানীয় পর্যায়ে জ্বালানি তেলের মূল্য কম থাকায় বিপিসি ক্রমাগত লোকসান করে। ২০১৪-১৫ হতে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য তুলনামূলকভাবে কম থাকায় বিপিসি লাভ করেছে। উক্ত লাভের অর্থ হতে বিপিসি বিভিন্ন সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমূহ ও পেট্রোবাংলার বকেয়া পাওনা এবং এনবিআর এর পাওনা বাবদ সর্বমোট ৯২৯৭.৬৩ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। এছাড়া ট্যাক্স/ভ্যাট/ডিউটির পাশাপাশি লভ্যাংশ বাবদ ২০১৫-১৬ হতে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত মোট ৩,৮৫০ কোটি টাকা এবং উদ্ধৃত্ত তহবিল হিসেবে মোট ১১,০০০ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করেছে।

বিগত ৩ বছরে বিভিন্ন খাতে সরকারি কোষাগারে বিপিসি’র অবদান নিম্নরূপ: (কোটি টাকায়)

বিবরণ

২০২১-২২ (প্রভি.)

২০২০-২১

২০১৯-২০

ট্যাক্স, ভ্যাট, ডিউটি

১৩,৮৫৪.৬৫

১০.৪৭৮.৭৬

৮,৮৪৬.৬৬

ডিভিড্যান্ড

৩০০.০০

৩০০.০০

৩০০.০০

উদ্ধৃত্ত তহবিল হিসেবে

১,০০০.০০

৫,০০০.০০

৫,০০০.০০

মোট

১৫,১৫৪.৬৫

১৫,৭৭৮.৭৬

১৪,১৪৬.৬৬

সর্বমোট অবদান

৪৫,০৮০.০৭ কোটি টাকা (প্রায়)

আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম দশগুণ বেড়েছে ও তেলের দাম রেকর্ড ছাড়িয়েছে, ফলে উন্নত রাষ্ট্রগুলোও বিদ্যুৎ উৎপাদনে হিমশিম খাচ্ছে। জ্বালানি সংকটের কারণে খোদ যুক্তরাষ্ট্রে মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে জনগণকে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিদ্যুৎ সংকটের আশঙ্কায় জাপান এবং ফ্রান্সেও জনগণের প্রতি একই আহ্বান জানানো হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানিতে কখনো বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়নি। সেখানেও এর সাশ্রয়ের জন্য বলা হয়েছে এবং অনেক শহরে পানি গরম করার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস ও সিডনিতে দুই ঘণ্টা করে লোডশেডিং করা হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের বাজারে বিদ্যুতের দাম ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি হয়েছে।

বর্তমানে দেশের প্রাকৃতিক গ্যাসের দৈনিক উৎপাদন ২৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। চাহিদার বাকি বৃহৎ অংশ এলএনজি আমদানি করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করছে সরকার। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার সময়ও গ্যাসের উৎপাদন ছিল মাত্র ১৭৪৪ দৈনিক মিলিয়ন ঘনফুট। সেখান থেকে উৎপাদন সক্ষমতা বেড়েছিলো ২৭৫০ দৈনিক মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত। ২০১৮ সাল পর্যন্ত আমরা এ সক্ষমতায় গ্যাস উৎপাদন করেছি। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য যে, খনিগুলোর রিজার্ভ কমে যাওয়ার কারণে। বাংলাদেশের গ্যাস উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে।

এলএনজি আমদানির জন্য কাতার ও ওমানের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির আওতায় এলএনজি পাচ্ছে বাংলাদেশ। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেট থেকেও এলএনজি আমদানি করা হতো। কোভিড-১৯ এর আগে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজি ৪ ডলারের কমে আমদানি করা গেলেও কিন্তু গত ২৫ আগস্ট তারিখে সেটা ছিল ৭১ ডলার। এত উচ্চমূল্যে আমদানি করলে আমাদের অর্থনীতির উপর বিশাল চাপ তৈরি হবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার নিজস্ব জ্বালানির অনুসন্ধান, উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বিদ্যমান কূপগুলোতে আরো গভীরে খনন করে গ্যাসের অনুসন্ধান কাজ চালাচ্ছে। এরই মধ্যে আগামী ৩ বছরের একটা আপগ্রেডেশন, ওয়ার্কওভারের স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে খনিজ সম্পদ বিভাগ যাতে করে ৪৬টি কূপ থেকে ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস নতুন করে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হতে পারে।

