717
Published on আগস্ট 20, 2022বাংলাদেশের ইতিহাসে ২১ আগস্ট একটি নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের ভয়াল দিন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী’ সমাবেশে তৎকালীন রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে নারকীয় গ্রেনেড হামলা চালায় জঙ্গিগোষ্ঠী। ভয়াবহ সন্ত্রাসের শিকার হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সেদিন বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী আইভি রহমানসহ ২২ জন নেতা-কর্মী শাহাদাত বরণ করেন। গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের আঘাতে আহত হন পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীসহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ। আহত আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী-সমর্থকদের অনেকে এখনও স্প্লিন্টারের দুঃসহ আঘাত নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূন্য করতে সংগঠনের সভাপতি এদেশের মানুষের আশার বাতিঘর বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা এমপিসহ দলের প্রথম সারির জাতীয় নেতাদের হত্যার উদ্দেশ্যে ওই ঘৃণ্য হামলা চালায় ঘাতকচক্র। শুধু গ্রেনেড হামলাই নয়, সেদিন জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করেও চালানো হয় গুলি। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও তিনি আহত হন, তাঁর শ্রবণশক্তি চিরদিনের মতো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ছিল ১৯৭৫-এর ১৫ই আগস্টের কালরাতের বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের ধারাবাহিকতা; সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের উত্তরসূরি জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে সংঘটিত গ্রেনেড হামলা ছিল এদেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর প্রধানতম রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষক বিএনপি-জামাত অশুভ জোটের একটি ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান, একাত্তরের ঘাতক মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপি-জামাত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নানসহ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর নীলনকশায় সংঘটিত হয় নারকীয় এই হত্যাযজ্ঞ।
বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলে এই মামলার ন্যায় বিচার প্রাপ্তির অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছিল, ষড়যন্ত্রের হোতাদের রক্ষার উদ্দেশ্যে মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে এবং আলামত ধ্বংস করার নানাবিধ ষড়যন্ত্র হয়েছে। এমনকি বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময় গ্রেনেড হামলা মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য ‘জজ মিয়া’ নাটক সাজানো হয়। সময়ের পরিক্রমায় এ ঘটনা নিয়ে দুইটি মামলা চলমান থাকে। একটি হত্যা মামলা এবং অপরটি বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইনের মামলা। দীর্ঘ ১৪ বছর পর ২০১৮ সালে মাননীয় আদালত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় প্রদান করে। এই দুই মামলার রায়ে মোট ৪৯ জন আসামীর মধ্যে বিজ্ঞ আদালত ১৯ জনের মৃত্যুদন্ড, ১৯ জনের যাবজ্জীবন এবং বাকী ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দিয়েছেন। মামলাটি এখন উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাস্টার-মাইন্ড বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ পালাতক আসামীদের দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের রায় কার্যকর করতে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
বিএনপি-জামাত জোট সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহযোগিতায় রাজনৈতিক সমাবেশে যে ধরনের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়, তা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। সেই ভয়াল দিনটি বাঙালি জাতি কোনো দিন ভুলবে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত বাংলাদেশের জনগণ ২১ আগস্ট দিনটিকে ২০০৪ সালের পর থেকে নারকীয় গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদবিরোধী নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। প্রতিবারের ন্যায় এবারও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিম্নোক্ত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
কর্মসূচিঃ
২১ আগস্ট ২০২২ রবিবার :
সকাল ১০ টা : ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদন।
সকাল ১০:১৫ মিনিট : ২১ আগস্টের নারকীয় গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদ ও নিহতদের স্মরণে আলোচনা সভা।
সভাপতিত্ব করবেন : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা এমপি।
সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি’র আহ্বান-
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি এক বিবৃতিতে আগামীকাল ২১ আগস্ট নারকীয় গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে উপরোক্ত কর্মসূচিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতৃবৃন্দ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে উপস্থিত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সাথে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সাথে সামঞ্জস্য রেখে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে সারাদেশে সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদবিরোধী বিভিন্ন উপযোগী কর্মসূচি যথাযথ স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে পালন করার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের সকল স্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
তারিখ : ২০ আগস্ট ২০২২