আশা করা যাচ্ছে এই পরিস্থিতি খুব বেশিদিন থাকবেনা। এবছরের মধ্যেই পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিট, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ভারত থেকে ১৬০০ মেগাওয়াট আমদানিকৃত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। 

বিদ্যুৎ খাত নিয়ে বিএনপির গালগল্প

বিদ্যুৎ ও জ্বালানী সংকতের এই পরিস্থিতিতে সুযোগ বুঝে উপদেশ দিয়ে চলেছে বিদ্যুতের অভাবে সাধারন মানুষের দৌড়ানি খাওয়া বিএনপি’র নেতারা। এ যেন ভুতের মুখে রামনাম। যারা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে ধ্ববংস করে দিয়েছিল তাদের মুখ থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নের রোডম্যাপের কল্পকাহিনী শুনতে হচ্ছে।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ২০০১-০৬ পর্যন্ত এক মেগাওয়াটও বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত যতটুকু উৎপাদন বাড়িয়েছিল তাও সেই সময়ে তারা কমিয়ে ফেলেছিল।

মজার বিষয় হলো বিএনপির একমাত্র অর্জন ৩ সেপ্টেম্বর ২০০৫ সালে টঙ্গী পাওয়ার স্টেশন ওভারহোলিং এর মাধ্যমে সচল করা। যেটার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।

উনি টঙ্গীতে ওই কাজের ফলক উন্মোচন করে ঢাকা ফেরার পথে টঙ্গী থেকে উত্তরার আব্দুল্লাহপুর আসার আগেই সেই পাওয়ার স্টেশন আবারও বন্ধ হয়ে যায়। এই ছিল বিদ্যুৎ খাতের বিএনপির উন্নয়ন!

বিদ্যুৎ চাওয়ার কারণে ২০০৬ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে গুলি করে হত্যা করা হয় ২০ জনকে। তাদের সময়ে বিদ্যুতের অভাবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অপারেশন থিয়েটারে ২ রোগীর মৃত্যু হয়। বিদ্যুৎ ও তেল সংকটে শিল্পোৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় এমন কি বিদ্যুতের অভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অসংখ্য ছোটখাটো শিল্প বন্ধ হয়ে যায়।

তারেক রহমানের হাওয়া ভবনের খাম্বা সিন্ডিকেট:

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে গ্রাম তো দূরের কথা, খোদ ঢাকা শহরেও ১৬-১৭ ঘন্টার বেশি লোডশেডিং হতো। বিএনপি সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের পথে না হেঁটে সারা দেশে অপরিকল্পিতভাবে খাম্বা পুতে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্র দুর্নীতির প্রতীক হাওয়া ভবনে কর্ণধার মিস্টার টেন পারসেন্ট খ্যাত তারেক রহমান ও তার বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের খাম্বা সিন্ডিকেট সরকারী কোষাগারের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে খাম্বা দেয়ার মাধ্যমে। 

বাপেক্সকে অকার্যকর করে নাইকোর কাছ থেকে ঘুষ:

২০০২ সাল। গ্যাসে পূর্ণ পূর্ব ছাতকের ভার্জিন গ্যাস ফিল্ডটি হাওয়া ভবনের কারসাজিতে পরিত্যক্ত দেখিয়ে অস্বচ্ছ এক চুক্তির মাধ্যমে নাইকোকে নামে মাত্র মূল্যে দিয়ে দেয়। নাইকোর অদক্ষতার কারণে আমাদের মূল্যবান জাতীয় সম্পদ গ্যাসক্ষেত্রতে দুইবার আগুন লাগে। যার কারণে ওই কূপ পরিত্যক্ত হয়ে যায়।  দেশের স্বার্থ না দেখে ঘুষের লোভে বাংলাদেশের প্রায় ১০ হাজার কোটি  টাকার ক্ষতি করতে এদের কলিজা একটুও কাঁপে নাই! 

পূর্ব ছাতকের গ্যাস ফিল্ড নেওয়ার ব্যাপারে ‘নাইকো’ যে ঘুষ প্রদান করে, তা নিয়ে কানাডার রয়্যাল মাউন্টেড পুলিশ ২০০৫ সালে তদন্ত শুরু করে এবং তদন্তে উঠে আসে, ‘নাইকো’ কোম্পানি কানাডা থেকে ঘুষের টাকা কীভাবে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন দেশ হয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়েছিল এবং কয়েকজন ব্যক্তিকে ঘুষ দিয়েছিল।

উল্লেখ্য ১৯৯৬ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় নাইকো নানাভাবে চেষ্টা করেছিল চুক্তিটি তখনই করতে। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনা  বাংলাদেশবিরোধী শর্ত মেনে না নেওয়ায় তখন ‘নাইকো’ কোম্পানির সঙ্গে কোনো চুক্তিই সই হয়নি। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার সরকার ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসেই ‘নাইকো’ কোম্পানির সঙ্গে তাদের সব শর্ত মেনে চুক্তি সই করে ফেলে। ২০০৩ সালের ১৬ অক্টোবর নাইকো-বাপেক্স জেভিএ সই হয়। পরবর্তী সময়ে কানাডার আদালতে প্রমাণিত হয় যে নাইকো বাংলাদেশে খালেদা জিয়ার আমলে ঘুষ দিয়ে কাজ পায়। হাওয়া ভবনের গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ঘুষ নেন এবং খালেদা জিয়ার তৎকালীন জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন ১ লাখ ৯০ হাজার কানাডীয় ডলার দামের একটি গাড়ি ও বিদেশ সফরের জন্য পাঁচ হাজার ডলার ঘুষ নেন। 

বিএনপি’র এই অপকর্ম ধরা পড়ে কানাডার আদালতে।

এক নজরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে শেখ হাসিনার অবদান:

চলমান বৈশ্বিক নজিরবিহীন জ্বালানি সংকটের কারণে আমাদের দেশও ভুক্তভোগী। কিন্তু বিরোধীদল থেকে শুরু করে তথাকথিত সুশীলরা ঢালাওভাবে বলে বসেন যে আওয়ামী লীগ সরকার কোন প্রচেষ্টাই চালায়নি নিজস্ব খনিজ সম্পদ উত্তোলন ও অনুসন্ধানের জন্য।

কিন্তু বাস্তবতা এই যে এই দেশের স্বাধীনতার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনভর সংগ্রাম করেছেন ঠিক সেইভাবেই উন্নয়নের জন্য তারই কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দূরদর্শী নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কথা বললেও সেই একই রকমভাবে বলতে হয় যে, এযেন পিতা-কন্যার বাংলাদেশকে সোনার বাংলায় রূপান্তরের পরম্পরা।

বিদ্যুৎ খাত নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান-এর দূরদৃষ্টি সম্পন্ন চিন্তভাবনা ছিল । তিনি ১৯৭২ সালের ৩১ মে প্রেসিডেন্ট অর্ডার ৫৯ মাধ্যমে  তৎকালীন ওয়াপদাকে (WAPDA)-কে  দুটি বোর্ডে ভাগ করে  বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড  গঠন করার মাধ্যমে স্বাধীন দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন।  স্বাধীনতার পরই বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকেও নজর দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। এর ফলে তখন রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করেন এবং সে সময়েই রাশিয়া বাংলাদেশে তিনটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মান করেছিল। একইসঙ্গে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহের নিমিত্ত সাবস্টেশন নির্মাণ করে দিয়েছিল বন্ধু দেশ রাশিয়া।

নিজস্ব সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে সব সময়ই সচেষ্ট ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাই ১৯৭৫ সালের ৯ই আগস্ট মৃত্যুর মাত্র ছয় দিন পূর্বে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশের বৃহৎ পাঁচটি গ্যাস ক্ষেত্র-তিতাস, বাখরাবাদ, রশীদপুর, কৈলাশটীলা ও হবিগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্র বহুজাতিক তেল কোম্পানি শেল ইন্টারন্যাশনালের কাছ থেকে ৪.৫ স্টার্লিং পাউন্ড মূল্যে কিনে নিয়েছিলেন। যা বিদ্যুৎ উৎপাদন ও জ্বালানী নিরাপত্তায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

জাতির পিতা গ্রামীণ উন্নয়ন এবং নগর ও গ্রামাঞ্ছলে জীবন যাত্রার মানের বৈষম্য দূর করার জন্য বিদ্যুতায়নের বিষয়টিকে সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে ঘোষণা করেন (অনুচ্ছেদ-১৬)। বঙ্গবন্ধুর এই বৈপ্লবিক ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। তৎকালীন তৃতীয় বিশ্বে এটি একটি অনুসরণীয় মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধুর মত তার কন্যাও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নে পিতার দেখানো পথ ধরে এগিয়ে সামনে এগিয়ে নিচ্ছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ এবং মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে সারা দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন তারই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্তই বদলে দিয়েছে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত।

১৯৯৬ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবারের মত ক্ষমতা গ্রহণের সময় দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় ছিল। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য দেশে প্রথম Private Sector Power Generation Policy of Bangladesh অক্টোবর, ১৯৯৬ সালে প্রণয়ন করা হয়। উক্ত নীতিমালার আলোকে ১৯৯৬ হতে ২০০১ সালের মধ্যে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার আওতায় খুলনা (কেপিসিএল) ১১০ মেগাওয়াট, হরিপুর (এনইপিসি) ১১০ মেগাওয়াট, হরিপুর ৩৬০ মেগাওয়াট, মেঘনাঘাট ৪৫০ মেগাওয়াট, বাঘাবাড়ী (ওয়েষ্টমন্ট) ৯০ মেগাওয়াট, ময়মনসিংহ (আরপিসি) ১৪০ মেগাওয়াট, সামিট পাওয়ার (আরইবি) ৩০ মেগাওয়াট সহ সর্বমোট ১,২৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বেসরকারিখাতে উৎপাদনের ব্যবস্থা করা হয়।

এছাড়াও সরকারিখাতে শাহজীবাজার ৭০ মেগাওয়াট, বাঘাবাড়ী ১০০ মেগাওয়াট, রাউজান ২১০ মেগাওয়াট, ঘোড়াশাল ২১০ মেগাওয়াট সহ ৫৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে সংযুক্ত করা হয়। 

বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটানোর উদ্দেশ্যে দেশের সকল বন্ধ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর দ্রুত সংষ্কার ও মেরামত ও পুনর্বাসন কাজ হাতে নেয়া হয় এবং অতি দ্রুততার সাথে তা সম্পন্ন করে প্রায় ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে সংযুক্ত করা হয়।

অধিকন্তু সরকার বিভিন্ন শিল্প কারখানায় ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে শুল্কমুক্ত সুবিধাসহ বৈদ্যুতিক জেনারেটর আমদানীর সুযোগ প্রদান করেছিল। যার আওতায় ১৯৯৬-২০০১ সময়ে দেশে বেসরকারীখাতে প্রায় ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বৈদ্যুতিক জেনারেটর আমদানী হয় যা বিদ্যুৎ ঘাটতি মোকাবেলায় যথেষ্ট সহায়ক হয়েছে।

তাছাড়া নিম্নবর্ণিত বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো গ্রহণ করা হয়েছিলঃ

(১) দেশের প্রথম কয়লাভিত্তিক বড়পুকুরিয়া ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ চুক্তি সম্পাদন হয়।

(২) টঙ্গীতে ৮০ মেগাওয়াট এবং সিদ্ধিরগঞ্জে ১২০ মেগাওয়াট গ্যাস টারবাইন পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট বাস্তবায়নের জন্য দরপত্র মূল্যায়নের পর্যায়ে ছিল যা পরবর্তীতে চালু হয়।

(৩) বাঘাবাড়ী ১৭০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য আমেরিকার মেসার্স সিনারর্জী এর সাথে নেগোসিয়েশন পর্যায় পর্যন্ত উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল যা ২০০৩ সালে চালু হওয়ার কথা ছিল।

(৪) কর্ণফুলী ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র (৬ষ্ঠ ও ৭ম ইউনিট) স্থাপনের লক্ষ্যে জাপানের জেবিআইসি অর্থ যোগান দিতে সম্মত হয়েছিল যা ২০০৫ সালে চালু হওয়ার কথা ছিল।

(৫) খুলনা ২১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণের জন্য সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট এর মাধ্যমে দরপত্র আহবান করা হয়েছিল যা ২০০৫ সালে চালু হওয়ার কথা ছিল।

২০০৯ সালে দায়িত্ব নেবার পর বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে জ্বালানি বিভাগ এ পর্যন্ত ২১টি অনুসন্ধান, ৫০টি উন্নয়ন ও ৫৬টি ওয়ার্কওভার কূপ খনন করেছে।  যার হাত ধরে বাংলাদেশ পেয়েছে ৫টি নতুন গ্যাসক্ষেত্র। (সুন্দলপুর, শ্রীকাইল, রূপগঞ্জ, ভোলা নর্থ ও জকিগঞ্জ)।    

  • দেশীয় খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান ও উত্তোলনে জোর দেবার কারণেই ২০১৮ সালে আমাদের গ্যাস উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় দৈনিক ২৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফ), যা ২০০৯ সালে ছিল দৈনিক ১,৭৪৪ এমএমসিএফ। কূপগুলোর রিজার্ভ কমতে থাকায় উৎপাদন কিছুটা হ্রাস পেলেও এলএনজি-সহ বর্তমানে বাংলাদেশের দৈনিক প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ প্রায় ২,৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট।          
  • নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিস্কারের লক্ষ্যে ২০০৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত ৩১,৫০২ লাইন কিলোমিটার টু-ডি এবং ৬,০৬১ বর্গ কিলোমিটার থ্রি-ডি সাইসমিক জরিপ করা হয়েছে। বর্তমানে আরো ১০,০০০ লাইন কিলোমিটার টু-ডি এবং ১,৫৩৬ বর্গ কিলোমিটার থ্রি-ডি সাইসমিক জরিপ কাজ চলমান আছে।    
  • ২০০৯-এ শেখ হাসিনা সরকার দায়িত্ব নেবার সময় গ্যাস উত্তোলনের জন্য আমাদের ১টিও সচল রিগ ছিল না, সেখানে এখন ৪টি নতুন রিগ যুক্ত হয়েছে। সাথে পুরনো ১টি রিগ পুনর্বাসন করা হয়েছে। 
  • গ্যাস ক্ষেত্র থেকে বর্ধিত হারে গ্যাস উত্তোলনের জন্য স্থাপন করা হয়েছে/হচ্ছে ২২টি ওয়েলহেড কম্প্রেসর।           
  • ২০২২ সালের জুন মাসে বিজয়-১২ রিগের মাধ্যমে শ্রীকাইল নর্থ ১-এ কূপ খনন শুরু করা হয়েছে। এবং, গত মে মাসে বাপেক্স সফল ওয়ার্কওভারের মাধ্যমে কৈলাশটিলা-৭নং কূপ থেকে দৈনিক ১৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রীডে সরবরাহ শুরু করেছে।   
  • উৎপাদনের পাশাপাশি জোর দেওয়া হয়েছে সঞ্চালন ও বিতরণেও। ২০০৯-২০২২ পর্যন্ত প্রায়  ১,১৯৫ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। আরো ৮৫৭ কিলোমিটার নতুন পাইপলাইন তৈরির কাজ এগিয়ে চলছে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে।    
  • গ্যাসের পাশাপাশি অন্যান্য খনিজ, যেমন- কয়লা ও গ্রানাইট উত্তোলনেও অভাবনীয় সাফল্য এসেছে বর্তমান সরকারের হাত ধরে। ২০০৯ সালের শুরুতে কয়লা উত্তোলন হত ৬.৯৬ লক্ষ মেট্রিক টন, ২০২২ সালে সেটা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৩০.২৮ লক্ষ মেট্রিক টন। ০.৬৯ লক্ষ মেট্রিক টন গ্রানাইট পাথরের জায়গায় এখন উত্তোলন করা হচ্ছে ৭৮.৭০ লক্ষ মেট্রিক টন।    
  • একইসাথে, দেশের ভবিষ্যৎ জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার সর্বাধুনিক প্রযুক্তি আর বিশ্বমানের অবকাঠামো নির্মাণে জোর দিয়েছে। কক্সবাজারের মহেশখালীতে স্থাপন করা হয়েছে দৈনিক ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট রি-গ্যাসিফিকেশন ক্ষমতা সম্পন্ন দুটি জায়ান্ট ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল (FSRU)। তৈরি হচ্ছে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং এবং মাতারবাড়ীতে নির্মিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল এবং সমগ্র জ্বালানি খাতকে ডিজিটাইজেশনের লক্ষ্যে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে ERP. 

জনবান্ধব আওয়ামী লীগ সরকার কোন অবস্থায়-ই জনগণের কষ্ট হয় এমন কাজ করতে চায় না। অনেকটা নিরূপায় হয়েই  সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করতে বাধ্য হয়েছে পাশাপাশি সাশ্রয়ের জন্য শিডিউল ভিত্তিক লোড শেডিং করতে হচ্ছে। তবে বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এমপি জানিয়েছেন জুলাই মাসের তুলনায় বিদ্যুৎ পরিস্থিতি চলতি আগস্ট মাসে যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। তিনি এও আশা করছেন যে, সামনের মাস অর্থাৎ সেপ্টেম্বর মাস থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে। শেষে একটা কথা নিশ্চিত করে বলা যায় যে,  বৈশ্বিক অবস্থা জ্বালানি বাজারে মূল্য কমে আসলে তা বিবেচনা করে,  সরকার নির্দ্বিধায় দেশের বাজারেও জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করবে।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত